• ফুটবল

বাংলাদেশের শেষ ফুটবল সুপারস্টার!

পোস্টটি ৭২২৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

“সুস্বাস্থ্যকে রক্ষা করে লাইফবয়, লাইফবয় যেখানে স্বাস্থ্যও সেখানে”- জিংগেলটি যখন বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায় জনপ্রিয় ছিল তখন প্রায় সমানতালে জনপ্রিয় ছিল ফুটবল ও। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফুটবল তখনো খেলাধুলা নামের বিনোদন এ ফুটবলের উপরে কোন খেলা স্থান করে নেয় নি। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ তখনো দেশের খেলাধুলার ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। মানুষ টিকেট কাটত এই খেলার জন্য। এর পর টিকেট না পেয়ে টিকেট ব্ল্যাক করত। সবশেষে সেখানেও না পেয়ে উঠে যেত স্টেডিয়াম এর কাটাতার বেয়ে শুধুমাত্র কয়েকটি মিনিট এর জন্য খেলা দেখার আশায়। আবাহনী-মোহামেডান এর দলবদল এর পর সাজোয়া যান সহ শোভাযাত্রা হত ঢাকা শহর জুড়ে। সংবাদপত্রের পাতায় বড় বড় হেডলাইন আসত দলবদলের অতি অদ্ভুত সব গল্পকাহিনী নিয়ে। যেখানে খেলোয়াড়দের লুকিয়ে রাখত তাঁদের ক্লাব। রীতিমত ছলে বলে কলে কৌশলে।

https://www.youtube.com/watch?v=xn-jZ05ZG_0

যে কোন ক্রীড়ার এই আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কারণ বিনোদন। আর এর মধ্যমনি বিনোদনদাতারা। মানুষের কাছে সামান্য সময়ের জন্যে নিজের দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দেয়া খেলোয়াড়েরা অনেকেই মাথা তুলে দাড়ান একই রঙ এর জার্সি পড়া অন্যদের চেয়ে। হয়ে ওঠেন সুপারস্টার। বাংলাদেশের ফুটবল স্বাধীনতার আগে থেকেই ছিল সুপারস্টারে ভরপুর। তাঁদের খেলা দেখতে মানুষ মাঠে গিয়েছে। জয়ধ্বনি দিয়েছে। অনেকে দেশকে ছাপিয়ে দেশের বাইরেও নিজেকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন উচ্চতায়। এই ধারার সর্বশেষ পতাবাহক যিনি ছিলেন তার কথা লিখতেই “লাইফবয়” জিঙ্গেলটিকে আবার মনে করা। সেই বিজ্ঞাপনের সুদর্শন মুন্নাই বাংলাদেশের ফুটবলে সর্বশেষ সফল সুপারস্টার। মোনেম মুন্না।

কাজি সালাউদ্দিন সংগঠক হিসাবে গত ১০-১২ বছরে নিজেকে যে পরিমান বিতর্কিত করেছেন, সেটা থেকে তাকে আবার সম্মানের জায়গায় চিন্তা করা কঠিন তবে খেলোয়াড় হিসাবে তর্কযোগ্যভাবে হলেও সালাউদ্দিন দেশের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। দেশের বাইরে হংকং এ খেলতে গিয়েছিলেন সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায়। কিন্তু একটি ব্যাপারে সালাউদ্দিন এর চেয়েও মুন্নাকে এগিয়ে রাখতে হবে। হংকং এ সালাউদ্দিন ছিলেন কেবলই বিদেশী খেলোয়াড়। কিন্তু কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ইস্ট বেংগল এ মোনেম মুন্না কিংবদন্তী। দুই মৌসুম মাত্র মুন্না খেলেছেন ইস্ট বেংগল এর হয়ে। সেও আজ প্রায় সিকি শতাব্দী আগের কথা। কিন্তু কলকাতার মানুষের কাছে মুন্নাই এখনো বাংলাদেশ্ এর ফুটবল। এপার আর ওপার বাংলার একমাত্র অবিসংবাদিত সুপারস্টার।

Kingfisher-East-Bengal-clubকলকাতার ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব। মোনেম মুন্নার দেশের সীমানা ছাপিয়ে যাওয়া তারকাখ্যাতি
ছাপ রেখে গেছে কলকাতার এই পরাশক্তির ইতিহাসেও।

ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় তিনটি আলাদা কারণে।প্রথমত্, তিনি অধিনায়ক এবং কোচ হিসাবে জার্মানিকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ইতিহাসের সেরা ডিফেন্ডারদের তালিকা করলে তাঁকে সবার উপরে রাখতে হবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। আর সবশেষে তিনি ডিফেন্ডার হিসাবে নিজের পজিশানকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। “লিবারো” পজিশানটিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছিলেন এই বেকেনবাওয়ার ই। একজন ডিফেন্ডার যিনি সুইপ করার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে প্রতিপক্ষের ডি বক্সেও নিজের প্রভাব বিস্তার করেন। ইস্ট বেংগল এ মোনেম মুন্নাকে এই লিবারো পজিশানেই খেলানো হয়েছিল। সারা মাঠ জুড়ে খেলোয়াড় এবং নেতা হিসাবে যে প্রভাব মুন্না বিস্তার করেছিলেন তাই যথেষ্ট ছিল দুই মৌসুমে মুন্নাকে ইস্টবেংগল ইতিহাসে কিংবদন্তীর মর্যাদা এনে দিয়েছিল। এর সাথে মুন্না অসাধারন সেটপিস নিতেন। দরকারী সময়ে দলের হয়ে গোল করাও একজন পরিপূর্ণ ডিফেন্ডার এর ই প্রতিচ্ছবি ছিল সব সময়ই। ইস্ট বেংগলের হয়ে দুই মৌসুমেই মুন্না জিতে নেন লীগ শিরোপা। সাথে যোগ হয় ফেডারেশান কাপ ও।

received_2579771235383351আবাহনীর অধিনায়ক  হিসাবে চায়নাতে মোনেম মুন্না (২ নং জার্সি পরিহিত)

মোনেম মুন্নার কথা আসলে আবাহনীও আসতেই হবে। ১৯৮৪ সালে ঢাকার ফুটবলে মুন্নার অভিষেক। মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রে খেলেছেন নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারের প্রথম দু’টি মৌসুম। এরপরে এক মৌসুম গোপীবাগের ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নে। এর পরের ১১ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনের দুই বছরের ইস্ট বেংগল অধ্যায় বাদ দিলে মুন্না আর আবাহনী ছিল সমার্থক শব্দ। আবাহনীর হয়েই ঢাকার ফুটবলে মুন্নার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা শিখরে পৌছায়। মুন্না আবাহনীর হয়ে খেলতেন রাইটব্যাক হিসাবে। এর মধ্যেই ঢাকার ফুটবলে মুন্না হয়ে ওঠেন একটি আলাদা ব্র্যান্ড। বাংলাদেশ এর ফুটবলে ক্লাব এর আর্থিক সামর্থ্য অনেকটাই রোলার কোস্টার এর মত। ক্ষমতার পালাবদল এর সাথে সাথে সামর্থ্য পরিবর্তন হতে থাকে প্রতিটি দলের। নব্বই এর দশকের শুরুতে স্বৈরাচার পতনের পরবর্তী বছরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুবই শক্তিশালী হয়ে দল বদল এর বাজারে ফেরত আসে। মুক্তিযোদ্ধায় নাম লেখান প্রচুর তারকা ফুটবলার। মুন্নার নিজের প্রথম ক্লাব মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তারুণ্য নির্ভর আবাহনীর হয়ে মুন্না থেকে যান নেতা হিসাবে। এই সিদ্ধান্তই মুন্নাকে এনে দেয় আবাহনীর বিশ্বস্ততার পুরষ্কার। হয়ে ওঠেন নেতা। হয়ে ওঠেন আইকন।

কিংব্যাক-মোনেম-মুন্না-Neon_Aloy_নিয়ন_আলোয়বিচিত্রা ম্যাগাজিনে মোনেম মুন্নার আলোড়ন তোলা
২০ লাখ টাকার দলবদল কাভার করে করা স্পেশাল কাভার।

পরের মৌসুমে দলবদলে শুধু বাংলাদেশ নয়, আলোড়ন ওঠে গোটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে। ২০ লাখ টাকায় আবাহনীর হয়ে সাইন করেন মোনেম মুন্না। ২০ লাখ টাকা ২০১৯ সালে এসেও যে কোন ফুটবলারকে দলে ভেড়াতে মোটামুটি সম্মানজনক একটি হিসাব। ২০১৯ সালে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য প্রায় ৮৫ টাকা। fxtop.com এর ঐতিহাসিক বিনিময় মূল্য জানাচ্ছে ১৯৯১ সালে ১ মার্কিন ডলার এর বিপরীতে পাওয়া যেত মাত্র ৪৫ টাকা। অর্থাৎ টাকার আন্তর্জাতিক মূল্য সে সময় ছিল দ্বিগুনের ও বেশি। তবে টাকার বিনিময় মূল্য আসলে ঠিক এভাবে হিসাব করা যায় না। ১৯৯১ সালে ১০,০০০ টাকা ছিল অত্যন্ত উঁচুমানের বেতন। সরকারী প্রথম শ্রেনীর খুব অল্প কিছু কর্মকর্তা এই পরিমাণে বেতন পেতেন। সেখানে এক মৌসুমে ২০ লাখ টাকা ছিল রীতিমত এদেশের ফুটবল অর্থনীতিতে এক অভাবনীয় রেকর্ড।

তবে মুন্নাকে বাংলাদেশ এর ফুটবলের মনে রাখতে হবে জাতীয় দলে তাঁর অবদানের জন্য। ১৯৮৬ তে সিউল এশিয়ান গেমস এ মুন্নার অভিষেক বাংলাদেশ দলে। ইনজুরী ও খুব ব্যাতিক্রমী দু-একটি ম্যাচ বাদ দিলে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মুন্না ছিলেন বাংলাদেশ দলের রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী। ১৯৯০ সালে বেইজিং গেমস এ মুন্নার হাতে ওঠে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব। দীর্ঘ সময় এর পর বাংলাদেশের আর্মব্যান্ড ছিল মুন্নার নিরাপদ বাহুতে। ১৯৯৫ সালে মায়ানমার এ আয়োজিত হয় চার জাতির আমন্ত্রনমূলক টুর্নামেন্ট মারদেকা কাপ। এখানে মুন্নার নেতৃত্ত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রায় ২৫ বছরের ফুটবল ইতিহাসে সেটাই প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি। বাংলাদেশ ফুটবল দল এর সুসময়ের পিছনে রয়েছেন কয়েকজন বিশ্বমানের কোচ ও। এর মধ্যে ছিলেন ঘানাকে যুব বিশ্বকাপ ও আইভরিকোস্ট কে যুব পর্যায়ে আফ্রিকান কাপ অব নেশন্স এর শিরোপা এনে দেয়া, সৌদি আরব এবং টোগোকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া কোচ অটো ফিস্টার। ১৯৯৫-১৯৯৭ সালে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ এর কোচ। মুন্নার সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য ছিল “He was mistakenly born in Bangladesh”


95295a15f34efd44df62361a8ae8dcb2-2জাতীয় দলের অধিনায়কত্বে মোনেম মুন্না (ছবিঃ প্রথম আলো)

এই দেশে ১৯৯৭ সালে আই সি সি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় শুরু করে ক্রিকেট এর অগ্রযাত্রা। কাকতালীয়ভাবে মুন্নার অবসর গ্রহন এর সালটাও ১৯৯৭। প্রতীকি ভাবে বলা যায় এটাই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসাবে ক্রিকেট এর সামনে এগিয়ে যাওয়া ও ফুটবলের যাত্রা থমকে যাওয়ার প্রতিচ্ছবি ছিল। ২২ বছর পর- আজ সবাই ক্রিকেটার হতে চায়। ক্রিকেট এ টাকা আছে, গ্ল্যামার আছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা ক্রিকেট এ সাকিব আল হাসান এর মত বিশ্বমানের আইডল আছেন, আছেন মাশরাফি মর্তুজার মত অন্তরে আবেগের জায়গা করে নেয়া নেতা যার পিছনে দাঁড়িয়ে গোটা জাতি র‍্যালি করতে পারে। একটুও না বাড়িয়ে বলা যায়- মুন্না ছিলেন ফুটবলের জন্য দুটোই।১৯৯৭ সালে ইউনিলিভার এর ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হয়েছিলেন মুন্না। দেশের কর্পোরেট ক্রীড়ার ব্র্যান্ড এম্বাসেডরদের তালিকায় অবসরের আগেভাগেও ছিলেন শীর্ষে। মুন্নার পোস্টার বিক্রি হত পুরাতন ঢাকার পথে ঘাটে। খেলাধুলা প্রিয় সর্বশেষ প্রজন্ম না বললেও ৯০ এর দশকের তরুণ সমাজকে বলা যায় খেলাধুলায় আপামর অংশগ্রহনকারী শেষ প্রজন্ম। সেই প্রজন্ম মুন্নাকে স্থান দিয়েছিল আইডল এর। আইকন এর। অনুপ্রেরণাদায়ী রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে। এই প্রজন্মের সামনে তেমন কেউ নেই। মাঠে দর্শক নেই। অনেকেই আংগুল তোলেন আকাশ সংস্কৃতির দিকে। কিন্ত প্রশ্ন থেকে যায়- বিশ্বমানের নৈপুন্য যেখানে হাতের মুঠোয়, এটাই কী স্বাভাবিক নয় যে শুধুমাত্র অনুপ্রেরনাদায়ী কোন আইডল ই পারতেন স্থানীয় ফুটবলের দিকে তরুন সমাজের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে? শুধু ভুল দেশে নয়, হয়তো ভুল সময়েও জন্মেছিলেন মুন্না। এই দুঃসময়ে তাকেই দরকার ছিল দেশের ফুটবলকে টেনে তুলতে।

মোনেম মুন্নাকে নিয়ে তথ্যসূত্র ঘাটতে গিয়ে যেখানেই বাংলা কোন লেখা পড়েছি, সেটা শেষ হয়েছে- ধানমন্ডি লেক এর উপরে একটি সুদর্শন সেতু মুন্নার নামে নামকরণ করা নিয়ে। সেটির নাম যে মোনেম মুন্না সেতু চলাচলের পর সেটা জানতে আমার দীর্ঘসময় লেগেছিল। সেতুর কোন নামফলক নেই। মোনেম মুন্না কীভাবে দেশের সেরা ফুটবল আইকন থেকে নামবিহীন সেতু হয়ে গেলেন সে গল্প বড়ই করুণ। মুন্নার জন্য এই পৃথিবীর আলোবাতাস বরাদ্দ ছিল অবসরের পর আর মাত্র আটটি বছর। ১৯৯৯ থেকেই কিডনীজনিত জটিলতায় মুন্না অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর বোনের একটি কিডনি তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে রোগব্যাধীর বাড়ন্ত ঝুকিতে পড়ে যায় শরীর। ২০০৪ সালের মাঝামাঝি জীবানুঘটিত সমস্যার প্রকোপ আবার বাসা বাধে কিডনীতে। ২০০৫ সালের ১২ ই ফেব্রুয়ারী মোনেম মুন্না মাত্র ৩৮ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

20237719ধানমন্ডি ৮ এর নামফলকবিহীন মোনেম মুন্না সেতু।
(ছবি কৃতজ্ঞতাঃ mapio.net)

আমাদের দেশে ভাস্কর্য নিয়ে অনেক নাক সিটকানো ও বিতর্ক তৈরি করা মনোভাবের মানুষ রয়েছেন। তবে শিল্প হিসাবে নয়, স্মারক হিসাবে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হিসাবে কিংবদন্তীদের ভাস্কর্য তৈরির রীতি অনেক সময়ই ভবিষ্যত কিংবদন্তী তৈরিতে ভূমিকা রাখে এটা পরীক্ষিত সত্য। এনফিল্ড এর বাইরে বেড়ে ওঠা কেভিন কিগান ফুটবল খেলার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন এনফিল্ড এর সৌন্দর্য্যে। পরবর্তীতে লিভারপুল ও ইংল্যান্ড এর কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন তিনি। আমাদের মিরপুরের বাইরে ভুল এনাটমি ও অঙ্গভঙ্গিতে কিছু অদ্ভুত ভাস্কর্য আছে। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে মাশরাফি মর্তুজা বা সাকিব আল হাসান অথবা আমাদের বিখ্যাত পঞ্চপান্ডবের সকলেই জায়গা করে নেবেন সেখানে। অনুপ্রাণিত হতে থাকবে ভবিষ্যতের ক্রিকেট প্রজন্ম। হয়তো কোন একদিন তৈরি হবে হল অব ফেম ও।

কিন্তু ফুটবলে? আবাহনীর নিজের স্টেডিয়াম হলে কি তাঁর বাইরে বাংলাদেশের আপাতত শেষ ফুটবল সুপারস্টার এর কোন ভাস্কর্য থাকবে? অথবা জাতীয় দলের ডেরা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এর বাইরে কি থাকবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম শিরোপাজয়ী অধিনায়কের কোন স্মারক? নাকি মুন্না রয়ে যাবেন একটি ফলক বিহীন সেতু আর ভুলে যাওয়া এক ধুমকেতু হিসাবেই?