• ক্রিকেট

কার্ডিফের সেই জ্বলজ্বলে স্মৃতি!

পোস্টটি ২৫৩৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

রুপকথার গল্পকেও হার মানায় কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনের গল্প! স্বপ্নের থেকেও অনেক বেশী, কল্পনাতীত; কোন কিছু বলেই কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়কে বিশেষায়িত করা যাবে না। আর ১৮ জুন, ২০০৫ সাল দিনটিও ভুলবার নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই দিনটি। এই দিনেই যে রচিত হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া বধের মহাকাব্য!

দীর্ঘ এক যুগ পরেও কার্ডিফের এই ম্যাচটি হয়ে আছে অস্ট্রেলিয়াকে যেকোন ধরনের ক্রিকেটে হারানোর একমাত্র সুখস্মৃতি, অথচ বাকী সকল টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে জয় রয়েছে একাধিক। কিন্তু কার্ডিফ জয়ের পর থেকেই অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর স্বপ্ন রয়ে গেছে অধরা!

কার্ডিফের সেই রূপকথার ম্যাচে টস জিতে রিকি পন্টিং ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেন। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই মাশরাফির বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন গিলক্রিষ্ট। বলে রাখা ভালো, দুই দলের মধ্যে মাশরাফি একমাত্র খেলোয়াড় যিনি এখনও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলে যাচ্ছেন। পুরো ম্যাচজুড়ে দারুণ ছন্দে ছিলেন ‘ম্যাশ’। ষষ্ঠ ওভারেই তাপস বৈশ্য এর বলে এলবিডব্লিউর শিকার ইনিংসের শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা পন্টিং। স্কোর দাঁড়ায় ৯ রানে ২ উইকেট। উইকেটে তখন হেইডেন এবং ড্যামিয়েন মারটিন, অবশ্য পুরো অস্ট্রেলিয়া দলই তখন তারকায় ঠাসা! পেসার নাজমুল হোসেন যখন হেইডেনকে ফেরায় ক্যাঙ্গারুদের সংগ্রহ তখন ৫৭/৩। তারপর ড্যামিয়েন মারটিন, মাইকেল ক্লার্ক, মাইক হাসিদের কল্যানে ক্যাঙ্গারুদের সংগ্রহ ২৪৯/৫।

পন্টিংয়ের পর দুই সর্বোচ্চ স্কোরার ড্যামিয়েন মার্টিন ও মাইকেল ক্লার্ককেও ফিরিয়েছিলেন তাপস বৈশ্য, উইকেট পেলেও বৈশ্য ছিলেন খরুচে। উইকেট বিহীন থাকলেও মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন মোহাম্মদ রফিক। শুরু থেকেই লাগাম টেনে ধরা বাংলাদেশের সঙ্গে ২৪৯ রানের স্কোরটা তো মোটামুটি নিরাপদই ভেবেছিলো অস্ট্রেলিয়া! ম্যাকগ্রা, গেলেস্পি, কাসপ্রোইজ, ব্র্যাড হগের সমন্বয়ে গড়া বোলিং আক্রমণ; তাই প্রবল পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৫০ রান করা তখন অলীক কল্পনা।

শুরুতেই নাফিস ইকবাল আউট হয়ে গেলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন জাভেদ ওমর ও তুষার ইমরান। কিন্তু তুষার ইমরানের দ্রুত বিদায় এবং জাভেদ ওমরের শম্ভুকগতির ছোট্ট ইনিংস শেষে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ, স্কোর দাড়ায় ২১ ওভার শেষে ৭২/৩। উইকেটে তখন আশরাফুল ও হাবিবুল বাশার, আস্কিং রানরেট বেড়ে ৬ এর উপরে! এখান থেকেই ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে ডেভ হোয়াটমোর শিষ্যরা।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ  রানের জুটি (১৩০ রান) গড়ে ব্যক্তিগত ৪৭ রান করে রানআউটে কাঁটা পড়ে যখন সাঝঘরে ফিরছেন হাবিবুল বাশার বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩৭ বলে ৪৮ রান। আশরাফুল আফতাবকে নিয়ে গড়লেন ২৫ রানের কার্যকারী এক জুটি। আশরাফুল ফিরলেন নিজের শতরান পূর্ণ করে, নিজের ৫০ তম ম্যাচে এসে করলেন প্রথম শতরান। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মেহরাব হোসেন অপির পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে শতক হাঁকালেন ‘টেস্ট ক্রিকেটের কনিষ্টতম সেঞ্চুরিয়ান’।

পুরো ইনিংস জুড়েই আশরাফুল খেলেছেন মনোমুগ্ধকর সব শট, পেয়েছেন ম্যান অব দি ম্যাচের পুরষ্কার। আশরাফুলের এই ইনিংসটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ম্যাচ উইনিং ইনিংস। আশরাফুল যখন সেঞ্চুরী করে আউট হয়ে ফিরছেন ততক্ষনে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ, প্রয়োজন ১৭ বলে ২৩ রান। উইকেটে আফতাবের সঙ্গী রফিক, বল ও রানের হিষাব কষে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৭ রান, বল হাতে জেসন গেলেস্পি। প্রথম বলেই লংঅনের উপর দিয়ে ছক্কা, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ছয় মেরে আফতাব হয়ে গেলেন ইতিহাসের অভিচ্ছেদ্য অংশ! পরের বলেই ১ রান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের জয়।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ১০৮ তম ম্যাচে এসেছে ১০ম জয় কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন মানেই বাংলাদেশের অমর এক রূপকথার গল্প!  gallery17a