• ক্রিকেট

আহত বাঘ ঠিক এতটাই ভয়ংকর!

পোস্টটি ৮৬১৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আহত বাঘ ঠিক এতটাই ভয়ংকর!

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আত্নরক্ষা করে বাঁচার আর কোনো পথ থাকে না। তখন আক্রমণই হয় সবচেয়ে ভালো আত্নরক্ষা। একের পর এক ম্যাচ হারতে হারতে বাংলাদেশ দলেরও তো পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। উড়তে থাকা দলটা হঠাৎই ছন্দ হারিয়ে যেন জিততেই ভুলে গেলো! হারতে হারতে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছিল যে, বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক দল কথাটাই শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল!

প্রথম ম্যাচে ভারতের সাথে ওরকম বাজেভাবে হেরে যাওয়ার পর আজকের ম্যাচে যে বাংলাদেশ অলৌকিক কিছু করে ফেলবে তা হয়তো খুব বেশি কেউ ভাবেনি। আর ম্যাচটা যেহেতু টি টুয়েন্টি তাই ভাবনার অবকাশও ছিলনা।কারণ টি টুয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয় যে এক বছরেরও বেশি সময় আগে এই শ্রীলংকার বিপক্ষে এই প্রেমাদাসাতেই।

প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকার ২১৪ রানের পাহাড় দেখে বাংলাদেশ দলের পাড় ভক্তও হয়তো ভাবেনি এই ম্যাচ বাংলাদেশ জিততে পারে! কারণ টি টুয়েন্টিতে তাড়া করে জেতা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানটা যে মাত্র ১৬৪! কিন্তু টাইগাররা যে আজ কিছু করে দেখানোর পণ করে  নেমেছে তা কি আর জানা ছিল! তাই ২১৪ রানের পাহাড়ের পরেও ভড়কে যায়নি বাংলাদেশ। শ্রীলংকার পাহাড়ের জবাবে শুরুতেই ঝড় তোলে লিটন আর তামিমের ওপেনিং জুটি।

প্রথম ওভারে মাত্র একটা চার, তবু ১০ রান । পরের ওভারে ১ চার ও ১ ছক্কা, এবারও ১০। এভাবেই চার, ছক্কা চলল। রানের চাকাও দৌড়াল। ২৫ বলে ৫০ পেরোল বাংলাদেশ। স্কোরটা ১০০ হতে অবশ্য একটু সময় লাগল বাংলাদেশের। তবুও ৯.২ ওভারেই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ হতে দেখাটাই তো অনেক কিছু!পাওয়ার প্লের মাঝেই অবশ্য ফিরে গেছেন লিটন। তবে যাওয়ার আগে ১৯ বলের এক ইনিংসে (৪৩) চোখ জুড়ানো পাঁচটি ছক্কা মেরে দলের আত্মবিশ্বাসের জ্বালানির ট্যাংকটা ভরতি করে দিয়ে গেছেন। 

এর ফলে দল ১০০ ছোঁয়ার পরের বলেই তামিম (২৯ বলে ৪৭) আউট হওয়ার পরও দলের বিশ্বাস টলল না এতটুকু! কারণ আজ যে সবাই বিশ্বাস নিয়েই নেমেছেন, আজ জিতবই! এ কারণেই পরিস্থিতির সঙ্গে বেমানান সৌম্যের ইনিংসটির (২২ বলে ২৪) পরও বাংলাদেশ দেড় শ করে ফেলল ১৪ ওভারেই। শেষ ৬ ওভারে রান দরকার ৬৫। সবার মনে তখন একটাই প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি পারবে?

খুব একটা অসম্ভব না হলেও ভরসা হচ্ছিল না। কারণ, এই বাংলাদেশই যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩ বলে ১ রান তুলতে না পারার এক বিস্ময় জন্ম দিয়েছিল। আর কাকতালীয়ভাবে উইকেটেও সে ম্যাচের দুই কুশীলব, মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ! দলকে ২২ রান দুরে রেখে ভারত ম্যাচের মতোই প্রায় কাছাকাছি জায়গায় ক্যাচ দিয়ে মাহমুদউল্লাহ ফিরতেই মনে কু ডাকা শুরু। তবে কি আবারো তীরে গিয়ে তরি ডোবা দৃশ্যের সাক্ষী হতে হবে...?

১০ বলে ১৮ রানের সমীকরণ রেখে হাস্যকরভাবে সাব্বিরের রান আউটের পর তো মনে হচ্ছিল টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো দুই শ রান করাটাই হবে আজকের দিনের সান্ত্বনা! কিন্তু ব্যাঙ্গালুরু ম্যাচের ট্রাজেডির নায়ক মুশফিক যে তখনো ছিলেন উইকেটে!

নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ৩৫ বলে ৭২ রানের ইনিংসটা যে তিনি আজকের ম্যাচের জন্য তুলে রেখেছিলেন তা কে জানত! তাই আজ ২৪ বলে ৫০ ছুঁয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি। ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ম্যাচ যখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, ঠিক তখনই এক ছক্কা। শেষ ওভারে সমীকরণটা নামিয়ে আনলেন ৬ বলে ৯ রানে।

শেষ ওভারে জয় থেকে ৯ রানের দূরত্বে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, স্ট্রাইকে মুশফিক। প্রথম বলে ২ রান, ৫ বলে ৭! পরের বলে ৪!  সমীকরণটা দাঁড়াল ৪ বলে তিন। অপ্রতিরোধ্য মুশফিকের ওই ৩ রান নিতে বল লাগল মাত্র দুটি।শেষ বলে ১ রান নেয়ার সাথে সাথেই স্তব্ধ পুরো প্রেমাদাসার গ্যালারী। আর বাংলাদেশকে টি টুয়েন্টিতে সেরা জয়টা উপহার দিয়ে মুশফিক তখন কোবরা সেলিব্রেশনে ব্যস্ত!

শেষ পর্যন্ত হারতে হারতে জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ। শুধু জিতলই না রেকর্ড গড়েই জিতল। কারণ আহত বাঘ যে সুস্থ বাঘের চেয়েও বেশি ভয়ংকর!

 ম্যাচ শেষে কমেন্টেটর সঞ্জয় মাঞ্জেরকরের কথাটা শুনেছেন তো, "বাংলাদেশ ইজ প্লেয়িং লাইক এ রিয়েল টাইগার"

সত্যিই এই জয় তো শুধু টাইগারদের সাথেই মানায়!