• ফুটবল

আবার আসল ফিরে

পোস্টটি ৩১০৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

            "একজন তরুণ ফুটবলার হিসেবে আমার কাছে জরুরী যে কোথায় আমি খেলার সুযোগ বেশি পাব, কোথায় সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ হব। জুভেন্টাস আসলেও আমাকে খুব করে চাইত এবং তারা আশ্বাস দেন যে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় তারা আমার উন্নতি করাবে। তাই আমি আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলাম যে জুভেন্টাসেই আমি যাচ্ছি। রোনালদোর বলায় কোনো পার্থক্য হয়নি। যদিও এটা হওয়ায় আমি আসলেও অনেক ভালো অনুভব করি"। এই ট্রান্সফার মার্কেটের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ও কৌতূহলোদ্দীপক দলবদলের পর ম্যাথিস ডি লিটের ভাবপ্রকাশটা ঠিক এরকমই ছিল । তিনি বর্তমানের সেরা তরুণ সেন্টার-ব্যাকদের একজন । পরবর্তীতে বিশ্বের সেরা হওয়ার সম্ভাবনাও তার মধ্যে বিশ্লেষকরা দেখেন। আর এই চ্যাম্পিয়নস লীগে তরুণ একটি আয়াক্স দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া তার নেতৃত্বগুণও সবাইকে দেখিয়ে দেয়। এরকম একজনকে দলে পেতে সব বড় দলগুলো ঝাঁপিয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক । সে ঝাঁপিয়ে পড়ার লড়াইয়ে বার্সেলোনা, পিএসজি, ইউনাইটেড ও লিভারপুলের মতো দলকে টেক্কা দিয়ে বিজয়ী হিসেবে সামনে এল জুভেন্টাস। এই কথাগুলোর মাধ্যমে তিনি তার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা যেমন প্রকাশ করেন , তেমনি তার এই কথাগুলোর দ্বারাই জুভেন্টাসের গত এক যুগের লড়াইয়ের বিজয়ও যেন প্রকাশ পায়।

 

 

                   ইতালির ফুটবলে জুভেন্টাসের দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল শুরু থেকেই। ঘরোয়া ফুটবলে তাদের শিরোপা সংখ্যা দেখেই এই ধারণা সবার হয়ে যাবে।২৭টি স্কুডেত্তো ছিল তাদের নামের পাশে। এই ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন প্লাতিনি, জিদান, ক্যানাভারোরা। দুবারের চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপাতেও তাদের নাম। কিন্তু এই প্রতাপেই মরচে ধরানোর জ্বালানি হয়ে আসে 'ক্যালসিওপোলি' যা ইতালির ফুটবল ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া ২০০৬ সালের কেলেঙ্কারি ; যেখানে মিলান, ফিওরেন্টিনার মতো ক্লাবগুলোর সাথে জুভেন্টাসও দোষী প্রমাণিত হয় ফিক্সিংয়ের অভিযোগে। শাস্তিটাও হয় বড়। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হল দ্বিতীয় বিভাগে নামিয়ে দেয়া । ইতালির দ্বিতীয় বিভাগের লীগের সাথে জুভেন্টাসকে পরিচয় করিয়ে দেবার হয়তো এই একটাই উপায় ছিল। কারণ এর আগে কখনো জুভেন্টাস দ্বিতীয় বিভাগে নামেনি। হয়তো কোনোদিন নামতও না।

 

                  কিন্তু কথায় বলে বিপদ কখনো একা আসে না। নিজেদের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে ফ্যাবিও ক্যানাভারো, ইব্রাহিমোভিচ, লিলিয়ান থুরামের মতো তারকা ফুটবলাররা ক্লাব ছেড়ে চলে গেল। আর জুভেন্টাস তাদের পায়ের নিচের মাটিটা আরেকটু সরে যেতে দেখল। কিন্তু এই দুঃসময়েও তাদের ছেড়ে গেল না জিয়ানলুইজি বুফন, পাভেল নেদভেদ, আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো যাদের একজনকে ১২ বছর পরেও তারা তাদের জার্সি পড়ে মাঠে নামতে দেখবে এবং আরেকজনকে দেখবে তাদের স্পোর্টিং ডিরেক্টরের ভূমিকায়। সাথে এই ক্লাবেই বেড়ে উঠা কিছু তরুণ ফুটবলার নিয়ে প্রথমবারেই তারা 'সিরি বি' চ্যাম্পিয়ন হয়ে (৯ পয়েন্ট কেটে নেওয়ার পরেও) 'সিরি আ' তে চলে আসল। 

 

                     'সিরি আ' তে ফিরে প্রথম মৌসুমে তারা হল তৃতীয়, পরেরটায় দ্বিতীয়। কিন্তু পরবর্তী দুই মৌসুমে সপ্তম। তখন হয়তো জুভেন্টাসের হারানো গৌরব ফিরে পাবার পক্ষে বাজি ধরার মতো কেউ ছিল না। কিন্তু পরের মৌসুমে ক্লাবে দুটি পরিবর্তন এল। প্রথমটা হল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পদে যেখানে এলেন আন্দ্রেয়া আগনেলি , যিনি আট বছর পর তাদের এই হারানো স্থান ফিরে পাবার মূল কারিগর হিসেবে দেখা দিবেন। আর আরেকটি হল তাদের নতুন স্টেডিয়াম যা এখনো স্থায়ী। এই স্টেডিয়াম তৈরি হবার পর জিয়ানলুইজি বুফন তার ইতালি জাতীয় দলের সতীর্থদের বলেছিল স্কুডেত্তো এবার এই মাঠেই ফিরে আসবে। তখন তা সবাই হেসে উড়িয়ে দেয়। পর পর দুই মৌসুমে সপ্তম হওয়া কোনো দলকে কেউ কখনো লীগের ফেভারিট হিসেবে ধরে না। কিন্তু বুফন তার চিরাচরিত দৃঢ়তার প্রতি সুবিচার করে ঠিকই স্কুডেত্তো দিয়েই নতুন মাঠকে বরণ করে নিলেন । নতুন পথচলার এই শুরু ।

 

                     সেই শুরু এখন এক অন্তহীন সত্য। এক এক করে টানা আটটা স্কুডেত্তো আজ তাদের দখলে। টানা চারবার ঘরোয়া ডাবলের পদকও আজ তাদের । ইতালিতে তারা এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বীসম। ইউরোপেও এখন তারা উজ্জ্বল । ২০১৪-২০১৫ এবং ২০১৬-২০১৭ তে তারা ফিরে আসে ট্রফি থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে । আর গত মৌসুমে নিজেদের রেকর্ড ট্রান্সফার ফি তে দলে ভেড়ায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে।  

 

                     বার বছর আগে একবার তাদের অস্তিত্বই হয়ে পড়েছিল প্রশ্নের সম্মুখীন । হোঁচট খেয়ে খেয়ে তারা এগিয়ে চলে। এরপর সিরি আ তে দুর্দমনীয় হয়ে উঠা, ইতালি থেকে ইউরোপে পরাশক্তি হয়ে উঠা, সময়ের সেরা ফুটবলারকে দলে ভেড়ানো এবং অবশেষে ভবিষ্যতের সেরারা তাদেরকে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য বেছে নেওয়ার মাধ্যমে তুরিনের বুড়িরা যেন তাদের হারানো যৌবন ফিরে পেল।