• ফুটবল

Dynamite-Boy detonates at Maracanã

পোস্টটি ৩১৫১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

FB_IMG_1502464168215 

১৯৭৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর,

বার্সেলোনা তাদের ১৩ তম ম্যাচে খেলতে নামে। সান মামেসে এথলেটিক  বিলবাওয়ের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারে তারা যেটি ছিল তাদের ৫ম পরাজয়। লীগ টেবিলে তাদের অবস্থান ১০ম। যৌথভাবে শীর্ষে থাকা রিয়াল এবং সোসিয়াদের থেকে ৯ পয়েন্ট পিছনে এবং রেলিগেশনে থাকা বারগোসের থেকে মাত্র ২ পয়েন্ট এগিয়ে। বার্সেলোনা তাদের ইতিহাসের ভয়ংকর বাজে সময় পার করছে..........

 

বার্সেলোনা সভাপতি যোসেফ লুইজ নুনেজ বহিষ্কৃত হলেন। দায়িত্ব নিলেন হুয়ান গাস্পার্ট।  গাসপার্ট ডুবে যাওয়া তরী বাঁচাতে উঠেপড়ে লাগলেন। তিনি খুজতে লাগলেন এমন একজনকে যে কি না তার ডুবন্ত তরীকে পুনরায় ভাসাতে এবং সচল রাখতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে। একজন "পারফেক্ট নাইন" এর খোঁজ শহর থেকে শহর,দেশ থেকে দেশ এমনকি মহাদেশ থেকে মহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত করলেন!!

শেষ পর্যন্ত তিনি খুঁজে পেলেন তার দলের সারথীকে। ফুটবলের আতুরঘর থেকে তুলে আনলেন সে দেশের সব থেকে প্রতিভাবান এবং ভয়ংকর স্ট্রাইকারকে।

সে সময় ফুটবল এতটা বৈশ্বিক ছিল না। আজকের মত এত সহজে ইংলিশ লিগ কিংবা ইতালিয়ান লীগের খেলা দেখা যেত না। এরকম যখন অবস্থা, তখন ব্রাজিল থেকে একজন ফরোয়ার্ড খুঁজে বের করা অলৌকিক ব্যাপার।

কিন্তু গাসপার্ট সেই অলৌকিক কাজ করলেন এবং সে সময়ের ব্রাজিলের সেরা গোল স্কোরার এবং ভাস্কো দা গামার দশক সেরা ফুটবলারকে ন্যু ক্যাম্পে নিয়ে আসলেন তিনি।

 

অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বার্সেলোনায় যোগ দিলেন ব্রাজিলীয়ান হীরা। দলের কাছে তখন তিনি ত্রাণকর্তা। ১৯৮০ সালের ৩রা জানুয়ারি বিকালে গাসপার্ট সমর্থকদের দিলেন ক্রিস্টমাস প্রেজেন্ট। নিশ্চিত করলেন ভাস্কো-বয়ের বার্সেলোনার যোগ দেওয়ার ব্যাপারটা। পরেরদিন স্পোর্ট এবং মুন্ডো দোপোরতিভো তাদের শিরোনামে  পুরো স্পেনকে জানিয়ে দিল বার্সেলোনার রক্ষাকর্তার কথা । প্রায় ৫৬ মিলিয়ন পেসেতাস এর বিনিময়ে এ চুক্তি সম্পন্ন হয়। বার্সা সভাপতি বেশ দম্ভসহকারে জানিয়ে দিলেন, রিয়াল মাদ্রিদের রাজত্ব ভেংগে দিতেই এই ব্রাজিলিয়ানকে দলে ভিড়িয়েছে তারা (রিয়াল এর আগের ৬ মৌসুমের ৫ টি তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল)

 

ব্রাজিলিয়ান তারকাও বার্সেলোনায় তার পরিচিতি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 

      "আমি বার্সেলোনায় যোগ দিতে পেরে খুব খুশি এবং এখানে আমি অনেক গোল করব"

 জানুয়ারির ৪ তারিখে কাতালুনিয়ায় পা রাখেন তিনি। এখানে এসেই বুঝতে পারেন কতটুকু প্রত্যাশার চাপ তার কাঁধে। 

নিজের প্রথম ম্যাচেই এস্তেবানের সাথে ড্র করে বার্সেলোনা। পরের সপ্তাহে সারিয়ার বিপক্ষে ০-২ গোলে হেরে বসে বার্সা।

শেষ পর্যন্ত ২০শে জানুয়ারি আসে সেই শুভক্ষন!

ন্যুক্যাম্পে আলমেরিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতে বার্সেলোনা। যেখানে দুটি গোলই আসে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের পা থেকে। ৭৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে এবং স্টপেজ টাইমে গোল লাইন থেকে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করেন। গোল করলেও পুরো খেলায় নিজের ছাপ রাখতে পারেন নি তিনি। 

এরপর থেকেই তার উপর যা প্রত্যাশা করা হয়েছিল তার সিকিভাগও পূরণ করতে পারছিলেন না তিনি। একের পর এক হতাশা উপহার দিচ্ছিলেন সমর্থকদের।

কিন্তু ইউরোপা সুপারকাপের প্রথম লেগের ম্যাচে নটিংহামের বিপক্ষে হারার পর সকল সমালোচনার তীর আসতে লাগল এই ব্রাজিলিয়ানের দিকে। 

কন্টিনেন্টাল সুপারকাপের দ্বিতীয় লেগে ফরেস্টের বিপক্ষে তিনি করেন নিজের ৩য় গোল যেটি আবার পেনাল্টি থেকে।

 

বার্সেলোনা তাদের ইতিহাসের সব থেকে বাজে অবস্থা কাটানোর জন্য যাকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি সমর্থকদের চাপ কাঁধে নিতে পারছিলেন না। সংবাদপত্রগুলো তার বিরোদ্ধে একের পর নির্দয় সমালোচনা প্রকাশ করে চলছিল। 

অবস্থা দিন দিন আরও বেগতিক হয়ে পড়ছিল। 

বরখাস্ত হন কোচ য়োয়াকিন রিফে। দায়িত্ব পান হেলেনিও হেরেরা।

 

ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডেরও বার্সেলোনা অধ্যায় সমাপ্তির দিকে। ইস্তাদিতে গোল শূণ্য ড্র করে বার্সেলোনা যার পুরো দায় কোচ তাকে দেন। ৬৩ মিনিটে কোচ যখন তাকে তুলে নিচ্ছিল তখন উপস্থিত দর্শকরা তাকে 'ব্যু' দেয়া সহ বিভিন্ন বিদ্রুপাত্বক আওয়াজ করতে থাকে। 

১২ই মার্চ যখন বার্সা সোসিয়াদের বিপক্ষে ৩-০ গোলে বিদ্ধস্ত হয় তখনই তিনি আবারও ব্রাজিলের রাস্তা ধরেন। ২৭ মিলিয়ন পেসেতাস এর বিনিময়ে আবারও ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেন।

সে মৌসুমে বার্সা নবম স্থানে থেকে লীগ শেষ করে।

 

এই ব্রাজিলীয় ফুটবলারের সংক্ষিপ্ত বার্সেলোনা অধ্যায়ে ছিল ১০ টি ম্যাচ, ৩ গোল, অনেক সমালোচনা এবং বার্সার ৩০ মিলিয়ন পেসেতাসের ক্ষতি। কিন্তু সব থেকে মজার বিষয় হল, এগুলো ঘটেছিল কেবলমাত্র ৭ সপ্তাহের মাঝে।

ভৌতিক....

 

ঘরে ফিরে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নিজের মাঠি, আবহাওয়া পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন। ১৯৮০ সালের ৫ই মে মারাকানাতে তার দল ভাস্কো দা গামা মুখোমুখি হয় করিন্থান্সের। সেদিন ভাস্কো ৫-২ গোলে জয় লাভ করে। আশ্চর্য এর বিষয় হল, ভাস্কোর ৫ টি গোলই আসে সেই ব্যার্থ ফুটবলারটির পা থেকে যে কিনা বার্সায় এত নির্দয় সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। 

 

২ বছর পর বার্সেলোনা তাদের দ্বিতীয় ব্রাজিলিয়ান এক্সপেরিমেন্ট  ক্লিওকে ১৫ মিলিয়ন পেসেতাস এর বিনিময়ে দলে ভেড়ায়। কিন্তু বার্সায় তার স্থায়িত্বকাল কেবল এক ম্যাচের। এরপর আলোসিও নামক আরেক ব্রাজিলীয়কেও দলে টানে বার্সা সেও সফল হতে পারে নি।

এরপর ৫ বছর কেটে যায়। বার্সেলোনার ব্রাজিলভাগ্য যখন হতাশার তখন তারা আরও এক ব্রাজিলিয়ানকে দলে ভেড়ায়। নাম  যার,,,,,,,,,

রোমারিও ফারিয়া

ইনিই প্রথম ব্রাজিলিয়ান যিনি কিনা কাতালুনিয়ার ক্লাবটিতে প্রথম সফল ব্রাজিলিয়ান। 

যখন তাকে তার আদর্শ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তখন তিনি সবাইকে বিস্মিত করে দেন। তার উত্তর ছিল,

কার্লোস রবার্তো ডি অলিভিয়েরা.....

হ্যা,ইনিই সেই ব্যাক্তি যাকে কিনা বার্সেলোনা ইতিহাসের সব থেকে বাজে সাইনিংগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইনিই সেই যার বার্সেলোনা ক্যারিয়ারের ব্যাপ্তি ছিল ১০ টি ম্যাচ আর অবদান তিনটি গোল!!!

ইনিই সেই ব্যাক্তি যাকে পুরো বিশ্ব

রবার্তো 'ডিনামাইট' নামে চিনে এবং

সর্বকাল এর অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে শ্রদ্ধা করে।

 

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো অংগরাজ্যের ডক দি কাক্সিয়াসে শহরে ১৯৫৪ সালের ১৩ই এপ্রিল জন্মগ্রহন করেন তিনি।

রিও ডি জেনেইরোর বিখ্যাত ক্লাব ভাস্কো দা গামার ইয়ুথ একাডেমীতে নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন।

 

১৯৭১ সালের ২৫শে নভেম্বর ভাস্কোর মূল দলের হয়ে ক্যারিয়ারের গোড়াপত্তন করেন রবার্তো।ইন্টারন্যাসিওনাল এর বিপক্ষে মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত, নিজের প্রথম ম্যাচেই নিজের প্রতিভার ঝলক দেখান তিনি।

সেদিন রবার্তো ১ টি দর্শনীয় গোল করেন। 

যা দেখে Jornal dos Sports এর সাংবাদিক এপারসিও পেরেস তাকে "ডিনামাইট" বলে আখ্যায়িত করে। পরেরদিন পেরেস সংবাদপত্রের কলামে লিখেন,

       "Dynamite-Boy detonates at Maracanã.

        'ডিনামাইট- যেটি মারাকানায় বিস্ফোরিত হয়েছে"

 

ডিনামাইট তার ফুটবল ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছেন ভাস্কো দা গামায়। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় এবং মাঝখানে ৬ মাসের বার্সেলোনা সফর শেষ করে পুনরায় ভাস্কোতে যোগ দেন। এবং ৮০ এর দশকের পুরোটাই কাটান ভাস্কোতে। সেই সাথে ভাস্কো দা গামাকে উপহার দেন একের পর এক শিরোপা!

হতাশ করে নি, ভাস্কো সমর্থকরাও...

তাদের ইতিহাসের বইয়ের প্রথম পৃষ্টাতেই যে স্থান এই ভদ্রলোকের যিনি কিনা ঈশ্বরপ্রদও প্রতিভার সাথে নিজের কঠোর অধ্যবসায়ের নৌকায় চেপে জিতে নিয়েছেন সকলের মন।

ভাস্কো দা গামার ২০ বছরের ক্যারিয়ারে গোল করেছেন ৬৯৮ টি। ভাস্কোর ইতিহাসের সব থেকে বেশি গোল করার রেকর্ডটা ২৭ বছর ধরে নিজের দখলে রেখে যাচ্ছেন। শুধু ভাস্কো কেন ব্রাজিলের ঘরোয়া লীগ ব্রাসিলিও সিরি আ এরও সর্বকাল এর সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। সিরিআতে ৩২৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৯০ গোল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রোমারিও এর গোল সংখ্যা ১৫৪।

 

এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি,

অদূর ভবিষ্যিতে তার এই রেকর্ড কেউ ভেংগে দিতে পারবে না। বর্তমান খেলা চালিয়ে যাওয়া খেলোয়াড়দের মাঝে সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্লুমিনেন্স তারকা ফ্রেড যার গোলসংখ্যা মাত্র ১০৭। 

 

ভাস্কোর হয়ে দুই ইনিংস মিলিয়েও ব্রাসিলিও সিরি আ ট্রপি জিতেছেন কেবল একবার তাও ১৯৭৪ সালে।মারাকানায় অনুষ্টিত হওয়া ফাইনালে ক্রুজিইরোকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপাতে চুমু আকেন রবার্তো ডিনামাইট। সেবার সান্তোস,ফ্ল্যামেংগো,গ্রেমিও,করিন্থানস এর মত পরাশক্তিদের টপকে শিরোপার স্বাদ নেওয়া ভাস্কোর তুরুপের তাস ছিলেন তরুন রবার্তো ডিনামাইট .।।।।

এছাড়া ৫ বার কম্পিনাতো কারিওকার শিরোপা জিতে ভাস্কো এবং ডিনামাইট। 

 

সফল ক্লাব ক্যারিয়ারের কারনে ডাক পান ব্রাজিল জাতীয় দলে। তৎকালীন ব্রাজিল দলে ছিল অসাধারন সব খেলোয়াড়।। রিভেলিনো,জিকো,সক্রেটিস,সেরেজো,ফ্যাল্কাও,এদের,জুনিয়র,কারিকা,সারজিনহো দের মত প্রতিভাবান সব ফুটবলার তখন ব্রাজিলের জার্সি গায়ে মাতিয়ে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্ব।

তবে ১৯৭৫ সালে ব্রাজিল দলে সুযোগ পেয়ে যান। সে বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর পেরুর বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। 

তবে গোল পেতে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয় তার। ঠিক ৭মাস পর ২৩শে মে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের প্রথম এবং জয়সূচক গোলটি করেন।

 

১৯৭৮ বিশ্বকাপে ক্লদিও কৌতিনহো রিভেলিনো,জিকো, ডিরেকু,সারজিনহো দের নিয়ে দল গড়েন কিন্তু বাদ পড়ে যান ডিনামাইট। তবে তাকে রিজার্ভ খেলোয়াড়দের তালিকায় রাখেন কোচ ক্লদিও। তবে ভাগ্যে যার স্বপ্নের বিশ্বকাপ খেলার তাকে ফেরায় কে!  পারেন নি কৌতিনহোও!!

ভাগ্যের জোড়েই ডাক পেয়ে যান মূল আসরে খেলার। আর সেই আসরে ব্রাজিলের হয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে তিনটি গোল করেন।

প্রথম রাউন্ডে তারকাখচিত ব্রাজিল প্রথম দুই ম্যাচ ড্র করে ধুকতে থাকে । দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে শেষ ম্যাচে অষ্ট্রিয়ার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। আর সেই ম্যাচে আরেকবার বিস্ফোরিত হন ডিনামাইট এবং জয়সূচক গোল করেন।

এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে পোল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করেন তিনি। তবে সেই আসরে শিরোপা জেতা হয় নি ব্রাজিলের। তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় রিভেলিনো বাহিনীকে।

 

১৯৮২ বিশ্বকাপও ব্রাজিলের হয়ে খেলার কথা ছিল না তার। টেলে সান্তানার করা ২৩জনের স্কোয়াডে নাম ছিল না সেই সময়ের সব থেকে ভয়ংকর স্ট্রাইকারের। তবে আবারও আশীর্বাদ হয়ে এল ভাগ্যদেবী। ইঞ্জুরীতে পড়লেন আরেক ভয়ংকর ফরোয়ার্ড কারেকা। আর টেলে সান্তানা ডাকলেন ২৮ বছর বয়সী ভাস্কো-বয়কে।

   " স্বপ্নের দল নিয়ে, স্বপ্নের ফুটবল উপহার দেওয়ার পরেও স্বপ্নের বিশ্বকাপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের ইতালীর কাছে হেরে দুঃস্বপ্নের মত করে বিদায় নেয় 'জগো বনীতো'র সারথিরা"

 

-সেদিন মাঠে ছিলেন না ডিনামাইট, ছিলেন বেঞ্চে। আর বেঞ্চে থেকেই সাক্ষী হয়েছিলেব সারিয়া ট্র‍্যাজেডির যা মঞ্চস্থ হয় স্পেনের অন্যতম বড় শহর বার্সেলোনায়।

কি? মনে পড়েছে কিছু?

এ তো সেই বার্সেলোনা যেখানে এসে নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় ট্র‍্যাজেডির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন শত নির্দয় সমালোচনা আর প্রত্যাশার পর্বতসম চাপ।

ব্রাজিলের হয়ে ১৯৮৩ কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতা নির্বাচিত হন ডিনামাইট। তবে এবারও কোপা শিরোপা জিততে পারে নি ডিনামাইটের ব্রাজিল। রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। ভাগ্য সর্বদা সহায় হলেও তার শিরোপা ভাগ্যটা বেশ নির্দয়ই বলা চলে। 

সে যাইহোক,

ব্রাজিলের হয়ে ৯ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৭ ম্যাচে ২৫ গোল করেছেন এই কিংবদন্তী ফরোয়ার্ড। এর মাঝে ৩৮ টি ম্যাচ ছিল জাতীয় দলের বিপক্ষে এবং বাকিগুলো বিভিন্ন ক্লাব এবং সম্মিলিত দলের বিপক্ষে। ৩৮টি ম্যাচের মাঝে আবার ২০টি ছিল ফিফা অফিসিয়াল ম্যাচ আর অবাক করা ব্যাপার হলে তার করা ২৫টি গোলের ২০টিই এসেছে এই ২০ অফিসিয়াল ম্যাচে। 

১৯৮৪ সালের জুন মাসে ব্রাজিলের হয়ে তার ক্যারিয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেন। তবে ব্রাজিলের হয়ে উল্লেখযোগ্য কোন ট্রপি জয় কিরতে পারেন নি ক্লাব ফুটবলের এই মুকুটহীন সম্রাট। 

 

ভাস্কোর হয়ে রবার্তো যেমন ডিনামাইটের মত বারবার বিস্ফোরিত হয়ে দলকে জিতানোর মত প্রায় সব কিছুই জিতেছেন তেমনি নিজেও পেয়েছেন বহু শিরোপার স্বাদ।

তবে নিজের আপনঘর ছেড়ে ১৯৮৯ সালে যোগ দেন পর্তুগুয়েজাতে। এখানে দুই মৌসুম কাটান ভাস্কোর ঘরের ছেলে। এখানে এসেও নিজের সহজাত অভ্যাস ভুলে যান নি। পর্তুগুয়েজার হয়ে ১১ বার প্রতিপক্ষের জাল কাপান তিনি।

এরপর আবারও ১৯৯০ সালে ভাস্কোতে ফিরে আসেন। মাত্র ৪টি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান।

১৯৯১ সালে ক্যাম্পো গ্রান্দেতে এক সিজন খেলে ১৯৯২ সালে ভাস্কো দা গামার হয়েই নিজের সোনায় মোড়ানো বুটজোড়া তুলে ধরেন। ভাস্কোর হয়ে গোল করেছেন অগণিত...

তার গোলের উদযাপনে গলা ফাটিয়েছে লাখ ফুটবল ভক্ত...

গোলবারের জাল আর তার মাঝে ছিল অসাধারন বোঝাপড়া আর বন্ধুত্ব। আর সেই বোঝাপড়ার সমাপ্তি ঘটে ১৯৯২ সালের ২৬ শে অক্টোবর। সেদিনই ক্যারিয়ারের শেষ গোলটি করেন স্যার রবার্তো ডিনামাইট। 

দলগত অনেক অর্জনের পাশাপাশি তার ব্যাক্তিগত অর্জনের শোকেসটাও পরিপূর্ণ। ১৯৭৪ এবং ১৯৮৪ সালে, ১০বছরের অন্তরে দুইবার ব্রাসিলিও সিরিআর সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। তিনবার ব্রাজিলের সেরা খেলোয়াড় হয়ে "বোলা দা প্রাতা" জিতেন রবার্তো ডিনামাইট। ১৯৮৫ সালে ক্রিড়া সংবাদপত্র জর্নাল ডস স্পোর্ট তাকে Maior Ídolo do Rio (Rio's Greatest Idol) সম্মাননা দেয়। একই বছর এই সংবাদপত্রটি Craque do Brasil (Outstanding player of Brazil) এওয়ার্ড দেয়। 

 

১৯৯৩ সালের ২৪শে মার্চ মারাকানায় নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেন তিনি। স্প্যানীশ ক্লাব দোপরতিভো লা করুনার বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচটি ছিল তার ফুটবল জীবন নিয়ে উপন্যাসের শেষ পাতা। সেদিন তার সাথে মাঠে উপস্থিত ছিলেন আরেক কিংবদন্তী জিকো। 

   "এই সেই মারাকানা যেই মারাকানাতে বিস্ফোরিত হয়েছিলেন এবং এরপর ২৫ বছর দাপিয়ে বেরিয়েছেন ফুটবল মাঠ আর কাঁপিয়েছেন প্রবল প্রতিপক্ষকে। বার্সেলোনায় ব্যার্থ হয়ে যখন নুয়ে পড়েছিলেন তখন এই মারকানাতে এসেই আবারো আগ্নেয়গিরির মত প্রবলভাবে বিস্ফোরিত হয়ে ছিলেন তিনি। কার্লোস রবার্তো অলিভিয়েরা এই মারাকানাতেই পেয়েছেন নিজের আত্নপরিচয় আর হয়েছেন রবার্তো 'ডিনামাইট'"

 

 

ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন গোলরক্ষকদের এই ত্রাস। এছাড়া ভাস্কো দা গামার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।

 

শ্রদ্ধা জানাই 

গ্রেট কার্লোস রবার্তো দে অলিভিয়েরাকে.....

যিনি রবার্তো "বিস্ফোরক" নামেই সর্বজন পরিচিত....