• ক্রিকেট

কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্স এবং কিছু সুখ স্মৃতি ।

পোস্টটি ৫২৬৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সোফিয়া গার্ডেন্স, না এটা কোনো পৃথিবীর বৃহৎ জঙ্গলের নাম নয় । ওয়েলসের কার্ডিফ শহরের একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম ।
নামটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে, তাই না !! হবেই তো ১২ বছর আগের স্মৃতি তো এত সহজে বাঙ্গালী জাতির ভুলে যাওয়ার কথা নয় । এই মাঠেই রচিত হয়েছিল কার্ডিফ বধ কাব্য, তথা অজি বধের সূক্ষ পরিকল্পনা । প্রথমের স্মৃতি মানব মনে সবসময়-ই এক্টু আলাদা দাগ কাটে । কিন্তু সেটা যদি একমাত্র স্মৃতি হয়, তখন কিন্তু ভোলারামও ভুলে যাবে না । গেঁথে রাখবে মনের চিলেকোঠায় । যেমনটি রেখেছে কোটি কোটি বাঙ্গালী সোফিয়া গার্ডেন্সকে স্মৃতির মায়াজালে জড়িয়ে ।

কার্ডিফ মানেই, বাঙ্গালীদের চোখে মো: আশরাফুলের ব্যাট উঁচিয়ে শতক উৎযাপন , সেজদাহ্ দিয়ে মাটিকে চুম্বন এবং পাশে দাঁড়িয়ে তখনকার অজি ক্যাপ্টেন রিকি পন্টিংয়ের করতালি দিয়ে অভিবাদন ।

কার্ডিফ মানেই, জেসন গিলেস্পির বলে আফতাব আহমেদের লং অনের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা মেরে স্কোর সমতা, অত:পর মিস শটে বল লেগ এ পাঠিয়ে এক রান আদায়ের মধ্য দিয়ে বিদেশের মাটিতে বড় কোনো দলকে পরাজয়ের মাল্যদান ।

ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই গিলক্রিস্টের বিদায় ঘন্টা বাজানো সেই কলার উঁচানো পাগলাটা কিন্তু আবারও সোফিয়া গার্ডেন্সে প্রস্তুত, নতুন এক কাব্য রচনা করতে । প্রতিপক্ষ ভিন্ন, তাতে কি ? এই তো কিছুদিন আগেই ট্রাইনেশনে ধরে দিয়েছে । চেনা প্রতিপক্ষ , নিজেদের দিনে প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, যত পরিক্রমালীই হোক, বাংলাদেশ দূর্বার । দূর্বার মনবলের ব্যাঘ্রদলের হুংকারে আতঙ্কিত হবে আবারও কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্স ।

এখনো ম্যাচটির হাইলাইটস মাঝেমধ্যে দেখি । মনটাকে ভালো করার এক্টা উপকরণও বলা যেতে পারে । প্রাপ্তি অনেক ছিল সেদিনের বিজয় গগনে, সাথে কিছু হতাশা আজও বিজয় গগনে ঘনকালো মেঘ হয়ে আচ্ছাদিত করে ভেসে বেড়ায় ।

মনে কি পড়ে , ১৭ বছরের এক যুবকের কথা ? যিনি কিনা ভেঁঙ্গে দিয়েছিলেন মেথু হেইডেনের স্টাম্প !! কি নিখুঁত ভাবেই না শুরু করেছিল ক্রিকেট ক্যারিয়ার ! বর্তমান কাপ্তান ম্যাশের সাথে জুটি বেঁধে বল করার অধিকার কি ছিল না তার ?? কি ছিল না তার বোলিং ঝুলিতে ? বরাবরই বসে থেকেছেন সাইড বেঞ্চে, কিম্বা অপেক্ষামান পেসার হিসেবে । হ্যা কিছুটা ইন্জুরি প্রবনতা ছিল । কিন্তু সুস্থ সবল মানুষটিই বা কতটুকু ব্যাবহৃত হয়েছিল । মনিষিদের একটি সরল বাক্য আঁছে, " যেখানে গুণীজনের কদর নেই, সেখানে গুণীজন জন্ম নেয় না ।" আসোলেই কতটুকু সম্মান দিতে পেরেছি আমরা গুণীজনদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করুন । পেয়ে যাবেন অনেক পিছনে পড়ে থাকা, ধূলো জমে থাকা, জানা অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর ।

এতক্ষনে নিশ্চই বুঝে যাওয়ার কথা, যাকে নিয়ে উপরোক্ত প্যারাটি লেখা । জ্বী, হ্যা !! বুঝেছেন, নাজমুল হোসেইন নামের সেই অবহেলিত সিলেটের টগবগে তরুণের কথাই বলতেছিলাম । আমি কতটুকু ক্রিকেট বুঝি সেটা বড় কথা নয়, আমি প্রতিভা চিনি । সেই অনুর্ধ্ব ঊনিশ ( নাজমুল ছিলেন ১৫-১৬ বয়সি ) বিশ্বকাপে যখন শাহাদাৎ-নাজমুল জুটি বেঁধে বল করতেছিল তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, এই বালকটিই আগামী বাংলার ক্রিকেটের বোলিং ডিপার্টমেন্টর শক্ত কান্ডারী । কিন্তু ঐ যে শুনিয়ে ছিলাম গুণীজনদের বাণী !! অবহেলা করতে করতে তো বর্তমান প্রজন্মের কাছে 'নাজমুল হাসান' নামের অসাধারন লাইন লেন্থের সেই মানুষটি আজ অচেনা । লিজেন্ড জন্ম নেয় আবার হারিয়েও যায়, অযত্নে-অবহেলায় ।
অপচয় হতে দেখেছি আফতাব আহমেদ নামের আরও এক তরুণতুর্কিকে ।

তবে যা-ই হোক, সামনে আসছে নতুন মিশন, চেনা প্রতিপক্ষ, চেনা মাঠে । নতুন এক্টা দিন, নতুন কোনো সম্ভাবনা নিয়ে, রচিত হবে নতুন এক কাব্য । রচিত হোক নতুন কোনো ইতিহাস, সেই প্রত্যাশায়, অপেক্ষামান কোটি ক্রিকেট পাগল বাঙ্গালী । কিউদের হারনোর বিকল্প কিছু নেই ।

বিজয় আসবেই; আজ না হোক কাল, আসবেই ।

#মাসুকীয়