• ক্রিকেট

পেইন্টিং দ্যা মোনালিসা ইন টন্টন

পোস্টটি ১৮৩৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

IMG_20190623_193320ওপেনিংয়ে একদিকে তামিম ইকবাল, যিনি এই জায়গায় অটো চয়েস। অন্যদিকে সৌম্য সরকার যিনি বিস্ফোরক ওপেনিংয়ের সময়ের দাবি বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্মরণকালের যেকোনো কারোর চেয়ে ভালো মিটিয়ে আসছিলেন। আবার যেখানে খুশি ব্যাট করতে নামিয়ে দেয়া হবে এই অপরিপক্কতা থেকেও বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন অনেক দূরে। তাই টানা দুই ইনিংসে ৭৫+ ইনিংসের পরও ওপেনিংয়ে যেমন তার জায়গা ছিল না,  তেমনি মোঃ মিঠুনের আশানুরূপ পারফরম্যান্স না থাকার পরও তাকে একাদশে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু টানা দুই হার আর গণমাধ্যমের চাপে শেষ পর্যন্ত তাকে মাঠে নামতেই হয়।

 

                 টন্টনের এই ম্যাচ ছিল দুই দলেরই  'ডু অর ডাই' পরিস্থিতি।  জিতলে সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন জিইয়ে রাখা,  হারলে তাকে দিবাস্বপ্ন হিসেবে সাজিয়ে রাখা। তাই স্বাভাবিকভাবেই কেউই কাউকে কোনো ছাড় দিতে রাজি ছিল না। ফলে প্রথম পাঁচ ওভারে ছয় রানে এক উইকেট থাকার পরও ৪০ ওভারে ২৪০ এ চলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে আবার ৫০ ওভারে ৩২১ রানেই তাদের আটকাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।  বাংলাদেশও দাপুটে শুরু করলেও কটরেলের ক্ষণিকের জন্টি রোডস হয়ে তামিমকে ফেরানো এবং কয়েক বল পরেই মুশফিকের দুর্ভাগ্যজনক আউটে ম্যাচে ফেরে উইন্ডিজ। রান বাকি তখনো ১৮০ এর মত, উইকেট নেই তিনটি। জাত চেনানোর এরকম প্ল্যাটফর্মই গ্রেটরা বাছাই করে নেয়।

 

                এমন পরিস্থিতিতেই অভিষেক হয় তার। অন্যপ্রান্তে সাকিব আল হাসান নিজের জাত চেনানোর কাজটা নিজের মত করে করছেন জাতে কোনো আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি নেই কিন্তু তবুও এমন ঝাঁঝালো মূহুর্তে কেউই তার অভিষেকটা হয়তো চায় না। কিন্তু পরবর্তী দুই ঘন্টার সাক্ষী যারা থাকল তারা যদি মনে করে থাকে যে এমন পরিস্থিতির জন্যই তিনি আজীবন অপেক্ষা করে ছিলেন তবে তাদেরকে দোষ দেয়া যায় না।

 

                 বিশ্বকাপের মত বড় আসরে অভিষেক হওয়ার কিছু চাপ সবারই থাকে। শুরুতে তার মধ্যেও স্বাভাবিকভাবেই তা দেখা যায়। কিন্তু তার সেই নড়বড়ে থেকে চনমনে হয়ে উঠতে সময় লাগে মাত্র পনের বল। এই পনের বলেই যেন সে ঠিক করে নেয় ম্যাচের চিত্রনাট্য সে কিভাবে রচনা করবে।

 

               শুরুটা ছিল ধীরস্থির।  ইনফর্ম সাকিবের ব্যাটের শাসন থেকে তিনি উইন্ডিজের বোলারদের বাধা দিলেন না। যখন তার ব্যাট ক্লান্ত হয়ে পড়ল তখন লিটন দাশ নিজেই সেই শাসনের দায়িত্ব নিলেন। নিজের প্রিয় মিড উইকেট অঞ্চলে প্রথম বাউন্ডারি দিয়ে শুরু। এরপর ঘুরতে ঘুরতে তার বাউন্ডারির রেখাচিত্র পুরো মাঠ জুড়েই ছড়িয়ে পড়ল। সাদা কোকাবুরাকে তিনি টন্টনের সমস্ত কোণাতেই ভ্রমণ করালেন। উইন্ডিজ বোলারদের সাপের ফণীর মত ধেয়ে আসা পূর্ব পরিকল্পিত বাউন্সারগুলোকে সাকিব যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছিলেন সেই ধারা তিনিও অব্যাহত রাখলেন। এই নিয়ন্ত্রণের ছাপ তিনি তার পুরো ইনিংসেই রেখে গেলেন।  তা তার আপার কাটে মারা ছয় বা টানা তিন ছক্কার পর ক্যারিড অ্যাওয়ে না হয়ে স্বাভাবিকভাবে খেলে যাওয়া দেখলেই ধরতে পারা যায়। ততক্ষণে হয়তো সবাই ভুলেই বসেছিল যে এটাই তার বিশ্বকাপ অভিষেক। 

 

                 ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে চারের মাধ্যমে তার এই  ৬৯ বলে ৯৪ রানের ইনিংসের পরিসমাপ্তি।  ৩২২ রানের লক্ষ্য ৫০ বল হাতে রেখেই দলকে জিতিয়ে ফেরালেন তিনি সাকিবের যোগ্য সঙ্গী হয়ে। ইয়ান বিশপ বলে উঠলেন "লিটন দাশ পেইন্টিং দ্যা মোনালিসা ইন টন্টন"।  তা মোনালিসা না হলেও নিজের রংয়ে টন্টনকে ঠিকই রাঙালেন তিনি। আর তার সাথে হয়তো খানিকটা রঙিন করলেন বাংলাদেশের ফিকে হয়ে আশা সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নটাও।