• ক্রিকেট

স্যাম্পল হাথুরুসিংহে : পর্ব ১

পোস্টটি ১১৯৪২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে হাথুরুসিংহে একটি ব্যক্তি, নাকি সিস্টেমের নাম এ নিয়ে প্রায়ই ভাবি। মানুষ বিষয়েই আমার ব্যক্তিগত জীবনে গভীর ফ্যাসিনেশন এবং অবসেশন কাজ করে, তার প্রতিফলনেই সম্ভবত হাথুরুসিংহে ক্রিকেট কোচের চাইতে একজন ইন্টারেস্টিং মানুষ হয়ে উঠেন আমার কাছে, আমি তার একশন নয়, ইনটেনশন বোঝার চেষ্টা শুরু করি, অর্থাৎ কী করেছেন এর পরিবর্তে কেন করেছেন সেই সূত্রগুলো খোঁজার চেষ্টা করি, এবং কিছু হাইপোথেসিসে পৌঁছাই। হাইপোথেসিস কোনো প্রমাণিত সত্য নয়, এজাম্পশনমাত্র। এই পয়েন্টে পৌঁছানোর পূর্বে ইংরেজিতে ‘Hathurusinghe’ এবং বাংলায় ‘হাথুরুসিংহে’ লিখে গুগলে সার্চ দিই এবং ১১টি সাজেস্টেড পেজ পর্যন্ত গিয়ে যে সকল রিসোর্স পাই সবগুলোই পড়ে নিই, এর মধ্যে থেকে যেগুলো সরাসরি কাজে লেগেছে সেগুলোর লিংক লেখাশেষে দিয়ে রাখছি। মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে হাথুরুসিংহে,আমার বিবেচনায়, খুবই গ্ল্যামারাস একটি স্যাম্পল।


হাথুরুর ব্যক্তি ম্যাপিং: 

হাথুরু সীমিত মেধার একজন ক্রিকেটার ছিলেন, শ্রীলংকার ক্রিকেট ইতিহাসে তার নামের সংযোজন-বিয়োজনে এমন কিছুই আসবে যাবে না; বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘এহসানুল হক সেজান’ যে ক্যালিবার বহন করে, শ্রীলংকাতে হাথুরুও তা-ই। মূলত ওপেনিং ব্যাটসম্যান ছিলেন, তাও সেটা রোশান মাহানামার প্রক্সি হিসেবেই বেশি; জয়াসুরিয়া ওপেনার হয়ে গেলে তার জায়গা হয় মিডল অর্ডারে, সাথে কাজ চালানোর মতো বোলিং। এই ক্যালিবার নিয়ে তখনকার প্রমিজিং শ্রীলংকান দলে বেশিদিন টিকবার কারণ ছিলো না, সেও হারিয়ে গেছে।

তবে হাথুরুর এক্সিলেন্স এখানেই যে সে বুঝতে পেরেছিলো মিডিওকর খেলোয়াড়ই মেধাবী কোচ হয় সাধারণত, কারণ তারা স্ট্রাগল আর ক্রাইসিসটা অনুধাবন করতে পারে, যেটা প্রতিভাবানদের এন্টেনার ওপর দিয়ে যায়; তারা মনে করে ‘এটা তো এমনি এমনি হয়ে যাওয়ার কথা’। হাথুরু কোচিংয়ে নেমে পড়ে; আরব আমিরাতের কোচ হয়, এখনকার অধিনায়ক আমজাদ জাভেদ তখন অফস্পিন করতো, হাথুরু তাকে পেস বোলার হওয়ার পরামর্শ দেয়, এবং সম্প্রতি যারা আরব আমিরাতের খেলা দেখেছেন তারা জানেন দলীয় অধিনায়ক আমজাদ জাভেদ একজন পুরোদস্তুর পেস বোলার।

হাথুরুর মাঝে সম্ভাবনা দেখেছিলেন শ্রীলংকান বোর্ড, তাকে বানানো হয় শ্রীলংকার ‘শ্যাডো কোচ’ যে ভবিষ্যতে হেড কোচ-এ উন্নীত হবে একদিন। থিলান সামারাবিরা, এঞ্জেলো ম্যাথিউস, কান্দাম্বি প্রত্যেকে তাদের ব্যটিং উন্নতির জন্য হাথুরুর প্রশংসা করেছে, এমনকি মুরালিধরনও নিজের বোলিংয়ে হাথুরুর কিছু অবদানের কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট থেকে মাঝপথে দেশে ফিরে আসে হাথুরু, লক্ষ্য ছিলো অস্ট্রেলিয়াতে লেভেল থ্রি কোচিং করবে। তৎকালীন বোর্ড ডিসিপ্লিনারি ইস্যুতে তাকে বরখাস্ত করে।

হাথুরু অস্ট্রেলিয়াতে সেটেলড হয় স্ত্রী সন্তান নিয়ে এবং সেখানকার বিভিন্ন ক্লাবে কোচিং করাতে থাকে। 

এই তথ্যগুলোকে পর্যালোচনা করে হাথুরুর যে ৩টি প্রধান বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়: এম্বিশন, পর্যবেক্ষণ, ইনটিউশন 

কোচ হিসেবে হাথুরু কেন: 

আমি ক্রিকেট অনুসরণ করি ১৯৯৬ এর বিশ্বকাপ থেকে, বাংলাদেশের খেলা সংক্রান্ত সিরিয়াসনেস আসে ৯৭ এর আইসিসি ট্রফি পরবর্তী জোয়ার থেকে। সেই সময়ে বাংলাদেশের কোচ ছিলেন গর্ডন গ্রীনিজ। তার আগে যারা কোচ ছিলেন চাইলে তাদের নামও উল্লেখ করা যায়, কিন্তু তখন যেহেতু খেলা দেখতাম না, ওই অংশটুকু ওভারলুক করলাম। গর্ডন গ্রীনিজ থেকে শুরু করে হাথুরুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ ছিলেন যারা তাদের একটা সামারি দাঁড় করানো যায় এমন:

-গর্ডন গ্রীনিজ: আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়ার কমিটমেন্ট করেন। পরবর্তীতে টেস্ট স্ট্যাটাস ইস্যুতে বোর্ডের সাথে মতানৈক্য হওয়ায় তার বিদায়টা সুখকর হয়নি। 

-এডি বারলো: কোচ থাকাকালে স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে পড়েন, কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের একমাত্র অনুরাগী বিদেশী কোচ বললে তাকেই বেছে নেব। 

-ট্রেভর চ্যাপেল: মূলত চ্যাপেল ফ্যামিলির সদস্য পরিচয়টাই যোগ্যতা হিসেবে কাজ করেছে। খেলোয়াড়দের ফিটনেস বিষয়ে সিরিয়াস ছিলেন, যে কারণে আকরাম খানের মতো স্থূলকায় ক্রিকেটাদের প্রতি বিরূপ ছিলেন। 

-মহসীন কামাল ও আলি জিয়া: পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরালো করার একটা এটেম্পট থেকে ক্রিকেটের দ্বারস্থ হওয়া। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অজ্ঞানতা ও অন্ধকারের যুগ বলা যায় তাদের সময়টাকে। 

- ডেভ হোয়াটমোর: অন্তত ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে একটি প্রমিজিংৱ দল বানানোর প্রজেক্ট নিয়েছিলেন। মাল্টি স্কিলড খেলোয়াড় তত্ত্ব চেষ্টা করেছিলেন, অলক কাপালিকে লেগ স্পিনার থেকে সলিড ব্যাটসম্যান বানিয়েছিলেন। টোটাল টিম হিসেবে নয় ইনডিভিজুয়াল পারফরমার দিয়েই যে বাংলাদেশকে আপসেট ঘটাতে হবে এটা অনুধাবন করেছিলেন, এবং তার প্রেক্ষিতে মাশরাফি, আশরাফুলদের আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতেন। বেটার অফার পেয়ে অন্যত্র চলে যান। 

-জেমি সিডন্স: সীমিত মেধার ক্রিকেটারদের (রকিবুল, জুনায়েদ, ইমরুল, নাঈম, মাহমুদুল্লাহ) লয়্যালটি বা আনুগত্যকে কাজে লাগিয়ে পারফরম্যান্সে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তামিম ইকবালকে ফ্রি লাইসেন্স দিয়েছিলেন, কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতিতে বিষয়টা পলিটিক্স বা গ্রুপিং হিসেবে পরিচিত হয়, কারণ আশরাফুলের পারফরমহীনতা যে টেকনিকাল নয়, মানসিক এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আশরাফুলের ব্যাটিং গ্রিপ, পজিশন নিয়ে নানারকম চেষ্টা করেছিলেন, এবং সেসময় সাকিব-তামিম-বিকেএসপি প্রভৃতি ইস্যুগুলো মিডিয়াতে বেশি আসতো। তার বিদায়টাও সুখকর হয়নি। 

-স্টুয়ার্ট ল: যে ফুল অংকুরেই ঝরে গেল...

-জার্গেনসন: আনুষ্ঠানিকভাবে কোচ হিসেবে নিয়োগ পাননি, আপৎকালীন দায়িত্বের মেয়াদটাই বেড়েছিলো মাত্র। হোয়াটমোর আর সিডন্সের অসমাপ্ত প্রজেক্টের আউটপুট পেতে শুরু করেন।

উল্লিখিত কোচদের সামারিগুলো বিশ্লেষণ করার সাথে বাংলাদেশে কোচ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটা হাইপোথেসিস পাওয়া যায়। বোর্ড চাইতো শক্তিশালী দেশ বা বিখ্যাত খেলোয়াড়দের কাউকে কোচ বানাতে, কিন্তু ব্যাটে বলে মিলতো খুব কমই। এই সংকটের পেছনে ৫টি প্রধান কারণ অনুমান করা যায়:

-চ্যালেঞ্জের বিপরীতে মূল্যায়ন:
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের যে অবকাঠামো এবং খেলোয়াড়দের যে মাইন্ডসেট, সেই আন্ডার প্রিপারড দলকে ২০০০ সালের বিশ্বক্রিকেটে সাফল্য দেখানো বিরাট চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিলো, এবং এর বিপরীতে যে স্যালারি আর ফ্যাসিলিটিস কোচরা আশা করতো সেটা এফোর্ড করার মতো অবস্থায় বোর্ড ছিলো বলে মনে হয় না। কোচদের কাছে সব দেশের দর্শক বা বোর্ড কেবল সাফল্য চায়, অন্য কিছু নয়। ছুটির দিনে ঢাকার কিছু চিকিৎসক পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে (যেমন মানিকগঞ্জ, গাজিপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ) চেম্বার করেন, স্থানীয়রা ভাবে ঢাকা থেকে ডাক্তার এসেছে, অথচ বাস্তবতা হলো ঢাকার কম্পিটিটিভ মার্কেটে অবস্থান গড়তে অসফলরাই সাধারণত বাড়তি ইনকামের আশায় ( স্থানীয় ভাষায় বলে খ্যাপ) বিকল্প রাস্তায় হাঁটে। বাংলাদেশের কোচ পদটাও একসময় সেরকম ছিলো, শুনতে যেমনই লাগুক। 

- ক্যারিয়ার গ্রোথ স্থবিরতা:
কোচদের সিভি ভারি হয় দলের সাফল্য দেখাতে পারলে। বাংলাদেশে কোচিং করিয়ে সেই সুযোগটা ছিলো সীমিত, কারণ ইংল্যান্ডের কাউন্টি দলে কোচিং করিয়েছে এই তথ্য কাউকে বাংলাদেশের কোচ হওয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য বানালেও বাংলাদেশের কোচ ছিলাম একসময়, এই তথ্য তাকে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার কোনো ক্লাবের কোচ হওয়ার দৌড়ে একটুও এডভান্টেজ দিতো না। 

- ক্রিকেটহীনতা:
উপমহাদেশের ৪টি দেশেই ক্রিকেট বোর্ড কমবেশি রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত, এর মধ্যেও রাজনৈতিক দাপটের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকবে। বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের মাথায় ক্রিকেট ছাড়া আর সবই ঢুকতো। আপনি যদি এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন যার কর্তাব্যক্তিরা আপনি কী বলছেন সে সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা রাখে না, শুধু বলে প্রফিট বাড়াও প্রফিট বাড়াও, সেখানে কাজ করতে ইচ্ছা কাজ করবে না একদমই। 

- ক্রিকেটারদের সেন্সহীনতা:
সাম্প্রতিক কালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাদে যতগুলো শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ আছে, ক্রিকেট সেন্স চিন্তা করলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা একদম তলানীতে থাকবে। এরা খেলার আগে বোঝে ভাব, এটিচুড; স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট থেকে কথা বললে, স্কিল ডেভেলপমেন্টের কথা বললে তাদের আগ্রহ কাজ করে বা করতো কম। এই বৈশিষ্ট্যের মানুষ নিয়ে কাজ করাটা যে কারো জন্যই কঠিন। 

- সাংস্কৃতিক পার্থক্য:
সামাজিক অনুশাসনের কারণে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের লাইফস্টাইলের অনেক কিছুই বাংলাদেশে ওপেনলি একসেপ্ট করে না। ফলে আমোদ-ফূর্তির যোগানে ঘাটতিও একটা বড় কারণ ছিলো। 

এর মধ্য থেকে হাথুরুসিংহে কীভাবে সিলেক্টেড হলো, এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায় ক্রিকইনফো, যেখানে বলা হয়েছে হাথুরিসিংহে শ্রীলংকান অরিজিন হওয়ায় উপমহাদেশের কন্ডিশন সম্পর্কে ধারণা আছে, পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করার অভিজ্ঞতা- এই দুটো ফ্যাক্টরই মূলত তাকে এডভান্টেজ দিয়েছিলো। এগুলো গতানুগতিক কথা, যা প্রত্যেক কোচ নিয়োগের সময়ই ফরমায়েশিভাবে মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়। 


তাই দেখা যাচ্ছে, হাথুরুর নিয়োগটাও অন্য কোচদের মতোই ছিলো, হয়তবো হাথুরু নিজেও খুব বেশি কনফিডেন্ট ছিলো না। তার ওপর নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিনের মাথায়ই সাকিব আল হাসানের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে যার ফলাফলস্বরূপ সাকিব বড় ধরনের শাস্তি পেয়েছিলো। দায়িত্ব নেয়ার পরই দলের সবচাইতে বড় তারকা ক্রিকেটারের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ানোটা বাংলাদেশের অন্য কোচের ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। হাথুরুকে বোঝার ক্ষেত্রে ৩ বছর আগের সেই দ্বন্দ্বটার ইমপ্যাক্ট আছে প্রচ্ছন্নভাবে, যা লেখার অন্য পয়েন্টে উঠে আসবে। 


হাথুরুর জীবন বদলে দেয়া ২০১৫ সাল:


ভাগ্য, নাকি যোগ্যতা আর চেষ্টা, কোনটা মানুষকে সফল করে, এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবারই যোগ্যতা আর চেষ্টা বিজয়ী হবে, কিন্তু এটাও অবধারিত একটি নির্দিষ্ট লেভেলের উপরে উঠতে ১% হলেও ভাগ্যের সহায়তা লাগে, ওই ১% কে বলা যায় গাড়ির চাবির মতো, যেটা ছাড়া গাড়ি স্টার্ট দেয়া কঠিন।

হাথুরুর প্রথম এসাইনমেন্টটা মনে আছে? ভারতের ৩য় সারির দলের বিপক্ষে ১০৫ রান চেজ করতে গিয়ে ৫৮ রানে অলআউট হতে হয়েছিল। ২০১৫ বিশ্বকাপ নিয়েও জনমনে প্রত্যাশা ছিলো না বিশেষ, কারণ প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে পারফরম্যান্স আশানুরূপ ছিলো না; গ্রুপের সহজ দুই প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতবে কিনা এটা নিয়েও কনফিউশন ছিলো (২০১৪ তে আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডেতে হারতে হয়েছিলো)। কনফিউশন দূর করে দুটো দলকেই হারানোর পাশাপাশি ইংল্যান্ডকেও হারিয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল দল। ২০১১ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের সাথে ৩য় যে দলটিকে হারিয়েছিলো সেটা ইংল্যান্ড, ২০০৭ এ ঝুলিতে ছিলো ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর প্রাপ্তি, কিন্তু ওই আসর দুটির মূল্যায়ন নেই বিশেষ কারণ টুর্নামেন্ট ফরম্যাটের ভিন্নতা, অন্যদিকে ১টা মাত্র বড় দলকে হারিয়ে ২০১৫ তে পৌঁছানো গিয়েছিলো কোয়ার্টার ফাইনালে, এবং এখানে ভাগ্য কতটা সহায়, অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচটি পণ্ড তো হলোই, উপরন্তু বাংলাদেশ মুফতে পয়েন্ট পেলো, যেটি পার্থক্য গড়ে দিলো। ২০১৭ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও একই ঘটনা, অস্ট্রেলিয়ার সাথে পুরো ম্যাচ খেলা হলে নিশ্চিত হার, সেটাও পণ্ড হলো, নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে গেল সেমিফাইনালে। 
বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে রোহিত শর্মার নো-বল বিতর্কে আড়াল হয়ে গেলো বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা, যেন ওই নো-বলটি না দিলে বাংলাদেশ জিতে যেত। 


২০১৫ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর পাকিস্তান ক্রিকেটে বড় ধরনের রদবদল হয়, ট্যুরের আগে সাকিব আল হাসান একটা ইন্টারভিউয়ে বলেছিলো, বাংলাদেশ ৩-০ তে সিরিজ জিততে পারে, প্রত্যাশাতীতভাবে সেটাই হয়, এবং যেহেতু পাকিস্তানের সাথে পুরনো হিসাব-নিকাশ আছে, সঙ্গতকারণেই এর একটা উন্মাতাল প্রভাব পড়ে। ভারত সিরিজ হেসেছে মূলত একক মুস্তাফিজের কাছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে দুটো টি-২০ আর প্রথম ওয়ানডেতে বাজেভাবে হারার পর বিসিবি সভাপতি সিরিজের মাঝপথে খেলোয়াড়দের নিয়ে জরুরী সভায় বসেন, যেটা নিয়ে পত্রিকা আর সোস্যাল মিডিয়াতে সভাপতির তুমুল সমালোচনা করা হয়। সিরিজের শেষ দুটি ওয়ানডেতে সাউথ আফ্রিকা তাদের রীতি অনুসারে কলাপস করে, এবং এই সিরিজ জয়ের প্রেক্ষিতে ১১ বছর পরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।

হাথুরু নিজে কি অনুমান করতে পেরেছিলো এমনটা হতে পারে?


 স্যাম্পল হাথুরুসিংহে : পর্ব ২