ম্যারাডোনা ম্যানিয়া
পোস্টটি ২৫৭৪ বার পঠিত হয়েছেম্যারাডোনা ম্যানিয়া ।
---------------------'
আমার দেখা বিশ্বকাপের ১ম ম্যাচ কোনটি ?
১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের আর্জেন্টিনা বনাম গ্রীস ম্যাচটি । ম্যাচটি দেখেছি যতটা না আর্জেন্টিনাকে ভালবাসে তার চাইতে হাজার গুণ বেশী ম্যারাডোনা কে ভালোবেসে । তখন সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের গ্রাম ও ছিল ম্যারাডোনা ম্যানিয়া এ আক্রান্ত । হাই স্কুলের ১৪ ইন্চি ভাংগা চুরা সাদাকালো টিভিতে ঐ ম্যাচে ম্যারাডোনাকে দেখার জন্য কয়েকশত মানুষ জমায়েত হয়েছিলাম । ফুটবল এর কিছুই বুজতাম না , শুধু ম্যারাডোনাকে দেখলেই চিত্কার দিতাম । ঐ ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৪-০ গোলে জিতেছিল । ম্যারাডোনা করেছিল ১ গোল এবং সম্ভবত বাতিগোল করেছিল হ্যাট্রিক ।উল্লেখ্য বাতিস্তুতার এটা ছিল প্রথম বিশ্বকাপ। বাতিস্তুতা-ম্যারাডোনা একরকম জুটি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার চান্স ছিল। এখানে উল্লেখ্য আর্জেন্টিনা ৯৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্লে-অফ খেলে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার সাথে। ম্যারাডোনাবিহীন আর্জেন্টিনা সরাসরি কোয়ালিফাই করতে পারে নাই। ফিরিয়ে আনা হল ম্যারাডোনাকে,প্লে-অফে অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাতিস্তুতা যে গোল দিয়ে ছিল তার ফাইনাল পাশ ছিল সর্বকালের সেরা নাম্বার-১০ এর। তারপরের ম্যাচ ছিল নাইজেরিয়ার সাথে, ঐ ম্যাচে ম্যারাডোনা কোন গোল না করলেও প্লে-মেকার রোলে ফিজিক্যাল নাইজেরিয়ার সাথে ঝলছে উঠে। ২-১ গোলে জিতে আর্জেন্টিনা জিতে। ২ টা গোল করে ৯০ এর হিরো ক্যানিজিয়া। ফ্রন্টে বাতিস্তুতা, ক্যানিজিয়া পিছনে ম্যারাডোনা-সর্বকালের সেরা প্লে-মেকার। এর থেকে ভয়াবহ এট্যাকিং লাইনআপ ৯৪ বিশ্বকাপে কারো ছিল কিনা সন্দেহ আছে। ঐ ম্যাচের পর থেকেই ফুটবলের ঈশ্বর আমার মনোজগত দখল করে নেয় । পরের ম্যাচ ছিল রোমানিয়ার সাথে , রাতে স্কুলে খেলা দেখায়নি । সকালে গেলাম হাইলাইটস দেখতে , গিয়ে শুনলাম আর্জেন্টিনা হেরে গেছে আর ম্যারাডোনা বহিস্কার । সিনিয়ন ভাইদের কান্না দেখে ঐ দিন ম্যারাডোনার জন্য কান্না করেছিলাম ।
তার পর থেকেই ম্যারাডোনা হয়ে উঠে আমার স্বপ্নের নায়ক ।এরপর থেকে ম্যারাডোনাকে নিয়া যত লেখা পেতাম পড়তাম । ক্রীড়ালোক কিনে পড়তাম ম্যারাডোনাকে নিয়ে যত লেখা । যত পরতাম তত ই মুগ্ধ হতাম । একটা মানুষ কিভাবে সারা পৃথিবীর ফুটবল প্রেমিদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে । ম্যারাডোনা ছিল মহানায়ক । পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ্র জনপ্রিয় ক্রিড়াবিদ ।
গল্প শুনেছি ৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার বিরত্বগাথা । একক প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপ জয় , ম্যারাডোনা বাদে ঐ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনার একাদশের আর একজনের নাম বলতে পারবেন ? অবশ্য ই না । ফুটবল একটা দলগত খেলা কিন্তু ৮৬ এর বিশ্বকাপে শুধু আর্জেন্টিনা না বাকি দলগুলো ছাপিয়ে একটাই রব উঠেছে ম্যারাডোনা। সাদা পেলে জিকো, তিনবার ব্যালন জয়ী প্লাতিনিকে টেক্কা দিয়ে একেবারে অপ্রতিদ্বন্দীভাবে গোল্ডেন বল জিতা ভাবা যায়। ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচের কথা বাদ দিলাম। সেমিতে বেলজিয়ামের সাথে ২ গোল যেন বড় আসরের সলো গোলের বেস্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে।বেলজিয়াম এর বর্তমান অধিনায়ক কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন... বেলজিয়াম আর্জেন্টিনার কাছে হারেনি, হেরেছে ম্যারাডোনার কাছে,।এমনকি ইংল্যান্ডের সাথে প্রথম গোলের (হ্যান্ডস অফ গড) আগে ডি-বক্সের সামনে ম্যারাডোনার মুভমেন্ট ছিল শিল্পী জয়নুল আবেদিনের তুলির আচর। দ্বিতীয় গোলের ভাষা কোন লেখক কখনো তুলে ধরতে পারবে না। উপর থেকে যেন ভ্যানগগ-পিকাসোরা সেইদিন ম্যারাডোনার বাম পায়ে ভর করেছিল। ফাইনালের সেই লাস্ট মোমেন্টে জাদুকরি পাশের কথা না বললে অবিচার হয়ে যায়। এতগুলো প্লেয়ারের মধ্য খেলার শেষের দিকে একটা টাচে বল বাহির করে দেওয়া আধুনিক কালের ডিপ-লায়িং প্লে-মেকার, রিয়্যাল প্লে-মেকার এবং ফলস-৯ সবার স্বপ্ন।
৯০ বিশ্বকাপের ফাইনাল তো তাকে চির অমরত্ব এনে দিয়েছিল । কাপ হাতে ম্যাথিউসের উল্লাসের ছবির থেকে ম্যারাডোনার কান্নার ছবি বেশি প্রচারিত হয়েছিল । ঐ ম্যাচের পর নাকি বাংলাদেশে রেফারী কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছিল । ঝাড়ু মিছিল হয়েছিল । মাঠে ম্যারাডোনা ছিল নিবেদিত প্রাণ সত্যিকারের নেতা । ৯০ বিশ্বকাপ এর ফাইনালে যখন আর্জেন্টিনার ২ জন খেলোয়াড় কে লাল কার্ড এবং গোল বাতিল করে দেয়া হয় তখন সতীর্থরা খেলা চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় । কিন্তু ম্যারাডোনা খেলা চালিয়ে যায় , সত্যিকারের স্পোটর্স ম্যান ।
ইন্টানেট আসার পর ম্যারাডোনাকে নিয়ে শত শত লেখা পড়েছি । আর অবাক হয়েছি তার সম্পর্কে যত জেনেছি । ম্যারাডোনা আমার কাছে পৃথিবীর সেরা , জন প্রিয় খেলোয়াড় , পৃথিবীর সেরা সিলেব্রিটি ।
মেসি নাকি ম্যারাডোনা ? অবশ্যই ম্যারাডোনা । ম্যারাডোনা যদি হয় প্রশান্ত মহাসাগর তবে মেসি সর্বোচ্চ বঙ্গোপসাগর।
জাতিয় দলের মত ক্লাব ফুটবলেও ম্যারাডোনা অবিসংবাদিত ভাবেই সর্বকালের সেরা ।
একটু উদারহণ দেই , ধরেন ইতালীয় ক্লাব সাম্পদোরিয়া যদি এখন সিরি এ , কোপা ইতালিয়া এবং চ্যাম্পিয়নলীগ জিতে তবে অবাক হবেন ? এটাই সম্ভব করেছিল ম্যারাডোনা , নেপোলির মত এক অখ্যাত দল কে করেছিল ইতালী এবং ইউরোপের সেরা ।
আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ নায়ক , সিলেব্রিটি এই ম্যারাডোনা , পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমিদের নিকট যেমন কিংবদন্তি তেমনি নেপোলীবাসিদের কাছে দেবতা তুল্য ।
নেপোলিয়ানরা ভাবে হাজার বছর পরে নেপোলির মাটি খুড়লে প্রত্নতাত্তিকরা এত এত ম্যারাডোনার মুর্তি পাবে যে তারা হয়ত ভাববে ম্যারাডোনা হয়ত ছিল বড় সম্রাট অথবা জিউসের মত দেবতা।
শুধু নেপোলিয়ান না, দক্ষিণ ইতালির সবার কাছে ম্যারাডোনা আইডেন্টি ধনী উত্তর ইতালির বিপক্ষে, এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল দক্ষিণ ইতালির ক্লাবের মধ্য একমাত্র নেপোলি সিরি-এ জিতেছে,তাও ম্যারাডোনার নেতৃত্বে। ভাবা যায় !
মোঃ নুরুল করিম
https://www.facebook.com/nurulkarim.du
- 0 মন্তব্য