• ফুটবল

হয়তো এক নতুন দিনের আলো

পোস্টটি ২৭৩৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

               ২০১৮ এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ কোয়ালিফায়ার । বাংলাদেশ বনাম জর্ডান ম্যাচ। ৭-০ তে হারের সে ম্যাচে বেশি কিছু মনে না থাকার কথা থাকলেও একটি মূহুর্ত সমর্থক হিসেবে কখনোই ভুলবার মতো না। ম্যাচের ত্রিশ মিনিটে বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন । হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয় কোচ। প্রথমে শঙ্কা হয় ইনজুরির। কিন্তু পরে জানা যায় তার দম ফুরিয়ে এসেছে। আই রিপিট। ত্রিশ মিনিটেই দম ফুরিয়ে এসেছে। অথচ এই হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসকেই একসময় নেদারল্যান্ডসের একটি শীর্ষস্থানীয় ক্লাবে ট্রায়ালের জন্য পাঠানো হয়। 

 

               হয়তো এত করুণ অবস্থা না হলেও বাংলাদেশ দলের প্রতিটি ম্যাচেই এই দৃশ্য দেখতে হত। ৬০ মিনিটের পর যেন মনে হয় জোর করেই পা দুটিকে চালাতে হচ্ছে ফুটবলারদের। ম্যাচ খেলা বা ম্যাচ জয়ের তাড়না নয়। সমালোচনা এড়ানোর দায়েই তারা মাঠে থাকছে। এবং এর ফলাফলও ভালোভাবেই চোখে পড়ত। এই ফিটনেস ঘাটতির এক প্রজন্মকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল নিজের জায়গাটা ক্রমান্বয়েই হারিয়ে ফেলেছে, এগিয়ে যাওয়া তো দূরে থাক।

 

               ২০১০ এসএ গেমসে মামুনুল ইসলামের গোলে স্বর্ণ পদক লাভের পর এই দেশের ফুটবলকে, ফুটবল ভক্তদেরকে অনেক কিছুই দেখতে হয়। বলা ভালো সহ্য করতে হয়। কি দিয়ে শুরু করি? সাফ ফুটবলে টানা চারবার গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া, জাপানের অনূর্ধ্ব-২০ দলের কাছে নিজেদের মাঠে ৩-০ গোলে হারা, তাজিকিস্তানের মতো দলের কাছে নিয়মিত ৫-০ গোলে হারা , মালদ্বীপের কাছে ৫-০ গোলে হারা, ভূটান লজ্জায় ফুটবল নির্বাসন, শ্রীলঙ্কার কাছে ঘরের মাঠে হারা এমন এক সময়ে যখন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট টিমও বাংলাদেশকে হারাতে পারে না (!) । মাঠের বাইরে বোর্ডের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি এবং ফুটবলারদের আত্মনিবেদন নিয়ে প্রশ্নও ছিল অনেক। 

 

               বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সাফল্যও ছিল। কিন্তু সেখানেও থাকে কিছু ভ্রুকুটির দংশন । বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের রানার-আপ হওয়াই যেমন । যে অর্জন অনেক প্রতিশ্রুতি দেখালেও সেখানে একটা টিম ছিল অনূর্ধ্ব-২২, একটা অনূর্ধ্ব-২০ এমনকি একটা দল ছিল অনূর্ধ্ব-১৮ এর । আবার এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জয় যেখানে একমাত্র বাংলাদেশই প্রায় জাতীয় দল নিয়ে যায় এবং বাকিরা অনূর্ধ্ব-২৩ এর। এই ধারাবাহিকতার পুরষ্কার হিসেবে রেঙ্কিংয়ে ১৯০ এর পরে স্থান।

 

               বাংলাদেশ ফুটবলের কালো এক যুগের সাক্ষী হওয়াটাই যখন নিয়তি মনে হত তখন দোরগোড়ায় আরেকটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। না বাছাইপর্বে বাংলাদেশের ইতিহাস জ্বলজ্বলে, না তাদের মাঠের পারফরমেন্স । তাই আশার আলো খুব একটা বেশি দেখার সাহস হচ্ছিল না। যতই অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার আকুতি ছিল দর্শকদেরকে মাঠে গিয়ে সমর্থন দেওয়ার, তা দেওয়ার প্রয়োজনীয় রসদ তারা পাচ্ছিল না। কিন্তু নিজেদের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার শেষ কয়েকটি বিন্দুকে সম্বল করে এবং সংবাদমাধ্যমে খেলোয়াড়দের মধ্যে ভালো কিছু করার অঙ্গীকার দিয়ে এক বদলে যাওয়া মানসিকতার আত্ববিশ্বাস সঙ্গে নিয়ে ঠিকই মাঠে জড়ো হতে শুরু করল সবাই কাতারের বিপক্ষে ভালো কিছু দেখার আশায়।

 

               তা শুধু ভালো বলব না খুব ভালো তার বিচার যার যার চিন্তা ভাবনায় ছেড়ে দিলাম। কিন্তু এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের সাথে, যাদের অধিকাংশ ফুটবলারের ক্লাবে কোচ জাভি হার্নান্দেজ, তাদের বিপক্ষে সহজ সুযোগ নষ্টের জন্য ম্যাচ ফসকে যাওয়ার আক্ষেপ বাংলাদেশের ফুটবলের অন্ধকার যুগের পুরোটার সাক্ষী হয়ে থাকা এক ভক্ত হিসেবে আমার কাছে অসাধারণ এক মূহুর্ত । এমনকি দেখা পায়নি সেই ৬০ মিনিটের পরই হাল ছেড়ে দেওয়া বাংলাদেশের । বরং ৬০ মিনিটের পরই যেন কাতারের রক্ষণভাগকে 'এবার কোনোমতে রক্ষা'র জন্য প্রার্থনা করতে হয়। মাঠে অবস্থিত গ্যালারী ভর্তি দর্শক, যা ধারণা করা হচ্ছে ২৫ হাজারের কাছাকাছি, এক নতুন স্বপ্ন দেখার সাহস নিয়েই বাড়ি ফিরল। না, বিশ্বকাপ খেলার না। বাস্তবতা মেনে নিয়ে এমন অমূলক চিন্তা কোনো সুস্থতার লক্ষণ দেখায় না। কিন্তু এশিয়ান পর্বে যাওয়ার আশা তো এখন করাই যায়। দ্বিতীয় রাউন্ডে বাকি ছয়টি ম্যাচ। ভাগ্য সাথে থাকলে পাব আরো ছয়টি। এই বারটি ম্যাচই এখন বাংলাদেশের সমর্থকদের নতুন স্বপ্ন বুননের সুঁই । স্বপ্ন এ অন্ধকার যুগকে পেছনে ফেলার, স্বপ্ন এদেশের ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার, স্বপ্ন এক নতুন সূচনার।