• ক্রিকেট

একটি তারার হারিয়ে যাওয়ার গল্প!!

পোস্টটি ৪৩৪৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দেশের মানুষের আসার-ফুল৷ হ্যা তিনিই আশরাফুল। দেশের কোটি মানুষের সেই আশার ফুল তখন জাগাতেন জয়ের আশা, চিনাতে শুরু করেছিলেন নিজেরদের জাত, দেখাতেন টাইগারদের পাওয়ার আর নান্দনিক সব ক্লাসি শটে আনন্দের ফোয়ারা হতেন দেশের কোটি ক্রিকেট ভক্তের।

images - 2020-04-23T082807.402

দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মনে আশরাফুল যে কতো জায়গা জুড়ে আছে তা লিখে প্রকাশ করাও হয়তোবা সম্ভব না! ক্রিকেট প্রেমীরা আশরাফুল কে যে কতোটা ভালোবাসে তা লিখতে গেলে হয়তো শেষ হবে কলমের কালি, শত-শত থেকে হাজার পাতা লিখলেও ফুরাবে না লেখা। দেশের মানুষের সেই ভালোবাসার প্রতিদান হয়তোবা ব্যাট হাতে ক্যারিয়ার জুড়ে দিতে পারেননি আশরাফুল৷ কিন্তু তাতেও আশরাফুলের প্রতি মানুষের একটুও ভালোবাসা কমেনি। বরং দিন কে দিন সেটা কেবল বেড়েছ আর বেড়েছে।

ক্যারিয়ারের শুরু টা করেছিলেন ব্যাট হাতে কলমের ন্যায় এক কবি হিসেবে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই লিখা শুরু করেছিলেন মহাকাব্যিক সব ইনিংস৷ ১২ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলেছেন মুটামুটি সকল টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে টেস্টে ২৪ গড় এবং ওয়ানডে তে ২২ গড়। খুব একটা আহামরী তো নয় এই যেনো একেবারে নিম্ন মানের। কিন্তু আপনি কোনো কবির সাহিত্য রচনা না পড়ে কবির নাম ডাক দেখে কবি কে বিচার করেন তাহালে নেহাত ভুল করলেন বইকি! কেনোনা আশরাফুল কে যদি আপনি তার ক্যারিয়ারের গড় এবং রান দেখে দাড়িঁ পাল্লায় মাপেন তবে সেটা হবে আপনার বড় বোকামী! নিজের দিনে আশরাফুল যে ব্যাট কে কলম কে বানিয়ে যে মহাকাব্যিক ইনিংস গুলো রচনা করতেন তা না দেখলে আপনি আ্যশের প্রতি মানুষের কেনো ভালোবাসা ছিলো বুঝতে পারবেন না। নিজের দিনে যে আশরাফুল যে কতোটা ভয়ংকর কবি ছিলেন তা হয়তোবা লিখে বুঝানো সম্ভব না! নিজের দিনে ব্রেট-লি, জহির খান, এনটিনি কিংবা জ্যাক ক্যালিসদের মতো বোলারদের কেও পিটিয়ে তুলোধোনো করেছেন মানুষের আশার ফুল আশরাফুল! নিজের দিনে হয়ে উঠতেন এক একটা ম্যাচ জয়ী মহাকাব্যিক ইনিংসের মহানায়ক!

এমন অসংখ্য ম্যাচে জয়ের মহানায়ক হয়ে দেশের ক্রিকেট ভক্তকুলের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন আশরাফুল। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় সময়েই কাটিয়েছেন রান খড়ার মধ্যে দিয়ে কিন্তু তাতেও কি ভক্ত কুলের মন থেকে একটুও ভালোবাসা কমে যায়নি আশরাফুলের জন্যে। সঠিক সময়ের জ্বলে উঠার এক অসাধারন প্রতিভা ছিলো আশরাফুলের মাঝে। কার্ডিফ, জাহানেসবার্গ কিংবা গায়ানার এক একটি ইনিংস যেনো এক একটি দৈত্য বধের কাহিনী! আর সেই দৈত্য বধের যুদ্ধে সামনে থেকে দল কে লিডিং করেছেন দেশের কোটি মানুষের আশার ফুল নামটি তার মোহাম্মদ আশরাফুল। আর তাই তার প্রতি ভালোবাসা সবসময় ভক্ত কুলের মনে বেড়েছে বৈকি কমেনি!

১৯৮৪ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ডাকনাম টা শুনে সবাই অবাক হবেন। আমাদের সবার প্রিয় আশরাফুলের ডাকনাম মতিন। তবে তিনি ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আ্যশ নামেই অধিক পরিচিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে আশরাফুলের বয়স নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। একাডেমিক সার্টিফিকেটে আশরাফুলের জন্মতারিখ ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তাতেও আশরাফুল কে কনিষ্ঠতম সেঞ্চুরিয়ান হতে কেউ দমাতে পারেননি! মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিনে তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরি এটি। আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন পাকিস্তানের মুস্তাক আহমেদ। রেকর্ড গড়েছিলেন ১৭ বছর ৭৮ দিনে। হ্যা পাঠক আজকে আজকে আলোচনা হবে ঢাকার মতিন থেকে দেশের মানুষের ভালোবাসার আশরাফুল হয়ে উঠার গল্প নিয়ে!

images - 2020-04-23T083152.145

ফিরে দেখে আশরাফুলের অভিষেক; সময়ের বিবর্তনে ক্রিকেট পৌচেছে আধুনিকতার চরম শিখরে নিয়ে তখন ক্রিকেট মাতাচ্ছেন শচীন, লারা কিংবা কুমার সাঙ্গাকারার মতো অনেক রথী মহারথী ক্রিকেটার। কিন্তু সেই তুলনায় নেই বাংলাদেশের ভরশা করার মতো কেউ৷ সময়ে চলমান চরিত্রে তখন সময়ের কাটা পৌচায় ২০০১। সালে সেপ্টম্বরে চলছিলো বাংলাদেশ বনাম শ্রী-লংকার মধ্যকার টেস্ট সিরিজ। শ্রী-লংকার বিপক্ষে ম্যাচে অভিষেক হয় এক চিপচিপে গড়নের ১৭ বছর বয়সী এক তরুনের! প্রথমে ইনিংসে ২৬ রানের ইনিংস টা দিয়ে হয়তোবা জানান দিয়েছিলেন সুদিন আসছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ২য় ইনিংসে আশরাফুল খেলেন সেই মহাকাব্যিক ১১৪ রানের ইনিংস।স্বীকৃত টেস্টে ক্রিকেট এখনো লেগে আছে সর্বকনিষ্ট টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ড। যদিও বাংলাদেশ ম্যাচটি ইনিংস এবং ১১৫ রানের ব্যবধানে হেরে যায় তারপরেও ইনিংসটি যেনো জানান দিয়েছিলো অন্যকিছু, অন্য এক বাংলাদেশী টাইগারের। তার প্রথম প্রমাণ টা আশরাফুল এই রেখে গিয়েছিলো।

অভিষেকের সেই মহাকাব্যিক ইনিংসের পর ক্রিকেট ভক্তরা আশার পাল বুকে নিয়ে বসে ছিলো আবারো তাদের কবি তাদের কে কবির লিখিত নতুন কোনো কবিতে আবৃতি করে শোনাবে বলে। দিনি যায়, মাস যায়, বছর যায় কবি কথা বলে না! কথা বলে না কবির ব্যাট। অবশেষে আসে সেইসময়! ২০০৪ সালে ভারত তখন বাংলাদেশ সফরে। চলছিলো সিরিজের ২য় টেস্টে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ১ম টেস্ট হেরে বসেছিলো। ২য় টেস্টে খেলতে নামা বাংলাদেশের ভাগ্য বিধাতা ভাগ্য পরিবর্তন না করলেও আশরাফুল বদলে ছিলো নিজের রান খড়ার গড়পরতা। ২৭৫ মিনিট উইকেটের কে আকড়ে ধরে ২৪ চার এবং ৩ ছক্কায় সেই মহাকাব্যিক ১৫৮ রান। সেই ইনিংসে মধ্যে আশরাফুল তাক লাগিয়েছিলেন পুরো বিশ্ব এমনকি তৎকালীন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি কে। আর তাই গাঙ্গলি বলেছিলেন আমার দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস এটি।

images - 2020-04-23T082717.467

ফিরে দেখা ২০০৫; যদি ক্যারিয়ার কিংবা পরিসংখ্যান দেখা হয় কেউ কোনো ভাবা ভাবি ছাড়াই বলে দিবে ২০০৫ ছিলো আশরাফুলের ক্যারিয়ারে একেবারে রাঙিয়ে রাখার মতো। আশরাফুলের প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা টা লালিত পালিত হতে শুরু করে তখন থেকেই। ২০০৫ সালের ১৮ জুন নেটওয়েস্ট সিরিজে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ইনিংসের কথা জানে না এমন লোক খোজেঁ পাওয়া একেবারে দুঃসাধ্য ব্যাপার। যারা ক্রিকেটের একটু হলেও খোজঁ খবর রাখে তারা সবাই সেই ম্যাচের কথা জানে এবং জানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১ম জয়ের সেই মহাকাব্যিক জয়ের কথা। রিকি পন্টিং এর অধিনায়কত্বে হেইডেন, গিল-ক্রিস্ট, গ্লেন ম্যাগ্রাথ, ব্রেট লি নিয়ে গড়া সেই অস্ট্রেলিয়া দল টিকে বলা হয় অস্ট্রেলিয়ার এবং ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি দল। একের পর এক সিরিজ জিততে থেকে অস্ট্রেলিয়া দল কে নেট ওয়েস্ট সিরিজে মাটিতে নামিয়ে এনেছিলো টাইগারা। আ্যশের সেই মহাকাব্যিক ১০১ বলে ১০০ রানের উপর ভর করে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া কে হারিয়ে দিয়েছিলো ৫ উইকেট এবং ৪ বল হাতে রেখে।

নেটওয়েস্ট সিরিজে আশরাফুল কে মনে রাখা জন্যে  এই একটি ইনিংসই যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু আশরাফুল তো একেবারেই দমে যাওয়ার পাত্র নয়। আশরাফুল ভালোবাসতেন একের পর এক কাব্য রচনা করতে। তার কি আর একটা ইনিংসে যায়?? পরের ম্যাচেই ইংল্যান্ডের সাথে আবারো জ্বলে উঠলেন ব্যাট হাতে। তৎকালীন ইংল্যান্ডের সব তারকা সমৃদ্ধ বোলিং লাইন কে পিঠিয়ে পাট করে আশরাফুল খেলেছিলেন ৫২ বলে ৯৪ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস। দল সেদিন ১৬৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারলেও ব্যাক্তগত পারফরম্যান্সে একেবারে ঝলমলে তারকা ছিলো কোটি মানুষের ভালোবাসার সেই আ্যশ।এই ম্যাচের একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে আশারাফুল আউট হতে পারতেন ১ম বলে কিন্তু বিধি বাম বল স্ট্যাম্পের বেলে আঘাত করার পরেও পরেনি বেল। কেই বা জানতো প্রথমে লাইফ পাওয়া আশরাফুল পরে এমন ধ্বংস লীলা চালাবেন!!

কিন্তু এরপর?? পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই চলেছেন এমন রান খড়ার মধ্যে দিয়েই। বার বার পরেছেন রান খড়ায় কিন্তু ঘুরে দাড়িয়েছিলেন অদম্য মনোবল আর বিশ্বাসে!! আর যখনি ফিরেছেন তৈরী করে গেছেন কিছু সুখস্মৃতির কাব্য! এবং কিছু মহাকাব্যিক ইনিংস।

২০০৭ সালের একদিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপের কথা ভারত কে হারিয়ে অঘটন জন্ম দিয়ে বাংলা টুর্নামেন্টের সুপার এইটে। প্রত্যাশা তখন বাংলাদেশের অনেকাংশেই পূরন। ক্রিকেট ভক্তরা এবং আশরাফুলের ভক্তরা কেবল মনে মনে আশায় ছিলো একটি আশরাফুলময় দিনের। এবং আরো একটি আশরাফুলীয় ইনিংসের। ২০০৫ এর পর অবশেষে ২০০৭ এ দক্ষিন আফ্রিকার ম্যাচ টি যেনো ছিলো আশরাফুলের জন্যেই তুলা। টুর্নামেন্টের ৩৪ তম ম্যাচে তৎকালীন র‍্যাঙ্কিং এর এক নাম্বার দল দক্ষিন আফ্রিকার মুখোমুখী বাংলাদেশ। সবার প্রত্যাশা ছিলো একটাই; একটা সম্মান জনক একটা হারের। কিন্তু আশরাফুলের ক্লাসি ৮৩ বলে ৮৭ রানের সৌজন্যে বাংলাদেশ ২৫১ রানের ফাইটিং টুটাল। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় এই স্কোর কে ছোট মনে হলেও বাংলাদেশী বোলারদের অতিমানবীয় কিপটে বোলিং এ দক্ষিন আফ্রিকা অল আউট হয় মাত্র ১৮৭ রান। ৬৭ রানের ঐতিহাসিক জয়ে বাংলাদেশ রচনা করে প্রথম আফ্রিকা বধের কাব্য। আর সেই কাব্যের মহামানব ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

ঠিক একিই বছরে দক্ষিন আফ্রিকায় বসে বিশ্ব টি২০ এর সব চেয়ে বড় আসর টি২০ বিশ্বকাপ। দক্ষিন আফ্রিকার মাটিতে বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই ক্রিকেট পরাশক্তি কে হারানোর তাজা এক সুখস্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশ যায় দক্ষিন আফ্রিকায় টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে। টি২০ বিশ্বকাপেও আশরাফুল যেনো টেনে এনেছিলো আফ্রিকার মাটিতে সেই একদিনের বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি কে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর বিপক্ষে বাংলাদেশের চলছিলো গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। আশরাফুল দেখিয়ে ছিলেন তার মায়াবী ব্যাটিং এর ধ্বংসলীলা।২০ বলে ৩ ছয় এবং ৭ চারের মারে আশরাফুল গড়েছিলেন তৎকালীন টি২০ তে সব চেয়ে দ্রুততম অর্ধশত করার রেকর্ড। যদিও আশরাফুলের সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলেন যুবরাজ সিং ১২ বলে অর্ধশত করে। আশরাফুলের সেই ইনিংস বাংলাদেশ কে সাহায্য করেছিলো ২য় রাউন্ডে উঠার। পিছনে পরে রয়েছে ১৩ বছর। ১৩ বছরে অর্জন হয়েছে অনেক কিছু কিন্তু এখনো কি আশরাফুলের সেই ইনিংস ভুলা কি সম্ভব??

২০০৭ সাল আশরাফুলের জন্যে শুধু দুটো বিশ্বকাপের জন্যে স্মরনোয় নয়। ২০০৭ সাল টা আশরাফুল রাঙিয়ে রেখেছিলেন গ্রামীনফোন-প্রথমআলো নিবেদিত বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতে। প্রথম কোনো বাংলাদেশী হিসেবে জায়গা পেয়েছিলেন এশিয়া একাদশে জায়গা। আইপিএলের নিলাম থেকে পেয়েছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ডেরায় জায়গা।

i (2)

২০০৭ সালের পর থেকে আশরাফুলের ক্যারিয়ারে শুরু হয় নানান উত্থান পতনের। দলে আধ্যিক বাড়তে থাকে নতুন খেলোয়াড়দের। তখন হয়তোবা অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন নবনতুন আগমনে এবার বুঝি সময় হলো  পুরাতনের বিদায় নেওয়ার৷ দলে তখন পুরো পুরি বিস্তার সাকিব, মুশফিক তামিমদের। কিন্তু আশরাফুল যে ফুরিয়ে যাননি তার প্রামণ আবারো করলেন ২০১৩ সালে শ্রী-লংকা সফরের গল টেস্টের সেই মহাকাব্যিক ৪১৭ বলে ১৯০ রানের নান্দুনিক ইনিং। ইনিংস টি যেনো ছিলো আশরাফুলের ধৈর্যের প্রতীক। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় আউট হয়েছেন বাজে শট খেলে। কিন্তু সেদিন যেনো দাতেঁ দাতঁ কামড়ে পড়ে ছিলেন উইকেটে।

১৯০ রানের ইনিংস টি দেখে অনেকেই মনে করছিলো আশরাফুলের বুঝি আবারো নবনতুনের ভিড়ে নতুন কতে পুনরুত্থান হতে চলেছে। কিন্তু সেটাই যে হবে আশরাফুলের ক্যারিয়ারের শেষ সুখস্মৃতি সেটা কেই বা জানতো?? ২০০১ সালে ক্যারিয়ার শুরু করা আশরাফুল ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর অঘোষীত ভাবে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। কারনটা সবারই জানা! সেই কাল স্পট ফিক্সিং।

২০১৩ সালে ঢাকা গ্লাডিয়েটরস এর হয়ে খেলার সময় আশরাফুলে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন স্পট ফিক্সিং নামক কাল নাগিনের সাথে। আকসুর তথ্য এবং আশরাফুলের সহজ স্বীকারোক্তি তে আগষ্ট মাস থেকে আশরাফুল কে সবধরনের ক্রিকেট থেকেই সাময়িক ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে বিসিবি! ২০১৪ সালে জুলাই মাসে বিসিবির দুর্নীতি দমন ট্রাইবুনাল আশরাফুল কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৮ বছরের নিষধাজ্ঞা দেয়। পরে অবশ্য আশরাফুলের আপিলে নিষেধাজ্ঞার সময় কমিয়ে সেটা ৫ বছরে নামিয়ে আনা হয়! ২০১৬ সালে ঘরোয়া ক্রিকেট ফিরলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরার সময় ধার্য ছিলো ২০১৮ তে। তবে সেটা হয়তোবা কাগজে কলমেই সেটা হয়তোবা আশরাফুল নিজেও জানেন।

images - 2020-04-23T082356.170

পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে হয়তোবা আশরাফুল আরো কিছু বছর ক্রিকেট খেলে যাবেন। কিন্তু লাল সবুজের জার্সিতে আর কখনো প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নেএ উত্তর হয়তোবা আপনারা সকলের মনেই আছে। হয়তোবা আর কখনো মাঠে আ্যশ আ্যশ বলে চিল্লানো হবে না। তবুও কেনো জানি সেই উত্তর টা মানতে অনেক কষ্টই হয় বৈকি। আশরাফুলের খেলা দেখে যারা বড় হয়েছেন তারা কখমো একথা মানতে পারবেন না। কারন অদম্য ইচ্ছে শক্তি নির্দশন টা আশরাফুলই শিখিয়ে গিয়েছেন। তারা হয়তোবা আজও ভাবেন যদি কখনো রূপকথার রাজা হিসেবে আবারো কপবি ছুটে আসেন কবিতা রচনা করতে। সেইদিনে অপেক্ষায় দিনে গুনছে আশরাফুল ভক্তরা সেই ২০১৩ সাল থেকে। ক্রিকেট প্রেমীদের আশার ফুল, প্রথম প্রেম আশরাফুল আবার কখন ব্যাট হাতে জ্বলে উঠবেন সেই আগ্রহে বসে এখনো কোটি ক্রিকেট এবং আ্যশ ভক্ত। যদিও সেটা বাড়াবাড়ি। থাকুক না ভালোবাসার আ্যশ বা আশরাফুলের প্রতি সেই অগাধ ভালোবাসার বাড়াবাড়ি টা! ভালোবাসা এভাবেই লালিত পালিত হয়েই যাবে।