• ফুটবল

ফুটবলের ম্যাডম্যান মার্সেলো বিয়েলসা - প্রথম পর্ব

পোস্টটি ৪৯৫৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

খেলোয়াড়ী জীবনে সিনীয়র লেভেলে খেলেছেন মাত্র তিন বছর, ৬৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১ গোল, কিন্তু তাকে মর্ডান ফুটবলের ম্যাডম্যান হিসেবেই সবাই চেনেন, এই লেখাটা একটা দুই পর্বের লেখা, আজ তার কোচিং ক্যারিয়ার নিয়ে আমি লেখবো,

কোচিং জীবনের শুরু এবং আর্জেন্টিনা -

বিয়েলসা ১৯৮০ সালে নিজের খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানেন, তখনই তিনি ম্যানেজার হবার কথা চিন্তা করেন এবং একজন ফিজিক্যাল এডুকেশন টিচার হিসেবে তার সিনিয়র ক্যারিয়ারের প্রথম ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ এ যোগদান করেন, এর কিছু দিন পর তিনি ঐ ক্লাবেরই ইয়ুথ টিমের কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, ১৯৯০ সালে তাকে নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ মূল দলের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়, এই আর্জেন্টাইন ক্লাব নিয়ে তিনি বেশ সাফল্যের মুখ দেখেন, এই ক্লাব এর সাথে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছিলেন এবং দুটো শিরোপা তিনি এই টিমকে জেতান, এর পর তিনি বেশ কিছুদিন মেক্সিকান লীগে কাজ করেন, ১৯৯৮ সালে তিনি আবার আর্জেন্টাইন লীগে ফিরে আসেন এবং ভেলেজ সার্সফিল্ডের হয়ে আবার লীগ টাইটেল জেতেন, এর পরই তিনি স্প্যানিশ লীগের ক্লাব স্প্যানিওলকে কোচিং করানোর দায়িত্ব পান, কিন্তু তারই কিছুদিন পর তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকে কোচিং করানোর জন্যে প্রস্তাব পান, নিজের দেশের জাতীয় দলকে কোচিং করানোর সুযোগ কে ছাড়তে চায়, বিয়েলেসা রাজি হলেন জাতীয় দলকে কোচিং করানোর জন্যে। তার অধীনে আর্জেন্টিনা ২০০২ সালে ফিফা বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও সেই আসরে তেমন ভালো কিছু করতে পারে নি আর্জেন্টিনা, কিন্তু আর্জেন্টাইন বোর্ড তার উপর থেকে ভরসা হারায় নাই, যার ফল ২০০৪ এ আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকায় রানার্সাপ হয়, আর সে বছরই আর্জেন্টিনা অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জেতে, উরুগুয়ের পর আর্জেন্টিনা ল্যাটিন আমেরিকার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অলিম্পিকে স্বর্ন জিতেছিলো সেবার, কিন্তু এই সফলতার পরেও তিনি আর্জেন্টিনার কোচ এর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

চিলির জনগণের হৃদয় জয়ের গল্প -

আর্জেন্টিনার পর তিনি চিলির জাতীয় দলকে কোচিং করানোর দায়িত্ব নেন, চিলির হয়ে তার সফলতা ব্যর্থতা দুটোই রয়েছে, তার অধীনেই চিলি প্যারাগুয়ের কাছে প্রথমবার নিজেদের হোমে ম্যাচ হেরে যায়, তার অধীনেই চিলি প্রায় ৫০ বছর পর চিলি ব্রাজিলের কাছে নিজেদের হোম ম্যাচ হারে, দুটো ম্যাচই ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল চিলিয়ানরা, কিন্তু আবার তার অধীনেই চিলি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম কোনো অফিসিয়াল ম্যাচ জেতে  ,পেরুর বিপক্ষে ১৯৮৫ এর পর লিমায় ম্যাচ জেতে ,প্যারাগুয়েকে ৩০ বছর পর তাদের হোমে চিলি হারায়। ২০১০ বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে চিলি বলিভিয়ার সাথে জয়, ভেনেজুয়েলার সাথে ড্র , ব্রাজিলের সাথে হার আর কলাম্বিয়ার বিপক্ষে জয় পায়, এটিই কলাম্বিয়ার বিপক্ষে তাদের প্রথম কোনো এওয়ে ম্যাচে জয় ছিলো, আর এর মাধ্যমেই তারা বিশ্বকাপের টিকিট পায়, এবং এর ফলে চিলির জনগন বিয়েলসাকে বেশ ভালো সমর্থন দেন যার ফলস্বরূপ তার কন্ট্রাক রিনিউ করানোর জন্যে বোর্ডকে জনগন চাপ দেয়া শুরু করে এবং রীতিমত তারা আন্দোলনেই নেমে পড়েন, ভাবুন কি রকমের জনপ্রিয় হলে একজন কোচের কন্ট্রাকের জন্য কোনো দেশের জনগণ আন্দোলন শুরু করেন,  যদিও চিলির বোর্ড জনগনকে আশ্বস্ত করেছিল কিন্তু তারপরেও বিয়েলসা ২০১১ সালে নিজেই চিলির কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান,

স্প্যানিশ লিগে নিজের কর্মের ছাপ -

সে বছরই তিনি স্প্যানিশ ক্লাব বিলবাওয়ের দায়িত্ব নেন, এবং প্রথম সিজনেই সোসিয়েদাদ, ওসাসুনা , পি এস জি, সেভিয়ার মত দল গুলোর সাথে জয় আর ভ্যালেন্সিয়া বার্সার সাথে নিজেদের হোম ড্র করে, সেবার তার দল গ্রানাডার কাছে নিজেদের হোমে প্রথম ম্যাচ হারের স্বাদ পায়, বিলবাও সেই সিজনে দুটো কাপ ফাইনাল খেলে, তারা ইউরোপা কাপ এ ফাইনাল ম্যাচ খেলে এথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে এবং সেই ম্যাচটা তারা হেরে যায়,আর কোপা দেল রে ফাইনালে মুখোমুখি হয় বার্সেলোনার এবং সেই ম্যাচটাও তারা হেরে যায়, ২০১২/১৩ সিজন বেশ খারাপই কাটে তাদের, হাভি মার্টিনেজ কে বায়ার্নের কাছে বিক্রির ফলে তারা বেশ সমস্যায় পরে সেবার, ২০১৩ সালে বিয়েলসার সাথে বিলবাওয়ের কন্ট্রাক্ট শেষ হলে বিলবাও আর রিনিউ করে নি,

লীগ ওয়ান থেকে সিরি আ থেকে লীগ ওয়ান এবং বর্তমান - 

২০১৪ তে তিনি ফ্রেঞ্চ ক্লাব মার্সেই এ যোগদান করেন, সেখানেও প্রায় এক সিজনের মত কাটান, ফ্রেঞ্চ লীগে মার্সেই সেবার চতুর্থ হয়, ২০১৫ তে তিনি ম্যানেজম্যান্টের সাথে সমস্যার জন্যে মার্সেই থেকে বের হয়ে যান, ২০১৬ তে লাজিও তাকে এপোয়েন্ট করলেও সেটা জটিলতার মুখে পড়ে এবং ২ দিন পরই তিনি লাজিওর কোচের পদ থেকে ইস্তফা দেন, এর পর তিনি আবার ফ্রেঞ্চ লীগে ফেরত যান এবং লিল্লে  ওএসসি এর কোচের দায়িত্ব নেন, এখানেও তিনি সমস্যার মুখোমুখি হন, এই ক্লাব তার অধীনে ১২ ম্যাচ খেলে এবং ১৩ তম ম্যাচের আগে তাকে সাসপেন্ড করে, বর্তমানে তিনি লিডস ইউনাইটেডের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, লিডস ইউনাইটেডে এর ইতিহাসে তিনিই সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া ম্যানেজার,

এই তো গেলো তার কোচিং ক্যারিয়ার, এক পোষ্টের মধ্যে সবটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আগামী পোষ্টে তার ট্যাকটিক্যাল জ্ঞান এবং ট্যাকটিকস তুলে ধরার চেষ্টা করবো, বর্তমান আমলের প্রায় ডজখানেক কোচ তার ট্যাকটিকস নিয়ে কিভাবে নিজেদের দল চালাচ্ছে সেটা বুঝানোর একটা ট্রাই করবো, শেষে তার ছোট একটা উক্তি তুলে ধরবো  - " ফুটবলে প্রায় ২৯ রকমের ফরমেশন আছে, একজন খেলোয়াড়ের উচিৎ ছোটবেলা থেকেই নিজেকে সবগুলো ফরমেশন এর সাথে মানিয়ে নেয়া - মার্সেলো বিয়েলসা "