• ক্রিকেট

ড্রইংরুম থেকে অ্যাডিলেডে

পোস্টটি ৬১৪৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

৯ ই মার্চ,২০১৫

ঘুম থেকে উঠেই বিরক্তি জেঁকে বসল।রাতে ভাল ঘুম হয়নি সকাল সকাল উঠে বিরক্তি বোধ করাটাই স্বাভাবিক।হঠাৎ মনে পড়ল কিছুক্ষণ পর ম্যাচ শুরু।বাংলাদেশের ম্যাচ তা সে যত অগূরুত্বপূর্ণ হোক না কেন মনে অন্যরকম একটা আনন্দের ঢেউ খেলিয়ে দেয়।আর এ তো মহাগূরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।এ ম্যাচ জিতলেই যে ইতিহাসের অংশ হয়ে যেতে পারি আমরা।অংশ যে হয়েই যাব তা তখনও ঘুণাক্ষরেও টের পাই নি

 

দ্রুত প্রাতঃকর্ম সেরে দিনের খুটিনাটি সব কাজও দ্রুত সেরে ফেলার তাগাদা দেখে মা বুঝে গেলেন আজ কোন ম্যাচ আছে।কিছুটা শাসনের সুরে বললেন তাড়াহুড়ো করে যাতে বিপদ ডেকে না আনি।কিন্তু আমি জানি খেলা শুরু হলে আমার কোন কাজ যদি বাকিও থেকে থাকে মা ই সব করে দেবেন।ততক্ষণে টস শেষ।টসে হেরে ব্যাটিং এ বাংলাদেশ।২ রান করে এন্ডারসনের ক্যারিয়ার  আরেকটু সমৃদ্ধ করে দিয়ে ইমরুল কায়েস ফিরে গেলেন ড্রেসিংরুমে।তখন সুইং সামলাতে পারদর্শী  সবেধন নীলমণি তামিমই ভরসা।কিন্তু প্রিয় ওপেনিং পার্টনার ইমরুলের পদাংক অনুসরণ করে ব্যক্তিগত ৭ রানের মাথায় ফিরে গেলেন তামিম ও।

 

উইকেটে তখন নবাগত সৌম্য সরকার আর আনসাং হিরো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।স্বপ্নের খুব কাছে এসে স্বপ্নভঙ্গ এর আশংকায় তখন পুরো বাংলাদেশ।কিন্তু যেন প্রতিজ্ঞা করেই যেন নেমেছিলেন এ দুজন।কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমান।স্রোতের বিপরীতে এন্ডারসন এর সুইং এর জবাব দেয়া শুরু করলেন এই দু'জন।শুরুর ভয়টা কাটয়ে উঠে বড় ইনিংস  এর পথে যখন পা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ তখনই সৌম্য অর্ধশতক থেকে ১০ রান দূরে থেকে আশা নিরাশার দোলাচলে রেখে গেলেন দলকে।

 

কিন্তু দিনটি ছিল রিয়াদ-মুশি ভায়রা ভাই জুটির।দূর্দান্ত স্ট্রোকপ্লের মুশি আর রিয়াদের সাইলেন্ট কিলিং' ড্রাইভে ভর করে বাংলাদেশ তখন ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২৭৫  এ গিয়ে থামল।অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ছেন দলপতি মাশরাফি।মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এরইমধ্যে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিয়ান হয়ে বাতাসে ভালবাসা ছড়িয়ে দিয়েছেন।সেই ভালবাসার রেশ যে ম্যাচ শেষে ক্রিকেটবিশ্বেই ছড়িয়ে যাবে কে জানত??

 

যাই হোক বেশ ভাল পুঁজি নিয়েই নাকউঁচু ব্রিটিশদের সামনে সাধ্যের সবটুকু নিয়ে বল হাতে মোকাবেলা করতে নামল মাশরাফি বাহিনী।

 

মঈন আলী আর ইয়ান বেলের উদ্বোধনী জুটি যখন কপালে ভাঁজ ফেলে দেয়ার উপক্রম ঠিক তখনই সৌম্য-মুশি সম্মিলিত প্রয়াসে রান আউট মঈন আলী।স্কোরবোর্ডে তখন বেশ কিছু রান জমে গেছে।অ্যালেক্স হেলস তখন ইয়ান বেলের সাথে ক্রিজে।দুজনই সামান্য সময়ের ব্যবধানে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন ৬৩ ও ২৭ রান করে যথাক্রমে রুবেল হোসেন ও মাশরাফি বিন মূর্তজার বলে।

 

এরপরের বেশ কিছু সময় কিছুটা ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের প্রতিরোধ আর কিছুটা বাংলাদেশের বোলারদের সেই প্রতিরোধ মাথা তুলে দাড়াবার আগেই ভেঙে দেয়ার গল্প।এরপর এলো সেই হৃদয়ে উথাল-পাথাল চিন্তার ঢেউ বইয়ে দেয়া সেই সময়।

 

১২ বলে ১৬ রান দরকার।

 

দৃশ্যপটে রুবেল হোসেন।স্লগে ভাল বল করার সুখস্মৃতি আর দুস্মৃতি দুটোই তার আছে।তবে মাশরাফি বিন মর্তূজা ভরসা রাখলেন পুরনো সেনানীতেই।

 

সামনে  স্টুয়ার্ট ব্রড।ননস্ট্রাইকিং এ ৪২ রানে অপরাজিত স্বীকৃত অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস।প্ল্যান ছিল সম্ভবত স্ট্রাইক রোটেট করে ওকস কে দেয়া।আর সহজে জয় ছিনিয়ে আনা।কিন্তু বেরসিক রুবেল হোসেন এ কি করলেন?একটা আনপ্লেয়েবল ইয়র্কার আর ব্রড বোল্ড!!!!স্বীকৃত কোন ব্যাটসম্যানের পক্ষেই ওই বল সামলানো ছিল কষ্টকর আর ব্রড তো পার্টটাইমার।টিভি সেটের সামনে দর্শক  আমি আর চাচাতো ভাই  ততক্ষণে নখের জগৎ সাফসুতরো করে ফেলেছি।

 

পরের বলটা এন্ডারসন কোনমতে ঠেকালেন।ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে দুশ্চিন্তা।বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে তার চেয়েও বেশি।।

 

রুবেলের পরের বল করতে রানআপ শুরু পাশের বাসায় চিৎকার। পাশের বাসায় গাজী টিভিতে খেলা দেখা দেশপ্রেমিক আপুটার চিৎকার।দেশদ্রোহী এই আমি স্টার স্পোর্টসের পর্দায় তখনও রুবেলে হোসেনের রান-আপ মেপে চলেছি।

 

এরপরের কয়েক মূহুর্ত ঘোরের মধ্যে কেটেছিল আমার।মুখচেপে শুয়ে পড়া পাগলা ম্যাশের গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছি আমি।রুবেল তখনও সমানে গর্জন করে চলেছে শিকারী বাঘের মত।আমার পাশেই নাসির হোসেন আমারই মত ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রিয় ম্যাশের গায়ে।যার পুরো শরীরটা এই দলটার ভারভার বহন করেছে তার উপর ভর করে আমরা।গলা দিয়ে জোরে চিৎকার করতে চাইলাম 'বাংলাদেশ,বাংলাদেশ'।গলা দিয়ে আওয়াজই বেরুচ্ছে না।এ কি??

 

আমার চাচাতো ভাই আমার গলাটিপে ধরে রেখেছে কেন??মাঠ কই আমিতো সোফায়!!!আনন্দের আতিসয্যে গলা চিপে ধরে আছে ভাইটা আমার।চোখ ছলছলে।হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলও মাশরাফি,তাসকিন,রুবেল দের ছেড়ে,এত বড় একটা উপলক্ষ্য উদযাপন না করেই অ্যাডিলেড ছেড়ে বাসায়  ফিরে আসার জন্য।

 

সম্বিৎ ফিরে পেলাম এরও কিছুক্ষণ পর।আবেগ চেপে রাখা এই আমি শূণ্যে হাত ছুঁড়ে সেই কখন থেকে 'ইয়েস''ইয়েস' বলেই চলেছি কোন হিসেব নেই।

 

সেই রাতে হঠাৎ আমার সাময়িক অ্যাডিলেড ভ্রমণের কথা মনে পড়ল।নিজে নিজেই হেসে উঠলাম।সেটা ছিল সম্ভবত জীবনের সেরা ভ্রমণ।৯