• ফুটবল

স্ট্রাইকার নাকি প্লেমেকার

পোস্টটি ২২৭৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

স্ট্রাইকারের স্বাভাবিক কাজই হচ্ছে গোল করা, দুই উইং থেকে বল আসবে সে ট্যাপ বা হেড করে জালে জড়াবে। কিন্তু কিছু কিছু স্ট্রাইকার আছে যারা শুধু গোল করেই না বরং সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েও থাকেন। তারা কিভাবে এই কাজটি করে থাকেন তার একটা ধারণা আমি দেওয়ার চেষ্টা করবো। বর্তমানে হাতে গোনা কিছু স্ট্রাইকার আছে যারা এই কাজটি করে থাকেন, তাদের দিয়েই আমি ধারনাটি বোঝানোর চেষ্টা করবো।

ফেইক রান - 

অনেকসময় স্ট্রাইকাররা ফেইক রান এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে তার সতীর্থকে দিয়ে গোল করায়। যেমন লুইস সুয়ারেজ, তিনি মাঝে মাঝেই দুই উইং এর বল সাপ্লাই করার আগে ফেইক রান নিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সকে ব্যস্ত রাখেন আর এই সুযোগে মেসি কিংবা কৌতিনহো যেকোনো একজন বল পেলে সহজেই গোল আদায় করে নিতে পারেন। শুধু মাত্র লুইস সুয়ারেজই যে এমনটা করেন তা নয়, অলিভিয়ের জিরুদ, গঞ্জালো হিগুয়েনও এই কাজটি করে থাকেন। জিরুদ বিশ্বকাপে এই ফেইক রানের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা ডিফেন্স কে অকুপাই করে রেখেছিল যার ফলে গ্রীজম্যান এমবাপেরা সহজেই স্পেস পেয়ে যায় এবং গোল আদায় করতে সক্ষম হয়।

নিজেকে মার্কিং করিয়ে অন্যকে মার্কিং থেকে ছাড়ানো - 

এই কাজটি সবথেকে বেশি যিনি করে থাকেন তিনি হচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদের করিম বেনজেমা। বেনজেমার পজিশনিং সেন্স তাকে এই কাজ করতে অনেক বড় সাহায্য করে। গত বছরের ইয়ুভেন্টাস বনাম মাদ্রিদ ম্যাচের প্রথম গোলটি রোনালদোর পা থেকে আসে ঠিকই কিন্তু ইসকো বল সাপ্লাই করার আগেই বক্সের মধ্যে ঢুকে রোনালদোকে মার্কিং থেকে সরিয়ে নিজেকে মার্ক করায় বেনজেমা, যার ফলে রোনালদো ফ্রি স্পেস পায় এবং ট্যাপ ইন করে গোল আদায় করে। এই কাজটি জিরুদ, ফিরমিনো এরাও করে থাকেন।

ফলস নাইন - 

ফলস নাইন পজিশনে মেসি কতটা ভয়ংকর তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে পেপ বার্সা ছাড়ার পর মেসি ফলস নাইন কম সেকেন্ড স্ট্রাইকার/ প্লেমেকার হিসেবে বেশি খেলেছেন। নিজের দল যখন এটাকে যায় তখন একজন ফলস নাইন ডিপে ড্রপ করে অপোজিশন ডিফেন্ডারকে তার লাইন থেকে সরানোর চেষ্টা করে, অবস্থাটা এমন হয় যদি ডিফেন্ডার বের হয় তাহলে আরেকজন খেলোয়াড় ওই স্পেস কাজে লাগিয়ে আক্রমণ করতে পারবে আর যদি স্পেস ছেড়ে না বের হয় তবে ফলস নাইন নিজেই আক্রমণ করতে পারবে। এই কাজটি  লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনো বর্তমানে সব থেকে ভালোভাবে করে যাচ্ছেন। তার এই ডিপে ড্রপ করার জন্যেই মানে সালাহ দুইজনই গোল পাচ্ছেন।

বক্স টু বক্স প্লেমেকার - 

একজন স্ট্রাইকারকেও যে বক্স টু বক্স প্লেমেকার হিসেবে খেলানো যায় তার সবশেষ উদাহরণ ফ্রান্সের গ্রীজম্যান, দিদিয়ে দেশম গ্রীজম্যানকে বিশ্বকাপে সম্পূর্ণ ফ্রী রোলে বক্স টু বক্স খেলিয়েছেন এবং গ্রিজির কাজ ছিলো সেকেন্ড স্ট্রাইকারের মত, সে তার ভিশন , পজিশনিং সেন্স কাজে লাগিয়ে এটাক করতে যেমন সাহায্য করছে তেমন ক্রুশিয়াল মুহুর্তে গোল আদায় করে দলকে লিড এনেও দিয়েছে। আর তার এই কাজে সাহায্য করছে জিরুদ , প্রতিটি এটাক কে সফল করার পেছনে এই দুইজনের অবদান ছিল অসামান্য।

আমরা সবাই নাম্বার নাইন বা স্ট্রাইকার কেনো গোল করে না কিন্তু দলের এটাকে সাহায্য করে এই নিয়ে তাদের কম সমালোচনা করি না, কিন্তু যার যে কাজ করার সেতো তাই করবেই এবং এই কাজ গুলো দলের কোচ কর্তৃক নির্ধারণ করা থাকে। সুতরাং আসুন সমালোচনা কিংবা কটূক্তি নয় বরং তাদের কাজ কে এপ্রিশিয়েট করি এবং ফুটবলকে উপভোগ করি।