নাফিসের ধারাভাষ্য ও আমাদের ‘হাহাকার’!
পোস্টটি ৫২৩২ বার পঠিত হয়েছেআতাহার আলী খান, শামীম চৌধুরী।
যদি ক্রিকেটকে নুন্যতম হলেও অনুসরণ করেন তাহলে এনাদের দুজনকে চেনার কথা। বাংলাদেশের ধারাভাষ্যকার। একজন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি, আরেকজন শুধু হোম সিরিজে ধারাভাষ্য দেন। তবে দুজনের মধ্যে একটা মিল আছে, জানেন?
দুজনই বাংলাদেশ ক্রিকেট অঙ্গনে বেশ সমলোচিত। প্রথমজন মুখস্থ ধারাভাষ্য দিতে পটু, আরেকজন……থাক আর বললাম না। নিজেরাই বুঝে নেন!
তারপরও এদুজনের ভার বহন করতে হচ্ছে। কারণ, আমাদের ধারাভাষ্যকার নেই। অতীত-বর্তমানে অনেককে দিয়েই চেষ্টা করা হয়েছে, কেউ থিতু হতে পারেননি। যার ফলে এই দুজন টিকে আছেন বহাল তবিয়তে। আর আমরাও মেনে নিয়েছি। ‘নেই মামার চেয়ে কানা মামাও ভালো!’
উপরের কথাগুলো আগেও আপনারা শুনেছেন, এখনো শুনলেন, হয়তোবা ভবিষ্যতেও শুনবেন। ভবিষ্যতের কথা বললাম কেন? সেটা বুঝতে হলে কিছুদিন ধরে চলা শাহরিয়ার নাফিস ও তার ধারাভাষ্য নিয়ে হওয়া কান্ড বুঝলেই চলবে।
শাহরিয়ার নাফিস। বাংলাদেশের একসময়কার ক্রিকেটার। যদিও পারফরম্যান্স গড়পড়তা থাকলেও(তখন কারই বা খুব ভাল ছিল) মিডিয়া কভারেজ বেশ ভাল পেতেন। জাতীয় দলে না খেললেও এখনো ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি এবার আলোচনায় এসেছেন। না, খেলোয়াড়ি পারফরম্যান্স দিয়ে নয়। ধারাভাষ্য দিয়ে। যদিও ২০১৭ সালে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন, কিন্তু এরপরই আবার ধারাভাষ্য থেকে বিরতি নেন(ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্য টুকটাক ধারাভাষ্য দিয়েছেন)।
তিনি আবার ধারাভাষ্যে ফিরেন বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে। প্রোডাকশন হোল্ডার টিএসএম এর আগে ইশতিয়াক আহমেদকে দিয়ে প্রায় ৩-৫ সিরিজের মতো চালালেও দর্শকদের তুমুল সমালচনার মুখে বাদ দিতে হয় তাকে। আবার টিএসএম সাধারণত ৫ জন ধারাভাষ্যকার রাখে(যদিও মাঝে মাঝে ৬জনও থাকে) কে দিয়ে ধারাভাষেয়র কাজ চালায়। সেখানে ইশতিয়াক বাদ পড়ায় সংখ্যা হয় যায় ৪জন। তার জায়গায় একজন বিদেশি আনতে গেলে খরচ বাড়তে পারে। তো টিএসএম এখন কি করবে?
তখনই তাদের হর্তাকর্তাদের মনে পড়ল, শাহরিয়ার নাফিস আছে না? তাকেই সুযোগ দেই। বিদেশি রাখার চেয়ে দেশিই ভালো!
তো নাফিস বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট দিয়ে আবার ফিরলেন ধারাভাষ্যে। তবে ২০১৭ এর সাথে তার ধারাভাষ্যে দেখা দিল বিশাল ফারাক! নার্ভাস বলেই কিনা, করতে লাগলেন বিভিন্ন ব্যাকরণগত ভুল। পরবর্তীতে বুঝতে পেরে ব্যাকরণে মনোযোগ দিলেন, কিন্তু ফ্লুয়েন্সিতে পড়লেন পিছিয়ে। ধারাভাষ্য দিতে লাগলেন ইংরেজি বই পাঠের মতো!যাতে ধারাভাষ্য হয়ে পড়ল ম্যাড়মেড়ে। ফেসবুকে শুরু হলো ট্রল।
যদিও আস্তে আস্তে উন্নতির চেষ্টা করছিলেন, তবুও একদম ধারাভাষ্যের মতো লাগছিল না। ফেসবুকেও অনেকে তাকে নিয়ে সমালচনা শুরু করে দিলেন। যার ফল? ধারাভাষ্য প্যানেল চট্টগ্রাম পর্ব থেকে হয়ে গেল ৪ জনের, নাফিস বাদ! মাত্র ৪জন নিয়ে এই প্রথম কোনো ম্যাচে ধারাভাষ্য শুনলাম, তাও আবার আমাদের মেহনতি কিছু ভাইদের ফলে!
এবার সেইসব ভাইদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু প্রশ্ন। আপনার কাছে নাফিসের ধারাভাষ্য ভাল নাই লাগতে পারে, আমারও তেমন ভাল লাগেনাই। কিন্তু এজন্য বাদ দেয়ার দাবি করা, ট্রল শুরু করে দেয়া কতটুকু যৌক্তিক? আমরা নিজেরাই বলি নতুন ধারাভাষ্য দরকার, আর আমরাই তাদের নিজ হাতে বিদায় করে দিচ্ছি!
অনেকে বলতে পারেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ধারাভাষ্য বেমানান। আমি একমত। কিন্তু তাহলে নতুন ধারাভাষ্যকারদের সুযোগ দিবেন কোথায়? ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটে হিন্দির সাথে ইংরেজি ধারাভাষ্য প্রচার করা হয়, যার ফলে অনেক ধারাভাষ্যকার তাদের এখানে। আর আমাদের? যেখানে ঘরোয়া ক্রিকেটই ঠিকমত প্রচার হয় না, সেখানে আবার ধারাভাষ্য!
এজন্য কি সারাজীবন আতাহার-শামীমকে নিয়েও পড়ে থাকতে হবে? যেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেট প্রচার হয় না, তাই ধারাভাষ্যকার বানাতে গেলে এরকম সিরিজগুলোতেই সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া উপায় নেই। বাংলাদেশিরা জাতে ইংরেজ না যে ইংরেজি একদম স্পষ্ট বলতে পারবে। এজন্য দিতে হবে সুযোগ। তবে অনেক সুযোগের পরও যদি কেউ না পারে, তবে বাদ দেয়াই শ্রেয়। যেমন ইশতিয়াক আহমেদ।
আর একটা কথা, ফেসবুকে ধারাভাষ্যকার সংকট নিয়ে’হাহাকার’ করা, আবার নতুন কেউ আসলে ‘এগুলারে কেডা সুযোগ দেয়’ বলে ক্ষোভ ছাড়াটা হিপোক্রেসি। হিপোক্রেসি বন্ধ করুন, ক্রিকেটের সাথেই থাকুন।
- 0 মন্তব্য