বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কী?
পোস্টটি ১৫৫৪০ বার পঠিত হয়েছেবাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণত শহরের শিশুরা সাধারণ জ্ঞান বইয়ের সৌজন্যেই প্রথম জানতে পারে যে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা ক্রিকেট বা ফুটবল নয় বরং "কাবাডি" নামের একটা খেলা। তারপর তারা তাদের বাবার কাছে খেলাটি সম্পর্ক জানতে চায়। যে সকল বাবারা গ্রাম থেকে উঠে অাসেন তারা সাধারণত ছেলের প্রশ্ন শুনে প্রবল উৎসাহে ছেলেকে খেলাটি সম্পর্কে বলতে শুরু করেন। অার যে সকল বাবাদের গ্রামের সাথে পরিচয় নেই তারা ছেলেকে এক বাক্যে উত্তর দেন, "ওটা একটা গাঁইয়া খেলা।" বা এরকমই কোন মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় "ক্রিকেট" ও "ফুটবল" খেলাদ্বয় বাংলাদেশে এসেছে ইংরেজ সাহেবদের হাত ধরে। অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি এদেশের নিজেস্ব খেলা। বহু অাগে থেকে এই ভূখন্ডের মানুষেরা কাবাডি বা হাডুডু খেলে অাসছে। সেই সুবাধে এই খেলাটি বাংলাদেশের জাতীয় খেলার মর্যাদা পায়। কিন্তু শিল্পায়ন ও নগরায়নের ধাক্কায় গ্রাম বাংলার এই খেলাটি বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে।
বাংলাদেশ না পারলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কিন্তু নগরায়ণের থাবা থেকে কাবাডিকে রক্ষা করেছে। কাবাডি যে ওদেরও জাতীয় খেলা। ভারত কাবাডিকে তুলে এনেছে জাতীয় ও অান্তর্জাতিক পর্যায়ে। ভারতের কাবাডি চর্চার ছোয়া বাংলাদেশেও লাগছে। ভারত নিয়ে অালোচনা করতে চাইনা।
বাংলাদেশেই ফিরে অাসি। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী জনাব অাবুল মাল অাব্দুল মুহিত বাংলাদেশের মহান সংসদে দাড়িয়ে ফুটবলের প্রতি দেশের মানুষের ভালবাসার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ফুটবলকে "বাংলাদেশের জাতীয়" খেলা বলে অবহিত করেন। কথাটা তিনি বলেছেন প্রতীকি অর্থে। কিন্তু সেদিন তারা কথা শুনে অামার দুঃখ লেগেছিল। কারণ বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসাবে কাবাডি যথেষ্ট পৃষ্ঠ পোষকতা তো পাচ্ছেই না উল্টো তার পদবিটা ও বাইরে থেকে অাসা একটা খেলাকে দিয়ে দেওয়া হল। এটা কাবাডির এবং বিস্তৃত ভাবে বলতে গেলে বাঙ্গালি ঐতিহ্যের প্রতি একটি অব্যাক্ত নির্মমতা।
২০১৬ সালে ভারতের উদ্যোগে প্রো কাবাডি বিশ্বকাপ হলো। বাংলাদেশ কোন রকমে একটা দল পাঠালো। দেশে কোন প্রচারণা ছিল না। দেশের শির্ষ সংবাদ মাধ্যম গুলোতে কোন প্রতিবেদন ছিলনা। অামি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি খেলা দেখেছি "স্টার স্পোর্টস নেটাওয়ার্কে"। বাংলাদেশ দলের খেলা দেখে কখনও গর্বে কখনও হতাশায় অামার চোখে পানি এসেছিল। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিজয়ের পর ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে হেরে গ্রুপ পর্বেই শেষ হয় বাংলাদেশের যাত্রা। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ান হয় ভারত। রানার্সঅাপ হয় ইরান!
বিশ্ব মঞ্চের প্রতিযোগিতার দিক থেকে যদি মূল্যায়ণ করি তাহলে কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হতে পারেনা, ফুটবল তো একদমই নয়, এই ক্ষেত্রে জাতীয় খেলার মর্যাদা পাবে ক্রিকেট। কিন্তু ক্রিকেট বাংলাদেশের ক্রিড়াঙ্গনের রিফিউজি, ওকে অামরা ভালবাসব কিন্তু জাতীয় খেলার মর্যাদা দেব না।
দর্শক প্রিয়তার দিক থেকে মূল্যায়ন করলে ও কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হতে পারে না। এক্ষেত্রে ফুটবল ও ক্রিকেট জাতীয় খেলার মর্যাদার দাবীদার। কিন্তু ওরা দুই জনই বাংলাদেশের ক্রিড়া অাঙ্গনের রিফিউজি। ওদেরকে অামারা ভালবাসি ওরা অামাদেরকে ভালবাসে কিন্তু ওদেরকে অামরা জাতীয় খেলার মর্যাদা দিতে পারি না।
কাবাডি অামাদের মাটির খেলা প্রাণের খেলা। অামরা বিদেশে তাকে নিজেদের জাতীয় খেলা বলে পরিচিত করি, কিন্তু যখন প্রমাণ দেওয়ার সময় অাসে তখন বিশ্ব মঞ্চ একটি ভাউতাবাজ জাতিকে দেখতে পায়। বিশ্ব দেখতে পায় বাংলাদেশের মানুষ রা যে খেলাকে তাদের জাতীয় খেলা বলে, সে খেলা তারা ভালভাবে খেলতে জানেনা! তাদের মধ্যে অনেকে এই খেলাটি সম্পর্কে ভালভাবে জানেওনা!
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে কাবাডিকে জাতীয় খেলা বলটা হচ্ছে বাঙ্গালির ভাউতাবাজি ছাড়া অার কিছু নয়।
অতএব অামি অবশেষে এই প্রশ্নটা রেখে যেতে চাই যে "বাংলাদেশের জাতীয় খেলাটা অাসলে কী?"
- 0 মন্তব্য