• ফুটবল

মেসির সাক্ষাতকার

পোস্টটি ৭২৯৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

লিওনেল মেসি আমেরিকা টিভি নামক এক চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকার এর চুম্বক অংশ এখানে দেয়া হল। এটা পড়লে বুঝতে পারবেন, মেসি শুধু খেলোয়াড় না, একজন মানুষ হিসেবেও কতটা পরিপূর্ন, যার জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। 

 

খেলার চাপ সম্পর্কে : 

এখন আমি সকল চাপ কাটিয়ে উঠেছি, পাশাপাশি আমার মাথায় আছে সামনেই বিশ্বকাপ, এবং এটা খুব তাড়াতাড়ি আসতেছে। কিন্তু, এখন আমি বার্সার হয়ে শিরোপার জন্য লড়তেছি, এটার উপর এখন আমার সম্পূর্ন ফোকাস, জুনে নয়। আমি দেখতেছি, পুরো পৃথিবীর অনেকেই চাইতেছে সামনের বিশ্বকাপটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ। তারা দেখতে চাই, আমি যেন বিশ্বকাপটা জিতি। পুরো পৃথিবী দেখতে চাই, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবে। আমার সন্তানদের সাথে খেলা আমাকে সবথেকে বেশি বিহ্বল করে তোলে। যখন আমার প্রথম সন্তান আসল, তখন আমার মনোভাবে পরিবর্তন আসল। আমি শুধুমাত্র আমার ক্যারিয়ারের ওপর ফোকাসিংটা বন্ধ করে দিলাম। আমি এখনো হারতে বা ড্র করতে পছন্দ করি না, কিন্তু এটা এখন অন্যভাবে নিই। অনেক কিছুই আছে যেটা ফলাফলের থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সবশেষে, ফুটবল জাস্ট একটা গেইম, যেখানে সবাই চ্যাম্পিয়ন হতে চাই, নিজে বেস্ট হতে চাই। এটা সবসময় ঘটবে না, কারন পৃথিবী আর্শ্চযে ভর্তি। কিছুসময় থাকবে যখন বেস্ট জন সবকিছু জিতবে না, আমি এটার মধ্যে দিয়েই বেচে থাকতে চাই। 

 

খ্যাতির মধ্যে বেচে থাকা : 

আমি অনেক সময়ই সমালোচিত হয়ে থাকি, কিন্তু আমার কাছে মুল বিষয় হচ্ছে আমি নিজেকে সবসময় ন্যাচারাল ভাবে পরিচালনা করি। আপনাকে কিছু সময় নিজেকে নিয়ে সচেতন থাকতে হবে, আপনি কি করছেন তা নিয়ে, কারন মানুষ সবসময় আপনাকে দেখতেছে। 

 

মানুষের সামনে কথা বলায় সচেতন : 

আমি যা বলি তা পরবর্তিতে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হতে পারে, তাই এই নিয়ে আমি সচেতন থাকি। আমি এই বিষয়ক সকল সমস্যা থেকে দূরে থাকি। আমি চেষ্টা করি, আমি যা বলব তা যেন কোন দ্বিধাদন্ধের সৃষ্টি না করে। 

 

ইমোশান নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে : 

আমার কোন সাইকোলজিস্ট নেই, এরকম মুর্হুতে আমি আমার কাছের মানুষদের সংগে কথা বলি-বাবা,মা,স্ত্রী। আপনারা জানেন, জনগন সবসময় আমার সাথেই আছে। 

 

অবসর পরের জীবন প্রসংগে : 

আমি জানি না, যখন অবসর নিব, তখন আমি কি করব। এটা অনেক কঠিন হবে, আমি কল্পনা করতেছি এটা আমার জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়াবে, কারন দেখেন এখন একটা রুটিনমাফিক জীবন চলতেছে- খেলা, প্র্যাক্টিস, ভ্রমন; কিন্তু তখন সেটা থাকবে না। আমি এখনো বলতে পারছি না, সে সময় আমি কোথায় থাকব। আমার প্রতিদিনের জীবন সেটা সম্পর্কে ভাবতে দেয় না।

 

আর্জেটিনার সামাজিক অবস্থা : 

আর্জেন্টিনায় অনেক সমস্যায় পরিপুর্ন। এটাই বাস্তবতা যে সেখানে সমস্যায় ঘিরে রয়েছে। আমি ছোটকালে সেখানেই থাকতাম, এখনো ইচ্ছা হয় সেখানে থাকি, আমার রোজারিও তে বাস করি, কিন্তু সেখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি, নিরাপত্তায় আসল সমস্যা। আমি আর্জেটিনার নিরাপত্তা নিয়ে খুবই চিন্তিত। সেখানে একটি ঘড়ি, বাইক, কিংবা মোটরসাইকেল ডাকাতি হচ্ছে নিয়মিত। আপনি হয়ত বাড়ি ফিরে দেখলেন আপনার বাড়ির সবকিছু ডাকাতি হয়ে গেছে কিংবা এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারে। আর্জেন্টিনায় আরো অনেক সমস্যা রয়েছে, কিন্তু এটাই প্রধান। সেখানে বসবাসের অযোগ্য। আমি বন্ধুদের সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে আড্ডা দিতে চাই, কিন্তু সেটা সেখানে কোনভাবেই সম্ভব না। আমার মনে আছে, আমি যখন ছোট ছিলাম, গরমের সময় আমি রাত ৯ টার দিকে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরতাম, কিন্তু এখনকার শিশুদের জন্য তা অসম্ভব। এই সমস্যার সমাধান অনেক কঠিন, কিন্তু আর্জেন্টিনায় যখনি কোন সমস্যা হয়েছে তখনি আমরা সবাই এক হয়েছি, আর তার মোকাবেলা করেছি, এবারো অবশ্যই সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

 

কান্না সম্পর্কে : 

আমি অনেকবারই কেঁদেছি, কারন আমরা বারবারই কাছাকাছি গিয়ে হেরেছি। আমি বিশ্বাস করি, ট্রফি জয় একদিন পুরো দেশের জন্য সত্যিতে পরিনত হবে। শেষ বার আমি যখন খুশিতে কেদেছিলাম, তখন মাতেওর জন্ম হয়। থিয়াগোর জন্মের সময় আমি সেখানে ছিলাম, এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, পরিকল্পনামাফিক কিছুই ঘটে নি। মাতেওর জন্মের সময় কিছুটা সহজ ছিল। আমি যখন সিরোর কথা শুনেছিলাম, তখন অনেক খুশি হয়েছিলাম। 

 

বাচ্চারা ফুটবল খেলবে? : 

আমি আশা করি তারা সবাই ফুটবলার হবে, কিন্তু আমি তাদের জোর করব না। আমি সিউর, থিয়াগো ফুটবল খেলতে পছন্দ করে, সে বার্সেলোনা স্কুলে গিয়ে বাচ্চাদের সাথে ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। আমি দেখেছি, সে গোল দিয়ে আমার মত আকাশের দিকে হাত উঠায়, কিন্তু সে কখনো এটার কারন আমার কাছে জিজ্ঞেস করে নি, আমাকে দেখে সে এটা করে।

 

গ্র্যান্ডমাদার সম্পর্কে : 

আমার চিন্তায় সবসময় আমার দাদি থাকে, গোল করে সবসময় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। কিন্তু, এটা শুধু তার জন্য নয়, আমার গডের জন্য যিনি আমাকে ফুটবলে সবকিছু দিয়েছে। শুধু ফুটবল নয়, আমার জীবনকে এভাবে শান্তিতে রেখেছে, এ জন্য। কিন্তু, আমি আমার দাদিকে অবশ্যই সেসময় স্মরন করি। 

 

অপমান মোকাবেলা : 

আমি অপমানকে এড়িয়ে চলি, আমি জানি এটা খেলার একটি অংশ। আমি জাস্ট এটা এড়িয়ে চলি, কিন্তু আমি স্বীকার করছি, কোন এক সময় সমালোচনা আমার উপর প্রভাব ফেলত। এগুলো বছরের পর বছর সয়ে গেছি আমি। মাঝে মাঝে আমি সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে যায়, কারন তারা এমন প্রশ্ন করে যেটা ফুটবলের সাথে যায় না। আমি মাঠে ভাল খেলছি কিনা এটা নিয়ে মানুষ মত প্রকাশ করতেই পারে, কিন্তু তারা আমাদের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে এমন কথা বলে যা মোটেও সত্যি নয়। তারা শুধু লাভেজ্জি সম্পর্কে বাজে কথা বলে না, আরো অনেক কিছুই বলে, যা আমার মন খারাপ করে। 

 

বিশ্বকাপ ফাইনাল : 

আমি মাঝে মাঝে দেখি জুলাই এর ১৫ তারিখ মস্কোতে ফাইনাল খেলছি, ম্যাচ জিতলাম, তারপর ট্রফি উচিয়ে ধরলাম, এটা আমার স্বপ্ন। প্রত্যেকবার আমি আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসি। সেজন্যই আমি ২০১৪ বিশ্বকাপে কেঁদেছিলাম, কারন এটা খুবই কাছে ছিল এবং অনেক কঠিন ছিল, এটা খুবই হৃদয়বিদারক ছিল। কিছু বছর ধরে আমরা যে গ্রুপ টা খেলছি, তাদের সম্ভবত এটাই শেষ বিশ্বকাপ। আমরা পরপর তিনটা ফাইনাল হারলাম, এটা খুবই মুল্যবান ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফলাফলের উপর আমরা সবাই নির্ভর করি। আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এবার যদি আমরা ফাইনাল না জিততে পারি তবে অনেক সমালোচনার শিকার হতে হবে।

 

খেলোয়াড় হিসেবে উন্নতি : আমি সবসময় অহংকার ছাড়া থাকতে চাই। ডি-বক্সের ভিতর, আমি সবথেকে সহজ অপশন টা খুজে বের করি, যেটা থেকে গোল হতে পারে। আমি খেলার সময় মাঠে দৌড়াতে থাকি, যাতে দলকে সাহায্য করতে পারি। আমি ভাল খেলছি কিনা সেটা শুধুমাত্র গোলের উপর নির্ভর করে না। আমি মাঠে কতটা খেলার উপর প্রভাব ফেলছি, বল কিভাবে ব্যবহার করছি, বল না হারানোর সিদ্ধান্ত, এগুলোই আপনার ভাল খেলার কথা বলে। অনেক সময় থাকে যখন আমি গোল দিই, কিন্তু খারাপ খেলি, গোল আমার এটা কভার করে দেই। গোল করা মানেই ভাল খেলা না। আপনার যত বয়স বেশি হবে, আপনি তত বেশি শিখবেন। পূর্বে আমি যখন বল পেতাম, নিজে নিজে ড্রিবল করতাম, নিজে নিজে খেলার চেষ্টা করতাম কিন্তু এখন দলকে সাহায্য করি। শুধু ফিনিশার না হয়ে, দলের সবাইকে সাহায্য করতে বেশি ভালবাসি।

 

বমি করা সম্পর্কে : আমি কি খেয়ে বমি করতাম তা এখনো জানি না। কিন্তু, তখন অনেক অপুষ্টিতে ভুগতাম। যখন আমার বয়স ২২,২৩ বছর ছিল, তখন আমি সবকিছুই খেতাম। আমি তখন চকোলেট, আলফাজোরস, সোডা খেতাম, কিন্তু এখন ভাল কিছু খায়, এখন আমি সালাদ, মিট, মাছ, গ্রিন চা এগুলা খাই।আমি এখন মদ দেখলে, অল্পটুক নিই। অনেক সময় থাকে যখন আপনাকে ধৈর্য্য ধারন করতে হয়। আমার খাদ্যাভাস পরিবর্তন করার ফলে, আমি অনেক গুরুত্বপূর্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করছি, বিশেষ করে বমি করার ক্ষেত্রে। আমি এখন এটার সাথে মানিয়ে নিয়ে চলছি। 

 

ইঞ্জেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে : 

আমি যখন ছোট ছিলাম, বাবা-মা ইঞ্জেকশন দিতে আমাকে সাহায্য করত, তারপর এটা আমি নিজে নিজে নিতে শুরু করি। এটা অনেক ছোট ছিল, একটা সরু পেন্সিল এর মত। এখন এটা যখনি দরকার হয়, তখনি আমি নিজে নিজেই নিই।এটা এখন আর আমাকে কষ্ট দেয় না, কারন এটা রুটিনে পরিনত হয়েছে।