• ক্রিকেট

ধর্মঘট,গ্রামীণফোন,সাকিব ও কিছু কথা।

পোস্টটি ৩৭৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে বর্তমানে চরম অস্থিতিশীল সময় পার হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনার জন্ম হয়েছে। অনেকে ক্রিকেটার পক্ষ নিয়ে বোর্ডকে আচ্ছামতো গালিগালাজ করেছেন(মিডিয়াও একে প্রমোট করছে), আবার অনেকে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। এ ব্যাপারেই একটু ভিন্ন চোখে দেখার আশা রাখি। ভোলার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে দেশ যখন উত্তাল, তখন হঠাৎ ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে টালমাটাল ক্রিকেটাঙ্গন। এ ধর্মঘট অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ছিল, যা পাপন সাহেবের কথায়ও বোঝা যায়। এ ধর্মঘটের মাঝে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যা মিডিয়া ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে মনে হলোঃ- ১। ধর্মঘটের ধরণঃ- ধর্মঘটটা হয়েছে অত্যন্ত আকস্মিকভাবে ও অনেকটা অদ্ভুতভাবেই। সাধারণত কোন ক্ষেত্রে দাবি দাওয়া বা অধিকার প্রশাসনকে অবহিত করার পরও পূরণ না হলে তবেই ধর্মঘট করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে পুরো উলটো।কোন দাবিদাওয়া বোর্ডে না জানিয়ে আগে খেলা বন্ধ করা কতটা যৌক্তিক তা ব্যাখার প্রশ্ন রাখে। ২। আর্থিক দিক নিয়ে একটা অভিযোগ বিদ্যমান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ম্যাচ ফি কম বলে মনে করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫ দিনে ২৫ হাজার যে খুব একটা কম তাও না। তাছাড়া জাতীয় দলের,এ দল ও অনূর্ধ-১৯ ক্রিকেটাররা বেতন, বোনাস, ম্যাচ জিতলে পুরস্কার, বিজ্ঞাপন, ও অন্যান্য খাতে যে পরিমাণ আয় করেন, তা অকল্পনীয়। তারপরও তারা নিজেদের বেতন বাড়ানোর দাবি করায় অনেক সাধারণ জনগণই ক্ষুদ্ধ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের আয় আমাদের চেয়ে প্রেক্ষাপট বিচারে যথেষ্ট কম। কিন্তু তাদের মানের সাথে পাল্লা দেওয়ার মত খেলোয়াড় আমাদের দেশে ক'জন আছে তা বলাই বাহুল্য। ৩। সম্মানের দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সম্মান সবচেয়ে বেশি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও উনাদের সমঝে চলেন। তাই এ দাবিটাও অযৌক্তিক। ৪। দুর্নীতির ব্যাপারটা অবশ্য অনেকটা যুক্তিসঙ্গত। তবে বাংলাদেশে এমন কোন খাত নেই, যেখানে দুর্নীতি না হয়! বরং ক্রিকেট খেলায় অন্যান্য খেলার চেয়ে দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা কম বলেই খেলাটা এতদূর এগোতে পেরেছে। এখন যারা ধর্মঘট করছেন,পদে এনে বসিয়ে দিলে তাদের অনেকেই দুর্নীতিতে কম যাবেন না। ৫। তাছাড়া ঘরোয়া লীগে পাতানো ম্যাচ দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তবে এবার প্রতিটি ঘরোয়া ম্যাচে ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এ মৌসুমে তেমন বড় কোন দুর্নীতির খবর চোখে পড়ে নি। তবে বোর্ডের এই দিকটিতে আরো উন্নতি করতে হবে। আরো অনেক ব্যাখা করা যায়। তবে কথা এই যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট যে আজ এ পর্যন্ত উঠে এসেছে, তার পেছনে খেলোয়াড়ের সাথে বোর্ডের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। একজন ছাত্র যত মেধাবীই হোক না কেন৷ সে যদি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক না পায়, তবে তার মেধা ধ্বংস হতে বাধ্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে বর্তমান অর্থের প্রাচুর্য ক্রিকেটকে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আগের জেনারেশন এর খেলোয়াড়েরা অর্থের টানে নয়, দেশের জন্য খেলেছেন। বর্তমান প্রজন্মের খেলোয়াড়দের অনেকের মাঝে এ দিকটি প্রশ্নবিদ্ধ। এর মাঝে সাকিব গ্রামীণফোনের চুক্তি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার জন্য হয়তো বড় শাস্তিই অপেক্ষা করছে। এটা ব্যাক্তিগত অপরিপক্কতারই বহিঃপ্রকাশ। যেখানে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, সেখানে নতুন করে ইচ্ছাকৃতভাবে করা কাজটি এক প্রকার বিদ্রোহেরই ইংগিত। যা তার ক্যারিয়ার ও দেশের ক্রিকেটের বড় ক্ষতির আভাস দিচ্ছে। আশা করি সামনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরিণত আচরণের নিদর্শন দেখাবে। দেশের ক্রিকেট দেশের স্বার্থেই এগিয়ে চলুক, টাকার মেশিন হিসেবে নয়,এটাই কামনা।