• ফুটবল

একজন জহুরীর গল্প - দ্বিতীয় পর্ব

পোস্টটি ৩৯৪২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

যদি ফুটবল জগতের সেরা পাঁচজন কোচের নাম নিই তবে স্যার অ্যালেক্স এর নাম প্রথম পাঁচ জনের মধ্যেই পাওয়া যাবে, এই লিজেন্ড ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে কাজ করার আগে আরও বেশ কিছু ক্লাবে কাজ করেছেন, তিনি এমনও ক্লাবের সাথে কাজ করেছেন যে ক্লাবের কোনো গোল কিপার ছিলো না, আসুন আজকে তার ইউনাইটেড পূর্ববর্তী কোচিং ক্যারিয়ার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

স্যার অ্যালেক্স ফলকার্কে আগেই খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, সুতরাং কোচিং এর ব্যাপারে তার আগেই কিছু অভিজ্ঞতা ছিল, ১৯৭৪ এ তিনি খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করার পরই তিনি কোচিং করানো শুরু করেন। স্কটিশ লিগের তলানিতে থাকা ইস্ট স্টার্লিংসায়ার সাপ্তাহিক ৪০ পাউন্ডের বিনিময়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সে তাকে পার্ট টাইম কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়, এই দলের অবস্থা এমনিই বেহাল ছিল যে তাদের একজন গোল কিপার পর্যন্ত ছিলো না, সেখান থেকে ফার্গুসন বেশ নাম কামান শুধু মাত্র তার শৃঙ্খলাবোধের জন্যে, ওই ক্লাবের সেই সময়ের ফরোয়ার্ড ববি ম্যাকক্যালি এর ভাষ্যমতে "never been afraid of anyone before but Ferguson was a frightening bastard from the start." 

এর পরের অক্টোবরে সেন্ট মিরেন তাকে কোচিং করানোর জন্যে ইনভাইট করে, সে স্টার্লিংসায়ার এর প্রতি লয়্যাল থাকা সত্বেও তার সিনিয়র জক স্টেইন এর পরামর্শে তিনি সেন্ট মিরেনে যোগদান করেন, সেন্ট মিরেনের অবস্থা ছিল বর্তমান মিলানের মত, একটা সময় তাদের প্রচুর নাম ডাক থাকলেও ওই সময় তাদের অবস্থা ছিল করুন এবং লিগে তাদের অবস্থান  ইস্ট স্টার্লিংসায়ার এর থেকেও নিচে ছিল, কিন্তু ফার্গুসন এসে ক্লাবের অবস্থা আমূল পরিবর্তন করেন, সেকেন্ড ডিভিশন থেকে তাদের তুলে এনে ১৯৭৭ সালে ফার্স্ট ডিভিশনের লীগ জেতানো তে সেই পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট,এছাড়াও তিনি বেশ কিছু ট্যালেন্টেড প্লেয়ার যেমন বিলি স্টার্ক, টনি ফিতজপ্যাট্রিক, লেক্স রিচার্ডসন, ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকগ্যারভি ববি রেইড এদের খুঁজে বের করেন এবং তাদের দিয়ে দুর্দান্ত এটাকিং ফুটবল খেলান, তার টিমের সব খেলোযাড়ই ছিল ট্যালেন্টেড এবং ইয়াং, এদের জেতার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না কিন্তু এরাই ১৯৭৭ সালে স্কটিশ লিগ জিতে নেয়, দলের এভারেজ বয়স ছিল ১৯ বছর আর ক্যাপটেন ফিতজপ্যাত্রিক এর বয়স ছিল ২০ বছর।

এত কিছুর পরেও সেন্ট মিরেনই হল একমাত্র ক্লাব যারা স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে স্যাক করেছিল, যদিও এর জন্যে সেন্ট মিরেনের বিরুদ্ধে স্যার অ্যালেক্স ফর্গুসন মামলা করেছিলেন কিন্তু সেই মামলাও তিনি হেরে যান আর তাতে কোনো লিভ টু আপিল এর অপশন ছিল না, তার বিরুদ্ধে তখন অভিযোগ ছিল তিনি খেলোয়াড়দের এক্সট্রা পেমেন্ট করেন যা কিনা ট্যাক্স বহির্ভূত, অফিস সেক্রেটারির সাথে নাকি তিনি খারাপ আচরণ করতেন ইত্যাদি। কিন্তু ২০০৮ সালে দ্যা গার্ডিয়ান টডের একটি ইন্টার্ভিউ নেয়, এই টডই ছিলেন ফার্গুসনের স্যাকের পেছনে দায়ী থাকা ব্যক্তি, তিনি বলেন ফার্গুসন নাকি ক্লাবকে না জানিয়ে আবেরদিনের সাথে চুক্তি করেন আর ক্লাব থেকে তার আবিষ্কৃত একজন ট্যালেন্ট কে তিনি সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন, আর তিনি নাকি তার যাওয়ার ব্যাপারে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট ছাড়া বাকি সবার সাথেই আলোচনা করেছিলেন।

এতকিছুর পর ১৯৭৭ সালে তিনি সেন্ট মিরেন ছেড়ে আবের্ডিন এ যোগদান করেন, আবের্ডিন ছিল স্কটিশ লিগের মেজর ক্লাব গুলোর একটি, ফার্গুসন এখানে যে সমস্যাটি ফেইস করছিলেন সেটি হল তার বয়স ছিল কম, এট কম যে কিছু খেলোয়াড় আর তার বয়স কাছাকাছি ছিল যার ফলে তাদের থেকে কোচ হিসেবে যে সন্মান তার পাওয়ার কথা ছিল সেটা তিনি পাচ্ছিলেন না, সেই সময়গুলো তার খারাপই যাচ্ছিল, লিগ জিততে জিততেও হেরে গিয়েছিল তার দল, ১৯৭৯/৮০ সিজনে স্কটিশ লিগ কাপ ফাইনালে তার দল খেললেও জিততে পারেনি সেই অধরা শিরোপা, ফার্গুসন হারের ভার নিজের কাধে নেন এবং বলেন তার ট্যাকটিক্যাল ভুলের কারনে তারা ম্যাচ হেরেছে, ১৯৭৯/৮০ সিজনে তার দলের শুরুটা ছিল বেশ নড়বড়ে,কিন্তু নিউ ইয়ারের পর নাটকীয়ভেবে তার দল ঘুরে দাড়ায়, তার দল এবার স্কটিশ লিগ জিতে নেয় এবং শেষ লিগ ম্যাচটি তারা ৫-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছিল, ফার্গুসন এবার সব খেলোয়াড়দের থেকে তার প্রাপ্য  সম্মান পেতে শুরু করলেন, তার মতে  "That was the achievement which united us. I finally had the players believing in me."  

তখনো তিনি সেই শুরুর মতই স্ট্রিক্ট ডিসিপ্লিন মেইন্টেন করতেন, খেলোয়াড়রা তার নাম দিয়েছিল "Furious Fergie" ফার্গুসন এর সাথে দলে আস্তে আস্তে জয়ের বাতাস বইতে শুরু করল, ১৯৮২ সালে আবের্ডিণ স্কটিশ লিগ কাপ জিতে নেয়, সে বছর উলভ্যারহ্যাম্পটন তাকে সাইন করানোর চেষ্টা করলেও তিনি রিফিউজ করে দেন, ১৯৮২ সালে তার দল স্কটিশ লিগ কাপ জয়ের ফলে তারা ইউরোপিয়ান কাপ উইনারস কাপ কম্পিটিশনে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে, আর অবিশ্বাস্য হলেও সে বছর বায়ার্ন মিউনিখ ফার্গুসনের দলের কাছে হেরে কম্পিটিশনের বাইরে চলে যায়, ১১ মে ১৯৮৩ সালে তারা ইউরোপিয়ান কাপ উইনারস কাপের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয় এবং ২-১ গোলে জয় পায়, আবের্ডিন ছিল তৃতীয় স্কটিশ টিম যারা কোনো ইউরোপিয়ান কাপ জিততে পেরেছিল, ইউরোপিয়ান কাপ জেতার ফলে পরের সিজনে তারা ইউরোপিয়ান সুপার কাপ খেলার জন্যে মনোনীত হয় এবং হামবুর্গকে হারিয়ে ইউরোপিয়ান সুপার কাপ তারা জিতে নেয়, এছাড়াও সে বছরের ডিসেম্বরে আবের্ডিন আবারও স্কটিশ লিগ কাপ জিতে নেয়, কিন্তু ফার্গুসন স্কটিশ লিগ কাপের ম্যাচটি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না, পোষ্ট ম্যাচ ইন্টারভিউয়ে তিনি বলেন "disgraceful performance" ১৯৮৩/৮৪ সিজনে শুরুটা বেশ ভালো না হলেও শেষে স্কটিশ লিগ, স্কটিশ লিগ কাপ জিতে নেয়, ১৯৮৫ সালে নিউ ইয়ার অনার অনুষ্ঠানে ফার্গুসনকে অর্ডার অফ দ্যা ব্রিটিশ এম্পায়ার এর অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, সেই বছরই তিনি রেঞ্জার্স আর আর্সেনাল এর ম্যানেজার হবার অফার পান, কিন্তু ফার্গী আবেরর্ডিন ছেড়ে যাননি, তার দল ১৯৮৪/৮৫ সিজনে আবারও লিগ জেতে, কিন্তু পরের সিজন বেশ খারাপ যায়, তাকে ক্লাব একজন ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়, কিন্তু তিনি ক্লাব চেয়ারম্যান কে জানান যে আসছে সামারে তিনি ক্লাব ছাড়তে চান।

ক্লাব ছেড়ে এবার ফার্গুসন এলেন স্কটিশ ন্যাশনাল ফুটবল টিমে তবে সরাসরি হেড কোচ হিসেবে নয়, তিনি ছিলেন কোচিং স্টাফদের একজন, ১৯৮৫ এর সেপ্টেম্বরে হেড কোচ জক স্টেইন মারা গেলে ফার্গুসনকে হেড কোচের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয়, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ফার্গীর দল গ্রুপ স্টেজ পার হতে পারে নি, বিশ্বকাপ শেষ হবার পর  ফার্গুসন  জুন মাসে স্কটল্যান্ড জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন, 

এর পরই টটেনহ্যাম, আর্সেনাল, লিভারপুল থেকে তিনি কোচিং করানোর অফার পান কিন্তু সব অফার তিনি রিজেক্ট করে দেন, এর পরই রিউমার ছড়ায় যে ফার্গুসন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যাচ্ছেন কিন্তু সিজন শুরু হবার পরেও তার টিকিটাও ইংল্যান্ডে দেখা যাচ্ছিল না,১৯৮৬ এর  নভেম্বরে তৎকালীন ইউনাইটেড কোচ রণ এটকিনসনকে স্যাক করলে সেই শুন্য পদ পূরণ করেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন।

আগামী পর্বে ইউনাইটেডের হয়ে তার কীর্তি এবং ইউনাইটেডে তিনি কি ট্যাকটিকস ব্যবহার করেছেন সেগুলো সম্পর্কে একটা আইডিয়া দেবার চেষ্টা করবো।