একদিন স্বপ্নের দিন
পোস্টটি ৪৩৮৮ বার পঠিত হয়েছে১৫ ই জুন,২০১৭
বার্মিংহাম,ইংল্যান্ড
সকাল ৮ টা।
হোটেল হায়াত রিজেন্সির শুনশান লবিতে বসে ধোঁয়া ওঠা কফির কাপে চুমুক দিচ্ছেন তামিম ইকবাল।
রিপোর্টিং টাইম ৯ টা।
তাই বাকি সবার জন্য অপেক্ষা করছেন।
আর ভাবছিলেন,ইংলিশ গ্রীষ্মের কথা।
গ্রীষ্মকাল বললে আমাদের দেশের মানুষের মনে যে দৃশ্যপট কল্পিত হয় ইংলিশ গ্রীষ্ম ঠিক তার উল্টো।
এইতো দিন দুয়েক আগে মুস্তাফিজ বলছিল ওর মা কে ও কিছুতেই বোঝাতে পারছিল না এখানে গ্রীষ্মকালে আমাদের মত গরম পড়ে না।
খাল্লাম্মা তো দু'তিনবার করে গোসল করারও উপদেশ দিলেন। :D
ঠান্ডার প্রকোপ খুব বেশি না।
তবে এই হাল্কা ঠান্ডাও যেন গায়ের জ্যাকেট ফুঁড়ে গায়ে শিরশিরে অনুভূতি ধরিয়ে দিচ্ছে।
তাই কফির কাপে চুমুক দিয়ে একটু নির্ভার বোধ করার চেষ্টা।
নির্ভার থাকতে চেয়েও এত বড় ম্যাচের টেনশন একটু তো থাকেই।
তাই মাথার মধ্যে আসা অগোছালো চিন্তাগুলো বেশ ভালই লাগছে।
ওইযে মাশরাফি ভাই এসে গেছেন।
যাওয়ার সময় একটু খোঁচাও দিয়ে গেছেন।
তাসকিন আর সৌম্যর সাথে খুনসুঁটি করছেন।
কি প্রাণোচ্ছল ,ফুরফুরে লাগছে তাঁকে।
অথচ গত রাতে সবাই যার যার রুমে চলে গেলেও উনি নিজের রুমে পায়চারি করছিলেন।
গভীর রাতে কফি খাওয়া আমার বদভ্যাস।
তখনই উনার রুমে বাতি জ্বলতে দেখে উকি দিয়েছিলাম।
হয়ত ভারত বধের জন্য নতুন কোন টোটকা খুঁজে ফিরছিলেন।
এই দলটার সাথে আমার সুখস্মৃতি ই তো বেশি।২০০৭ এ তখন আগাগোড়া কিছু না বুঝেই কিভাবে যে ওদের বোলারদের বেধড়ক মেরেছিলাম এখনও ভাবতেই নিজের কাছেই অবাক লাগে।অথচ আজ কিনা টেনশন হচ্ছে??!!!
হবে নাই বা কেন??
এখন আমি তো দলের সিনিয়র।
আমার উপর অনেক দায়িত্ব এখন।
ওইযে মিরাজ,মোসাদ্দেকরা হাসি-ঠাট্টায় মেতে আছে এখন।
২০০৭ এর বিশ্বকাপগামী টিমে তো আমিও সারাক্ষণ এমনই করতাম।
সিনিয়রদের কাছে আবদার করতাম,মন খারাপ থাকলে উনারা এসে মন ভাল করে দিতেন।
এখন এ দায়িত্বগুলো আমাকেও পালন করতে হয়।
তাইতো ভেতরের নার্ভাসনেস টা কাউকে বুঝতে না দিতে একটু একটু হাসার চেষ্টা করছি।
তবু একজনের কাছে ধরা খেয়ে যাবই।
সাকিব।
আপনারা যাকে 'বাংলাদেশের জান' বলে ডাকেন।
একটু আগেই বলে গেল,'একা একা বইসা থাকলে টেনশন ভর করবে।
আররে বেটা তোর সামনে টূর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার সুযোগ।
আরেকটা সেঞ্চুরী মাইরা দিস।
আর আমি ৩-৪ টা উইকেট পাইলেই এই ম্যাচটা জিতব।'
কত সহজ-সরল ওর চিন্তা ভাবনা।
এইজন্যই হয়ত ও বিশ্বসেরা।
রুবেল হোটেল লবির এককোণায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে।
এরপর কেমন হাস্যকর একটা 'ড্যাম কেয়ার' ভঙ্গিতে হেঁটে চলে গেল।
দেখে যে কেউ মনে করবে ওর মধ্যে কোন ভাবলেশ নেই।
অথচ আজকে এত বড় একটা ম্যাচ!
কিন্তু আমি জানি সবুজ মাঠে সাদা বলটা হাতে নেয়ার পর এই রুবেলই নিজেকে নিংড়ে দিবে।
সোজা কথায় ডাইরেক 'ভাইংগা' দিবে। :D
গত রাতে ডিনারের সময় কোহলির সাথে দেখা হয়েছিল।
বেশ সময় নিয়ে কথা হল।
ওর অ্যাটিটিউড আর আক্রমণাত্মক যে রূপটা আমরা মাঠে দেখে অভ্যস্ত আসলে ভেতরের মানুষটা বোধহয় এতটা খারাপ না।
আমার দুয়েকটা সমস্যার সমাধানও দিল।
আমার অষ্ট্রেলিয়ার সাথে করা ৯৫ রানের ইনিংসটার বেশ প্রশংসা করল।
ডিনার শেষে যাওয়ার সময় রসিকতা করে একটা কথা বলল,'কাল কিন্তু কোন ছাড় দেব না'।
কথাটা মনে পড়তেই কেমন হাসি পেল।
কেন যেন ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে গেল।
টিম বাসে সবাই উঠে পড়েছে।
মাশরাফি ভাই ডাকছেন।
ব্যাটটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
নিজেকে নিজেই যেন বললাম,'কোন ছাড় দেব না'। :)
(ইহা একটি কল্পিত দৃশ্যপট মাত্র।ইহার সাথে বাস্তবতার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।) ;)
- 0 মন্তব্য