• ক্রিকেট

বাংলাদেশ ক্রিকেটের গ্রাউন্ডস ডিসঅর্ডার

পোস্টটি ৩৭৮৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

লেখার শুরুতেই স্মরণ করব বাংলাদেশের হোম অফ ক্রিকেট মিরপুর শেরেবাংলা অান্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শততম ওডিঅাই অায়োজনের ঐতিহাসিক মুহুর্তটিকে। বিশ্বের শতাধিক টেস্ট স্টেটাস প্রাপ্ত মাঠের মধ্য মাত্র পঞ্চম মাঠ হিসাবে শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম এই গৌরব অর্জন করল।

শততম ম্যাচ অায়োজনের দিন সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন যে "এই অর্জন গৌরবের নাকি হতাশার?"। ক্রিড়া সাংবাদিকরা মনে করেন মিরপুর হোম অফ ক্রিকেটের এই অর্জন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ব্যর্থতার বার্তা বহন কর। কিন্তু কি সেই ব্যর্থতা?

এই ব্যর্থতা অান্তর্জাতিক ক্রিকেটকে দেশ ব্যাপি ছড়িয়ে দিতে না পারার ব্যর্থতা। বাংলাদেশে অান্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অায়োজনে সক্ষম এবং তাৎক্ষণিক ভাবে প্রস্তুত এমন মঠের সংখ্যা ৬টির কম নয় (মাঠ গুলোর নাম না বললেও চলে)। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শতকার ৭০ ভাগ ম্যাচই অায়োজন করছে ঢাকার মাঠটিতে। তাই মাঠটি এত দ্রুত এত বড় এক অর্জনের অধিকারি হল।

অারেকটি মাঠ অাছে বাংলাদেশে, সেটা হলো "চট্টগ্রাম জুহুর অাহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম" এই মাঠটিও খুবই অাধুনিক মানের। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সাধারণত এই মাঠটিকে কিঞ্চিত ব্যাবহার করে থাকে। অার এতেই এই মাঠটি সাম্প্রতিক সময় অান্তর্জাতিক ম্যাচ অায়োজনের বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

অান্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই ফ্রানচাইজি ভিত্তিক টিটুয়েন্টি লীগ অায়োজনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে এই দুটি মাঠের বাইরে যেতে দেখা যায় কালে ভদ্রে।

মাঠ যা অাছে সেগুলোই ঠিকমত ব্যবহার হচ্ছ না তবুও অামাকে এই কথাটা উল্লেখ করতেই হচ্ছে যে মাঠের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ একদম তলানিতে রয়েছে। বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক টেস্ট স্টেটাস পাওয়া মাঠের অধিকারী ভারত। তাদের টেস্ট স্টেটাস পাওয়া মাঠের সংখ্যা ২৮। এদিক থেকে বিশ্বের কোন দেশ ভারতের ধরের কাছেও নেই। কিন্তু বিশ্বের নবম সর্বাধিক সংখ্যক টেস্ট স্টেটাস পাওয়া মাঠ অাছে শ্রিলঙ্কায় (৮টি)। দশম স্থানে থাকা বাংলাদেশের টেস্ট স্টেটাস পাওয়া মাঠের সংখ্যা মাত্র ৭টি (সিলেট অান্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ব্যাতীত)। এর মধ্য তিনটি (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, এমএ অাজিজ স্টেডিয়াম এবং শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম) স্টেডিয়াম এখন অার বিসিবি ব্যবহারই করে না। অতএব এই মন্তব্যটি করা যায় যে অান্তর্জাতিক পরিমন্ডলের বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্রিকেটিয় অবকাঠামো এখনো যথেষ্ট দুর্বল।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কতৃক মাঠ ব্যবহারে অনিহা এবং মাঠের অপ্রতুলতা দুটি বিষয়ে অলোকপাত করার পর এখন অামার মনে প্রশ্ন জাগে বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটি অাসলে কি করে? গ্রাউন্ডস কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান মাহাবুব অানামের কাজ কী তা জানতে ইচ্ছে করে।

বাংলাদেশে এখন দুটি অাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। একটি হল "কক্সবাজায় শেখ কামাল অান্তর্জাতিক স্টেডিয়াম" ও "পূর্বাচল অান্তর্জাতিক স্টেডিয়াম"। সর্বশেষ বিপিএল থেকেও মিলিছে "অাশার অালো"। সিলেটে উদ্ভোদন হয়েছে সর্বশেষ বিপিএল অাসরটি। বিষয়টা ইতিবাচক। যদিও এই ইতিবাচক বিষয় গুলো পরিমাণে খুবই কম। কারণ বিসিবির কার্যত এখন পর্যন্ত এমন কোন উদ্যোগ নেই যাতে করে ঢাকার বাইরে অান্তর্জাতিক ক্রিকেট ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়বে বা বেশ কিছু মান সম্মত নতুন মাঠ নির্মাণ করা হবে(সরকারের ইখতিয়ার) অথবা যেই মাঠ গুলো এখন অাছে সেগুলোর যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। অতএব দ্রুত যে এই সমস্যাটার সমাধান হচ্ছে না তাতে কোন সন্দেহ নেই।

অামি বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই সমস্যাটার নাম দিয়েছি "গ্রাউন্ডস ডিসঅর্ডার"। এবং প্রত্যাশা করছি বাংলাদেশ শিঘ্রই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবে।

 

_20180201_190911