ক্রিকেটের সেই নিপাট ভদ্রলোক
পোস্টটি ১১১২ বার পঠিত হয়েছেক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা—এ কথায় যদি কারও আপত্তি থাকে, তবে তাঁকে দেখিয়ে দিলেই চলত। ব্যাকরণ ভুলে যাওয়া ব্যাটসম্যানদের যুগে তাঁর ব্যাটিংই স্বস্তি দিত সবাইকে। চোখ ধাঁধানো সব ড্রাইভ, কাট, পুল সটে দেড় দশক ধরে মাতিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্ব। তিন ধরনের ক্রিকেটেই তিনি ছিলেন অসামান্য। এই কিংবদন্তি শুধু তাঁর সময়ের নয়, সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। তিনি আর কেউ নন, ‘দ্য ওয়ান এন্ড অনলি কুমার সাঙ্গাকারা।’
সাঙ্গাকারার ধরাধামে আবির্ভাব শ্রীলঙ্কার মাতালে, ১৯৭৭ সালে। পুরো নাম শুনতে চাইলে বলতে হবে, কুমার চোকশানাদা সাঙ্গাকারা। তবে আমরা তো তাঁকে সাঙ্গা নামেই চিনি। ক্যান্ডির বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র স্কুলজীবনে অবশ্য ব্যাডমিন্টন আর টেনিসেও আলো ছড়াচ্ছিলেন। তবে ক্রিকেট-ভাগ্য ভালো যে একজন লিওনার্দ ডি অলউইজ ছিলেন। ট্রিনিটি কলেজের সে সময়কার প্রিন্সিপালই সাঙ্গার মাকে পরামর্শ দেন সাঙ্গাকারা যেন ক্রিকেটে মন দেয়।
মন যে দিয়েছেন, সেটা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। ওয়ানডেতে ৪০৪ ম্যাচে ১৪২৩৪ রান, আছে ২৫টি সেঞ্চুরি ও ৯৩টি হাফ সেঞ্চুরি। এর মাঝে ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি করে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। টেস্টে ৩৮ সেঞ্চুরি ও ৫২টি হাফ সেঞ্চুরি, রান করেছেন ১২৪০০। ১১টি ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের (১২) পরেই আছেন। মাহেলা জয়াবর্ধনের সঙ্গে তাঁর গড়া ৬২৪ রানের জুটি টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে একই টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির রেকর্ডের কথাও কি ভোলা সম্ভব?
শুধু পরিসংখ্যানেই নয়, তিনি ছিলেন একজন ‘ম্যাচ উইনার’। কতবার শ্রীলঙ্কাকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলেছেন, সেই হিসাব তো আর পরিসংখ্যানে নেই। উইকেটকিপার হিসেবেও তিনি ছিলেন বিশ্বসেরা।
সাঙ্গাকারা ২০১১ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ নির্বাচিত হন এবং লর্ডসে কাউড্রে বক্তৃতা দেন। এখন পর্যন্ত ইতিহাসের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার, যিনি এই সম্মান অর্জন করেছেন। এমসিসিতে দেওয়া সাঙ্গার ওই বক্তৃতাকে বলা হয়ে থাকে ‘ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ।’ মাশরাফি বিন মুর্তজা তো আর শুধু শুধু বলেননি, ‘সাঙ্গাকারার মতো আর কোনো ক্লাস ব্যাটসম্যান আসবে না।’
তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সতীর্থ গ্রেট জয়াবর্ধনে বলেছেন, ‘একদম সোজাসাপ্টাই বলছি, শ্রীলঙ্কার সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা।’ শচীন টেন্ডুলকারও এই ক্রিকেটার সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগে ভেসেছেন, ‘ব্যাটিংয়ের একটা নিজস্ব ধরন ছিল ওর। বাঁহাতিদের ব্যাটিং দেখতে এমনিতেই সব সময় ভালো লাগে, ওর ব্যাটিংও ছিল তা-ই। প্রতিপক্ষ হিসেবে ছন্দে থাকা সাঙ্গাকারার ব্যাটিং দেখতে অবশ্যই আমার ভালো লাগত না! শুধু শ্রীলঙ্কানদের জন্যই নয়, বিশ্বজুড়েই অনেক ক্রিকেটারের আদর্শ সে। ওকে আমার সব সময়ই বিপজ্জনক মনে হয়েছে একটা বিশেষ সামর্থ্যের কারণে। উইকেটে অনেক সময়ই ওকে দেখে অস্বস্তিতে আছে বলে মনে হয়েছে, কিন্তু তারপরও রান করার দারুণ প্রবণতা ছিল ওর।’
২০১৫ সালের ২৭ জুন ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। হাজার হাজার ক্রিকেটার অবসরে চলে গেছেন, তাঁদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক খেলোয়াড়ই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেন। তেমনি একজন ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা।
- 0 মন্তব্য