• ফুটবল

বিশ্ব ফুটবল ভুবনে স্প্যানিশ ঘরাণার বৈশিষ্ট্য....

পোস্টটি ৪৩৪৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

কেমন খেলে স্পেনীয় দলটি?

স্পেনীয় দলটি কেমন ফুটবল খেলে এবং কিভাবে খেলছে? স্পেন খেলার ভেতরে লক্ষ্য করা যায়, প্রায় সব ক’টি ল্যাটিন ধারার কিছু কিছু প্রভাব। বলাবাহুল্য, অন্য ১০টি দেশের মতো স্বাভাবিকভাবে স্পেন দক্ষিণ ইউরোপীয় ফুটবল ঘরাণার অন্তর্ভূক্ত।

স্পেন ভূ-খন্ড সমুদ্ররাশির তিনদিকে ঘিরেছে। ভূগোলের ভাষায় এর নাম-আইবেরীয় উপদ্বীপ। স্পেনীয়রা স্থানীয় আদি জনমানব জাতি সস্ক জনগণের সঙ্গে অনিবার্য সংঘর্ষ ঘটায়। যার পুরোভাগে দক্ষিণপ্রান্তের গ্রানাডা অঞ্চল। এখানে আরব শ্রেষ্ঠত্বের পরবর্তী পরবর্তী রাজত্বকাল অভ্যূত্থান ঘটে।

মূরদের দ্বারা আরব বিজয়ের প্রাক্কালে স্প্যানিশরা আক্রান্ত হয়। মূরগোষ্ঠীদের প্রথম পরিচয়-তারা প্রথম প্রজন্মের আফ্রো-আরব। যেখানে বর্তমানে মিশর, লিবিয়া, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, মরক্কো অধিবাসীদের বলা হতো ঐ প্রজন্মের আফ্রো-আরব। ফলে উত্তর আফ্রিকার জীবন ধারায় ইসলামীয় স্বর্ণযুগে প্রবেশের সাথে সাথে সম্পূর্ণ বদলে যায়। অতএব, ইউরোপিয়ান ইতিহাসের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় স্পেনে প্রতিষ্ঠিত হলো। সেহেতু স্থানীয় আদি সস্কধারা, উত্তর জার্মেনিক ধারা ও উত্তর আফ্রিকীয় মূরীয় ধারা-এ বিচিত্র জাতি নিয়েই আইবেরীয় উপদ্বীপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যেহেতু ইতিহাস সৃষ্টির ক্ষেত্রে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের জগতে স্পেনের অবদান অনেক।

১৪০০-১৫০০ শতকের পূর্বে স্পেনীয়দের অবদান সম্বন্ধে পূর্বইতিহাসের কোনো ভূমিকা জানা যায় না বা এর পূর্বতথ্য অনুসন্ধানের খবর পাওয়া যায়নি। তবে এ প্রসঙ্গে অনুমান করা হয় যে, মূলতঃ স্পেনীয় ভাবধারার উপর জীবন সম্বল বড় জোর উত্তুরের তান্ডবে এবং অনৈতিক স্খলনে স্পেনীয় জাতি একটা অনিশ্চিত, একটা সংশয় এবং একটা উদ্বেগ প্রকাশে সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে পড়ে। যেভাবে যে অবস্থার কঠিন সাধনার ফল উত্তর সাফল্য পেয়েছে-তার চেয়ে বেশি সফল সেই সাধনার ভিত্তিপ্রস্তর স্পেনীয়দের জানা ছিল না। এটা যে ভিত্তিভূমির উত্তর নির্ধারিত-সে কারণে স্পেনীয়রা অসফল ছিল।

স্পেনীয়দের বিভিন্ন সংস্কৃতি হতে বিখ্যাত ডাচ কোচ রাইনাস মিশেল সুন্দর বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন-‘স্পেনীয়রা গড়পড়তায় অসাধারণ। বিশেষ করে অন দ্য বল। ডাচ বা জার্মানদের চেয়েও অনেকগুণ ভালো। কিন্তু তারা অসম্ভব অলস। সবজান্তা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরিবেশিষ্টত তাদের মাঝে প্রকটভাবে বিদ্যমান। তারা ফুটবলকে নিয়ে খুব একটা হৈচৈ করেও না। এমনকি টিম মেটের সঙ্গেও স্পেনীয়রা ফুটবল নিয়ে কথা বলে না। বোধ করি, তাদের কাছে ফুটবল খেলা যে একটি টিম গেইম-এটা তারা মনে রাখতে চায় না। আর এটাই অনুমানের একমাত্র পূর্বলক্ষণ। এদের চিন্তাভাবনা উদ্দেশ্যবিহীন নয়। তাদের খেলা স্টাইলটির কালে ভদ্রে স্পেনীয় দল বুঝতে পারে যে, ঐ উত্তুরের ধাঁচ আমদানী করা প্রায় অসম্ভব।’

ট্যাক্সটিক্সে স্পেনীয় দল কি রকম?

প্রশ্ন করা অবৈধ হবে না যে, স্পেন ট্যাকটিক্সে কি রকম? মাঝমাঠ ও তার উপর পর্যন্ত স্প্যানিশ দল প্যাটার্ন প্লেইং হলেও গোলের সামনে এসে কনভেশনালে উপস্থাপন করে। ফরাসি দল তা উল্টোদিকে খেলে। প্যাটার্ন খেলাকে স্পেন ঐ জায়গায়কে বেছে নেয়। বাকী মাঠে তারা কনভেশনাল। প্যাটার্নভিত্তিক খেলা বিপক্ষ দলের গোলমুখ খুলতে চূড়ান্ত ব্রেক থ্রু মুভে স্প্যানিশের দারুণ প্রথম পছন্দ।

৩-৪টি চোখ ধাঁধানো ছোট ছোট মুনোমুগ্ধকর পাসে অবিশ্বাস্য ফাইনাল টাচ নির্মাণ করলো। ব্যস! হা হা কার বিপক্ষ গোলমুখের জট খুলে যাবে, অমনি গোল পাওয়া যাবে। সেখানে ফরাসিরা এত সহজ, এত অনায়াসে খেলে অবলীলাক্রমে নিশ্চিন্তভাবে সম্পাদন করায় সিদ্ধহস্ত। কিন্তু স্প্যানিশ দল গোলমুখ খোলার ব্যাপারে এতটা সৃজনশীল নয়। তারা ফাইনাল থার্ডে বেশ গতানুগতিক সীমাবদ্ধ রাখে, তারপর মাঝে মধ্যে ব্রেক থ্রু, ওয়ান-টু প্রান্তে বল ফেরত পাঠায়। এবং বল খেলার সূত্রে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের উপর ফাইনাল থার্ডে গিয়ে বক্সে আগুয়ান ফরোয়ার্ড চলন্ত বলকে টেনে খুব কাছাকাছি দাঁড়ানো স্ট্রাইকারের কাছে মাপা ক্রস দিয়ে দেয়।

এ রকম একটা উদাহরণ দিই-যারা দুর্ভাগ্য, তারা অন্যান্য দল হতে আলাদা স্প্যানিশের চূড়ান্ত স্টাইলটির খেলা নিজ চোখে দেখেনি, দেখালে হয়তো বা সৌভাগ্য লাভ করতো। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ মেক্সিকোতে স্পেন ফুটবল স্কোয়াডে যে স্ট্রাইকারকে এনেছিল, তা সত্যি-ই সুযোগ্য ফুটবল খেলোয়াড় বটে, নাম এমিলিও বুত্রাগুয়েনা। দারুণ এক ক্ল্যাসিক্যাল স্ট্রাইকার এবং সেন্ট্রাল স্ট্রাইকারের যে নমুনার পথ হতে সাবেকী ভূমিকা পালন করেছিলেন তা সেই অসাধারণ বুত্রাগুয়েনা।

মেক্সিকো’৮৬তে খেলে যাওয়া এই ফুটবল খেলোয়াড়ের প্রয়োজনীয় রসদপত্র আর মাল-মশলার অস্ত্র খুব সিরিয়াস-সমাহারের মধ্যে বিচিত্র গুণ তো ছিলই। তার পায়ে জোড়ালো অস্ত্রের জবাব খুঁজে পাওয়া যায়-স্পিড, টার্নিং, প্লেস টেকিং, ইন গোল টু বল রিসিভ্ড, ইমিডিয়েট গুড মেশিন শট এবং কুলিস্ট পারফর্মিং। সব কিছুর উপাদান বুত্রার পায়ে উপস্থিত।

তাঁর টাইট মার্কিং রিজিওন অপূর্ব বল নিয়ন্ত্রণে খেলতে দেখা গেল, যা যে কোনোভাবে তৃষ্ণার্ত চোক দু’টিকে দু’দন্ড শান্তি এনে দেবে। এবং সত্যি-ই ডিলাইটফুল! ঐ নিñিদ্র রিজিওনে ওরকম ট্র্যাপিং ডিফেন্স জোনের হৃৎপিন্ডে দাঁড়িয়ে বুত্রা যেভাবে খেলেছিল, অনেকে মনে করেন-বুত্রার পায়ে নিশ্চয়ই কোনো বুটে আঠালো পদার্থ ব্যবহার করছেন এবং বলের উপর এতো নরম স্পর্শ। তিনি ফাঁকি দিতেন চারদিকে উড়ন্ত বুটকে এবং অন্তত বহুবার।

এই চেহারায় তিনি যে মজবুত দেহের অধিকারী তা কিন্তু নয়, ভীষণ রোগাটে, ঈষৎ পাংশু মুখ। অন্যমনস্ক এই অলস ছেলেকে দেখে মনে হবে না যে, ক্লোজ কন্ট্রোলে তার বিষাক্ত ছোবল দিতে পারেন বা তিনি খেলতে জানেন। এটা তার ক্রীড়া শিল্পের বিদ্যুৎ প্রতিভা। ছোট ছোট ফেইন্ট, পায়ের তলা দিয়ে বল টেনে দু’জনকে ডজ কাটিয়ে দারুণ সিদ্ধহস্ত ছিলেন বুত্রা।

এটি একশ’ ভাগ সত্যি যে, মেক্সিকো ফুটবল খেলার সময় তার অনুপম ড্রিবলিঙের সৌন্দর্য প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। লিখতে দ্বিধা হওয়ার কথা নয় যে, বুত্রার প্রতিভা সম্পন্নের চেয়ে অনেক বেশি ছিল তার প্রতিশ্রুতির ফুটবলমোহ। বলকে নাড়াচাড়ার সব কিছুর ক্ষমতাও ছিল, কিন্তু সেই ’৮৬’র বিশ্বকাপে স্পেন ভালো ফুটবল খেলা উপহার দিয়েছে। ফরাসিদের কথা ভাবুন-তাদের সব ছিল, শুধু ছিল না বুত্রার মতো অস্ত্রপ্রয়োগ। ঐ বুত্রার অস্ত্র স্প্যানিশের ছিল, কিন্তু ফরাসিদের মতে স্পেনীয় দল হাসতে হাসতে প্রতিপক্ষের গোলমুখ খোলার অস্ত্র ছিল না। আর এটাই হচ্ছে স্প্যানিশ ইমাজিনেশনের সংস্কৃতি।


স্পেনের ফুটবল ঘরাণা কি রকম?

পূর্ব প্রসঙ্গান্তরে স্পেন দল ফুটবল মাঠে কেমন খেলে এ বিষয়ের অবতারণা ক্রীড়া পাঠকদের বিশেষ সুবিধার্থে কিছু বর্ণনা দেয়া হলো। স্পেন খেলা মাঠে ল্যাটিন ধারার কিছু না কিছু প্রভাব থাকবেই। স্প্যানিশ দল ফুটবলের প্রাথমিক কাল হতে ডিপ-ডিফেন্সে ম্যান মার্কিংয়ে খেলে এবং এখনো খেলছে। স্পেনের প্রতিটি ফুটবল খেলোয়াড় মুভমেন্ট ও জায়গা পরিবর্তনে সিদ্ধহস্ত এবং তাদের খেলোয়াড়ের পায়ে বল পড়লে কোনো কথাই নেই। পুরোপুরি একটি জোনাল প্যাটার্ন ধরে খেলার মাঠে অনুসরণ করে আসছে।

স্পেনীয়রা ডিফেন্সকে আলাদা একটি স্পেশালাইজ্ড ডিপার্টমেন্ট মনে করে এ কথা সত্য। কিন্তু টোটাল ফুটবলে যে একজন ফুটবল খেলোয়াড় আক্রমণ ও প্রতিরক্ষায় সমান দায়িত্ব আছে-সেটা তারা কখনো মনে করে না। মনে করার মতো কিছুই দেখেনি। ফলে ডিফেন্সিভ জোনের ব্যস্ত ফুটবল খেলোয়াড়রা মার্কিং, কভারিং, শিল্ডিং, ট্যাকলিংগুলো আর্ট অব ডিফেন্ডিংকে নিজেদের চর্চার আয়ত্ত্ব করেছে। কখনো কখনো একজন ডিফেন্ডার ট্যাকটিক্যাল সারপ্রাইজ খেলে খেলে আক্রমণে উঠে আসার জন্য একটি পদ্ধতি স্ট্রাকচার দরকার-সেটাও তাদের মধ্যে ছিল না।

কিন্তু এখানে ঐ একই পদ্ধতিতে ফরাসিদের দেখবেন-ওরা ডিফেন্সিভ জোনকে এ্যাটাকিং স্কিল বানিয়ে রীতিমতো চর্চা করে। অথচ স্প্যানিশ এ দু’টি ডিপার্টমেন্টকে একটু বিচ্ছিন্ন করে দেখে আর স্পেন দল স্লো-বিল্ড আপকে দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করে। এবং নিয়মের বাইরে প্রায় কখনোই পাল্টা আক্রমণে তেমন জোরালোভাবে ব্যবহার করে না। সম্ভবতঃ এই কারণে ফ্রেঞ্চ দলটি বিশ্বকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলায় একটির বেশি সাফল্য পায়নি।

কাউন্টার এ্যাটাকে স্প্যানিশদের অনীহা

এ প্রসঙ্গে ঐ পাল্টা আক্রমণে বা কাউন্টার এ্যাটাকিংয়ে ইতালিরা একটি স্টাইল উদ্ভাবনের সৃষ্টি করেছে, স্পেন কিন্তু এর মাঝামাঝিতে কাউন্টার এ্যাটাকে জড়িয়ে পড়ে এবং অবশ্য দ্রুত পাল্টা আক্রমণে যেতে স্পেনদের অনীহাভাব আছে। তবুও তারা মাঝে মধ্যে এটি খেলে যায়। স্পেন দল বরাবরের মতো ফরাসিদের স্টাইলে অতিমন্থর বিল্ড আপ দল নয়। সুযোগ পেলে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ হতে পৃথিবী সব দলেরই দ্রুত ফায়দা তুলতে চেষ্টা করে এবং লক্ষ্য করলে দেখা যাবে-সব দেশ বা সকল দল সমান দক্ষতা ও নির্ভুল কাজটি করতে সক্ষম নয়।
‘খেলতে পারে না’-তা লিখছি না। পাল্টা আক্রমণ করতে পারাও কিন্তু সকল দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, একটি প্রতি-আক্রমণ ফায়দা তোলার আগে প্রতিটি দেশের একটি সংস্কৃতি আছে, মান-ইজ্জত আছে এবং মর্যাদার প্রশ্নটিও তো আছে। সঙ্গত কারণে প্রতিটি দেশকে অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়।

স্প্যানিশ ফুটবলের ধারাবাহিক স্টাইল
স্প্যানিশরা ধারাবাহিক স্টাইলের উপর চিরকাল অভ্যস্ত। চিৎকারহীন পরিবেশ তৈরি করে স্পেন বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলেছে। আবার হৈচৈ পরিবেশে বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে কোয়ালিফাইং হতে ইংল্যান্ডও সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে-দুই মেরুর বাসিন্দা হয়েও তারা ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে খেলে ফুটবলের উত্তরোত্তর সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় অংশ নিয়েছে। যদিও দুই দেশের পারফরমেন্স ও প্রত্যাশা ফলাফল একভাবে আসেনি।

হৈচৈ স্বভাব পরিবেশে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের স্বাদ স্বাগতিক ইংল্যান্ডরা পেরেছে। অথচ দেখুন-হৈচৈহীন প্রতিকূল পরিবেশে বেশ কয়েকবার বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নিলেও উল্লেখ করার মতো শিরোপার বর্ণমালা পড়ার তেমন সুযোগই স্প্যানিশরা পায়নি। মাত্র একবারই ২০১০ সালে সেই রাস্তা খুঁজে পেলেও সেই স্বার্থকতার পরিমার্জন এখনো তাদের মেরুদন্ড সোজা হতে পারেনি। কি আর করা যাবে? যা কিছু ঘটেছে, ত ঐ দুই দেশের ফুটবল সংস্কৃতির রীতিনীতির ব্যাপার।

এবারে পোস্ট মর্টেমের বিষয় : একটা বিষয় সকলে নিশ্চয়ই একবাক্যে স্বীকার করবেন, ইংরেজরা এ যাবত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলে কিছু ক্ষেত্রে ধূর্ততার আশ্রয়ে চটকদার সাফল্য পেলেও বলা যাবে না-তারা রীতিমতো যোগ্যতর দল হিসেবে জিতেছিল। কিন্তু সেই তুলনায় সততার পথে গিয়েও স্প্যানিশরা সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। কেন হয়নি-এটা একটা প্রশ্ন!

বর্ণময় ফুটবল প্রতিযোগিতায় সাফল্যহীনের মাঝেও স্পেন কিন্তু দারুণ মনোমুগ্ধকর ও চমৎকার সৃজনশীল ফুটবল খেলা পরিবেশন করে গেছে। বিশেষ করে স্প্যানিশ জাতীয় দল নয়, ক্লাব আন্তর্জাতিক ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদ ৮বারের ইউরো কাপ খেতাব অর্জনে বিরাট অবদান রেখেছে এবং যুগবৎ সেই তুলনার বিশ্লেষণে ইংরেজ ক্লাব দলের চাইতে জাতীয় দল ২/১টি অধারাবাহিক সফলের মুখ দেখেছে।

এ কথা বুঝতে সবার অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, গোটা বৃটিশ ক্লাব ফুটবলে কী ফুটবল রণকৌশলে এতো বেশি দুরাবস্থা শিকারগ্রস্ত হলেও তাদের ম্যাচ-সন্ধিক্ষণে প্রতিফলিত হয়নি। এ রকম মনে হওয়াই স্বাভাবিক। ঠিক একইভাবে ফুটবলের ক্ষুদ্র পরিসর হতে উত্তর ইউরোপিয়ানগোষ্ঠী পোল্যান্ড প্রতিভাবান দল লরি ক্যানিংহ্যামের কথা পরিস্কার ফুটে উঠেছে।
নিশ্চয়ই, পোল্যান্ডও এর বাইরে পড়ে না। চেঁচিয়ে উঠা ইংল্যান্ড এবং চেঁচিয়ে না উঠা স্পেনের ছোঁয়াচে প্রভাব পোল্যান্ডে না পড়লেও এক ধরনের প্রতিভার জোরে বিশ্বকাপ ফুটবলের দরজায় নক করে বিস্ময়কর রকমের ফুটবল প্রদর্শন করেছে। মনে রাখতে দোষ কোনো নেই-পোল্যান্ড বিশ্ব ফুটবলের একটি সাম্প্রতিক শক্তি।

এলিস হক
ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার
উপদেষ্টা, বাংলাদেশ লোকাল স্পোর্টস কমেন্টেটর্স এসোসিয়েশন, ঢাকা।
২০.৫.১৮

 

a436eb5a144f26e1e5f0a0b4acf36af2