এখন উপায়????.....
পোস্টটি ৩৩৬০ বার পঠিত হয়েছেসাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা এখন আমাদের ক্রিকেটাঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত খবর। আমাদের ক্রিকেট নিয়ে যেকোনো আলোচনারই কেন্দ্রবিন্দুতে এখন সাকিব আল হাসানের এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি । তাঁর এই কঠিন সময়ের জন্য বিসিবি, আকসুর ক্রমাগত মুন্ডুপাত সবাই করে চলেছেন। অনেকে আবার এ-ও বলছেন সাকিব না ফেরা পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলাই তিনি দেখবেন না। বাংলাদেশ ক্রিকেটের মৃত্যুও তাই অনেকেই দেখে ফেলছেন। কিন্তু এই ঘটনাতেই যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটের মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে সেটাই হয়তো সাকিব আল হাসানের চূড়ান্ত অপমান। কেননা, তিনি গত ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিজের সবটা দিয়ে সেবা করে এসেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ১৩ বছর এগিয়ে নেবার জন্যে, ১৩ বছরেই থেমে থাকার জন্য নয়। হ্যা, সাকিব আল হাসানের কোনো বিকল্প পাওয়া হয়তো সম্ভব নয়, এদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে তার যা অবদান, বিশেষ করে তিনি এদেশের ক্রিকেটকে যেখান থেকে যেখানে নিয়ে যান তা হয়তো আর কারো কাছ থেকে আশা করাটাও অসমীচীন । কিন্তু যেটা বললাম আমাদের ক্রিকেট এখানেই থেমে গেলে সাকিব আল হাসানের এই ১৩ বছরই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে।
এখন প্রশ্ন হল তার বদলে কে দায়িত্ব নিতে পারে? আমার মাথায় প্রথম যে নামটা আসে তাহল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। হ্যা, একটু অবাকই হতে পারেন। কিন্তু এটাই হয়তো সবচেয়ে ভালো সমাধান । মোসাদ্দেক হোসেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে গণ্য হয়ে আসছেন। এমনকি একটা সময় সবাই এই ধারণাই করত যে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের সকল রেকর্ড তারই দখলে থাকবে। কিন্তু জাতীয় দলে তিনি সবসময়ই ফিনিশার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছেন, যা কখনোই তার স্ট্রেংথের মধ্যে ছিল না। সব বিশ্লেষক, সমালোচকদের মধ্যেও দাবী ছিল তাকে তিন বা চারে ব্যাট করার জন্য। বাংলাদেশ দল যখন তিনে কাকে খেলাবে তা নিয়ে অনেক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তখন অনেকেই সৈকতকে তিনে বাজিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। কিন্তু সে সুযোগ তার আসেনি। তিনি সময়ের সাথে সাথে নিজের ব্যালেন্সের উপরে কাজ করে নিজেকে ফিনিশারের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিচ্ছেন । কিন্তু তবুও তার স্ট্রেংথের জায়গাটার পুরো ব্যবহার করতে পারছে না তা বোঝাই যায়।
সাকিবের অনুপস্থিতিতে এই সুযোগটা বাংলাদেশ নিতে পারে। তাকে তিনে প্রমোট করে তার পূর্ণ ব্যাটিং সত্তা বেরিয়ে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দীর্ঘ ভবিষ্যতের জন্য সদ্ব্যবহার করতে পারে । পাশাপাশি তার পার্ট-টাইম কিন্তু কার্যকরী অফস্পিন তো আছেই।
আরো একটা উপায় হতে পারে যেটা অনেকেই এতদিন সম্ভাব্য হিসেবে দেখে আসছিলেন। সাকিব আল হাসানের উত্তরসূরী হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজের নামটাই সবচেয়ে বেশি উঠে আসছিল। কিন্তু জাতীয় দলে তাকে শুধুমাত্র একজন অফ-স্পিনার হিসেবে ব্যবহার করায় তার অলরাউন্ডার সত্তাটাই কখনো পরিস্ফূটিত হল না , সাকিব আল হাসান হওয়া তো অনেক দূরের কথা । কিন্তু এখন সাকিব আল হাসানের এই অনুপস্থিতি কাজে লাগিয়ে মিরাজের মেধার প্রতি পূর্ণ ন্যায়বিচার হয়তো করা সম্ভব, যার ফলটা শুধুমাত্র বাংলাদেশ ক্রিকেটই ভোগ করবে।
আরো একটা উপায় হয়তো আছে এবং এর সাথে হয়তো আপনারা অনেকেই একমত হবেন না। কিন্তু মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে দিয়েও এই অভাব মেটানো হয়তো সম্ভব । গত দু'বছরে বাংলাদেশ দলে পঞ্চপান্ডবের পর নিঃসন্দেহে সেরা পারফরমার হিসেবে সাইফুদ্দিনের নামই আসবে। অন্তত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এ নিয়ে কোনো মতভেদ থাকার কথা নয়। আর ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান, বোলার সাকিব আল হাসান কিংবা অলরাউন্ডার কিংবা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চেয়ে আমাদের কাছে সবসময়েই সবচেয়ে প্রার্থিত হয়ে এসেছে পারফরমার সাকিব আল হাসান । তাই দলের সেরা পারফরমারকেই এই অভাব পূরণের দায়িত্বে এগিয়ে আসা উচিত।
অথবা হয়তো এভাবেও বিষয়টির সমাধান হয়। সৈকতকে তিনে খেলিয়ে তার পজিশনে মিরাজ বা সাইফুদ্দিনকে নামানো হল। এরপর একজন বাড়তি পেসার। যাতে করে হয়তো মাশরাফির অভাবও পূরণ করা সম্ভব ।
আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে এসেছে পঞ্চপান্ডবের পর এদেশের ক্রিকেটের কি হবে? আমরা হয়তো এখন সে উত্তর শীঘ্রই পেতে থাকব। সাকিব আল হাসানের এই নিষেধাজ্ঞা হয়তো আমাদের ক্রিকেটের অভিশাপ। কিন্তু ছদ্মবেশে এই নিষেধাজ্ঞা এক আশীর্বাদও হতে পারে যদি আমরা সুযোগটা বুঝে তা ঠিকমতো লুফে নিতে পারি ।
- 0 মন্তব্য