• ক্রিকেট

স্বপ্নচূড়ায় ঊনিশ এবং খানিক স্মৃতিকথন

পোস্টটি ১৮৪২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেট বিশ্বকাপ, বিশাল এক মঞ্চ। মুক্ত আকাশের নিচে এ মঞ্চে দর্শকদের অসাধারণ সব পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করে যায় দলগুলো। এখানে কেউ খেলে বিশ্বজয়ের মুকুট নিজের করে নিতে, আবার কারো স্রেফ অংশগ্রহণই শীর্ষ স্বপ্ন। বিশ্বকাপ প্রতি চার বছর ঘুরে একবার করে এসে আমাদের মতো আবেগপ্রবণ জাতিদের সকল ভেদাভেদ ভুলিয়ে মিলিয়ে দিয়ে যায় এক বিন্দুতে, ভাসিয়ে দিয়ে যায় দেশপ্রেমের খরস্রোতা নদীতে। এমন একটা প্রতিযোগিতার সূচনা খুব বেশি দেরির নয়; ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রুডেনশিয়াল কাপ নামে ক্রিকেটের সীমিত ওভারের যে টুর্নামেন্টের আসরটি বসেছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাই বিশ্বকাপের প্রথম আসর হিসেবে পরিগণিত। রাউন্ড রবিন ও নকআউট ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ হয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে যথাক্রমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া। ৪৪ বছর পেরিয়ে এবারেও যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে যৌথভাবে বসবে বিশ্বকাপের ১২তম আসর। অবশ্য ইতোমধ্যে আয়োজক হিসাবে হ্যাটট্রিক কোটা অতিক্রম করেছে দ্য গ্রেট ব্রিটেন। এ পর্যন্ত রেকর্ডসংখ্যক ৫ বার বিশ্বকাপ জয়ী দল অস্ট্রেলিয়া; ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের ২টি করে এবং শ্রী লঙ্কা ও পাকিস্তানের ঝুড়িতে আছে ১টি করে বিশ্বকাপ।

বাংলাদেশের পথচলার দৈর্ঘ্য এতটা দীর্ঘ না হলেও এখন পর্যন্ত এ পথ ঠিক কমও নয়। ১৯৯৯ সালে আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে শুরু হয়ে মেঘে মেঘে ভেসে বেলা গড়িয়েছে কুড়ি বছরের মতো। নাতিদীর্ঘ এ পথচলায় কখনও ছিল সীমাহীন আনন্দ, কখনও প্রতুল বিষাদ আবার কখনও লজ্জার গগন–পতন সংমিশ্রণ— সাথে প্রতিবারই বদলেছে অধিনায়কের নাম। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে আমিনুল ইসলাম হয়ে শুরু করে ২০০৩, ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত যথাক্রমে নেতৃত্বের ভার ছিল খালেদ মাসুদ, হাবিবুল বাশার, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজার স্কন্ধে। সৃষ্টিকর্তা সহায় হলে এখন পর্যন্ত দুই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে রেকের্ডের একটি পাতায় কেবলমাত্র একজনই জায়গা দখল করবে— তিনি আর কেউ নন, দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা। ‘৯৯ থেকে ‘১৯— টানা ৬ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ এরমধ্যে আয়োজকও হয়েছে একবার— ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারত ও শ্রী লঙ্কার সাথে প্রথমবারের মতো আয়োজক দেশ হওয়ার সুযোগ অর্জনের মাধ্যমে। বিশ্বকাপের সফলতা বলতে দুটি বিশ্বকাপের ছবি ঝলমলিয়ে ধরা দেয় স্মৃতির পাতায়— ২০০৭ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ— যার প্রথমটিতে সেবারের হট ফেভারিট ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজেদের সেরা জয় হিসেবে বিবেচিত ঐতিহাসিক ৫ উইকেটের বিজয়ের মাধ্যমে সুপার এইটে জায়গা পাওয়া এবং দ্বিতীয়টি গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারানোর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া। তাছাড়া নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে সে-সময়ের তুখোড় জনপ্রিয় ও শক্তিমত্তায় অনেক এগিয়ে থাকা পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়া দেওয়া, ২০০৭ সালে সুপার এইট পর্বে শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকাকে ৬৭ হারানো নিঃসন্দেহে সুখস্মৃতি বলাই শ্রেয়। স্বাগতিক হিসেবে অংশ নেওয়া ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জার রেকর্ড এখনও চোখে ভাসলেও সেবারে স্মৃতির পাতায় অম্লান বন্দর নগরীর ‘লাকি ভেন্যু’তে ইংল্যান্ড বধের রূপকথা। এসবই অনুপ্রেরণা ও সাহস যোগাবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ও অভিজ্ঞতায় ঠাসা দল হিসেবে অংশ নেওয়া এবারের বাংলাদেশ দলকে।

এবারের আসরে বাংলাদেশের চূড়ান্ত প্রেরণা হতে পারে শ্রী লঙ্কা। ১৯৯৬ সালে নিজেদের ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে তারা প্রথমবারের মতো বিশ্বজয়ের মুকুট পরতে সক্ষম হয়। যদিও ইংল্যান্ডের ভয়াল কন্ডিশন ও অন্যান্যদের শক্তি বিবেচনায় ব্যাপারটা কিছুটা আড়চোখে তাকানোর মতো, তবুও আশায় বুকে বাসা বাঁধতে আপত্তি কোথায়! তবে সাম্প্রতিক সাফল্যের পরিসংখ্যান, পঞ্চরত্নের উপস্থিতি, তামিম–সাকিবদের মতো অভিজ্ঞদের ছন্দে থাকা এবং সকল সদস্যের অকাট্য আত্মবিশ্বাস আশা জাগানিয়াই বলা যায়। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার পূর্বে দেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালের আশ্বাস দেওয়া বক্তব্য “এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জন হবে ঐতিহাসিক” সে-ই প্রত্যাশার উচ্চতা তাজিংডং থেকে হিমালয়সম বানিয়ে দিয়েছে। শিষ্যের এ বক্তব্যে মতৈক্য আছে স্বয়ং বাংলাদেশ বস স্টিভ রোডসের; আশাবাদী অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কও। এত কিছুর পর আশা করা তো নিশ্চয় উচ্চাশা হবে না।

আগামী ৩০ মে থেকে শুরু হয়ে ১২ জুলাই ‘দ্য হোম অভ ক্রিকেট’ খ্যাত ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে পর্দা নামবে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আয়োজনের এবারের আসর তথা ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের। স্বপ্নচূড়ায় অবস্থান করা এবারের ঊনিশে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য নিখাদ ও নিরন্তর শুভ কামনা রইল।

 

[পূর্বে অন্যত্র প্রকাশিত]