• ফুটবল

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল ও বাংলাদেশের গল্প

পোস্টটি ১৭৪৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাংলাদেশে টেলিভিশনে সরাসরি দেখানো প্রথম ফুটবল ম্যাচ ছিল ১৯৭৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল। একুশ শতকের আগে বাংলার মানুষের কাছে দেশের বাইরের ফুটবল মানেই ছিল বিশ্বকাপ। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের নামগন্ধ তখন এদেশে ছিল না। একুশ শতকে এসে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সাথে এদেশের মানুষের পরিচয় ঘটতে থাকে, যা দিনদিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

640px-Bundesarchiv_Bild_183-N0716-0314,_Fußball-WM,_BRD_-_Niederlande_2-1

কিন্তু কেন ইউরোপিয়ান ফুটবল এদেশে আরো আগে জনপ্রিয় হয় নি? এ প্রশ্নের উত্তর দু'রকম হতে পারে। বাংলাদেশে প্রথম প্রাইভেট টিভি চ্যানেল চালু হয় ১৯৯৭ সালে। আর বিদেশী টিভি চ্যানেল তারও অনেক পরে। তাই ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল দেখার সুযোগ তৈরি হতেই বেশ সময় লেগেছে।

আবার কয়েক দশক আগে আমাদের বাবা-চাচা কিংবা মামারা ম্যারাডোনা কিংবা রোমারিওদের খেলা দেখে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার প্রেমে পড়েছিলেন। তখন থেকেই বিশ্বকাপ এলে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার জন্য উন্মাদনার ঐতিহ্য তৈরি হয় বাংলাদেশের সিংহভাগ পরিবারে। আর এ থেকেই শুরু হয় চার বছর পর পর ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার জন্য খেলা দেখা। এ কারণে আমরা এতদিন ইউরোপিয়ান ফুটবল থেকে দূরে ছিলাম।

messi-ramos-1492995827-800

কিন্তু বাংলাদেশে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকসংখ্যা বেশি কেন? অন্য বড় দলগুলোর বড় সমর্থকগোষ্ঠী নেই কেন? এর উত্তরও হতে পারে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিয়ে উন্মাদনা। বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ফুটবল পরিচিতি পাওয়ার পর যেসব ক্লাবে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার সেরা খেলোয়াড়রা খেলেন, সেসব ক্লাবে সমর্থন বাড়তে থাকে। বলা যায় অনেকেই লিওনেল মেসির কারণে বার্সেলোনাকে সমর্থন করতে শুরু করেন। অনেকেই ব্রাজিলের কিছু সেরা খেলোয়াড়কে রিয়ালের হয়ে খেলতে সেদিকে চলে যান। একসময় এরা বার্সা কিংবা রিয়ালের খেলা ভালোবেসে ফেলেন। এছাড়া বার্সা ও রিয়ালের ধারাবাহিক সাফল্যের ইতিহাস এ সমর্থনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। আর একারণেই লিভারপুল, চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখ, অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের মতো দলগুলোর ইতিহাস সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এদের সমর্থক খুব বেশি নেই বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে বার্সা ও রিয়ালের মোটামুটি বড় ফ্যানবেস গড়ে ওঠায় যারা লিভারপুল বা অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের মতো দলের সমর্থক, তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হয়। আপনি যদি রিয়াল বা বার্সা-ভিন্ন অন্য কোনো দলের পাঁড় সমর্থক হন, তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলকে সাপোর্ট জানাতে গিয়ে ট্রলের শিকার হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

অনেকেই নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে দেখে কোনো দলকে ভালোবেসে ফেলেন। আবার একদলের কাছে একজন খেলোয়াড়ই সবকিছু, দলটা তাদের কাছে বড় নয়। একারণে রোনালদো যখন রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যান, তখন হুট করেই জুভেন্টাসের সমর্থকসংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।

তবে এদের মধ্যে একদল লোক দলকে ভালোবাসেন দলের খেলা ভালোবেসে। এরা হয়তো টিভির চ্যানেল বদলাতে গিয়ে হঠাৎ কোনো দলের খেলায় আটকে গিয়ে ঐ দলটিকে ভালোবেসে ফেলেন। অনেকে সুন্দর খেলাটাকে বুঝতে চান, বিশ্লেষণ করেন। এরা শুধু দলের খেলাটাই দেখেন না, দেখেন ঐ এগারোজন কীভাবে খেলে।

সবদিক থেকে দেখতে গেলে, ইউরোপিয়ান ফুটবলের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে যারা ফুটবল দেখেন, তাদের একটা অংশ এখন আর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মাঝে থেমে নেই। এই একটা অংশ এখন আর চার বছর পরপর ফুটবল দেখে না, প্রতি সপ্তাহেই অপেক্ষা করে থাকে। এই একটি অংশ বিশ্বকাপের অপেক্ষা করে না, অপেক্ষা করে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের। দেরি করে হলেও ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সৌন্দর্য আমরা ধরতে পেরেছি।