ফুটবলের নতুন সেনসেশন:
পোস্টটি ২৯৮৪ বার পঠিত হয়েছেফুটবলের নতুন সেনসেশন:
মা ফায়জা আর পিতা উইলফ্রিড এর সাজানো বাগানে ফোটলো এক ফুল। যে ফুলের প্রজাপতি এই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ। ফুলটির জন্ম হল ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের বন্ডিতে । তার পিতা উইলফ্রিড ক্যামেরুন থেকে ফ্রান্সে আসেন আর মা ফায়জা আলজেরীয় বংশোদ্ভূত। পিতা উইলফ্রিড এএস বন্ডির কোচ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে তার মা ফায়জা তিনি একজন হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। দুই বাগানের এক ফুল, একটু আলাদা তো হবেই এটাই স্বাভাবিক। আর একটা কথা যোগ করে দেই তাদের সন্তান হচ্ছেনা দেখে তারা একটি ছেলে দত্তক নেন । তার নাম জাইরে কেম্বো একোকোও তিনি একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। ছোট্ট ভাইকে পেয়ে খুশিতে আত্নহারা বড় ভাই জাইরে কোম্বে। পিতা-মাতা পুত্রের নাম রাখলেন কিলিয়ান এমবাপে। ছেলে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে পিতার দেখভাল এ।
এএস বন্ডি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আতমানে এরুশ এই ক্লাবেই এমবাপের জন্ম হয়েছে। তার বাবা যখন এই ক্লাবেরই একজন খেলোয়াড় এবং কোচ ছিলেন তখন থেকেই শিশু এমবাপে এই ক্লাবের সাথে আছে। সে সব সময়ই এখানে ছিল। ফুটবল খেলা সে এখানেই শিখেছে, এমনকি তার বাচ্চা বয়সেও।
বড়রা যখন খেলত, খেলা শুরু হওয়ার আগে দেখত, দুবছর বয়সী একটি বাচ্ছা একটি বল নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কিছুক্ষন একা একা খেলা করা, বল নিয়ে চুমু খাওয়া নানা রঙে মত্ত ফুটবল নিয়ে। বড়রা যখন বসে বসে খেলা নিয়ে গল্প করে, তাঁরা অবাক হয়ে দেখে তাদেরে সাথে বসে থাকতো সেই পিচ্ছিটা, টিমের সদস্যরা যখন আলোচনা করতো সে চুপ করে বসে বসে মন দিয়ে শুনতো। তাদের মতে খেলা শুরু হওয়ার আগে দলের ভেতরে যেসব আলোচনা হয় সেসব কথাবার্তা তার মতো হয়তো আর কেউই শোনেনি। কিলিয়ান সব সময় ফুটবল নিয়েই ভাবতো। ফুটবল নিয়েই কথা বলতো। সবসময় ফুটবল খেলা দেখতো। আর তার যখন এসব করার সুযোগ থাকতো না তখন সে প্লেস্টেশনে ফুটবল খেলতো।
এমবাপের খেলোয়াড়ী জীবন শুরু হয় এএস বন্ডি ক্লাবে।প্যারিসের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ক্লাব এএস বন্ডিতে ফুটবলের হাতেখড়ি এমবাপের। ফুটবলের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রথম ফুটবল খেলা, সবই এই ক্লাবে। এমবাপের জনপ্রিয়তার হাত ধরে তাঁর ছোটবেলার ক্লাব এএস বন্ডিও এখন কিন্তু বিরাট জনপ্রিয়। নতুন এমবাপে হওয়ার আশায় প্রতিদিনই প্রচুর বাচ্ছা ছেলে যোগ দিচ্ছে ক্লাবে। সেই ক্লাবের পরিচালক ও অনূর্ধ্ব ১৩ পর্যায়ের কোচই শোনালেন এমবাপের বেড়ে ওঠার কথা তার বাবা উইলফ্রিডের অধীনে। পরে তিনি প্রখ্যাত ক্লেয়ারফন্তেইন একাডেমিতে ভর্তি হন। রাজধানী প্যারিসের উত্তর-পূর্ব শহরতলিতে বেড়ে ওঠার সময় ফুটবলে দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করেন তিনি। সেসময় তিনি খেলতেন এএস বন্ডি ক্লাবে।
তার এক কোচ বলেন, "কোলিনকে যখন প্রথম ফুটবল খেলা শেখাই তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম সে আর সবার চেয়ে আলাদা ছিল। অবাক হয়ে লক্ষ করেছি অন্য বাচ্চারা যা করতে পারতো, কিলিয়ান তারচেয়েও বেশি করতো। তার ড্রিবলিং ছিল অসাধারণ। আর অন্যদেরে চেয়েও সে খুব দ্রুত গতিতে দৌড়াতে পারতো।"ছোট থেকেই ওর ফুটবল খেলার টেকনিক ভীষণ শক্তিশালী ছিল, যা সাধারণত ওর বয়সের বাচ্চাদের থাকে না। এটা স্রস্টা প্রদত্ত! আমার মনে হয় যেন তার মাথার পেছনেও দুটো চোখ আছে। বল কোন জায়গায় পৌঁছাবে, এটা অনুমান করতে পারার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ওর। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় কম্পলিমেন্ট! আর কি লাগে?
এমবাপে খেলা শুরু করার পর হু হু করে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এই ক্লাবের। তার ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য তার এই উত্থানে খুব বেশি সময় লাগেনি। মাত্র তিন বছর আগে যে ছেলেটি হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করে,পরীক্ষা পাশ করে বেড়িয়েছে, সেই ছেলেটিই আজ খ্যাতির শীর্ষে। সুযোগ পেয়েছে দেশের বিশ্বকাপ দলে। শুধু সুযোগ পেয়েই থেমে থাকেনি, মাতিয়ে চলেছে বিশ্বকাপ, ভেঙে চলেছে একের পর এক রেকর্ড।
জোড়া গোল করে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছে সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে। অনেকেই তাকে ডাকে ফরাসি বিস্ময় বালক কিলিয়ান এমবাপে নামে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই যাকে ধরা হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের নতুন সেনসেশন। তিনি হাই স্কুলে তার লেখাপড়া শেষ করার দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি হয়ে উঠলেন একজন পেশাদার ফুটবলার। ফ্রান্সের জাতীয় দলের খেলোয়াড়। এখন তিনি 'লোনে' খেলছেন ফরাসী ক্লাব প্যারিস সঁ জার্মেইনের হয়ে। এর মধ্যে তিনি দু'বার ফরাসী লীগ জিতেছেন। এটা কিন্তু তার জীবনের প্রথম দিকের অর্জন।
এর মধ্যেই তার নাম ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে অনূর্ধ বিভিন্ন ফরাসি ক্লাস, এবং স্পেনীয়, ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও ভ্যালেন্সিয়া তার সাথে চুক্তিবদ্ধ করার চেষ্টায় মগ্ন। এমবাপে ১১ বছর বয়সে ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে যান এবং সেখানে যুব দলের হয়ে চার্ল্টনের বিপক্ষে একটি
ম্যাচও খেলেন। পরে এমবাপে এএস মোনাকোতে যুক্ত হয়ে যান।
একটা মজার ব্যাপার হল এমবাপে কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর একজন বিরাট ভক্ত! সে তার শোবার ঘরের চারদিকের দেয়াল রোনালদোর ছবিতে ছেয়ে ফেলেছিলেন। আরো অনেক বড় বড় খেলোয়াড়েরও ভক্ত ছিল সে। সে কোন একটি বিশেষ দলকে সমর্থন করতো না। তবে সে বহু সেরা ফুটবলারের ভক্ত ছিল। তবে শৈশবে তার নায়ক ছিল রোনালদো। রোনালদো বক্তদের মনটা একটু খুশি দেখাচ্ছে মনে হয়!
মোনাকোর হয়ে তিনি প্রথম ম্যাচ খেলেন ২০১৫ সালের ২রা ডিসেম্বর। তখন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামানো হয় তাকে, তাও একেবারে খেলার শেষের দিকে। মোনাকোতে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে রেকর্ড করেন তিনি। এর আগে এই ক্লাবে সবচেয়ে তরুণ ফুটবলার ছিলেন ফরাসী স্ট্রাইকার থেয়েরি অঁরি।
এবার আসুন বর্তমানে চলে আসি ২০১৮ বিশ্বকাপ এ একটু চোখ বুলিয়ে আবার গল্পে চলে যাব ক্যামন? চাইলে আজকে একটা চা বিরতি নিতে পারেন।
লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর মতো তারকারা যেটা পারেননি, মাত্র ১৯ বছর বয়সে সেটা করেছেন কিলিয়ান এমবাপে। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গোল করেছেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড। শেষ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফ্রান্সের ৪-৩ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে জোড়া গোল করার পর অনেক তারকার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ফ্রান্সের ‘বিস্ময় বালক’ এমবাপের।
আমাদের বাপ-চাচাদের মনে থাকার কথা ১৯৫৮ বিশ্বকাপে সুইডেনের বিপক্ষে ব্রাজিলের ৫-২ ব্যবধানে জেতা ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন পেলে। এতদিন বিশ্বকাপে কোনো টিনএজারের একাধিক গোলের সেটাই ছিল একমাত্র কীর্তি। কিন্তু কালো মানিক পেলের রেকর্ড এ ভাগ বসালেন আর্জেন্টিনার জালে দুই গোল করে ৬০ বছর পর ফ্রান্সের এমবাপে। ভাবা যায় কি কাজটা করল এমবাপে?
এরপর থেকে ব্রাজিলের সাবেক ফরোয়ার্ড রোনাল্ডোর সঙ্গে তার তুলনা করছেন অনেকেই। তুলনার সংকেত থাকতেই পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমবাপেকে নিয়ে মুগ্ধতার কথা জানান পেলে। নিজের টুইটারে তিন বারের বিশ্বকাপ জয়ী এই ফুটবলার লিখেন, “অভিনন্দন, এমবাপে।”শুধু ব্রাজিলের বিপক্ষে বাদে তোমার অন্য ম্যাচগুলোর জন্য শুভ কামনা রইল।”
ফুটবল গতির খেলা আর এমবাপে মানেই দানবীয় গতি এবং সুন্দর একটা ফিনিশিং। এমবাপেকে রাশিয়ার আসরে নিশ্চিতভাবেই প্রতিপক্ষের জন্য ভয় পাওয়ার মতো খেলোয়াড় বানিয়ে দিয়েছে ইতোমধ্যেই। ২০১৫ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর থেকে উন্নতির ধারাবাহিকতায় থাকা এই তরুণ রাশিয়ার আসরে এরই মধ্যে ৩ গোল করেছেন। নম্র ভদ্র এমবাপে বললেন,“পেলের পর দ্বিতীয় টিনএজার হওয়াটা তৃপ্তিদায়ক। পেলে ভিন্ন ক্যাটেগরির। তবে তাদের সঙ্গে থাকতে পারাটা ভালো।” কোন গর্ভ বিন্দু পরিমাণ অহংকার বোধ নেই তার প্রতিটি শব্দে! এই শিক্ষাটা পেয়েছেন তার মায়ের কাছ থেকে।
ফ্রান্সের অধিনায়ক উগো লরিস জানান, রাশিয়ায় এসে ঠিক কাজটিই করেছেন এমবাপে। “আমি মনে করি, এমবাপে সারা বিশ্বের সামনে নিজেকে তুলে ধরেছে। ”তারপরও ফ্রান্সের এই ‘বিস্ময় বালককে’ কোয়ার্টার-ফাইনালে আরও বেশি কিছু দেখাতে হবে। সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে। এমবাপেকে খেলার জন্য এতটা জায়গা উরুগুয়ে দেবে না, যতটা আর্জেন্টিনা দিয়েছিল।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কিলিয়ান এমবাপের জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেল।বিশ্বকাপের 'শেষ ১৬' রাউন্ডের নকআউট পর্বে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফ্রান্সের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার নায়ক হয়ে গেলেন ১৯ বছর বয়সী এই ফুটবল তারকা।
সে ফুটবল খুব ভালোবাসে। লোকজনকে সম্মান করে। সে তার নিজের শহরকেও খুব ভালোবাসে। তার ছোট্ট বেলার ক্লাবকে সে ভালোবাসে। এখনও সে এই ক্লাবে তার দিনগুলো নিয়ে কথাবার্তা বলে। যখনই সে সুযোগ পায় তখনই সে এখানকার ক্ষুদে ফুটবলারদের দেখতে চলে আসে। সে খুব শাদামাটা আর সহজ সরল। এজন্যে সবাই তাকে খুব ভালোবাসে।
তার এক বেবিসিস্টার এর কথা, "সে কখনো বদলাবে না। কারণ সে ভালো শিক্ষা পেয়েছে। তার পেছনে আছেন তার পিতামাতা। তার পরিবারের বন্ধন খুব শক্ত। সে নিজেও পরিবারে বিশ্বাস করে এবং তারা কষ্ট পাবে এরকম কখনো সে কিছু করে না।"
সে যখন ছোট্ট একটা শিশু ছিলো সে বলটা নিয়ে এমনভাবে দৌড়ে যেত সেই একইভাবে সে এখনও খেলে। যেটাকে বলা হয় স্টেপওভার। এটা দিয়েই তাকে আলাদা করে চেনা যায়। আজ এবং আগামীর ফুটবল প্রেমীরা ঠিকই খোঁজে পেয়েছেন তাদের সবার প্রিয় ফুটবলার ন্তুন সেনসেশনকে।
সবাই ভালো থাকবেন,
ধন্যবাদ,
ম নি র মো হা ম্ম দ!
তথ্য সুত্রঃ
1.https://en.wikipedia.org/wiki/Kylian_Mbapp%C3%A9
2.https://lifebogger.com/kylian-mbappe-childhood-story-plus-…/
3.http://www.espn.in/…/kylian-mbappe-is-worlds-best-player-un…
4.http://www.goal.com/…/mbappe-ronal…/rozxmgtj4rz10tofrc6ao01v
5.http://uk.businessinsider.com/kylian-mbappe-world-record-tr…
6.www.goal.com/en-in/.../pele-congratulates-mba/pic
- 0 মন্তব্য