• ক্রিকেট

আঁধারের নিচেই না হয় আপনাদের আলো ফুটে উঠুক

পোস্টটি ৩৪৬৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বছরটা এখনো শেষ হয়নি । তবু বাংলাদেশ ক্রিকেটের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি ২০১৯ এর দিকে ফিরে তাকাই একরাশ হতাশা বাদে কিছুই চোখে পড়বে না। গত বছরের শেষটা এত দুর্দান্ত হবার পরও, যেখানে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করি, ওয়ানডে সিরিজে হারাই, এমনকি আমাদের প্রথম ইনিংস ব্যবধানের জয়ও তুলে নেই, এ বছরটা এমন হতাশার হবে তা দূরতম কল্পনাতেও ছিল না আমাদের। নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে শুরু। এরপর বিশ্বকাপ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ভারত সবখানেই এখই চিত্র। টেস্টে পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটাতে ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় এবং আরেকটিতে আফগানিস্তানের সাথে নিজেদের মাঠে(!) বৃষ্টির কারণে দেড় দিন খেলা না হবার পরও ২২৪ রানে হার! দুটো টেস্টে আবার মাত্র সাত সেশনেই অসহায় আত্মসমর্পণ । ওয়ানডেতে হয়তো পরিসংখ্যানগতভাবে বছরটা ভালো ছিল। কিন্ত ১৮ ম্যাচের মধ্যে যে সাতটিতে জেতা হয় আমাদের তার মধ্যেও একটি আয়ারল্যান্ড , তিনটি উইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দল এবং একটি আফগানিস্তানের সাথে এবং পাশাপাশি এর অনেকটা কৃতিত্বই সাকিবের ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এবং হয়তো বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা একক পারফরমেন্সের । একজন খেলোয়াড় ৬১৬ রান এবং ১১ উইকেট পাবার পরেও যখন দল দশ দলের মধ্যে অষ্টম হয় তখন তার দলটার পারফরমেন্সের ত্রুটি সহজেই চোখে পড়ে। টি-টুয়েন্টিতে তুলনামূলক ভালো হলেও এই ব্যর্থতা ঢাকার জন্য যথেষ্ট না। 

 

          এমনটা না যে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ বছর। কিন্তু অবিসংবাদিতভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা প্রজন্ম নিয়েও যদি এমন এক সময়ের সাক্ষী থাকতে হয় তবে তাকে অন্ধকার সময় বলাটাকে কোনোভাবেই বাড়িয়ে বলা চলে না। মাঠের বাইরের দিক চিন্তা করলে হয়তো তখন ১৬ কোটি মানুষের সবাই তার সাথে একমত হবেন। কিন্তু আপাতত আমরা মাঠের মধ্যেই থাকি। আর দুদিন পরেই বিপিএল। এবং বিপিএলের আগের ছয় আসর সাক্ষী এই সময়টাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু এই টুর্নামেন্ট। আর এই কেন্দ্রের দিকে চোখ রাখতে গিয়ে পরিধির সকল ঝামেলা চোখের আড়ালে থেকে যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবার সুযোগ কমই। যা হয়তো আমাদের অন্ধকার সময়টাকে অমাবস্যায় ডুবিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট । আর এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত যা আয়োজন তাও শুধু হতাশারই জন্ম দিল। তাই এবারের বিপিএল এক অজানা আশঙ্কা ।

 

 

          কিন্তু এবার না হয় এই আঁধারের মধ্যেই কিছু আলো খুঁজে নিয়ে এগিয়ে যাবার পথ বার করার চেষ্টা করা হোক। যদি ২০২০ সালের দিকে তাকাই তাহলে আমাদের মূল জোড়টা দিতে হবে টেস্ট আর টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে। ওয়ানডে শুধু আয়ারল্যান্ডের সাথে তিন ম্যাচের এফটিপি বহির্ভূত এক সিরিজ। অন্যদিকে আবার টি-টুয়েন্টির দুটি বৈশ্বিক আসর। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ। সাথে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ তো আছেই। আবার টেস্ট ম্যাচ খেলতে হবে ১১ টি। বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়তো এত টেস্ট ম্যাচ এক বছরে খেলার রেকর্ড নেই। এই টেস্টগুলোও আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভূক্ত। তাই কোনোটিই হালকা করে নেবার সুযোগ নেই ।

 

 

        যদি টি-টুয়েন্টির কথায় আসি তাহলে একটু পেছনে ফিরে তাকাই। আমাদের শ্রেষ্ঠ টি-টুয়েন্টি পারফরমেন্স হয়তো ২০১৬ এশিয়া কাপ যেখানে আমরা পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠি। আর সেবারের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক? সাব্বির রুম্মন। সাব্বির যতই বিশৃঙ্খল হোক বা যতই তার ধারাবাহিকতার অভাব থাকুক, অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের এখনও টি-টুয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাকেই উপরের দিকে রাখতে হবে। হয়তো আরেকটু পরিণত হলে সে এখনো টি-টুয়েন্টিতে অটো চয়েস থাকতে পারত। কিন্তু এবার বিপিএলে কুমিল্লার ক্যাপ্টেন সাব্বির। অধিনায়কত্ব পরিণতবোধ ও দায়িত্ববোধ দুটোই বাড়িয়ে দেয়। তাই ভক্ত হিসেবে সাব্বিরের মধ্যেও সেই গুণগুলোর আবেশ ঘটবে বলেই আমার আশা। যার উপকার তো আমাদের ক্রিকেট ছাড়া আর কেউই পাবেনা। হ্যা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারেন নাসিরও তো ক্যাপ্টেন ছিল। তার মধ্যে তো এগুলো আসে নি। কিন্ত সাব্বির দল থেকে বাদ হবার আগে তার ফর্মের মধ্যেও ফিরে আসার আভাস ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে আমাদের একমাত্র বলার মতো ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনিই। তার শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও সে প্রায় হারতে বসা এক ম্যাচ সাইফুদ্দিনের সাথে মিলে প্রায় জেতার কাছাকাছি নিয়ে যায়। তাই নতুন সুযোগে নতুন দায়িত্বে নতুনভাবে নিজেকে মেলে ধরার এর চেয়ে বড় সুযোগ হয়তো সে পেত না। সে এই সুযোগ দু'হাত তুলে নেবে, ভক্ত হিসেবে দু'হাত তুলে এই প্রার্থনাই করি। লিটন দাশ অধারাবাহিক, নাঈম শেখের ভারতের সাথে দুর্দান্ত এক ইনিংস থাকলেও পরবর্তীতে ইমার্জিং কাপ ও এসএ গেমসের তার পারফরমেন্স তাকে নিয়েও ভরসা করতে ভয় দেখায়। আর অধারাবাহিকতার প্রতিশব্দ যেন সৌম্য সরকার। আবার মুশফিক মাহমুল্লাহর কেউ টপ অর্ডারে খেলতে চান না। এ অবস্থাতে সাব্বিরকে খুবই দরকার হবে আমাদের। 

 

Sabbir-Rahman-CT-2017-Reuters-380

       

 

          আবার যদি টেস্টে ভালো করতে হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে মমিনুলের দিকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে তার অ্যাওয়ে ফর্ম বিষণ্ণতা সৃষ্টি করে। অথচ এরকম তার ছিল না। হাথুরুসিংহে তার জার্সির রঙ তুলে ফেলার পর থেকেই তার মধ্যে আবার সে রংয়ে ফিরে আসার চেষ্টা দেখা যায়। আবার মিডিয়া ও ভক্তদের বহু প্রশ্ন তাকে যেন আরো দিকশূণ্য করে ফেলে। যদিও তিনি বলেন যে তিনি কথায় কান দেন না, কিন্তু এটা হয়তো তিনি অগ্রাহ্য করতে পারেননি। যার কারণে সেই বল বুঝে খেলার মতো দুর্লভ মানসিকতা ( আমাদের ক্রিকেটের ক্ষেত্রে অন্তত ) কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। এক বিশ্রী রকমের ফ্ল্যাশিনেস চলে আসে তার মাঝে। এর ক্ষতি তার তো হয়ই সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও হয়। তাই এবার যখন বিপিএলে ঢাকা তাকে কিনে নেয় এবং কোচ হিসেবে পান কাজী সালাউদ্দিনকে তখন আবার সেই পুরনো মুমিনুলকে ফিরে পাবার সাহস আমরা দেখাতেই পারি। নিজেকে ফিরে পেতে কাজী সালাউদ্দিনের চেয়ে ভালো কাউকে হয়তো পেতে পারতেন না তিনি। বিশ্বকাপের সাকিবই তো এর বড় উদাহরণ । এমনকি কাজী সালাউদ্দিন এক ইন্টারভিউয়ে মুমিনুলের প্রতি বিশেষ পর্যবেক্ষণের কথাও বলেন। তাই মুমিনুলকে আবারও ফিরে পাওয়া হয়তো সময়ের ব্যাপার । যদি তিনি নিজে তা চান।

 

i

         

 

          আবার মিরাজের ক্ষেত্রেও একই কথা। তার অভিষেকের পরই আমরা অন্তত ঘরের মাটিতে নিয়মিত প্রতিপক্ষের বিশ উইকেট নিতে পারি। তাই তারও ফিরে আসা আমাদের খুব দরকার । আর তার জন্যও কাজী সালাউদ্দিন তৈরি বলেই আমার বিশ্বাস ।

 

 

          আরেকটা কথা বলে যাই। এবারের বিপিএলে রাজশাহী সেসকল খেলোয়াড়দের নিয়েই দল গড়ে যাদের দিকে তাকিয়েই বাংলাদেশ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। তাই কাজী সালাউদ্দিনের মতো একজনকে যদি তাদের কোচ করা যেত তাহলে হয়তো সেই স্বপ্নের ভিত আরো মজবুত হতে পারত। আগেই যা বলেছিলাম । নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে হয়তো কাজী সালাউদ্দিনের বিকল্প এ দেশে নেই। তাই এই দলটার দায়িত্বই তাকে দেয়া উচিত ছিল আমি মনে করি। কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাজশাহী যদি এবারের বিপিএল জেতে তাহলেই আমরা দাবি করতে পারব যে আমাদের ক্রিকেট আসলেও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে যা নেই তা নিয়ে চিন্তা করেও লাভ নেই। যা আছে তা দিয়েই না হয় আশার মশাল জ্বালানো যাক।