যে কারনে বিদেশী ফ্রাঞ্চাইজি লীগে তামিমকে চাইবে ফ্রাঞ্চাইজি মালিকেরা
পোস্টটি ১৯৩৫২ বার পঠিত হয়েছেএই গত সপ্তাহের কথা। ভারতীয় কয়েকটি গন মাধ্যম একটি খবর ভাইরাল করেছে আইপিএলে বাংলাদেশী ওপেনার তামিম ইকবালকে নিয়ে। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ফ্রাঞ্চাইজি কতৃপক্ষ তাদের দলে তামিমকে ভিড়ানোর কথা জানিয়েছে কিছু গনমাধ্যম। তামিমকে কেন তারা দলে ভিড়াবে এটা নিয়ে কোনো সংশয় আছে বলে মনে হয়না।
ঘড়ির কাটা ৩ বছর পিছিয়ে দেওয়া যাক।
২০১৫ থেকে ২০১৮। এই সময়টুকু তামিমের নামের সাথে যেন বড্ড মানানসই। দর্শকরা বলে থাকেন দিন যত যাচ্ছে তামিম ততটা পরিপক্ক হচ্ছে। এটা কারো মনগড়া কথা নয়। তথ্য উপাত্তের বাইরে কথা বলতে আমিও রাজি নই। তাই আজ খুলে বসেছি এক ঝুড়ি তামিমিয়ানস তথ্য।
শেষ ৩ বছরে তামিম ইকবাল খেলেছেন ১৫টি টেস্ট ম্যাচ। এই ১৫ টেস্টে তামিমের সংগ্রহ ৪২.৩৩ গড়ে ১১৪৩ রান। দুইটা সেঞ্চুরির পাশাপাশি ফিফটি ছিল ৭টি। আর টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ২০৬ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন তো এই সময়ের ভিতরেই। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ী ম্যাচ ব্যাট হাতে দুই ইনিংসেই ফিফটি (৮২ ও ৭১) দলকে জেতাতে দারুণ ভুমিকা নিয়েছিল।
এবার আসা যাক ওডিআই প্রসঙ্গে।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ থেকে গতকাল পর্যন্ত অর্থাৎ শেষ ৩ বছরে তামিম ৪০ ম্যাচে ৫৩.৬৮ গড়ে রান করেছেন ১৮৭৯ রান! যেখানে ৫ সেঞ্চুরির সাথে আছে ১২টি ফিফটি! শুধু এই সময়ের ভিতরে ব্যাটিং গড়ের দিক থেকে তামিমের উপরে আছে মাত্র দুজন ওপেনার (ডেভিড ওয়ার্নার ৫৮.১৪, রোহিত শর্মা ৬২.১৩)। আর সব দিক দিয়ে তামিমের উপরে আছে মাত্র ৭ জন ব্যাটসম্যান।
শেষ ৩ বছরে তামিম জয়ী ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গড়ে রান করেছে। জয়ী ম্যাচে তামিমের গড় যেখানে ৬৩.৮৮ সেখানে হারা ম্যাচে গড় ৩০.৩৭। মজার ব্যাপার কি জানেন? এই সময়ে ৩টি পরিত্যক্ত ম্যাচে তামিমের ব্যাটিং গড় ১৫৯! গড়ের প্রসঙ্গে যেহেতু কথা হচ্ছে তাহলে আরো একটু আলোকপাত করা যাক। মাশরাফির নেতৃত্বে তামিমের যেখানে ব্যাটিং গড় ৪৮.০৬ সেখানে সাকিবের নেতৃত্বে ১০৪.৫০ করে ওডিআই গড়!
এই একই সময়ে তামিম ২৩টি টি টুয়েন্টি ম্যাচে ২৬.৪২ গড়ে রান করেছেন ৫৫৫ রান। টি টুয়েন্টি তে তামিমের উল্লেখযোগ্য পারফরমেন্স এর ভিতরে ২০১৬ এর টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের পারফরমেন্স ছিল নজরকাড়া যেখানে তামিম ৬ ম্যাচে ৭৩.২৫ গড়ে রান করেন ২৯৫। ওমানের বিপক্ষে করেন ক্যারিয়ার সেরা ১০৩*! ৬ ম্যাচের ভিতরে ৪টি ম্যাচেই ৩০+ রান ছিল তার।
সর্বসাকুল্যে শেষ ৩ বছর তামিম ইকবাল ৭৮ ম্যাচে ৯০ ইনিংসে ৪৩.০৯ গড়ে রান করেছেন ৩৫৭৭ রান যার ভিতরে রয়েছে ২০ টি ফিফটি ও ৮টি সেঞ্চুরী!
এতো বলা হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের শেষ বছরের পরিসংখ্যান। এখন একটু ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট (টি টুয়েন্টি) এ তামিমের পারফরমেন্স তুলে ধরা যাক।
২০১৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৮, এই সময়ের ভিতরে তামিম ইকবাল খেলেছেন ৩টি বিপিএল, ২টা পাকিস্তান সুপার লিগের আসর, ও একটি টি টেন টুর্নামেন্ট।
২০১৫ এর বিপিএলে তামিম বিপিএলের তৃতীয় সেরা রান সংগ্রাহক ছিলেন। ৯ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে তামিমের সংগ্রহ ছিল ৩৭.২৫ গড়ে ২৯৮ রান। পরের বিপিএলে (২০১৬) তামিম ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সেবার তামিম ১৩ ম্যাচে ৪৩.২৭ গড়ে ৬ ফিফটিতে রান করেছিলেন ৪৭৬ রান। বিপিএলের শেষবারের আসরেও ১০ ম্যাচে তার সংগ্রহ ছিল ৩৬.৮৮ গড়ে ৩৩২ রান, ফিফটি ছিল ২টি। তবে গত ৩ বারের আসরের চেয়ে ২০১৭ বিপিএলে তামিমের স্ট্রাইক রেট তুলনামূলক ভালো ছিল (১৩২.৮০)।
ছবিঃ ICC
ঘরের মাঠের বিপিএলের কথা বাদই দিলাম। নিন্দুকেরা বলতেই পারে ঘরের মাঠে যে কেউই ভালো করতে পারে কিন্তু বিদেশের মাটিতে সবাই ফ্লপ। ঠিক তাদের জন্য এখন তুলে ধরব বাইরের ফ্রাঞ্চাইজি লিগে তামিমের পারফরমেন্স।
পাকিস্তান সুপার লীগের প্রথম আসেরেই (২০১৬) তে পেশোয়ার জালমীর হয়ে মাঠে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল। প্রথম ম্যাচেই তুলে নেন ফিফটি। পরের ম্যাচগুলোতেও ধারাবাহিকতার অভাব ছিলনা তার জন্য। টুর্নামেন্ট শেষে ৬ ম্যাচে ৬৬.৭৫ গড়ে ৩টা ফিফটিতে রান করেন ২৬৭, সর্বোচ্চ ৮০*। সেরা ৫ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তামিমের অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে। পরে আসরে ৫ ম্যাচে ১ ফিফটিতে ২৩.৫০ গড়ে রান করেন ৯৪ রান।
পিএসএল এ তামিম ( ছবিঃ AFP)
ক্রিকেটে সদ্য ভূমিষ্ট টি টেনেও পাকথুনের হয়ে অভিষেক হয় তামিমের। দুবাইয়ে সেই সিরিজের অভিষেক ম্যাচেই তামিমের ব্যাট থেকে আসে দারুন এক ফিফটি। সিরিজে ৩ ম্যাচ খেলে ৪০.৫০ গড়ে ১৭৬.০৮ স্ট্রাইক রেটে ৮১ রান করেন তামিম।
টি টেনে তামিম ইকবাল (ছবিঃ Channel 9)
২০১৫ থেকে এই পর্যন্ত তামিম ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টে ৪৬ ম্যাচে ৪০.৭৩ গড়ে ১৫৪৮ রান করেন। আর দেশীয় লীগে তামিমের সংগ্রহ ৩২ ম্যাচে ৩৯.৫ গড়ে ১১০৪ রান এবং বিদেশী লিগে ১৪ ম্যাচে ৪৪.২ গড়ে ৪৪২ রান।
এখন অবশ্যই বুঝা গেল তামিম ইকবাল এখনকার ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি টুয়েন্টি বা টি টেন ক্রিকেটে কেন এত সবার প্রিয়। পরিসংখ্যান গুলো দেখলে যে কেউই তামিমকে তার দলে ভিড়াইতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। পরিসংখ্যান কথা বলে, কথা বলে তামিমের ব্যাট, কথা বলছে শেষ ৩ বছরে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট। জানিয়ে রাখা ভাল দেশের মাটির চেয়ে বিদেশের মাটিতে তামিমের ব্যাটিং গড় বেশি। এখন ভাবুন তামিমকে কেনইবা বিদেশী লীগে তারা চাইবেনা!
- 0 মন্তব্য