• ক্রিকেট

শুভ জন্মদিন গুরু!

পোস্টটি ৩৩৬১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

               এ লেখায় আমি আপনার নাম কোথাও উল্লেখ করব না। আপনার পরিচয় দেবার কোনো প্রয়োজনও আমার নেই। আপনি নিজের সত্তা নিজেই সৃষ্টি করেছেন । যাকে এখন সবাই এক নামেই চিনে।

 

               হয়তো একটু ভুল বললাম । এক নামে হয়তো না । এদেশের কারো কাছে আপনি গুরু, কারো কাছে বড়ভাই, কারো কাছে নড়াইল এক্সপ্রেস, কারো কাছে আপনি নেতা । কিন্তু এই বিশেষায়নের ভার আপনার শ্রেষ্ঠত্বের কাছে তুচ্ছ হয়ে দেখা দিয়েছে । ১৮ বসন্ত আগে আপনি এই বাংলার মানুষের সামনে এসেছিলেন নতুন আশার দ্বীপ জ্বেলে । যখন কোনো পেসার না পাওয়ার শঙ্কা বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিত তখনই আপনি রুদ্রমূর্তি হয়ে আবির্ভূত হলেন। এক প্রান্তে পুরো স্টেডিয়ামের গর্জনকে সঙ্গে করে আপনি ব্যাটসম্যানদের একমাত্র ভীতির কারণ হয়ে ছুটে আসতেন। আপনার হাত ধরেই বড় দলকে টেক্কা দিতে শেখা আমাদের । 'ধরে দিবানি'র মতো হুঙ্কার দিতে শেখা । আঠারটি বছর এভাবেই এদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের পাতা আপনি নিজেই তৈরী করে চলেছেন । 

 

               আবারও হয়তো একটু ভুল বললাম । আঠার বছর তো আপনার ভাগ্যে লেখা ছিল না । নিজের পা দুটোর বারংবার বিশ্বাসঘাতকতা আপনার ফর্মের তুঙ্গে থাকার সময়টা কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে আপনার টেস্ট ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন, কেড়ে নিয়েছে নিজের মাটিতে বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবার স্বপ্ন, যে স্বপ্ন সব ক্রিকেটারই লালন করে, কেড়ে নিয়েছে আপনার বল থেকে অন্তত ২০ কিমি গতি, কেড়ে নিয়েছে আপনি যা হতে পারতেন তা হবার সম্ভাবনা আর আমাদের দিয়েছে লাল-সবুজের জার্সিতে বিশ্বের সেরা পেসার না পাওয়ার আক্ষেপ, যা হবার সবরকম সম্ভাবনা নিয়েই আপনি ২২ গজের পিচে দৌড়ে আসতেন। কিন্তু আপনি হাল ছাড়েননি । আপনি থেমে থাকেননি । আপনি আবার ফিরে এসেছেন। হয়তো আপনার শ্রেষ্ঠ সংস্করণেই ফিরে এসেছেন। যার প্রয়োজন এদেশের ক্রিকেটে সবসময়ই ছিল।

 

               আপনি ফিরে আসেন এদেশের ক্রিকেটকে বদলে দিতে । আপনি ফিরে আসেন এদেশের ক্রিকেটকে সেরাদের কাতারে নিয়ে যাবার বিশ্বাসের জন্ম দিতে। আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে যেমন আপনি সব চাপ সামলেছেন, তেমনি নিজের ক্রিকেট মস্তিষ্ককের ব্যবহারে প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করেছেন । আপনার প্রত্যাবর্তনের পর আপনি সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়ে আপনার সর্বোচ্চটা যেমন করেছেন তেমনি 'তুই পারবি' বলে অনেকের সর্বোচ্চটাও বের করে এনেছেন। যখন কোনো দর্শক নিয়ম ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়েন তাকেও আপনি বুকে আগলে নেন তার ভালোবাসার প্রতিদান দিতে । আপনার হাত ধরেই আমাদের ক্রিকেটের প্রথম ট্রফি আসে। আপনার দুটো হাঁটু একজন সেরা পাসারকে কেড়ে নিলেও সেরা অধিনায়ককে ঠিকই ফিরিয়ে দিয়েছে। আপনি ফিরে এসেছেন সে সাহসেরই প্রতীকী হয়ে যে সাহস আমাদের হার না মানা, হারার আগেই না হারতে শিখিয়েছে ।

 

               নি-ক্যাপ পড়ে যেখানে অনেকের স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেই অসুবিধা হয় সেখানে আপনি ছয় ওভারের স্পেল করতেও দ্বিধা করেন না । মিড-অফ বা কভারে দাঁড়িয়ে আপনার পাশ দিয়ে যা-ই যাক না কেন, তা যতই গতিতে হোক বা উঁচুতে হোক, ঠেকাতে ঝাঁপিয়ে পড়তেও আপনার কোনো সংশয় কাজ করে না। সবাই যখন বিজয়োল্লাসে মত্ত আপনি তখন সেই বিশ্বাসঘাতক হাঁটু দুটোকে বশে আনতে রিহ্যাবিলিটেশনে ব্যস্ত । সেই জয়ে আপনার সবচেয়ে বড় অবদান থাকলেও সেই উদযাপনের স্বাধিকার আপনি পাননি । কিন্ত দলের জন্য তাও হাসিমুখে মেনে নেন আপনি। 

 

               আপনি দেশের জন্য খেলেন। তাই দেশের জন্য আপনি যেকোন অবস্থাতেই খেলতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট আপনি শতভাগ ফিট না থাকলেও আপনাকে মাঠে নামাবে এবং আপনি প্রত্যাশানুযায়ী পারফর্ম না করলে দোষ হয় আপনার। একজন নেতা হিসেবে আপনি আপনার সব ক্রিকেটারের উপর পূর্ণ আস্থা রাখবেন এটাই প্রকৃত নেতার ভূষণ । কিন্তু তারা আপনার আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি, দোষ এখন আপনার । একটা ওয়ার্ল্ড কাপে প্রত্যাশানুযায়ী না পারফর্ম করার দায় আপনার একার না। কিন্তু তবুও শুধু আপনাকেই শুনতে হয় ' সিনিয়র কোটায় খেলে, অধিনায়ক কোটায় খেলে, সরকার ক্ষমতায় আছে বলে এখনো খেলতে পারতেছে। ' এমনকি আপনার 'তুই পারবি' কথাটাকেও যাচ্ছেতাইভাবে ট্রলের শিকার হতে হয়, এই দুটি শব্দ আমাদের ক্রিকেটের কত অবিস্মরণীয় পারফরমেন্সের প্রভাবক সে কথা ভুলে গিয়ে । সব শুনে আমার মনে প্রশ্ন জাগে হাঁটুতে এতগুলো অস্ত্রোপচার না এই কথাগুলো, কোনটাতে আপনি বেশি আঘাত পান ?

 

               আপনাকে নিয়ে বিশেষণের অভাব থাকে না । আপনাকে নিয়ে লেখার মানুষেরও অভাব নেই । তাই আমার এই লেখাটাও উপরের সমালোচনাগুলোর মতোই অমূলক । কিন্তু যিনি আমাদের অসংখ্য হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতির কারিগর তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর লোভটা সংবরণ করার মতো বড় আমি এখনো হতে পারিনি। একটু দেরি হবার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী । অনেক ছিন্ন আবেগ আর অবিন্যস্ত কথামালাকে এক সুতোয় বাঁধতে এই সময়টা প্রয়োজন ছিল ।

 

               ১৯৮৩ সালের ৫ই অক্টোবর আপনি এক বাবা-মার কোল আলো করে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন শুধুমাত্র ৩৬ বছর পর তাদেরকে এই দেশের সবচেয়ে গর্বিত মা-বাবাতে পরিণত করতে । নড়াইলকে এদেশের মানচিত্রে আলাদা এক স্থান দিতে। ৫ই অক্টোবর এই বাংলায় আপনার নামেই লেখা হয়ে থাকুক ।

 

 

শুভ জন্মদিন গুরু!