• ফুটবল

ব্রায়ান হাওয়ার্ড ক্লফ : বিস্মৃত স্মৃতি

পোস্টটি ৭৪৬০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
আজকের গল্পটা শুধুই লিডস ইউনাইটেড, ডার্বি কাউন্টি, নটিংহ্যাম ফরেস্ট আর একজন পাগলা, দৃঢ়-বদ্ধপরিকর কোচের উত্থান-পতনের।
 
১৯৭৪ এর বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোচের পদ হারান আলফ র‍্যামসে। তাকে প্রতিস্থাপন করেন লিডস ইউনাইটেড এর হয়ে অত্যন্ত সফল ম্যানেজার ডন রেভি। লিডসে রেভির পদে স্থলাভিষিক্ত হন ৩৯ বছরের দাপুটে কোচ ব্রায়ান হাওয়ারড ক্লফ। ক্লফ ছিলেন ডার্বি কাউন্টির প্রাক্তন কোচ এবং লিডসের খেলার স্টাইলের একজন তীব্র সমালোচক। শুধুমাত্র লিডসের খেলার ধরনের কড়া সমালোচনার জন্যই নয়, লিডস ও ক্লফের সম্পর্কের তিক্ততা আরও আগের থেকেই। সেই গল্পটি জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে ছয়টি বসন্ত!
 
১৯৬৮ এর এফএ কাপের এক ম্যাচে মুখোমুখি হয় ডন রেভির লিডস আর ব্রায়ান ক্লফের ডার্বি। লিডস তখন ফার্স্ট ডিভিশন লিডার আর ডার্বি কাউন্টি ধুঁকছে সেকেন্ড ডিভিশনের তলানিতে। ক্লফ রেভিকে অভ্যর্থনার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। কিন্তু ম্যাচের দিন রেভি তাকে পাত্তাই দেন না, শুভেচ্ছা বিনিময় তো পরের কথা! ডার্বি কাউন্টি ২-০ গোলে ম্যাচটি হেরে যায়।  লিডসের খেলার হিংস্র ধরনকেই হারের কারণ হিসেবে উপস্থাপন করলেও ক্লফ আর তার সহকারী পিটার টেইলর বুঝতে পারেন যে তারা টেকনিক্যাল লেভেলে ও দলের শক্তি বিবেচনায় অনেক পিছিয়ে আছেন। তাই, তারা ডেভ ম্যাকয় সহ আরও অনেক তরুণ ফুটবলারকে ক্লাবে সাইন করান। ক্লাব চেয়ারম্যান স্যাম লংসন নতুন সাইনিং সম্পর্কে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কারণ টেইলর কিংবা ক্লফ কেউই তার সংগে এই বিষয়ে আলোচনা করেননি। যাইহোক, ক্লফ আর টেইলরের বিচক্ষণতায় ১৯৬৯ সালে ডার্বি কাউন্টি প্রমোশন পায়। আরও একবার তারা মুখোমুখি হয় লিডসের। ফলাফল? ৫-০ তে হার!
 
১৯৭২ সালে ডার্বি প্রথমবারের মত লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। অর্থাৎ পরবর্তী বছরে ইউরোপিয়ান কাপ ক্যাম্পেইন! ইউরোপিয়ান কাপের সেমিফাইনালে ডার্বির প্রতিপক্ষ নির্ধারিত হয় জুভেন্টাস। আর তার আগের সপ্তাহে লীগে তাদের ম্যাচ লিডসের বিপক্ষে। টেইলর আর লংসনের নিষেধ সত্ত্বেও, লিডসের বিপক্ষে জয়ের নেশায় বিভোর ক্লফ তার বেস্ট স্কোয়াড ব্যবহার করেন। লিডসের পৈশাচিক ফাউলের কারণে ডার্বির মেইন টীমের প্রায় সবাই ইনজুরিতে পড়েন। দুর্বল, অসম-শক্তির এক দল নিয়ে জুভেন্টাসের বিপক্ষে মাঠে নামেন ব্রায়ান ক্লফ। জুভেন্টাস তাদের ৩-১ গোলে পরাজিত করে।
 
রাগান্বিত ক্লাব চেয়ারম্যান লংসন ভবিষ্যৎ কোন সাইনিং এর জন্য অনুদান প্রদানে অসম্মতি জানান। ক্লাব ম্যানেজমেন্টের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ক্লফ নিজের ও টেইলরের রেজিগনেশন লেটার জমা দেন। ক্লাব তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে,যা ক্লফের জন্য ছিলো অপ্রত্যাশিত! টেইলর এই খবর শুনে হার্ট এট্যাক করেন। এরপর ক্লফ ও টেইলরকে ম্যানেজারশিপ অফার করে ব্রাইটন-হোভ আলভিয়ন ফুটবল ক্লাব। তারা ক্লাবের প্রস্তাবে সম্মতি জানান।
 
চলুন, ফিরে যাই ১৯৭৪ এর গ্রীষ্মে! রেভির ম্যানেজারশিপ পরিবর্তনের পর লিডস ইউনাইটেড এর প্রতিনিধি ক্লফের সংগে যোগাযোগ করেন। লোভনীয় প্রস্তাব পেয়ে ক্লফ চলে যেতে চান লিডসে আর টেইলর থাকতে চান ব্রাইটনে। টেইলরের সংগে বাদানুবাদ হয় ক্লফের। অতঃপর দুজনার দুটি পথ!
 
লিডস ইউনাইটেডে মাত্র ৪৪ দিনের হতাশাজনক এক ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়ার কাটান ব্রায়ান ক্লফ। প্লেয়ারদের সংগে মতের মিল না হওয়া, একের পর এক লজ্জাজনক হার, ডন রেভির প্রতি সবার অন্ধ সমর্থন আর ক্লফের একগুঁয়ে মনোভাবই যার মূল কারণ। পিটার টেইলর কিন্তু তখনো ব্রাইটনের কোচ!
 
ক্লফ অবশেষে ফিরে যান টেইলরের কাছে। দুজন মিলে নতুন এক অধ্যায় শুরু করেন। ক্লফ আর টেইলর কোচিং শুরু করেন এক অখ্যাত ক্লাব, নটিংহ্যাম ফরেস্টে। তাদের হাত ধরে নটিংহ্যাম ফার্স্ট ডিভিশন চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৭৯ আর ১৯৮০ সালে পরপর দুইবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয় নটিংহ্যাম। অন্যদিকে, ডন রেভি ইংল্যান্ড জাতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে চরমভাবে ব্যর্থ হন।
 
নিজের পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারে ২৭৪ এপিয়ারেন্সে ২৫১টি গোল করা ব্রায়ান ক্লফকে অভিহিত করা হয়েছে "The best manager that the English national side never had" বলে। ব্রায়ান ক্লফের অনবদ্য ফুটবলার ও ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়ার নিয়ে ২০০৬ সালে ব্রিটিশ লেখক ডেভিড পীস রচনা করেন উপন্যাস "The Damned Utd." টম হুপারের পরিচালনায় এই উপন্যাসের কাহিনী অবলম্বনে ২০০৯ সালে সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্র "The Damned United."
 
 
brian-clough-peter-taylor_q1x7jsna3waz14gixoqgow7o3