• ক্রিকেট

শতাব্দীর সেরা " ব্যাডবয়" খ্যাত ১০ ক্রিকেটার

পোস্টটি ১৩৩৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেটকে ভদ্রলোকের খেলা বলা হয় । একজন ক্রিকেটার সমাজের আদর্শ হিসেবে থাকেন অনেকের কাছেই ।  তাই একজন ক্রিকেটার হিসেবে অমায়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি সমাজ অস্বীকৃত সব ধরনের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত । কিন্তু কিছু কিছু ক্রিকেটার বিভিন্ন বিতর্কিত কাজ করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন ক্রিকেটের নম্রতাকে । খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও কিছু বিতর্কিত কাজ তাদের নামের পাশে যোগ করেছে " ব্যাডবয় " নামক শব্দটি। তাদের মধ্যে সেরা দশজন খেলোয়াড় হলেন :

১০. ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া): আশি নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের শক্তিশালী ব্যাটসম্যান ছিলেন ডেভিড বুন । ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের ঝুলিতে পুরেছেন অনেক অনেক রান । যার অধিকাংশ রান সংগ্রহ করেছিলেন  তখনকার ক্রিকেটের পরাশক্তি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে । সময়টা ১৯৮৯ , অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ সিরিজ সামনে রেখে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড । ঠিক তখনই বিতর্কিত এক কাজ করে বসেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান । একাই ৫২ টি বিয়ারের বোতল পান করে জায়গা করে নেন ব্যাডবয় হিসেবে।

৯. ইনজামাম উল হক (পাকিস্তান ) :  ক্রিকেট পিচে তাড়াতাড়ি দৌড়াতে না পারার দুর্নাম ছিল সাবেক এই পাকিস্তানি অধিনায়কের । তার জন্যে সবখানে সমালোচনা পোহাতে হতো তাকে ।  কিন্তু হুট করেই যেনো তিনি একদিন  বদলে গেলেন । ১৯৯৭ সালে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি , গ্যালারি থেকে এক ভক্ত বারবার " ফ্যাট পটেটো " বলে বিরক্ত করছিলেন তাকে, এতে ইনজামাম  তখন রেগে গিয়ে  খুব দ্রুত তেরে যান ওই ভক্তের কাছে এবং  ছোটোখাটো একটা হট্রগল বেঁধে যায়  ওই মুহূর্তে । সেই সময়ে যতো দর্শক গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে কারণ এর আগে এতো তাড়াতাড়ি তাকে ছুটতে দেখেননি দর্শকেরা ।  ব্যাপার টা হাস্যকর হলেও বিষয়টি ভালোভাবে নেননি দর্শকেরা । সেই থেকেই ব্যাডবয় হিসেবে পরিচিতি পান তিনি ।

৮.মোহাম্মদ আসিফ ( পাকিস্তান ) :  মোহাম্মদ আসিফ পাকিস্তানের অন্যতম সুইং বোলার হিসেবে পরিচিত  । ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বাজে জিনিসের সাথে যেনো তার প্রগাঢ় বন্ধুত্ত্ব । যেমন ইচ্ছে করেই বাজে পারফরমেন্স করা , নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও মাদক গ্রহণ করা ,নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়া  ইত্যাদি । কিন্তু ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে আনা স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো  ক্রিকেটাঙ্গন । ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টে ইচ্ছে করেই নো বল দেন তিনি যা পরবর্তীতে প্রমাণিত হলে সাত বছরের জন্যে নিষেধাজ্ঞা পান তিনি । সেই থেকেই তিনি ক্রিকেটের " ব্যাডবয়" হিসেবে পরিচিত ।

৭.ইয়ান বোথাম ( ইংল্যান্ড ):  ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলাউন্ডার কে ? এমন প্রশ্নে নিশ্চিতভাবেই উত্তর আসবে তিনি স্যার ইয়ান বোথাম । কিন্তু একটি  বিতর্কিত ঘটনার রেশ  লেগে ছিলো তার ক্যারিয়ার জুড়েই । ক্যানাবি ব্যবহার করে খেলার দুর্নাম ঘটানোর জন্যে কাউন্টি ক্রিকেট ও বোর্ড থেকে দুই মাসের জন্যে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি । যদিও তার পরের ফেরাটা ছিলো রঙিন । ফেরার প্রথম বলেই তিনি উইকেট পান এবং ইতিহাস রচনা করেন করেন তিনি । কিন্তু তারপরেও ব্যাডবয়  শব্দটা মানুষ যোগ করেন তার নামের পাশে।

৬.হার্শেল গিবস ( দক্ষিণ আফ্রিকা ) : হার্শেল গিবস ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেরাদের একজন । চমৎকার ব্যাটিং শৈলী ছিলো তার ক্যারিয়ার জুড়েই । কিন্তু বিতর্কেও পড়েছেন বহুবার । বর্ণবাদী আচরণের ঘোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । এছাড়া মারিজুয়ানা সেবন করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে । ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে বিচে গিয়ে মাদক সেবন করে তিনি ধরা পড়েন ,এমনকি একই সঙ্গে ধরা পড়েন  আরেক ওপেনার । কিন্তু যে বিষয়টির জন্যে তিনি সবচে বিতর্কিত তা হচ্ছে তিনি তার  একসময়ের অধিণয়কের কাছ থেকে ১৫০০০ ডলার নিয়েছিলেন এক চুক্তিতে । তার সঙ্গে অধীনায়কের চুক্তি ছিলো ইন্ডিয়ার বিপক্ষে তিনি ২০ রান করে আউট হয়ে যাবেন । কিন্তু গিবস সেদিন ৭৬ রানে আউট হয়ে ফিরেছিলেন যার জন্যে অধিনয়ক তাকে পরবর্তী ছয় মাসে দলে নেননি কিংস কমিশনের কাছে এমনটিই অভিযোগ জানিয়েছিলেন  তিনি ।

৫. সালমান বাট ( পাকিস্তান ) :  ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজে কুপোকাত হয়ে সমালোচনা এবং অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন পাকিস্তানের তৎকালীন জনপ্রিয় অধিনয়ক সালমান বাট । মোহাম্মদ আসিস ও মোহাম্মদ আমির এই দুই বোলারের স্পট ফিক্সিংয়ের কেন্দ্রে ছিলেন তিনি । টেস্ট ম্যাচের নির্দিষ্ট সময়ে ওই বোলারদের দিয়ে নো বল করানোর জন্যে বিশাল অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন তিনি এমন অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে ।  এছাড়া তিনি নিজেও অল্প রানে আউট হয়ে যাওয়ার জন্যে অর্থ গ্রহণ করেন  যা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় এবং তিনি ত্রিশ মাসের জেল হাজতে থাকার নির্দেশ পান এবং দশ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ হন তিনি ।

৪.শেন ওয়ার্ন ( অস্ট্রেলিয়া ) : কোনো প্রকার সন্দেহ ছাড়াই ক্রিকেটের স্পিনের রাজপুত্র বলা হয় শেন ওয়ার্নকে । কিন্তু তার ক্যারিয়ারেও আছে বিতর্ক । প্রথমত তিনি বিতর্কের শিকার হন যখন তার বিরুদ্ধে পিচের ধরন , টিমের লাইনাপ , আবহাওয়া এসব তথ্য দিয়ে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আসে । দ্বিতীয়ত তিনি পুনরায় বিতর্কের শিকার হন  ২০০৩ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ এর সময়  । ওই সময়ে তার শরীরে নিষিদ্ধ মাদক পাওয়ার অভিযোগে ওই বিঃশকাপ থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে । এছাড়া তার আগ্রাসী মানসিকতার জন্যে অনেকেই তাকে ব্যাডবয় হিসেবে জানেন ।

৩. শোয়েব আখতার ( পাকিস্তান ) : প্রতিটা ব্যাটসম্যানের জন্যে দুঃস্বপ্ন ছিলেন পাকিস্তানের এই গতিদানব । কিন্তু নিজের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যে সবচে বেশি সমালোচিত হয়েছেন । তিনি যেখানে সেখানে অন্য খেলোয়াড় কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে ফেলতেন অনায়াসেই । নিজের দলের খেলোয়াড়ের বিপক্ষেও মন্তব্য করতেন তিনি ।  ইতিহাসের দ্বিতীয়ত বোলার হিসেবে বল টেম্পারিং কাণ্ডের সাথে জড়িত হন তিনি । যার জন্যে নিষিদ্ধ হয়েছিলেণ তিনি । এছাড়া  কোচ এবং অধিনায়েকের সাথে খারাপ আচরণ করার কারণে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে বাদ পড়েন তিনি । ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তে ইন্ডিয়ায় থাকাকালীন সময়ে মোহাম্মদ আসিফের সঙ্গে মাদক নেওয়ার অভিযোগে দুই বছরের জন্যে নিষিদ্ধ হন তিনি । ব্যাডবয়ের তালিকায় বেশ উপরেই আছেন তিনি ।

২.রিকি পন্টিং ( অস্ট্রেলিয়া ) : সর্বকালের সেরা সফল অধিনায়ক বলা হয় রিকি পন্টিংকে ।  তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট  ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক । ১৯৯৮ সালের ইন্ডিয়া সফরে দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের   আগের দিন নিজেদের চাঙ্গা করার জন্যে পুরো অস্ট্রেলিয়ান টিম যায় নাইট ক্লাবে । সেখানে কিছু নারির সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন পন্টিং ,কারণ সেই সময়ে মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন তিনি ,  যার কারণে সেখানকার নিরাপত্তা প্রহরী তাকে বাইরে বের করে দেন ,এবং তিনি মারামারিতে জড়িয়ে যান । এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে । মাঠের বাইরে তিনি অল্পতেই রেগে যেতেন মানুষের সঙ্গে । পরে অবশ্য নিজেকে শুধরে ভালো মানুষ হিসেবেই ছিলেন বাকিটা সময় । যার ফলাফল হিসেবে পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব ।

১. অ্যান্ড্রু সিমন্স ( অস্ট্রেলিয়া ) : অ্যান্ড্রু সিমন্সকে বলা হয় ক্রিকেটের সবচে বিতর্কিত খেলোয়াড় । তিনি ছিলেন প্রচণ্ড রকমের শরাব পানকারী । ম্যাচের আগে মাদক নেওয়ার অভিযোগে তিনি বাদ পড়েন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে । যার জন্যে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েন তিনি । কেবল মাছ ধরার জন্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওডিআই এর আগে গুরুত্তপূর্ণ টিম মিটিং বাদ দেন তিনি । এছাড়া তার জীবনের সবচে বিতর্কিত কাজটি করেন ভারত সফরে গিয়ে  । সফর চলাকালীন সময়ে হরভজন সিং কে তিনি বানর বলে গালি দেন । অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতলেও এই ঘটনার রেশ কাটতে দেরি হয়েছে অনেকদিন । এছাড়া এক রেডিও অনুষ্ঠানে তিনি বলেন শুধুমাত্র তার সতীর্থ ম্যাথু হেইডনের স্ত্রী কে দেখার জন্যে তার বাসায় বারবার ডিনারে যেতেন তিনি ।