• ফুটবল

ঈশ্বরের অটোগ্রাফ পাওয়ার গল্প

পোস্টটি ৫৫৫২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

২০১০ সালের কথা। বিশ্বকাপের মরশুম। ক্লাস টেনের ছাত্র আমি। টিফিন পিরিয়ডের পর স্যার এসে ঘোষণা দিলেন, শেষ পিরিয়ডে কোন ক্লাস হবে না। সব সেকশনের ছাত্রদের একত্র হতে বললেন কমন রুমে। সেখানে নাকি বিশ্বকাপ উপলক্ষে সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা হবে। বাহ। ভালো তো। ঘন্টা বাজলে সবাই এলোমেলো পায়ে কমন রুমে পৌঁছে গেলাম। একটা দৈনিক পত্রিকা কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে, তাদেরই জনা চারেক কর্মী এসেছে অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে। প্রতিযোগীতা যেহেতু, নিশ্চয়ই পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে! সবার মধ্যেই উত্তেজনা দেখা গেল। স্যাররা ছাত্রদের সেকশন অনুসারে ভাগ হয়ে মেঝেতে বসে পড়তে বললেন। পত্রিকার লোকেরা বোধহয় কিছু বলবে। একটা মাইকের ব্যবস্থা হল। পত্রিকার একজন মাইক হাতে নিয়ে জানিয়ে দিল, বিশ্বকাপ নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করা হবে। খেলোয়াড়ের নাম, ইতিহাস ইত্যাদি সংকান্ত আর কী। যারা সঠিক উত্তর দিতে পারবে, তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে... ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনার স্বাক্ষর করা ফুটবল।

মনে হল ভুল শুনলাম না তো?

ম্যারাডোনার অটোগ্রাফ করা ফুটবল?

এও কি সম্ভব?

ব্রাজিলের সমর্থক হয়েও এমন একটা ফুটবল পাবার লোভ সামলানো দায়। আয়োজক বারবার মাইকে বলছে, পুরস্কার ম্যারাডোনার অটোগ্রাফসহ ফুটবল...পুরস্কার ম্যারাডোনার অটোগ্রাফসহ ফুটবল।

মোট ফুটবলের সংখ্যা ৬ টি।

ছাত্রসংখ্যা শ তিনেক।

ফুটবলটা আমাকে পেতেই হবে।

শুরু হল কুইজ প্রতিযোগিতা।

একটি প্রশ্নের উত্তর পারলে টি শার্ট, দুইটির উত্তর পারলে ফুটবল।

ফুটবলটা আমাকে পেতেই হবে।

একের পর এক প্রশ্ন করা হচ্ছে। উত্তর অনেকেই পারে। সবাইকে তো আর সুযোগ দেয়া যায় না। তাই স্যাররা বেছে বেছে ছাত্রদের মাইক দিচ্ছে উত্তর দেয়ার জন্য। প্রায় গোটা পঞ্চাশেক টি শার্ট ছিল। সেগুলো একটার পর একটা বিতরণ হচ্ছিল উত্তরদাতাদের মাঝে।

ফুটবলটা আমাকে পেতেই হবে।

কিন্তু আমি তো উত্তর দেবার সুযোগই পাচ্ছি না। শত ছাত্রের মাঝে আমার হাত নাড়ানো হয়তো সেভাবে চোখে পড়ছে না স্যারদের।

যারা দুইটা করে সঠিক উত্তর দিচ্ছিল, তারা বাগিয়ে নিচ্ছিল বহুল আরাধ্য সেই ফুটবল। ৬ টা ফুটবল থেকে ৫ টা শেষ। বাকী মাত্র একটা।

ফুটবলটা আমাকে পেতেই হবে।

আমার আবেগমথিত মুখ দেখে একজন স্যার বললেন, এবার তুই উত্তর দে, পারবি তো?

পারবো স্যার...পারতেই হবে।

প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করলেন, সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপে আইভরি কোস্ট দলের ম্যানেজারের নাম কী?

পুরো নামটা মনে নেই, শেষ পদবীটা জানি। বলে দিলাম।

“এরিকসন”।

খানিকক্ষণ নীরবতার পর প্রশ্নকর্তা বললেন, সঠিক উত্তর।

একচোট হাততালি হয়ে গেল কমন রুম জুড়ে।

টেবিটে সর্বশেষ বলটা চকচক করছে। ঈশ্বরের অটোগ্রাফসহ ফুটবল।

এবার প্রশ্নকর্তা যেন আমার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। দ্বিতীয় প্রশ্নটা পারলেই বলটা আমার।

এবারের প্রশ্নও সেই এরিকসন সাহেবকে নিয়েই।

২০০৬ বিশ্বকাপে এরিকসন কোন দলের ম্যানেজার ছিলেন?   

আসলে উত্তরটা আমি জানিনা। কিন্তু এরিকসন নামটা খেলার বাইরেও কোথায় যেন শুনেছি। স্মৃতি নিংড়ে কিছু একটা বের করার চেষ্টা করলাম।

হঠাত মনে পড়ল, একটা ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণীকে জড়িয়ে এরিকসনের স্ক্যান্ডাল।     

থাক সেই নিষিদ্ধ গল্পের দিকে আমরা না যাই। শুধু জানিয়ে রাখি সেই তরুণীর বসবাস ইংল্যান্ডে।

মনে মনে ভাবলাম, তবে কী এরিকসন ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজার ছিল?

যা হবার হবে, উত্তর বললাম, “ইংল্যান্ড”

হতাশ হবার রসিকতা করে প্রশ্নকর্তা বললেন, এই ছেলে দেখি সব পারে। ওকে বলটা দিয়ে দাও।

বল পেলাম, টি শার্ট পেলাম। আহা মধু মধু।

ফুটবল উল্টে পাল্টে দেখলাম ম্যারাডোনার স্বাক্ষর ছুঁয়ে দেখার আশায়।

এইতো পেয়েছি অটোগ্রাফ।

কিন্তু...এ তো ছাপ দেয়া অটোগ্রাফ, সত্যিকারের নয়!

তবে কেন আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হল?

বেশীক্ষণ রাগ পুষে রাখতে পারিনা, ছুটির ঘন্টা শোনা যাচ্ছে।

maradona-argentina-football-goalkeeper-football-argentina-quarter_2b5a8236-46dd-11e7-9f7a-23d54b55bc46আর হ্যা, আট বছর পরেও বলটা এখনও বহাল তবিয়তে আমার কাছে আছে।