• ক্রিকেট

যে ইনিংসের কাছে লারার ৪০০ রানও ঝুঁকিতে পড়ে যায়!

পোস্টটি ৮২৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সেদিন মনে হয় কামরান আকমল ভর করেছিলো অস্ট্রেলিয়ান উইকেটরক্ষক ইয়ান হিলির উপর। ১৯৯৯ সালে বার্বাডোজ টেস্টটি সরাসরি না দেখা কোনো ব্যক্তি যদি হাইলাইটস দেখে, তাহলে হয়তো এই কথাটাই জাগবে তার মনে। এমন একটা মূহূর্তে হিলি ক্যাচটা ছাড়লেন সেখানে হয়তো বদলে যেতে পারতো দৃশ্যপট। ইতিহাসের পাতায় লেখা হতো না ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্রায়ান লারার মনোমুগ্ধকর ১৫৩* রানের অপরাজিত ইনিংসটি। অসি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ হয়তো বেদনার সুর ভুলে হাসিমুখেই বলতে পারতেন এটা তার খেলা জীবনের সেরা ম্যাচ। কিন্তু এসব কিছুই ভাগ্যে সেদিন লেখা ছিলো না।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ১-১ এ সমতায় থাকার পর এগিয়ে যাওয়ার ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া। ১রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস করা অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর ১৯৯ ও রিকি পন্টিংয়ের ১০৬ রানে প্রথম ইনিংসে ৪৯০ রান তুলে তারা। জবাবে শেরউইন ক্যাম্পবেলের সেঞ্চুরিতে ৩২৯ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৬১ রানের লিড নিয়ে খেলতে নেমে কোর্টনি ওয়ালশের বোলিং তোপে ১৪৬ রানে থেমে যায় সফরকারীরা। মাত্র ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন ওয়ালশ।
তবুও ম্যাচটা মুঠোয় ছিলো অস্ট্রেলিয়ার। কেননা দেড় দিনে ৩০৮ রানের লক্ষ্য পাড়ি দিতে হতো স্বাগতিকদের। যেখানে প্রতিপক্ষ গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পি, শেন ওয়ার্ন ও স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের মতো বাঘা বাঘা বোলাররা। ভালো শুরু পরেরও মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয় ব্যাটিং বিপর্যয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপরই আগমণ ঘটে লারার। মাত্র ২ রানে অপরাজিত থেকে আদ্রিয়ান গ্রিফিথকে নিয়ে চতুর্থ দিনটা পার করে তিনি। ক্যারিবিয়ানরা তখনো জয় থেকে ২২৩ রান দূরে।
শেষ দিনের শুরুতেই গ্রিফিথকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজঘরের পথ দেখান গিলেস্পি। ১০৫ রানের মধ্যে আরো এক ব্যাটসম্যানকে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে দেখেন লারা। এমতাবস্থায় জয় পেতে হলে একা লড়াই করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না তার কাছে। আর সেটা তিনি ভালো ভাবেই জানতেন। তাই ধরণ বদলে খেলতে থাকেন আক্রমণাত্মক ভঙিমায়। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে জিমি অ্যাডামসকে সঙ্গে নিয়ে তুলেন ১৩৩ রান। যেখানে অ্যাডামসের অবদান মাত্র ৩৮ রান। এর মাঝে ম্যাকগ্রা-ওয়ার্ন কাউকে ছাড় দেননি লারা। ওয়ার্নের টার্ন করা বলে ব্যাকহিলে গিয়ে তার হাকানো ছক্কাটি এখনো ভক্তদের চোখে লেগে আছে।
ম্যাকগ্রার বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেলেও সেই ওভারে নান্দনিক পুল শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পুরো গ্যালারিকে জাগিয়ে তুলেন লারা। ডাউন দ্য উইকেটে এসে ওয়ার্নকে ছক্কা মেরে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক। কিন্তু তখনো নাটকীয়তার ঢের বাকি। লারার সঙ্গে তর্কে হারার ক্ষোভে ১০ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন ম্যাকগ্রা। জয়ের আনন্দ তখনো ৬০ রান আর এক সেশন দূরে। লারাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য ছিলেন শুধু বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং ডুয়ো কার্টলি অ্যামব্রোস-কোর্টনি ওয়ালশ।
উইকেটে কিভাবে টিকে থাকতে হয় সেটা ভালো মতোই জানতেন অ্যামব্রোস। তাই লারার সঙ্গে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটিয়ে দিলেন ১ ঘণ্টারও বেশি সময়। খেলেন ৩৯ বলে ১২ রানের অবস্মরণীয় ইনিংস। জয় থেকে তখন মাত্র ৭ রান দূরে। তখনই জেসন গিলেস্পির বলে লারার ক্যাচ মিস করেন অসি উইকেট কিপার ইয়ান হিলি। সেই ওভারেই অ্যামব্রোসকে বিদায় করেন গিলেস্পি। ওভারে বাকি ছিলো আর মাত্র ৩ বল। আগে থেকেই ৯ জন ফিল্ডারের ৫ জনকেই স্লিপে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন স্টিভ ওয়াহ। যেকোনো একটি বল ওয়ালশের ব্যাটের কানায় লাগলেই বিফলে যেত লারার ঐতিহাসিক ইনিংসটি। তবে বিপদ কাটিয়ে তিনটি বল সুন্দর মতোই পার করেন ওয়ালশ। ম্যাকগ্রার ইনসুইং ইয়র্কারও ফেলতে পারেনি তার উইকেট। অবশ্য সে সময় ম্যাচ টাই করে ফেলেছিলেন লারা। তাই জয়ের স্বাদ পেতে আর দেরি করলেন না। ১২০ তম ওভারে গিলেস্পির প্রথম বলে চিরচেনা সেই কাভার ড্রাইভে শেষ করেন ঐতিহাসিক ম্যাচটি। বল বাউন্ডারিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিকেটের বরপুত্র একবারের জন্য ছুঁতে মাঠে ঢুকে পরেন সমর্থকরা। লারাও হাসিমুখে নিজেকে বিলিয়ে দেন তাদের মাঝে। প্রায় ৬ ঘণ্টার লড়াইয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ২৫৬ বলে ১৯ চার ও ১ ছয়ে অপরাজিত ১৫৩ রানের ইতিহাস নিয়ে।