ফাইনালের আগে সেমিফাইনাল বাধা।
পোস্টটি ২৯৪০ বার পঠিত হয়েছেজয় জিনিসটাই এরকম। আসলে প্রশংসা যতটা পাওয়া যায়, না আসলে সমালোচনা হয় তার চেয়ে ঢের বেশি! এই যেমন বাংলাদেশ দলটার দিকেই তাকাননা। কিছুদিন আগেও হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। গেল গেল রবও উঠে গিয়েছিল! অনেকে তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অন্ধকারও দেখে ফেলেছিলেন!
কিন্তু দেখুন একটা জয়ই সব কিছু আমূল বদলে দিয়েছে। এর দেবে না'ই বা কেন। জয়টা কি আর যেনতেনভাবে এসেছে নাকি! একদম রেকর্ড টেকর্ড গড়ে তারপরই ধরা দিয়েছে। আর যার ফলে হঠাৎ হারিয়ে ফেলা ছন্দটাও আবার হঠাৎই ফিরে পেয়েছে মুশফিকরা। আর বৃহস্পতি যখন প্রসন্ন হয় তখন যে গোলা ভরেই দেয়। যেমন ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান!
এ যেন সোনায় সোহাগা! দলের মনোভাব এমনিতেই এখন অনেক চাঙা। ভারত ম্যাচে সামান্য ভুলত্রুটি গুলো না হলে জেতার মতো অবস্থায়ই ছিল বাংলাদেশ। তার উপর আবার তূণের সেরা অস্ত্রটাও যোগ হচ্ছে অস্ত্রের ভান্ডারে! সোনায় সোহাগা নয়তো কি!
ফাইনালের আগে আগামীকালের 'অঘোষিত' সেমিফাইনালে মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশই। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত শুরু করা শ্রীলংকা বাংলাদেশের সাথে একটা হারেই পথ হারিয়েছে। হারানো পথটা পরের ম্যাচে ইন্ডিয়ার সাথেও খুঁজে পায়নি। তাই এখন দরকার শুধু মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়ে শ্রীলংকাকে নিজেদের টুর্নামেন্টেই দর্শক বানিয়ে দেওয়া।
আজ বিকেলের মধ্যেই দলের সাথে যোগ দেয়ার কথা সাকিবের।শেষ পর্যন্ত যদি তিনি আগামীকালের ম্যাচটা খেলেনই তাহলে দলে একটা পরিবর্তন অবধারিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কে হবে...? অপশন আছে বেশ কয়েকটা। টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলে একজন বোলার কমিয়ে বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান খেলাতে পারে।আবার বোলিং অপশন বাড়াতে চাইলে একজন ব্যাটসম্যানও ছাটাই করতে পারে। কারণ সাকিবের দলে যোগ হওয়া মানেই যে একসাথে তিনটা প্লেয়ারের সার্ভিস পাওয়া - ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং!
সাকিবের বদলি হিসেবেই দলে ঢুকেছিলেন লিটন দাস। তাই স্বাভাবিক হিসেবে বাদ পড়ার কথা লিটনেরই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে ১৯ বলে ৪৩ রান করে লিটনের এখন দলে জায়গাটা মোটামুটি পাকা। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও ৩০ বলে ৩৪ রান করেছিলেন। গতকাল খারাপ করলেও তাঁকে বাদ দেওয়া হবে না—এটা ধরে নেওয়াই যায়।
তাহলে সৌম্য, মিরাজ অথবা সাব্বিরের যেকোনো একজনই হয়তো ছাটাই হতে চলেছেন। এই টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত খেলা তিন ম্যাচেই হতাশ করেছেন সৌম্য সরকার। এই তিন ম্যাচে তাঁর স্কোর যথাক্রমে—১৪, ২৪ ও ১। এর মধ্যে কালকের ম্যাচে সৌম্যর আউটটা ছিল ভীষণ রকমের দৃষ্টিকটু।
এবার তাকানো যাক সাব্বিরের দিকে। এটা সত্যি যে তিনি এখন অফ ফর্মে রয়েছেন। কিন্তু অফ ফর্ম থেকা ফেরার সামান্যতম চেষ্টাটুকুও তার মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! শ্রীলংকার বিপক্ষে জেতা ম্যাচটাতে যেভাবে রানআউট হয়েছেন রিপ্লে দেখলে যে কেউই বলবেন ক্রিজে ফেরার কোনো আগ্রহই ছিলনা তার মধ্যে। বিপদ দেখেও কোনো ডাইভের চেষ্টা না করে তিনি ক্রিজে ফিরছিলেন দুলকি চালে! গতকালের ম্যাচেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শার্দুল ঠাকুরের নিরীহ এক ডেলিভারিতে হয়েছেন বোল্ড! তাই বাদ পড়ার ঝুঁকিতে তিনি আছেন ভালোমতোই!
আবার টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলে মিরাজকে রাখতে পারে একাদশের বাইরে। মূলত বোলিংয়ের জন্য দলে নেওয়া হলেও এই তিন ম্যাচে কোনো উইকেট পাননি। প্রথম দুটি ম্যাচে তুলনামূলক কম রান দিলেও কাল ভারতের বিপক্ষে ৩ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন ওভার প্রতি দশের ওপরে। টিম ম্যানেজমেন্ট তাই ভাবতেই পারে সাকিব ফিরলে মিরাজের কী প্রয়োজন! দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে তাই ধরে নেয়া যায় সাকিব খেললে বাদ পড়বেন মিরাজই।
তবে শেষ পর্যন্ত কি হবে বলা মুশকিল। বাংলাদেশ শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠতে পারবে কিনা সেটাও সময়ই বলে দেবে।তবে ফাইনালে উঠতে না পারলেও এই টুর্নামেন্ট থেকে পাওয়া 'আমরাও পারি' আত্নবিশ্বাস আর প্রাপ্তিগুলো মিথ্যে হয়ে যাবে না। মিথ্যে হয়ে যাবে না মুশফিকের বীরোচিত ইনিংসগুলো। এই আত্নবিশ্বাসটুকুই যে পরবর্তীতে 'বাংলাদেশী ব্রান্ডের' ক্রিকেট খেলার অনুপ্রেরণা জোগাবে। ধারেভারে কম মনে হলেও এই সামান্য প্রাপ্তিটুকুই বা কম কিসে!
বাংলাদেশ দলের সম্ভাব্য একাদশ -
১.তামিক ইকবাল ২.লিটন দাস ৩.সৌম্য সরকার ৪.মুশফিকুর রহিম ৫.সাকিব আল হাসান ( অধিনায়ক) ৬.মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৭.সাব্বির রহমান ৮.নাজমুল ইসলাম অপু ৯.আবু হায়দার রনি ১০.রুবেল হোসেন ১১.মোস্তাফিজুর রহমান
- 0 মন্তব্য