• ক্রিকেট

বিশ্বকাপ বিতর্ক(পর্ব ১)

পোস্টটি ২৮৬০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। বাজছে বিশ্বকাপের দামামা। বিশ্বকাপে বিভিন্ন উত্তেজনাকর ম্যাচের সাথে বিতর্কও কম ছিল না। তাই চলুন একবার ফিরে তাকাই বিশ্বকাপের বিভিন্ন বিতর্কিত ঘটনাসমূহের দিকে। আজকে প্রথম পর্ব। 

বব উলমার। নামটি মনে থাকার কথা সবার। ১৯৭৬ সালে উইজডেন ম্যাগাজিনের ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার। তার চেয়েও বড় পরিচয়, একজন উদ্ভাবনী ক্রিকেট কোচ, যার শ্বাস-প্রশ্বাসে মিশে আছে ক্রিকেট, জীবনের শেষ পর্যন্ত যিনি ক্রিকেটের সাথেই ছিলেন। কিন্তু এই দক্ষিণ আফ্রিকানের মৃত্যু হয়েছিল রহস্যজনক ভাবে। বিশ্বকাপের প্রাক্কালে ফিরে তাকাতে চাই বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনার সাথে। 

২০০৪ সাল, উলমার আইসিসির হাই পাররফম্যান্স ম্যানেজারের চাকরি শেষ করে যোগ দিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে। তৎকালীন পাকিস্তান কোচ জাভেদ মিয়াঁদাদের অধীনে সর্বশেষ সিরিজেই ঘরের মাটিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে হেরে গেছে পাকিস্তান। এতে নাখোশ পিসিবি চাকরিচ্যুত করেছে জাভেদ মিয়াঁদাদকে, আর সেখানে নিয়োগ পেয়েছেন উলমার। দলটাকে পেয়েই তার নিজের হাতের ছোঁয়ায় পাল্টে দিলেন হারতে থাকা দলটিকে, জিততে শুরু করলো পাকিস্তান। মাঝেমধ্যে কিছু ম্যাচ হেরেছে বটে, তবে প্রাপ্তির পাল্লাই ছিলো ভারী। পুরস্কারস্বরূপ, উলমারের চুক্তি নবায়ন করে বাড়ানো হলো বিশ্বকাপ পর্যন্ত। সেই নবায়ন চুক্তিই শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল তার জীবন-মৃত্যুর নির্ণায়ক! 

১৮ মার্চ, ২০০৭। আগের দিন ঘটেছে বড় অঘটন। ১৭ই মার্চ পাকিস্তান হেরে যায় আয়ারল্যান্ডের সাথে! বাদ পরে প্রথম রাউন্ডেই! তবে এসব নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না জ্যামাইকার পেগাসাস হোটেলে কাজ করা বার্নিস রবিনসন। ৭টার সময় তাঁর শিফট শুরু হওয়ার কথা, কিছুটা দেরি করে ফেলেছিলেন বলে তড়িঘড়ি করে কাজে নেমে পড়লেন বার্নিস। দেরি হতে হতে বেজে গেছে ৯.৩০টা, এমন সময় পৌঁছালেন দ্বাদশ ফ্লোরের ৩৭৪ নম্বর রুমে। রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নক করলেন, কোনো সাড়া এলো না। আবারও নক করলেন বার্নিস, নাহ, কোনো সাড়াশব্দ নেই! কিছুটা অবাক হলেন, মনের মধ্যে কিছুটা শঙ্কাও হচ্ছিল। তাই সকালে তাঁর নামে ইস্যু করা কী-কার্ড ব্যবহার করে রুমে ঢুকলেন বার্নিস। ঢুকেই অন্ধকার কক্ষে খুব সামান্য একটা শব্দ শুনতে পেলেন, ভাবলেন রুমের বাসিন্দা তখনও ঘুমে নিমগ্ন। তাই ওই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। এরপর আবার ফিরে এলেন ওই রুমে, ঘড়িতে তখন ১০.৫০ বাজে। আবারও নক করলেন, নাহ, এবারও আর কোনো উত্তর এলো না। এবার খেয়াল করলেন, রুমের বেডটা ফাঁকা। কিছুটা কৌতুহলী হয়ে আরেকটু ভিতরে ঢুকে চারপাশটায় নজর দিলেন। হঠাৎ করে খেয়াল করলেন, বালিশের এক কোণে রক্তের ছোপ, চেয়ারটা উল্টানো এবং উটকো একটা বমির গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে নক করলেন বাথরুমে, দেখতে চাইলেন সেখানে কেউ আছেন কিনা। নাহ, সেখানেও কোনো সাড়াশব্দ নেই। এবার জোরপূর্বক দরজা খোলার চেষ্টা করলেন তিনি, কিন্তু কেন জানি তিনি পারছেন না! এবার গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত করলেন বাথরুমের দরজায়, দেখতে পেলেন একজন মানুষের নিথর দেহ পড়ে আছে দরজার সামনে। তিনি আর কেউ নন, বব উলমার!

চিৎকার করে উঠলেন বার্নিস। কোনো সাড়া নেই উলমারের নিথর শরীরটা থেকে, এক ধরনের উটকো একটা গন্ধ নাকে এলো বার্নিসের। ভয় পেয়ে গেলেন বার্নিস, সাথে সাথে অ্যালার্ম বাজিয়ে জানান দিলেন পরিস্থিতির কথা। হাসপাতেলে নিয়ে ডাক্তারদের আন্তরিক প্রচেষ্টার পরও তাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সেদিন ১২.১৪ তে কিংস্টন হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পরিসমাপ্তি ঘটল একজন অন্তঃপ্রাণ ক্রিকেট কোচের।

বব উলমার, পাকিস্তান কোচ থাকাকালীন।

উলমারের রহস্যময় মৃত্যু সাড়া ফেলে ক্রিকেট দুনিয়ায়। বিশ্বকাপের চেয়েও যেটা আলোচিত হয়ে উঠে। তৈরি হয় বিভিন্ন তত্ত্ব। অনেকেরই ধারণা, ১৭ মার্চ কেলেংকারির পর বাজিকরদের রোষানলে পড়ে মারা যান তিনি। আরেকটা তত্ত্ব আছে যে ওই ম্যাচে ম্যাচ ফিক্সিং ঘটেছিল এবং যা উলমারের কানে আসে। সেটা যাতে জনসম্মুখে প্রচারে না আসে সেজন্য বাজিকর আর পাকিস্তানের কয়েকজন খেলোয়াড় দ্বারা হত্যা করা হয় তাকে। তবে কোনো কিছুই ধোপে টিকেনি। শেষে জ্যামাইকা আদালত রায় দেয় যে এই মৃত্যুর পিছনে কোনোরূপ হত্যাকান্ডের প্রমাণ নেই এবং তার মৃত্যুর জন্য কেউই দায়ী নয়।(যদিও তদন্তটা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে, অনেকে বলেন জ্যামাইকা হত্যাকান্ডকে ধামাচাপা দেয়ার জঅন্য এরকম রায় দেয়।) তবে পরবর্তীতে বব উলমারের পরিবার এটা মেনে নেয় এবং তার বড় ছেলে ডেল উলমার কারণ হিসেবে ববের টাইপ-২ ডায়াবেটিস আর হৃদরোগকে চিহ্নিত করেন।

বব উলমার, যিনি ক্রিকেটের সাথে ছিলেন মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত। হয়তোবা তার মৃত্যুর রহস্য আমরা এখনো সঠিক জানি না, কিন্তু তিনি এখনো আমাদের কাছে স্মরণীয়, বরণীয়। তার মৃত্যুরহস্য শুধু বিশ্বকাপ না, পুরো ক্রিকেটেরই এক বড় রহস্য হিসবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কৌতূহলী মনে জায়গা করে নিয়েছে।

এরপরের পর্ব = অদ্ভুত বৃষ্টি আইন ও দক্ষিন আফ্রিকার দুর্ভাগ্য! সাথেই থাকুন।

তথ্যসূত্রঃ Roar.Bangla, Sportskeeda web magazine, The Gurdian