আফ্রিদির 'টেন্ডুলকারের' ব্যাট
পোস্টটি ১১৫১ বার পঠিত হয়েছেশাহিদ আফ্রিদির আত্মজীবনী পড়া শুরু করেছি।শোয়েব আক্তারের আত্মজীবনী "কন্ট্রোভার্শিয়ালি ইউরস" পড়ে ব্যাপক মজা পেয়েছিলাম।ব্যাপক মানে ব্যাপক।এত মজার কাহিনিতে ঠাসা বইটা বলার অপেক্ষা রাখে নাহ।আফ্রিদিও আশা করি হতাশ করবে নাহ।৩৮ চ্যাপ্টারের বিশাল এক বইয়ের মাত্র কয়েকটা চ্যাপ্টার পড়লাম।এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটা হাস্যকর কাহিনি পড়লেও সবচেয়ে ভালো লেগেছিল তার ১৯৯৬ সালে অভিষেক ম্যাচ আর ওই ম্যাচকে ঘিরে কিছু ঘটনা।
আফ্রিদি নিজেই বইয়ের শুরুতে বলেছে যে তার অভিষেক হয় ১৯ বছর বয়সে,১৬ তে নয়,সাল ১৯৯৬। তার জন্মসাল ১৯৭৫।এখন ১৯৭৫ সালে জন্ম হলে ১৯ বছর বয়সে কিভাবে ১৯৯৬ সালে অভিষেক হলো তার?মানে আত্মজীবনী লিখবে ভালো কথা, ভালো করে চেক/ডাবল চেক করে নিবে না সেটা মানা অবিশ্বাস্য হলেও আফ্রিদির পক্ষেই সম্ভব এই ধরনের হেয়ালির।এই অভিষেক এবং তার বইয়ে বয়সের ভুল নিয়ে এক বড় ভাই সার্কাস্টিক মন্তব্য করলেন যে বইটা বের হবার আগে নাকি কামরান আকমলকে দেয়া হয়েছিল প্রুফরিডিং করতে,বেচারা কামরান আকমলের হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে এই ভুলটা।
যাইহোক ১৯৯৬ সালের অভিষেকে ফিরে যাই আবার। কেনিয়ায় চলাকালীন টুর্নামেন্টে পাকিস্তান জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ লেগি মুস্তাক আহমেদ পড়লেন ইঞ্জুরিতে।তার পরিবর্তী হিসেবে দলে ডাক পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুর্ধ ১৯ দলের হয়ে খেলা এক আনকোরা পাঠান।ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে দুবাই,দুবাই থেকে করাচি,করাচি থেকে আবার দুবাই এরপর দুবাই থেকে নাইরোবি।নাইরোবিতে গিয়ে সবার আগে দেখা পেলেন আমির সোহেলের।এরপরে একে একে বাকী সবার।
বোলার হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত হলেন তাই নেটে সারাদিন করে গেলেন বোলিং আর বোলিং। নেট প্র্যাক্টিস শেষ হবার কিছুক্ষন আগে ওয়াসিম আকরামের কথামতো কয়েক ওভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেয়া হল আফ্রিদিকে।প্রথমে দুজন বোলার জায়গায় দাঁড়িয়ে বোলিং করতে লাগলেন আফ্রিদিকে।আফ্রিদি প্রত্যেকটা বলকে এমনভাবে মারতে লাগলেন যে নেট না থাকলে প্রায় সব বলের ঠিকানা হত সীমানার বাইরে।এভাবে মার খেতে দেখে ওই দুজন বোলার এবার হালকা রানআপ নিয়ে বোলিং করতে লাগলেন,কিন্তু আফ্রিদির শট খেলার প্রবনতা বা স্টাইল থাকলো প্রায় একইরকম মানে সবই ছক্কা।ওই দুজন বোলার কে ছিল সেটা একটু পরেই বলবো।তো ওইদিনের মতন নেট প্র্যাক্টিস শেষ হলো।এই আনকোরা তরুনের আনঅর্থডোক্স ব্যাটিং প্রায় সবার নজরে পড়লো।পরের দিন সকালে নেট প্র্যাক্টিস সেশনে সবার আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হল আফ্রিদিকে। আগের দিন বিকালের ওই দুই বোলার এবার ফুল রানআপ নিয়ে বোলিং করতে লাগলেন।কিন্তু আফ্রিদিকে বিপর্যস্ত করা তো দূরে থাক গতকালের মতোনই মার খেতে থাকলেন এই দুই বোলার।আশ্চর্য হলেও সত্যি যে বোলার দুইজন ছিলেন আর কেউ না সর্বকালের অন্যতম সেরা এবং ভয়ংকর বোলিং জুটি ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনিস।
বাবার অসুস্থতার কারনে ক্যাপ্টেন ওয়াসিম আকরাম পাকিস্তানে ফিরলেন,যাবার সময় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সাইদ আনোয়ারকে বলে গেলেন আফ্রিদিকে যেন শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচে ব্যাটিংয়ে আগে পাঠানো হয়।ম্যাচের আগের দিন বিকালে আফ্রিদিকে বলা হল যে শ্রীলঙ্কা ম্যাচে তাকে সম্ভবত ব্যাটিংয়ে আগে পাঠানো হবে ,সে যেন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে।এই সফরে আফ্রিদির রুমমেট ছিলেন ব্যাটসম্যান সাদাব কবির।যথারীতি সকালে আফ্রিদি ঘুম থেকে উঠলেন, ব্রাশ এবং শেইভ করে রুমে এসে সাদাব কবির ঘুম থেকে উঠালেন।ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে সাদাব তাকে বলল যে কী হইছে।
আফ্রিদি তাকে তৈরি হতে বললে সাদাব বলল "তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে, এখন রাত ২:৩০ বাজে,ঘুমাতে যাও মিয়া"। লজ্জায় নত হয়ে ঘুমাতে গেলেন সাহেবজাদা।সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে সাদাব কবিরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন আর তার সাথে সাথে এটাও বললেন সে স্বপ্নে দেখেছে জয়াসুরিয়া, কুমারা ধর্মসেনা আর মুরালিধরনকে ব্যাপক মেরেছেন খেলায়।জবাবে সাদাব কবির বলল স্বপ্ন দেখলা কখন তুমি তো ঠিকমতো ঘুমাও নাই।যাইহোক এই স্বপ্নের কথা শুধু তার রুমমেট সাদাব কবিরই জানতেন খালি।সত্যি মিথ্যা জানি না আফ্রিদির স্বপ্ন আফ্রিদি নিজেই সবাইকে দেখিয়েছে।মেরেছেন তিন স্পিনারকেই।মুরালির ১০ ওভারে দিয়েছেন ৭৩,ধর্মসেনা করেছেন কিঞ্চিত ভালো, ৭ ওভারে ৪৮।সবচেয়ে বেশি ধকল গিয়েছে জয়াসুরিয়ার উপর।বেচারা ওই ম্যাচের বোলিং ফিগার ১০-০-৯৪-৩।এগারো ছক্কা এবং ছয় চারে আফ্রিদির করেছেন ৪০ বলে ১০২ রান,সেঞ্চুরি এসেছিল মাত্র ৩৭ বলে।
আফ্রিদির রেকর্ডময়ী ইনিংসের সাথে সাঈদ আনোয়ারের সেঞ্চুরি মিলিয়ে পাকিস্তান ৩৭১ রানের পাহাড় গড়েন।জবাবে অরবিন্দু ডি সিলভার সেঞ্চুরি সত্ত্বেও পাকিস্তানের জয় ৮২ রানে।ম্যাচ অফ দ্যা ম্যাচ হন আফ্রিদি।বল হাতে ১০ ওভারে ৪৩ রানে পান একটিমাত্র উইকেট,সেটি ছিলো আবার লঙ্কান অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার।আর একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়।ত্রিদেশীয় এই সিরিজে ফাইনালে উঠলে হলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার করতে হতো অন্তত ২৯০ রান (৩৭২ এর টার্গেটে)।এক বল বাকী থাকতে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ২৮৯ রান।মাত্র এক রানের জন্যে হয়নি ফাইনাল খেলা।পাকিস্তানের সাথে ফাইনালে উঠেন দক্ষিন আফ্রিকা।
এই ম্যাচের সাথে আরেকজন বিখ্যাত ক্রিকেটারের নাম জড়িয়ে আছে।তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার।পাকিস্তানের শিয়ালকোট ভালো ব্যাটের জন্যে নামকরা।ওয়াকার ইউনিসকে টেন্ডুলকার তার নিজের একটি ব্যাট দিয়েছিলেন। ওয়াকার পাকিস্তানে ফিরলে এই ব্যাটের একটি রেপ্লিকা ব্যাট বানিয়ে যেন তাকে আবার ফেরত দেয়।আফ্রিদির ব্যাটিং অভিষেক উপলক্ষে ওয়াকার টেন্ডুলকারের ব্যাটটা দিয়েছিল আফ্রিদিকে।ওই ব্যাট দিয়ে করা পরের কাহিনি খুলে বলার কোনো প্রয়োজনই নেয়।মানে আফ্রিদির রেকর্ডময় ইনিংসটি ছিল আর কারো নয় স্বয়ং শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের ব্যাটের।
- 0 মন্তব্য