ভুল সবই ভুল!
পোস্টটি ২৯৪৮ বার পঠিত হয়েছেবাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে আম্পায়ার তানভীর আহমেদের আলোচিত- সমালোচিত নো বলের সিদ্ধান্ত যেমন দর্শকদের হাস্যরস এবং আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে তেমনি কৌতূহলী ক্রীড়ারসিকদের ইতিহাসের দিকে তাকানোর সুযোগ এনে দিয়েছে। ইতিহাস ঘেঁটেই তুলে আনা হলো আম্পায়ারদের বেশ কিছু চমকপ্রদ ভুল।
সাল ১৮৭৯-১৮৮০, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড,
জর্জ কোলথার্ড, ইংল্যান্ড বনাম নিউ সাউথ ওয়েলস
জর্জ কোলথার্ড ছিলেন এমসিজি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের একজন গ্রাউন্ড স্টাফ। তবে তিনি এখানে বোলার হিসেবেও খেলেছেন কিছু ম্যাচ। লর্ড হ্যারিস এবং তাঁর ইংরেজ ক্রিকেট দল যখন ম্যাচ খেলতে এ অঞ্চলে আসেন, তখন এই ইংরেজ তাঁদের সাথে আম্পায়ার হিসেবে যোগ দেন এবং দলটির সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। তখনকার দর্শকদের সাক্ষ্য এই বলে যে, নিজের জাতিভাই এবং একইসাথে মুনিবদের সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তিনি এমনসব সিদ্ধান্ত দিতেন যা তাঁর এই সম্মানিত পদটির আদর্শের সাথে পুরোপুরিভাবে সাংঘর্ষিক ছিল।
নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতে লর্ডকে স্পষ্ট আউট না দেওয়ায় পরে লর্ড হ্যারিস বাকিসময় ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়েছেন স্বাগতিকদের উপর, তাঁদের উপর রানের বোঝা চাপিয়ে ফলোঅনে পর্যন্ত ফেলেছেন। তবুও স্বাগতিকদের টিমটিম করে জ্বলতে থাকা আশার আলো তখনি নিভে যায় যখন তাঁদের প্রধান ব্যাটসম্যান মুরডোক আউট হয়ে যান। তিনি রানআউট হয়ে গেছিলেন, সেখানে আম্পায়ারের কিছু করার ছিল না বটে, তবুও সেটা সাথে সাথে আঙ্গুল তোলার মত সিদ্ধান্ত ছিল না!
কারণ মুরডোক দাগের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন যখন স্ট্যাম্প ভাঙা হয়, তখন থার্ড আম্পায়ার প্রযুক্তি দূরে থাক, আম্পায়ারও স্ট্যাম্পের কাছে আসতেন না যে, পলকের দেখায় বিবেচনা করে ফেলবেন!
সুতরাং ওই ধরণের পরিস্থিতিতে 'বেনিফিট অব ডাউট' এর সুবিধা ব্যাটসম্যানই পেতেন। কিন্তু ততক্ষণে মুরডোক বুঝে গেছেন, সিদ্ধান্ত কি হতে যাচ্ছে, তাই আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে একজন সত্যিকার পুরুষের মত তিনি প্যাভিলিয়নের দিকে গটগট করে হাটা দেন! ওয়েলস হয়তো ম্যাচ জিতে নি, মুরডক তখন ওয়েলসের দর্শকদের হিরো হয়ে গেছেন। ওয়েলসের অধিনায়ক ডেভ গ্রেগরি তখন মুরডোককে থামান এবং তাঁকে ব্যাট করতে ফিরে যেতে বলেন। জনতা কোলথার্ডের সিদ্ধান্তে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষেপে গিয়ে মাঠে লাঠি ছুড়তে থাকে।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক লর্ড হ্যারিস আগুনমেজাজ নিয়ে গালি দিতে দিতে কোলথার্ডের দিকে ছুটে যান, যেতে যেতে দুতিনটা লাঠির বাড়ি সম্মানিত লর্ড সাহেবের পিঠেও পড়ে, অবস্থা বেগতিক দেখে ততক্ষণে কোলথার্ড কেটে পড়েন! পুরো মাঠে বিভ্রান্তি এবং বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ায় সেদিন আর খেলা চলে নি। সেদিন কোলথার্ডের অপরপ্রান্তে আম্পায়ারিং করেছিলেন এডমন্ড বার্টন। যিনি এই ঘটনার বাইশ বছর পর স্বাধীন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
১৮৯৯, নটিংহ্যাম,
ডিক বারলো, ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া
ম্যাচটি ছিল চিরকিংবদন্তী ডব্লিউ জি গ্রেসের শেষ টেস্ট ম্যাচ। ম্যাচটি ড্র দিয়ে শেষ হয় যদিও তা হওয়ার কথা ছিল না!!
শেষ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে কে.এস. রঞ্জিত সিংজী ৯৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দিনটা কাটিয়ে দেন। কিন্তু তিনি আসলে ৩০রানেই ফিরে যেতেন ফ্রাঙ্ক লাভেরের করা রান আউটে।
সিংজী যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন দায়িত্বে থাকা আম্পায়ার ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ডিক বার্লো তাঁকে ফিরে আসতে ডেকে পাঠান। লাভের ও তাঁর দল বিস্মিত হয়, এবং এর ব্যাখ্যা দাবি করলেও বারলো তা দেন নি। লাভের তখন রেগে গিয়ে বারলোকে বললেন, "বারলো তুমি একটা জোচ্চোর!!" ভাবুন তো আজকের দিনে স্ট্যাম্প মাইক্রোফোনের জমানায় আম্পায়ারকে এ কথা বলা হলে কেমন শোরগোল উঠত!!
আর এটা ছিল ১১৯বছর আগের কথা, যখন ব্রিটিশদের কিছু বলতে গেলে সাথে করে একটা অতিরিক্ত কলজে নিয়ে ঘোরা লাগত!
আগের ম্যাচে বার্লো বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি ক্লিম হিলকে রান আউট দেন। পরে অধিনায়ক জো ডার্লিং এ নিয়ে বলেছিলেন, "হয়তো হিল আউটই ছিল তবুও বারলোর একচোখা মনোভাব ছিল দেখার মত। বল স্ট্যাম্পে লাগার পর কারো আবেদন করার সময়টুকুও তিনি দিতে রাজী ছিলেন না! একজন ফিল্ডার উত্তেজনায় শুধু লাফিয়ে উঠেছিল যেটা যেকোন ম্যাচের ক্লোজ পয়েন্টে সবাই করে, সেটা দেখেই আম্পায়ার মহোদয় তাঁর দীর্ঘ বাহু প্রসারিত করে আঙ্গুল তুলে জানিয়ে দিলেন, হিল তুমি আউট! ব্যাপারটি হাস্যকর এবং অস্বস্তিকর!"
ডার্লিং পরে লর্ড হ্যারিসের কাছে অভিযোগ করেছেন, যিনি পরের টেস্ট থেকে বার্লোকে সরিয়ে দেন, তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন যে, তিনি(বারলো) তার পুরানো দলের প্রতি বেশিই আনুগত্য দেখিয়ে ফেলেছেন!
১৯৪৮-৪৯, বোম্বে(মুম্বাই),
বাপু যোশি, ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সেই দিনগুলিতে ৩৬১ এর টার্গেট ভারতের পক্ষে পার হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল, তাও প্রতিপক্ষ যখন শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
যাইহোক, প্রি জোন্স এবং গ্যারি গোমেজের বোলিংয়ের তোপের সামনে পড়তে হবে জেনেও ভারতীয় অধিনায়ক লালা অমরনাথ হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন। তিনি নিজেকে 4 নম্বরে উন্নীত করেন এবং 39 রান দিয়ে পেছনে পেছনে যান। তিনি বোর্ডে মাত্র ৯রান উঠতেই দুই ওপেনারের পতন ঘটলে তিনি উতলা হয়ে উঠেন। তিনি নিজেকে চারে উঠিয়ে আনেন, ৩৯রানের ইনিংস খেলেন।
বিজয় হাজারে যখন রুশই মোদীর সাথে জুটিতে জমে যান তখন ভারত ঠিকপথেই চলতে থাকে। দুইজনে দারুণ খেলতে থাকেন, ২২০রানের বিশাল জুটি গড়ে তোলেন।
১২২রান করে হাজারে যখন ৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে যান, তখন ফিনিশার হিসেবে আসা দত্ত পাদকারের সামনে ছিল আরো ৭৬টি রান।
ভারত ৩২১ রানে অষ্টম উইকেট হারায়, কিন্তু লেজের ব্যাটসম্যান গোলাম আহমদ ঠাণ্ডামাথায় পাদকারকে যোগ্য সঙ্গ দিলে পাদকার বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে থাকেন। ফলে চতুর ক্যারিবিয়ানরা হারের সম্ভাবনা দেখে ইচ্ছাকৃত সময় নষ্ট করতে থাকে, যাতে ব্যাটসম্যানের মনোযোগ নষ্ট করা যায়, এবং ম্যাচেরও নির্ধারিত সময়কে ছুঁয়ে ফেলে।
কিন্তু তবুও দুই ওভার চালাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল।
তখন ভারতের দরকার ছিল ১১রান। পাদকার একটি চারের সাহায্যে ৩বলেই ৫রান তুলে নেন, এবং বাকি দুই বল ডিফেন্স করেই গোলাম কাটিয়ে দেন।
ফলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৭বলে ৬রান, যা দুই সেট ব্যাটসম্যানের জন্য বেশ সোজাই ছিল।
৪৯তম ওভারের শেষ বলটি করতে যখন জোন্স দৌড় শুরু করেন, তখন আম্পায়ার বাপু যোশী ম্যাচের সমাপ্তি ঘোষণা করে দেন। তিনি যে শুধু ওভারটিই ভারতকে বঞ্চিত করলেন তা নয়, শেষ বলটিও খেলতে দিলেন না, যা থেকে হয়তো ভারত ম্যাচটা জিতেও নিতে পারত। তিনি ওভার শুরুর আগে নিয়ম অনুসারে দুই ব্যাটসম্যানকে সতর্কও করেন নি যে, সময় ফুরিয়ে আসছে।
ফলে টেস্ট ড্র হয়।
ভারতকে চূড়ার মাথা থেকে জয় ছাড়া ফিরে আসতে হলো। এবং প্রথম টেস্ট জয় করতে ভারতকে আরো ৩বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
১৯৫৫-৫৬, পেশোয়ার,
ইদ্রিস বেগ, পাকিস্তান বনাম এমসিসি।
এটা ঠিক মাঠের ভেতরের ঘটনা না, তবুও ক্রিকেটকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত যথেষ্ট বড় ঘটনা। পাকিস্তানি আম্পায়ার যখন দিনশেষে পাকিস্তানি অধিনায়কের কাছে পরের দিনের প্ল্যান, নির্দেশ নিতে আসেন, তা ক্রিকেটের গৌরবকে ব্যাহত করে বৈকি! পাকিস্তানের জন্য ভারী দুঃখজনক ব্যাপার ছিল যে, তখন সে রুমে পাকিস্তানী অধিনায়ক আব্দুল কাদিরের সাথে ভারতীয় দলের ম্যানেজার লালা অমরনাথের উপস্থিতি সম্পর্কে আম্পায়ার ইদ্রিস বেগ সচেতন না থেকেই বেফাঁস আলাপ করে ফেলেন।
১৯৫৫-৫৬ সালে ডোনাল্ড ক্যারের এমসিসি একাদশের বিরুদ্ধে পেশোয়ারে পাকিস্তান যখন টেস্ট খেলেছিল, তখন আম্পায়াররা এমন সব সিদ্ধান্ত দিচ্ছিলেন যে, দর্শক ও খেলোয়াড়রা তাদের ধৈর্যের শেষ সীমানায় পৌঁছেছিল। তৃতীয় দিনের খেলার পর , এমসিসির খেলোয়াড়রা বেগকে একরকম অপহরণ করেন। দলের সদস্যরা কিছুটা ক্ষেপে ছিলেন, তাঁরা বেগের রুমে জোর করে ঢুকে পড়ে দেখে সে পানাহারে মক্ত। তখন তাঁরা জোর করে বেগকে হোটেল থেকে একটি পানশালায় ধরে নিয়ে যায়। যখন বেগ আপত্তিকর অবস্থায় উদ্ধার হন, তখন তিনি বলেছিলেন যে ছয় বা সাতজন এমসিসি খেলোয়াড়, তাঁকে অতিরিক্ত ডোজের বিয়ার খাইয়ের তাঁদের হোটেলে পরে একটি পানশালায় ধরে নিয়ে যায়।
পরে তাঁর উপর ফাঁদ পেতে কিছু তথ্যপ্রমাণ, এবং তাঁকে চাপ দিয়ে কিছু তথ্য বের করা হয়।
পরের দিন, ব্যাপারটি একটি আন্তর্জাতিক সংকটের দিকে এগুচ্ছিল, কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাপারটি চাপা পড়ে এবং এমসিসি সফরটি অব্যাহত রাখে।
১৯৭৬-১৯৭৭, ব্যাঙ্গালোর,
এম ভি নাগেন্দ্র, ভারত বনাম ইংল্যান্ড
ব্যাঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ড বনাম ভারত ম্যাচের ঘটনা। ইংলিশরা ৩-০তে তখন এগিয়ে ছিল। ভারতের ২৫৩ রানের জবাবে ডেনিস আমিস ও মাইক ব্রেয়ারলি ইনিংসের যবনিকা উত্তোলন করতে আসেন। বিনা উইকেটে ১৩রানের মাথায় চন্দ্রশেখরের বল ব্রেয়ারলি ব্যাট ছুঁয়ে স্লিপে গুন্ডাপ্প বিশ্বনাথের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু মাঠের প্রত্যেকটি লোক বুঝতে পারছিল বলটি ক্যাচ হবার আগে ড্রপড হয়েছে এক আম্পায়ার নাগেন্দ্র বাদে, তিনি আউট দিয়ে দিলে ব্রেয়ারলি আম্পায়ারের দিকে বিস্মিত দৃষ্টি হেনে ফিরে যান।
তবে নাটক এখনো শেষ হয়নি!
লাঞ্চ বিরতির সময় আম্পায়ার নাগেন্দ্র ব্রেয়ারলির দিকে শান্তভাবে এগিয়ে যান। তিনি বলেন ,. "জনাব, আমি দুঃখিত যে, আমি বুঝতে পারিনি সেটি ঘটেছিল, আসলে আমার আঙ্গুলটা উপরেই উঠছিল এবং আমি এটা থামাতে পারিনি। "
আম্পায়ারের এ ধরণের ভুল হয়তো হতেই পারে, কিন্তু ব্যাখ্যাটা সবচেয়ে অদ্ভুত ছিল!
১৯৮৮,
তারিক আতা, সেলিম বদর, এশিয়া কাপ ফাইনাল,
উদীয়মান শক্তি শ্রীলংকা, শক্তিশালী ভারতীয়দের সাথে ঝুঝছিল,
তবে তরুণ ডি সিলভা এবং অতুল সামারসেকার জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছিলেন। লড়াই মাঝপথেই থেমে গেল যখন তাঁরা রান নিতে গিয়ে দুজনেই মাঝপথে আটকে গেলেন। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত বোলিং এন্ডের স্ট্যাম্প ভেঙে কিপারকে বল ছুঁড়ে যখন স্ট্রাইকিং এন্ডেরও স্ট্যাম্প ভাঙালেন, তখন কাকে আসলে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠানো উচিত তা বোঝাটা মুশকিল হয়ে গেল। কারণ তখনো আইসিসি এ ধরণের পরিস্থিতির জন্য কোন আইন প্রণয়ন করেনি। মজার ব্যাপার ঘটল তখন, আম্পায়ার তারিক আতা ও সালেম বদরও চিন্তাভাবনা করে কোন সমাধান না পেয়ে অবশেষে, মাঠে অন্যতম সিনিয়র দুইজন খেলোয়াড় ভারতীয় অধিনায়ক দিলীপ ভেংসরকার ও অলরাউন্ডার কাপিল দেবের কাছে পরামর্শ নিতে আসেন!!
এরা দুজনে যুক্তি দিয়ে আম্পায়ারকে বোঝান যে, ডি সিলভাই আউট হয়েছেন। যদিও ব্যাপারটি খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি, ভারত বড় ব্যবধানেই জিতেছিল।
১৯৯০, ব্রিজটাউন,
লয়েড বারকার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ড।
বেচারা রব বেইলি! এই মেধাবী ব্যাটসম্যানকে তাঁর জীবনের চারটি টেস্টের সবগুলিই শক্তিশালী ও সুচতুর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার দুর্ভাগ্য হয়েছিল।
ভিভ রিচার্ডস এবং তার দল সব ভক্তদের সফরে নিয়ে এসে ভালই সাম্রাজ্য শাসন চালাচ্ছিলেন! ক্যারিবিয়ানরা মাঠের ভিতর বাইরে সমানতালে পারফর্ম করলে ইংলিশরা কোনঠাসা হয়ে যায়।
চতুর্থ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে ৮৮ রানের লিডের সুবাদে ৩৫৬রানের টার্গেট দিতে সমর্থ হয়। বোলিংয়ে কার্টলি আমব্রোস, ইয়ান বিশপ, ম্যালকম মার্শাল এবং এজরা মোসেলি তাঁদের শক্তি দেখাতে শুরু করলে ইংলিশরা গুটিয়ে যেতে থাকে।
বেইলি প্রথম ইনিংসে ১৭ করে বিশপের বলে আউট হয়ে ফেরেন, ২য় ইনিংসে ৬রানের মাথায় আমব্রোসের বলে ফ্লিক করতে যেয়ে প্যাডে লাগে। ডুজন ও আবব্রোসের আবেদনে সাড়া না দিয়ে আম্পায়ার লয়েড বারকার অ্যামব্রোসকে ক্যাপ দিতে গেলে অধিনায়ক ভিভ রিচার্ডস আক্রমণাত্মকভাবে এগিয়ে এসে আম্পায়ারকে শাসাতে থাকে, এবং গ্যালারী ভর্তি দর্শক একত্রে দুয়ো দিতে শুরু করে আম্পায়ারকে। ফলে তিনি মানসিক চাপে পড়ে আঙুল তুলে দেন।
উইজডেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়কের ব্যবহারকে, "প্রচণ্ড উত্তেজনাপূর্ণ আচরণ" হিসাবে উল্লেখ করেছিল।
গার্ডিয়ানের মাইক সেলওয়ে লিখেছেন, "নিমজ্জিত ও ভয়ঙ্কর আক্রমণ",
টাইমসের সাইমন বার্নস বলেছিলেন, "চেঁচামেচি, অমন আঙুল তোলা আক্রমণ প্রায় শারীরিক হুমকির মতো। নিশ্চিতভাবেই, এটি হতভাগ্য লয়েড বার্কারকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল। "
ক্যারিবিয়ান সমর্থকরা ব্যঙ্গ করে গান গাইছিল, যার কথাগুলি ছিল এমন, লন্ডন সেতুটি যাচ্ছে ভেঙে,
যা ইংরেজ সমর্থকদের জন্য অত্যাচারস্বরূপ ছিল ফলশ্রুতিতে তারাও বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কিন্তু উগ্র ক্যারিবিয়ানরা এর জবাবে হাতাহাতি শুরু করলে পুলিশকে এগিয়ে আসতে হয়।
স্পষ্টতই বর্ণবাদী আক্রমণ চলছিল চারদিকে।
রেডিওতে ক্রিস্টোফার মার্টিন-জেনকিস বলেন, "খুব ভালো! আম্পায়ার চাপের মধ্যে পড়ে হেরে গেলেন ...যদিও এটাতে তার ভুল ছিল না, তার আসল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে চাপ দেওয়া হয়েছিল । যদি এটি গেমসশিপ বা পেশাদারিত্বের খাতিরে বিচার করা হয়, তবে এটা প্রতারণা কিনা তা আমি নিশ্চিত নই। "
১৯৯৮-৯৯, মারজাও ,
রমণ শর্মা, ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা,
অজয় জাদেজা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে চিমিন্দা ভাসের বলে পরাস্ত হন, রমেশ কালুভিথারানা এটি টুকে নিয়ে উদযাপন শুরু করেন।
আম্পায়ার রমন শর্মা, যিনি এর আগে ডি সিলভাকে বল গুনতে ভুল করে ওভারে সাত বল করিয়েছেন, তিনি আঙুল তুলে দেন, অজয় জাদেজা ফিরে যেতে শুরু করলে দৌড়ে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এবং বলেন, হ্যাট ঠিক করতে গিয়ে ভুল করে আঙ্গুল উঠে গেছে!!!!
এই ঘটনা মাঠে প্রবল হাস্যরসের সৃষ্টি করে।
২০০৬, দ্য ওভাল
ডযারেল হেয়ার, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তান
ওভালে চতুর্থ টেস্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।
টেস্ট ম্যাচ সেবার প্রায় প্রহসনে পরিণত হতে যাচ্ছিল, এক আম্পায়ারের ঈশ্বর হবার সাধ জেগে উঠায়!
একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দিতে থাকা হেয়ার শেষে জেদের বশে বল টেম্পারিং করে বলের অবস্থা খারাপ করার অভিযোগে আম্পায়ার হেয়ারের পাঁচ রান জরিমানার প্রতিবাদে পাকিস্তান দলের মাঠ ছেড়ে যাওয়ায় এটি ইতিহাসে প্রথম পণ্ড টেস্ট ম্যাচ হিসেবে গণ্য হয়।
হেয়ার বোধহয় এই সিদ্ধান্ত দিয়ে তাঁর বিতর্কভরা ক্যারিয়ারে বিতর্কের একদম চরমসীমায় গিয়েছিলেন।
ইমরান খান লিখেছিলেন, "হেয়ার যখন সাদা কোট পরেন, তখন তিনি ছোটখাটো হিটলারে রূপান্তরিত হন।"
কেবল পাকিস্তানীরাই নয়, ব্রিটেনের দ্য সান রিপোর্ট হেয়ারকে ধুয়ে দিয়েছিল: "১৮-স্টোনের অস্ট্রেলিয়ান পাথর যার নাম ড্যারেল হেয়ার, তিনি এইসব কর্মকাণ্ড করে তাঁর পা দিয়ে ক্রিকেটের ঐতিহ্য ভালভাবেই মাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।"
- 0 মন্তব্য