• ক্রিকেট

কাট মি, আই ওন্ট ব্লিড

পোস্টটি ২৪৫৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

                ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছেন মাহমুদুললাহ রিয়াদ । গত কয়েকদিনে এই ছবিটাই সবচেয়ে বেশি কাঁপন ধরিয়েছে বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে । ২রা জুলাই ভারতের সাথে মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। সেখানে তাকে না পাওয়াটা তো নিজেদেরকে খানিকটা ব্যাকফুটে আবিষ্কার করার সমান। এই বিশ্বকাপ শুরুই তিনি করেছিলেন কাঁধের চোট নিয়ে । যা তাকে একবারের জন্যেও বল ঘোরাতে দেয় নি। কাঁধে টেপ পেঁচিয়েই খেলে যাচ্ছেন। এখন আবার আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচের মাঝখানে পায়ের মাংসপেশীতে চোট। ব্যথায় উঠে দাঁড়ানো দায়। কিন্তু দলের কথা মাথায় এনে আবার ব্যাট করতে নেমে যান। দ্রুত রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটেও সক্রিয় দেখা যায়। যদিও ফিল্ডিং করতে পারেননি। ডাক্তার দেখে বললেন ৭-১০ দিন বিশ্রামে থাকতে হবে। অর্থাৎ ভারতের সাথে ম্যাচ মিস!  

তবে সব চিন্তা উড়িয়ে মাহমুদুললাহ নিজেই বললেন যে করেই হোক এই ম্যাচে তিনি থাকবেন ।

 

                    হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে খেলছেন মাশরাফি বিন মুর্তজাও। এক জায়গায় রক্ত চাক হয়ে জমে আছে। এই ব্যাথা নিয়েই তিনি এ পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে খেলে গেলেন। তবে গত ম্যাচ শেষে তার ব্যথা অসহনীয় হয়ে উঠলে ডাক্তার দেখে তাকে বেশ কিছুদিন সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। অর্থাৎ তাঁরও ভারতের বিপক্ষে খেলা নিয়ে সংশয়!

সংশয় তিনি নিজেই দূর করলেন। সাফ জানিয়ে দিলেন , না খেলার কথা মাথাতেও আনছেন না তিনি।

 

                   এবারের আমাদের বিশ্বকাপে চোটের হানা শুধু এ-ই নয়। মুশফিকুর রহিম অনুশীলন করতে গিয়ে হাতে চোট পান। কিন্তু সেটি উপেক্ষা করে খেলেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮৩ রানের মহাগুরুত্বপূর্ন ইনিংস দুটি খেলেন। তামিম ইকবাল খেলে যাচ্ছেন কুঁচকিতে পাওয়া চোট নিয়ে । সাইফুদ্দিনের কাঁধের সমস্যা তো সেই এপ্রিল থেকেই। প্রথম ম্যাচে তার খেলা নিয়েও ছিল সংশয়। কিন্তু সব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে তিনি খেললেন। খেললেন পরের তিন ম্যাচেও । এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনিই। মুস্তাফিজুর রহমানের কাঁধের চোট তো বহু পুরনো। এই বিশ্বকাপেও তা পিছু ছাড়েনি। তবুও দশ উইকেট এবার তার দখলে। আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচের আগে মিরাজও মাথায় চোট পান। তবুও তা তাকে পরেরদিন মাঠে নামা থেকে আটকায় নি।

 

                     তাদের বেশিরভাগের চোটেরই কোনো দ্রুত চিকিৎসা নেই। বিশ্রামই একমাত্র উপশম। কিন্তু বিশ্রামের অবকাশ তো তাদের থাকে না। তাহলে ষোল কোটি স্বপ্ন যে ভেঙে যেতে পারে। সেটা তো তাঁরা হতে দিতে পারেন না।

 

                       শুধু এই বিশ্বকাপ কেন। আগেও এরকম বহু নজির চোখে পড়বে। তামিমের এক হাতে ব্যাট অথবা মাশরাফির হাঁটুতে একের পর এক অপারেশন। চোট উপেক্ষা করে খেলা যেন তাদের 'ডেইলি রুটিন'। এই রুটিনের মধ্যেই তাদের দলের প্রতি নিবেদনের জায়গাটা ফুটে উঠে। বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু তবুও দমবার পাত্র নয়। 

 

                      তবুও নানা সমালোচনা যেন তাদের ঘিরে ধরতেই হবে। তা সে সাকিবের অহংকার করে না খেলতে চাওয়াই হোক বা সাইফুদ্দিনের বেশি রান হওয়ার ভয়ে না খেলতে চাওয়া।সমালোচনাতেই যেন সমালোচকদের শান্তি। সমালোচনার তীর যেন আরো ক্ষতবিক্ষত করে দিতে চায় তাদের।কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়েরা তার কোনো জবাব দেন না। প্রাপ্তি খুঁজে নিজের কাজটুকু করে যাওয়ার মাধ্যমে । অথবা 'অ্যাকশন স্পিকস লাউডার দ্যান ওয়ার্ডস কথাটাকে সত্য প্রমাণ করে ঐ ২২ গজের মধ্যেই নিবেদেনের কালিতে জবাবটা লিখে দেন।