• ক্রিকেট

বিশ্বকাপ বিতর্ক(পর্ব-৭)

পোস্টটি ২৫২২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

১৯৯৬ বিশ্বকাপ। শ্রীলংকা, ভারত এবং পাকিস্তান যৌথভাবে আয়োজন করেছিল। স্পন্সরদের নাম অনুসারে বিশ্বকাপের নামকরণ হয় ‘উইলিস ওয়ার্ল্ড কাপ ১৯৯৬’। যাতে শ্রীলংকার আয়োজন করা নিয়ে অনেক আপত্তি ছিল। তার কারণ সন্ত্রাসী হামলা।

৩১ জানুয়ারি ১৯৯৬ তে, শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে ‘Central Bank of Sri Lanka’ তে হামলা করে জঙ্গি সংগঠন ‘Liberation Tigers of Tamil Eelam’(LTTE). যারা স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন জঙ্গি হামলা চালাত(বর্তমানে পরাজিত)। যাতে ৯১ জন মানুষ মারা যায় এবং ১৪০০ মানুষ আহত হয়। মূলত তারা একটি ট্রাককে ব্যাংকের মূল ফটকের সাথে সংঘর্ষ ঘটায় যেটি ৪৪০ পাউন্ডের উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। যার সাথে আত্মঘাতি বোমা হামলা চালায় যাতে ব্যাংক পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

1996 sri lanka bombing এর ছবির ফলাফল                    ১৯৯৬ সালে শ্রীলংকায় সংঘটিত বোমা হামলার ধ্বংসাবস্থা। 

এই বোমা হামলার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপ শ্রীলংকার আয়োজন নিয়ে সংশয় জেগে উঠে। অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলো শ্রীলংকা থেকে বিশ্বকাপ প্রত্যাহারের আহবান জানায়। তবে শ্রীলংকাও প্রতিশ্রুতি দেয় সবোর্চ্চ নিরাপত্তা দিবে খেলোয়াড়দের। তারপরও তাদের মন গলেনি।

শ্রীলংকার এই ঘোরতর বিপদের সময় পাশে দাঁড়ায় দুই প্রতিবেশি দেশ ভারত ও পাকিস্তান। যে দুটি দেশ ১০ বছর যাবৎ কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি, সেই দুটি দেশ সম্মত হয় দুটি দেশ মিলিতভাবে একাদশ গঠন করে শ্রীলংকায় শ্রীলংকার বিপক্ষে একটি প্রদর্শনমূলক ম্যাচ খেলবে। শ্রীলংকাকে নিরাপত্তা প্রমাণের এক বড় মঞ্চ ছিল এই ম্যাচ। এই একাদশে শচিন টেন্ডুলকার, ওয়াসিম আকরাম, অনিল কুম্বলে, ওয়াকার ইউনিস সহ অনেকে খেলেন। অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন।

এই ম্যাচে শ্রীলংকা মাত্র ১৬৯ রানের টার্গেট দিতে পারে অফিসিয়ালি পরিচিত ‘উইলিস ভারত ও পাকিস্তান একাদশ’কে। শ্রীলংকা হেরে যায় ৪ উইকেটে।

We have all speculated what would have happened had these two played together. It happened that day © Getty Images        ওয়াসিম আকরাম ও শচীন টেন্ডুলকার- দুজনকে একসাথে খেলতে দেখেছিল বিশ্ব। 

এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে শ্রীলংকা ঢেলে সাজিয়েছিল তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে। দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হয় তাদের। আইসিসিসহ সকলকে এই নিরাপত্তা প্রদান করার প্রতিশ্রুতি জানায় শ্রীলংকা। আইসিসিও এতে আশস্ত হয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে শ্রীলংকাকে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বহাল রাখে। বেশিরভাগ দেশও সম্মত হয় এতে। 

এই ম্যাচে শ্রীলংকা মাত্র ১৬৯ রানের টার্গেট দিতে পারে অফিসিয়ালি পরিচিত ‘উইলিস ভারত ও পাকিস্তান একাদশ’কে। শ্রীলংকা হেরে যায় ৪ উইকেটে।

৫ম পর্ব - ১৯৯৬, ইডেন গার্ডেন এবং উপমহাদেশীয় আবেগ।

এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে শ্রীলংকা ঢেলে সাজিয়েছিল তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে। দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হয় তাদের। আইসিসিসহ সকলকে এই নিরাপত্তা প্রদান করার প্রতিশ্রুতি জানায় শ্রীলংকা। আইসিসিও এতে আশস্ত হয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে শ্রীলংকাকে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বহাল রাখে। বেশিরভাগ দেশও সম্মত হয় এতে।

কিন্তু এহেন নিরাপত্তাতেও মন গলেনি অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তারা সাফ জানিয়ে দেয় যে তারা শ্রীলংকায় থাকা ম্যাচগুলো খেলবে না। শেষ পর্যন্ত আইসিসি তাদের এই রায় মেনে নেয়। অস্ট্রেলিয়া আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের তেমন ক্ষতি হয়নি, তারা বাকি ম্যাচগুলো জিতে কোয়ার্টারে চলে যায়। 

তবে এটা শ্রীলংকার জন্য শাপেবর হয়ে দাঁড়ায়। গ্রুপে শ্রীলংকার দুই প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারা না আসায় শ্রীলংকা দুই ম্যাচেই পয়েন্ট পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে সহজেই চলে যায়। এবং সেই বিশ্বকাপেই নিজেদের প্রথম এবং একমাত্র বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তোলে লংকানরা, সেটাও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই!

download         ট্রফি হাতে অর্জুনা রানাতুঙ্গা। 

সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের না আসা তৎকালীন সময়ে তাদের নাকউঁচু ভাবকেই নির্দেশ করে। অস্ট্রেলিয়ার এই নাকউঁচু ভাব ২০১৫ সালেও প্রকাশ পেয়েছিল, যেখানে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তারা বাংলাদেশ সফরে আসেনি, অথচ হোলি আর্টিজেনের বোমা হামলার পরও ইংল্যান্ড ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল।

পরবর্তী পর্ব – এম এস ধোনী এবং এলবিডব্লিউর ২.৫ মিটার নিয়ম। সাথেই থাকুন!