• ফুটবল

আরিগো সাচ্চি - ট্যাকটিক্যাল এনালাইসিস

পোস্টটি ২৮১১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আরিগো সাচ্চি এমন একজন মানুষ যে কি না মিলানের কোচ হবার আগে তত বেশি পরিচিত ছিলেন না, একসময় বাবার জুতার দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি, প্রফেশনাল ফুটবল খেলেননি নিজের জীবনে। এমেচার ক্যারিয়ারে খেলেছেন ডিফেন্ডার হিসেবে। এনার হাতেই ১৯৮৭ সালে এসি মিলান প্রেসিডেন্ট মিলানের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছিলেন, বোর্ড মেম্বারদের অনেকেই সাচ্চি কে ম্যানেজার বানানোর বিপরীতে ছিলেন, কিন্তু সাচ্চি মিলান প্রেসিডেন্টকে নিরাশ করেননি। বর্তমানে যদি ৫ জন গ্রেট ম্যানেজার এর নাম লেখা হয় তবে তার মধ্যে সাচ্চির নাম আসবেই। ইতালির ফুটবলকে ৮০র দশকে তিনি নতুন করে তৈরি করার একটা চেষ্টা করেছেন, গোটা ইতালি যেখানে খেলতো ডিফেন্সিভ ফুটবল তিনি খেলাতেন পজেশনাল আক্রমন ভিত্তিক ফুটবল। কি ছিল তার কৌশল, কি উপায়ে তিনি মিলান কে করেছিলেন সফল তারই একটা বর্ণনা দেওয়ার প্রয়াস আগামী কিছু মিনিট করবো

ফরমেশন এবং কৌশল :

সাচ্চির সব থেকে বেশি ব্যবহার করা ফরমেশন ছিলো ৪-৪-২, তিন ডাচ ভ্যান বাস্তেন, রুড গুলিত আর রাইকার্ড কে নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন মিলানের আক্রমণ ভাগ। উনি বেশিরভাগ সময় যে কৌশল গুলো ব্যবহার করতেন সেগুলো হল -

১.অর্গানাইজড ডিফেন্স ছিলো তার দলের অন্যতম শক্তি, তার গোটা দলকে ৪-৪-২ ফরমেশন ব্যবহার করে একটা ইউনিট এর মাধ্যমে ডিফেন্স করতেন। বাস পার্ক তিনি কখনো ব্যবহার করেননি। প্রতিপক্ষ যদি ১৮ ইয়ার্ড বক্সের কাছে চলে আসতো তার ডিফেন্ডাররা পেছনে যাওয়ার বদলে দ্রুত ফরওয়ার্ড রান করতো; যার ফলে তৈরি হত অফসাইড ট্র্যাপ। এতে ঝুঁকি বেশি থাকতো কারণ ডিফেন্ডারদের প্রতিটি রান ইঞ্চ পারফেক্ট হতে হত, তা না হলে প্রতিপক্ষ দলের স্পিডি ফরোয়ার্ড এর সামনে কিপার ছাড়া আর কেউ গোল প্রতিরোধ করার জন্যে থাকতো না, এই জন্যে ওনার এই স্টাইলকে বলা হত হাই রিস্ক হাই রিওয়ার্ড স্টাইল। ডিফেন্স করার সময় পুরো দলের তিন ডিপার্টমেন্ট মানে এটাক থেকে ডিফেন্স এর মধ্যে গ্যাপ থাকতো ১০-২৫ মিটার, যার ফলে ওনার দলের ডিফেন্স পিচের অনেক উপরে উঠত। একসময় পেপ গার্দিওলা এই কৌশল ব্যবহার করতো এবং বর্তমানে সাররী, লুইস এনরিকে, উনাই এমরিকে এধরনের ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করতে দেখা যায়।

২. কাউন্টার প্রেসিং/প্রেসিং ছিল ওনার বহুল ব্যবহৃত একটি হাতিয়ার। বল হারানো মাত্রই মিলান বল ফিরে পাওয়ার জন্যে প্রেস করা শুরু করতো। সিচুয়েশন এমন দাড়াতো যে ৩ জন মিলানের খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের ১ জন খেলোয়াড়কে কাউন্টার প্রেস করতেছে। যার ফলে উক্ত প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না এবং বল মিলানের খেলোয়াড়দের কাছে হারাতো। আর মিলানের খেলোয়াড়রা প্রেস করার জন্যে পিচের বেশ উপরে উঠে আসতো যার ফলে অনেক সময়ই প্রতিপক্ষ নিজের ১৮ ইয়ার্ড বক্সের কাছে বল হারাতো।

৩. সাচ্চির দল খেলা বিল্ডাপ করতো ওয়ান টাচ ভার্টিক্যাল থ্রু পাসের মাধ্যমে দ্রুত খেলা বিল্ড করতো। একজন খেলোয়াড় খুব বেশি সময় পায়ে বল রাখার বদলে তাদের আশে পাশে থাকা থার্ড ম্যানকে বল পাস করতো , যার দরুন প্রতিপক্ষ যার কাছে বল তাকে প্রেস করার জন্যে নিজের জায়গা ছেড়ে এগিয়ে আসতো এবং মিলানের জন্যে তৈরী হতো স্পেস, দ্রুত ট্রানজিশন এর জন্যে কাউন্টার এটাক করতো মিলান, ভার্টিক্যাল থ্রু বলের মাধ্যমে তাদের বেশিরভাগ গোল আসতো। 

৪. একজন গ্রেট কোচ আর একজন নরমাল কোচের মধ্যে পার্থক্য হল গেইম রিড করা বা ইন গেইম ম্যানেজমেন্ট করার ক্ষমতা। সাচ্চির ইন গেইম ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা ছিল তার অন্যতম স্ট্রং জোন। ১৯৮৯/৯০ সালে মিলান ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিল তার এই ইন গেইম ম্যানেজমেন্ট এর কারণে, সাচ্চি নিজেই পরবর্তীতে বলেছিলেন যে " বেনফিকার ডিফেন্ডাররা মিলানের ফরোয়ার্ডদের বেশ কড়া মার্ক করেছিল এবং অনেক সময়ই তাদের পিছে পিছে বেশ উপরে উঠে এসছিল যা আমি খেয়াল করি। আমি ভ্যান বাস্তেন কে বলি একটু ডিপে ড্রপ করতে, যার ফলে ওকে ফলো করতে যেয়ে বেনফিকার একজন সেন্টারব্যাক নিজের স্পেস ছেড়ে বেশ নিচে চলে আসে এবং রাইকর্ড ওই স্পেস একাপ্লয়েট করে গোল আদায় করে"। 

সাধারণত এই কৌশলগুলোর সম্মিলিত রূপই ছিল আরিগো সাচ্চির প্লেইং স্টাইল। উনার সময়ে মিলান দল উনার মাস্টারমাইন্ড এর কারণে বেশ কিছু ট্রফি জিততে পেরেছিল। উনার কারণে ইতালি আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।