• ফুটবল

এল দিয়েগো : জনতার চোখে সর্বকালের সেরা।

পোস্টটি ৪৭১২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

gettyimages-460319856-1024x1024

১.

"এনরিকে দিয়েগো কে পাস দিল।

বল এখন ম্যারাডোনার পায়ে। তাঁর দিকে দু'জন খেলোয়া ছুটে আসছে।

সে বল নিয়ে ডান দিক দিয়ে কাটিয়ে গেল, বিশ্বের ফুটবল প্রতিভা!

সে তৃতীয় জনকে পিছনে ফেলল, বুরুচাগা এর জন্য অপেক্ষা করছে।

চিরতরে ম্যারাডোনা!

জিনিয়াস, জিনিয়াস, জিনিয়াস!

গোওওওওওওল!

দুঃখিত, আমি কাঁদতে চাই!

পবিত্র সৃষ্টিকর্তা! চিরজীবী হোক ফুটবল!

অসাধারন গোল!

দিয়েগো!

ম্যারাডোনা!

আমাকে চিত্কার করতেই হবে, আমাকে ক্ষমা করবেন

মহাজাগতিক ঘুড়ি

তুমি কোন গ্রহ থেকে এসেছেন সব ব্রিটিশদের তাদের লক্ষ্য ছাড়া করার জন্য?

পুর দেশটিকে দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি কারনোর জন্য?, আর্জেন্টিনার জন্য চিত্কার কর।

সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ,ফুটবলের জন্য,ম্যারাডোনার জন্য, এই আনন্দ অশ্রুজলের জন্য এবং এই স্কোরলাইনের জন্য,আর্জেন্টিনা ২ ইংল্যান্ড ০।"

 

তাঁর প্রসংশায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা "গোল অফ দা সেঞ্চুরি" খ্যাত তাঁর দ্বিতীয় গোলের স্পানিশ ধারাভাষ্যের অনুবাদ তুলে ধরলাম।এই ধারাভাষ্যেই বোঝা যায় দিয়েগোর প্রতিভা সম্পর্কে।

২.

ম্যারাডোনা "ক্লাসিক নম্বর ১০" ছিল।

তাঁর ড্রিবলিং এবিলিটি,ভিসন,ক্লোজ বল কন্ট্রোল,গোল স্কোরিং,ফ্রি-কিক, পাসিং এবং ক্রিয়েটিভিটির জন্য সে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

তাঁকে সর্বকালের অন্যতম স্কিলফুল ফুটবলার মানা হয়।তাঁর উচ্চতা কম হওয়া সত্তেও সহজেই দুই -তিন জন ডিফেন্ডারকে বিট করতে পারত। ম্যারাডোনার দৈহিক গঠন মাঝারি ধরণের এবং তিনি দৈহিক চাপ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁর ছোট-ছোট পা তাকে দ্রুত দৌড়াতে সহায়তা করে।১৯৮৬ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিপক্ষে জোড়া গোল করে তিনি তাঁর দৈহিক শক্তির পরিচয় দেন। সে ছিলেন একজন কৌশলী খেলোয়াড়। সীমিত জায়গার মধ্যে তিনি নিজেকে কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারতেন। খাটো হওয়া সত্ত্বেও, দৈহিক দিক থেকে তিনি ছিলেন শক্তিশালী। তিনি একজন ডিফেন্ডারের সাথে লম্বা সময় ধরে বল নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারতেন, যতক্ষণ না তিনি দ্রুত শট নেওয়ার মত জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন বা কোনো সতীর্থ আক্রমণাত্মক দৌড় শুরু করছেন, যাতে তিনি তাকে বল পাস করতে পারেন।

তাঁর অন্যতম ট্রেডমার্ক মুভ ছিল,রাইট উইংয়ে ফুটস্পিরিডে ড্রিবলিং করা এবং প্রতিপক্ষের গোল লাইনে পৌছান এবং টিমমেটদের নিখুদ পাস দেওয়া।তাঁর আরেকটি জাদুকরি নৈপূন্য ছিল র‍্যাবোনা, যা হল পায়ের পিছনের অংশ ব্যবহার করে এক ধরণের রিভার্স-ক্রস পাস শট।

এছাড়া সে ছিলেন একজন বিপজ্জনক ফ্রি কিকগ্রহনকারী।সে ফ্রিকিক নেওয়ার সময় সে তাঁর পাকে খুবই উঁচু এঙ্গেলে তুলে ধরত যখন বলে কিক করত যায় ফলে সে ক্লোজ রেঞ্জের কিক থেকেও গোল পেত।

 

৩.

দিয়েগো ম্যারাডোনা ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনোস আইরেসর লানুস শহরের পলিক্লিনিকো এভিতা হাসপাতালে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন ভিয়া ফিওরিতোতে, যা বুয়েনোস আইরেসের দক্ষিণ প্রান্তের একটি শান্তিটাউন। ফিওরিতোতে ঐ সময়ে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা ছিল। দিয়েগো পিতামাতার ৫ম সন্তান ছিল।

৮ বছর বয়সে, যখন তিনি এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলছিলেন তখন তাকে খুঁজে বের করেন একজন স্কাউট।১০-১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দলে খেলেন।

১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর, নিজের ১৬তম জন্মদিনের দশ দিন আগে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে তাঁর অভিষেক হয়।

এদিকে দিয়গো মাত্র ১৬ বছর বয়সেই হ্যাঙ্গেরির বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে ১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আর্জেন্টাইন জাতীয় দলের হয়ে অভিষিক্ত হয় কিন্তু বয়স খুবই কম হওয়াই ৭৮ বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে লুইস মেনত্তি তাঁকে বাদ দেন।

১৮ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যারাডোনা ফিফা যুব বিশ্বকাপ এবং যুব বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল জয় করে।

১৯৭৯ সালের ২ জুন স্কোটল্যান্ডের বিপক্ষে দিয়েগো তাঁর ১ম সিনিয়র ইন্টারন্যাশনাল গোল করে।

১৯৮১ সালে বোকা জুনিয়র্সে যাওয়ার আগে প্রিমেরা ডিভিশনের এক ম্যাচে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স বোকাকে ৫-৩ ব্যাবধানে পরাজিত করে এবং দিয়গো ৪ গোল করে।প্রথম গোলটি করে পেনাল্টি থেকে,২য় টা টাইন এঙ্গেল থেকে কুইক অসাধারন ফ্রিকিকে,৩য় টা করে বুক দিয়ে বল কন্ট্রোল করে চিপ শর্টে এবং ৪র্থ গোলটি করেন আরও একটি অসাধারন ফ্রিকিক থেকে।

৫ বারের আর্জেন্টিনীয় প্রিমেরা ডিভিশনের শীর্ষ গোলদাতা ২০ বছর বয়সী ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে ৫ বছর কাটিয়ে ১৬৭ ম্যাচে ১১৫ গোল করে ৪মি ইউএস ডলারের বিনিময়ে বোকায় যোগ দান করেন।

যদিও আর্জেন্টিনার আরেক জায়েন্ট রিভার প্লেট তাঁকে আরও বড় অফার করে কিন্তু সে সব সময় বোকার হয়ে খেলতে চেয়ে ছিলেন এজন্য বোকায় যোগ দেন। ১৯৮১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দিয়েগো বোকার সাথে অফিশিয়াল চুক্তি করে এবং ২ দিন পর ক্লাবের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই ২ গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করে।

মৌসুম শেষে বোকা প্রিমেরা ডিভিশন জয় করে।ঐ মৌসুমে সে বোকার হয়ে ৪০ ম্যাচে ২৮ গোল করে।

এদিকে বিশ্বকাপ চলে আসে, ১৯৮২ বিশ্বকাপ ছিল ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ছিল । উদ্বোধনী ম্যাচে ক্যাম্প ন্যু-তে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় বেলজিয়ামের। কাতালান দর্শকরা তাদের ক্লাব বার্সেলোনায় নতুন যোগ দেওয়া ম্যাররাডোনার চমক দেখার জন্য আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু তিনি আশা পূরণে প্রদর্শনে ব্যর্থ হন।

আর্জেন্টিনা বেলজিয়ামের বিপক্ষে ১–০ গোলের ব্যবধানে হেরে যায়। গ্রুপ পর্বের অপর দুই ম্যাচে হাঙ্গেরি এবং এল স্যালভাদরের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা জয় লাভ করে এবং দ্বিতীয় পর্বে পৌছায়। কিন্তু, দ্বিতীয় পর্বে ইতালি এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে পরাজিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের। প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনার সবকয়টি খেলায় পুরো সময় মাঠে ছিলেন ম্যাররাডোনা।

হাঙ্গেরির বিপক্ষে তিনি দুইটি গোল করেন, তবে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে ফাউল করার দায়ে তাকে লাল কার্ড দেখানো হয়।

১৯৮২ বিশ্বকাপের পর বিশ্বরেকর্ড ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন এল দিয়েগো।

১৯৮৩ সালে, কোচ সিজার মেনত্তির অধীনে বার্সেলোনা মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে এবং অ্যাথলেতিক বিলবাওকে হারিয়ে স্পানিশ সুপার কাপ জিতে।

১৯৮৩ সালের ২৬ জুন বার্সেলোনা এল ক্লাসিকোতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে তাদের স্টেডিয়াম সান্তিয়াগো বার্নবুতে হারায় এবং ম্যারাডোনা গোল করে।

ঐ ম্যাচে মাদ্রিদ ফ্যানারা প্রথম বার্সেলোনা প্লেয়ার হিসেবে ম্যারাডোনাকে অসাধারন প্যারফর্মেন্সের জন্য উঠে দাড়িয়ে হাতে তালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়।পরবর্তীতে ২০০৫ সালে রোনালদিনহো এবং ২০১৫ ইনিয়েস্তাকে মাদ্রিদ সামর্থ্যকরা উঠে দাড়িয়ে হাতে তালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়।

তবে, বার্সায় ম্যারাডোনার কিছুটা খারাপ সময় কাটিয়েছেন, যখনই বার্সেলোনা কোনো ট্রফি জয়ের জন্য ভাল অবস্থান তৈরি করছিল ম্যারাডোনা সনস্যায় অাক্রান্ত হচ্ছিল। প্রথমে তাকে হেপাটাইটিসের সাথে লড়তে হয় এরপর তাকে এন্দোনি গোইকেতক্সেয়ার ট্যাকেটে গোড়ালির ইঞ্জুরিতে পড়তে হয়,এমনকি তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার কথাও ওঠে।

বার্সেলোনায় থাকাকালে ম্যারাডোনা ক্লাব কর্তাদের সাথে ঘনঘন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, বিশেষ করে ক্লাব প্রেসিডেন্ট লুইস নুনেজের সাথে।

বার্সেলোনায় ৫৮ ম্যাচে ৩৮টি গোল করে ১৯৮৪ সালে, রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে (৬.৯মি ইউরো) সিরি এ ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন এল দিয়েগো।

৪.

১৯৮৪ সালে ম্যারাডোনা যখন নাপোলি যোগদান করে ঐ সময় ইতালিতে চলেছে প্লাতিনির জুভেন্টাসের শাসন। জুভেন্টাসের মুল প্রতিপক্ষ ছিল ইন্টার মিলান এবং এসি মিলান। সেকেন্ডারি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা ম্যারাডোনার ১৪ গোলের পরেও নাপলি মাত্র ৩৪ গোল করতে সক্ষম হয় ৮৪-৮৫ এর লীগে এবং হজম করে ২৯ গোল। ম্যারাডোনার ইমিডিয়েট ইম্প্যাক্টের পরেও দুর্বল ডিফেন্সের কারনে নাপোলি লীগে ৮ম হয়ে মৌসুম শেষ করে।

৮৫-৮৬ সিজনের আগে ম্যারাডোনা নাপলি প্রেসিডেন্ট ফেরলাইনোকে ক্লাবে ভালো কিছু প্লেয়ার আনতে জোর দেন, এবং তা না করলে নিজে নাপোলি ছাড়ার হুমকি দেন। নেপলসবাসীদের এই নায়ককে বিক্রি করার কিংবা তাঁর কথা ফেলার দুঃসাহস হয়নি ফেরলাইনোর। তাই তিনি সেই সিজনে দলে বেশ কিছু ভাল মানের প্লেয়ার ভেড়ান এবং কোচ হিসেবে আসলেন অত্তাভিও বিয়াঞ্চি। সেই সীজনে জুভেন্টাস পুনরায় চ্যাম্পিয়ন হয় ৪৫ পয়েন্ট পেয়ে। আগের সিজনের কাছাকাছি ৩৫ গোল করে এবং ডিফেন্সের উন্নতিতে ২১ গোল হজম করে সেই সিজনে ৩য় স্থানে ফিরে আসতে সক্ষম হয় নাপলি। ম্যারাডোনা দলের হয়ে লীগ সর্বোচ্চ ১১ গোল করেন।

এদিকে বিশ্বকাপের দামামা বেঁজে ওঠে।আর্জেন্টাইন কোচ ৭৮ বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন প্যারসারেল্লার কাছ থেকে যখন ক্যাপ্টেনসি নিয়ে দিয়েগোকে দেন পুর আর্জেন্টিনা অনেকটা বিক্ষোপ শুরু হয়ে যায়।নানা বিতর্ক নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয় সবার নজর ছিল ব্যালোন ডি'ওর জয়ী মিসেল প্লাতিনির দিকে কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু পর পরিষ্কার হলে গেল এটা "এল দিয়েগো শো"।

আর্জেন্টিনারর গ্রুপে ছিল ইতালি,বুলগেরিয়া, সাউথ কোরিয়া।

কোরিয়ার ম্যাচ দিয়ে আর্জেন্টিনারর বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয় ঐ ম্যাচ এল দিয়েগো কোনো গোল না করলেও ৩ টা অ্যাসিস্ট করে দলের সহজ জয় নিশ্চিত করে।

পরের ম্যাচে শক্তিশালী ইতালির বিপক্ষে ম্যারাডোনা ৩৪ মিনিটে গোল করে।ম্যাচ ১-১ সমতায় শেষ হয়।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বুলগেরিয়াকে আর্জেন্টিনা ২-০ ব্যবধানে হারায় ঐ ম্যাচ দিয়েগো একটি অ্যাসিস্ট করে।

রাউন্ড অফ ১৬য়ে দিয়েগো গোল, অ্যাসিস্টা না পেলেও পদ্রো পাসচুল্লি গোলে উরুগুয়েকে আর্জেন্টিনা ১-০ ব্যবধানে হারায়।

কোয়াটার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ইংল্যান্ডের মুখমুখি হয়। গোল শূন্য প্রথম হাফের পর ৫১তম মিনিটে ম্যারাডোনা ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত গোল "হ্যান্ড অফ গড" করেন এবং ৪ মিনিট পরই ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত গোল "গোল অফ দা সেঞ্চুরি" স্কোর করেন।ম্যাচটি আর্জেন্টিনা ২-১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।

সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল বেলজিয়াম । এই ম্যাচেও গোল শান্য প্রথম হাফের পর ৫১ মিনিটে অসাধারন গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন এল দিয়েগ এবং ৬৩তম মিনিটে অরেকটা অসাধারন গোল করে দলের লিড ডাবল করে ম্যারাডোনা।

ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট জার্মানি। ম্যাচের ২৩তম মিনিটে ব্রাউনের গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা, ৫৬তম মিনিটে ভ্যালদানোর গোলে লিড ডাবল হয় কিন্তু ৭৪,৮১তম মিনিটে গোল করে জার্মানি ম্যাচে ফিরে আসে।

ম্যাচের ৮৪তম মিনিটে বুরুচেগাকে বল এগিয়ে দেয় এল দিয়েগো এবং গোল।ম্যাচ শেষে স্কোরলাইন হয় ৩-২, দিয়েগো স্বপ্নের ট্রফি হাতে পেয়ে যায়।

আগে পরে কখনও কোনো প্লেয়ার এমন ভাবে বিশ্বকাপে ডমিনেট করতে পারেনি। সে আর্জেন্টিনার করা ১৪ গোলের ১০ গোলের সাথেই সরাসরি জড়িত ছিল।gettyimages-1629139-1024x1024

এক নজরে তাঁর প্যারফর্মেন্স:

গোল:৫

অ্যাসিস্ট:৫

সফল ড্রিবল :৯০

ফাউলের স্বীকার :৫৩।

৫.

৮৬-৮৭ সীজন নাপলি এর মাঝে আরো কিছু ভালো প্লেয়ারকে দলে ভেড়ায়। আগের সীজনের ৩য় হওয়া দলের সবার মাঝেই একটা ভালো বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে তখন। ৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার ম্যাজিকাল পারফর্মেন্স এবং মাঝারি শক্তির আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় নেপলসবাসীদের শিরোপা জয়ের আশা আরো বাড়িয়ে দেয়। ম্যারাডোনারাও প্রস্তুত হচ্ছিলেন নাপোলিকে প্রথমবারের মতোন শিরোপা জিতানোর জন্যে।

 

৩০তম  ম্যাচ শুরুর আগ থেকেই স্টেডিয়াম লোকারন্য, ৭ দিন ধরে চলা উৎসবের পরিপূর্ণতা আসবে আজ। নিছক নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ক্যালসিওর সাথে ১-১ গোলে ড্র করলো নাপোলি। ম্যাচের ফলাফলে মাথাব্যাথা ছিলনা যেখানে কারো। ম্যাচ শেষে স্কুডেট্টো ট্রফি তুলে দেওয়া হয় কাপ্তান ম্যারাডোনার হাতে। মাঠ কি মাঠের বাইরে, পুরা নেপলস শহর জুড়ে চলে শিরোপা জয়ের উৎসব! অনেকের কাছে এই উৎসব, এই সেলিব্রেশন ফুটবল ইতিহাসেরও সেরা উৎসব!1986-87

নাপোলি ১৯৮৯–৯০ মৌসুমেও সিরি এ জিতে এবং ১৯৮৯–৮৮ ও ১৯৮৮–৮৯ মৌসুমে তারা রানার-আপ হয়। এছাড়াও নাপোলি একবার কোপা ইতালিয়া জিতে (১৯৮৭) এবং একবার রানার-আপ (১৯৮৯) হয় এবং ১৯৯০ সালে ইতালীয় সুপার কাপ জিতে, ১৯৮৯ সালে উয়েফা কাপ জয় করে।

১৯৮৭–৮৮ মৌসুমের সিরি এ-তে ম্যারাডোনা সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন।

ইতালিতে থাকাকালে ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাঁর কোকেইন নেশা বহাল থাকে। অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকায় ক্লাবের পক্ষ হতে তাকে ৭০,০০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়।

অন্য দিকে ১৯৯০ বিশ্বকাপে পুনরায় আর্জেন্টিনার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। কিন্তু, গোড়ালির ইনজুরির কারণে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের মত নৈপূন্য তিনি দেখাতে পারেননি। প্রথম পর্বে গ্রুপে তৃতীয় স্থানে থেকেও কোনরকমে দ্বিতীয় পর্বের টিকিট পায় আর্জেন্টিনা। ১৬ দলের পর্বে ব্রাজিলের বিপক্ষে ক্লদিও ক্যানিজিয়ার একমাত্র গোলে জয় পায় তাঁরা, গোলটি ম্যাররাডোনারই বানিয়ে দেওয়া ছিল। কোয়ার্টার-ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় ইয়োগোস্লাভিয়ার। খেলাটি ১২০ মিনিট পর্যন্ত ০–০ সমতায় শেষ হলে পেনাল্টি পর্যন্ত গড়ায়। গোলরক্ষকের ডান পাশে নেওয়া মারাদোনার দূর্বল শটটি গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দেন। তবুও আর্জেন্টিনা ৩–২ ব্যবধানে পেনাল্টিতে জয় লাভ করে। সেমি-ফাইনালে, ইতালির বিপক্ষে ১২০ মিনিট পর্যন্ত স্কোর ছিল ১–১, ফলে এবারও খেলা গড়ায় পেনাল্টিতে।

এবারও ম্যারাডেনা একই ধরণের শট নেন। তবে এবার বলটি ঠিকটি গোল পোস্টের জালে জড়ায়। ফাইনালে এবারও আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় পশ্চিম জার্মানির।

ম্যাচে রুডি ফোলারকে ফাউল করার কারণে ম্যাচের শেষ সময়ে দেওয়া বিতর্কিত পেনাল্টিতে আনড্রেয়াস ব্রেহমার করা একমাত্র গোলে জয় পায় পশ্চিম জার্মানি।ঐ দিন ম্যারাডোনা শিশুর মত কেঁদেছিল যা দেখে পুর বিশ্বও তাঁর সাথে কেঁদেছিল।

১৯৯০-৯১ মৌসুমই ছিল নাপোলিতে ম্যারাডোনার শেষ মৌসুম। ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে ১৯৯২ সালে সে নাপোলি ছেড়ে দেন।

নাপোলির হয়ে এল দিয়েগো ৭ মৌসুমে ২৫৯ ম্যাচে ১১৫ গোল করে এবং ৫ টি ট্রফি জয় করে।

পরবর্তীতে, ম্যারাডোনা এবং নাপোলিতে থাকাকালে তাঁর অর্জনসমূহের প্রতি সম্মান জানিয়ে নাপোলির "১০ নম্বর" জার্সিটি অফিশিয়াল ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

৫.

রিয়াল মাদ্রিদ এবং অলিম্পিকে মার্শেই ম্যারাডোনার প্রতি আগ্রহী হলেও তিনি সেভিয়াতে যোগ দেন। সেখানে তিনি এক বছর ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি আর্জেন্টিনাই ফিরে লিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেন।

১৯৯৪ বিশ্বকাপেও ম্যারাডোনা আর্জেন্টাইন দলে ছিল। বিশ্বকাপে দিয়েগো  দুইটি ম্যাচে মাঠে নামেন। এর মধ্যে গ্রীসের বিপক্ষে তিনি একটি গোল করেন। ড্রাগ টেস্টে এফিড্রিন ডোপিং-এর কারণে তাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নিজের আত্মজীবনীতে ম্যাররাডোনা ঐ টেস্ট সম্পর্কে বলেন যে তাঁর ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক তাকে এনার্জি ড্রিংক রিপ ফুয়েল দেওয়ার কারণে তিনি ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়েছেন। তাঁর দাবি ছিল, পানীয়টির যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্করণ আর্জেন্টিনীয় সংস্করণের মত নয়, যার মধ্যে ঐ রাসায়নিক দ্রব্যটি ছিল এবং তাঁর প্রশিক্ষক অনিচ্ছাকৃতভাবে তা ব্যবহার করে।

 

১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর এল দিয়েগো ১৭ বছরের মহাকাব্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ ম্যাচে ৩৪টি গোল করেন।

১৯৯৫ সালে তিনি বোকা জুনিয়র্সে ফিরে আসেন এবং সেখানে দুই বছর খেলারর পর ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে চিরদিনের জন্য তাঁর বুট জোড়া তুলে রাখেন।পুর ক্লাব ক্যারিয়ারে সে ৫৯০ অফিসিয়াল ম্যাচে ৩১২ গোল করেন এবং জয় করেন ৮ টি ট্রফি।

২০০০ সালে, ফিফা ম্যারাডোনাকে শতাব্দির সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে। যা নির্বাচিত হয় তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও অফিসিয়াল ম্যাগাজিনে ভোট এবং বিচারকের মাধ্যমে। অনলাইন ভোটে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয় এল দিয়েগো। তিনি পান ৫৩.৬% ভোট, যেখানে পেলে পেয়েছিলেন ১৮.৫৩% ভোট। তা সত্ত্বেও, অনুষ্ঠানের কিছুদিন আগে, ফিফা অপ্রত্যাশিতভাবে সাংবাদিকদের নিয়ে “ফুটবল ফ্যামিলি” নামে একটি কমিটি গঠন করে, যা শতাব্দির সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পেলেকে নির্বাচিত করে। পরবর্তীতে ফিফা দুই জনকেই পুরস্কার প্রদান করে।

২০০২ সালে ফ্যান্সদের ভোটে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার করা দ্বিতীয় গোলটি ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা গোল এবং শতাব্দী সেরা গোল নির্বাচিত হয়। এছাড়া তিনি বিশ্বকাপের সর্বকালের সেরা দলেও জায়গা পান। 

মো: রাকিব হোসেন

৩০/১০/১৮।