• ক্রিকেট

শেন বন্ডঃ ক্রিকেটের ০০৭

পোস্টটি ১৬৪৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আড়াল থেকে সামনে এসে দাঁড়ালেন এক তীক্ষ্ণ পুরুষালি চেহারার এক ব্যাক্তি, হাতে মারণাস্ত্র। এর আগে তিনি এক লোককে খুন করেছেন আর সেই লোক কাতরাতে কাতরাতে জিজ্ঞেস করছিল, “হু আর ইউ? ” আর প্রতুত্তরে আসলো “দ্যা নেইম ইজ বন্ড, জেমস বন্ড। ” কোড নাম্বার ০০৭। এই নাম্বারটা চিনেনা এমন মানুষ খোঁজা ঢের কষ্টের। কারণ হলিউড ইন্ডাস্ট্রির ওয়ান অব দ্যা বেস্ট মুভি সিরিজ হলো এই “জেমস বন্ড” সিরিজ৷
--
ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস আরেকটা সেরা মুভি সিরিজ হলিউডের। পল ওয়াকার, ডোয়াইন জনসন, ভিন ডিজেল, জেসন স্টেথামরা মিলে বানিয়েছে এই সিরিজ। কি নেই সেই সিরিজে, গতির ঝড় তুলেছে রাস্তায়, একশন, নিজেদের ধূর্ততা। এই মুভি দেখেনাই এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই কষ্টের হবে৷
---
ফাস্ট, ফিউরিয়াস, ধূর্ততা এই তিনটা শব্দ শেন বন্ডকে বর্ণনা করতে যথেষ্ট। জেমস বন্ড যেভাবে কৌশলে তার শত্রুদের ধরাশায়ী করতো, বাইশ গজে শেন বন্ড আগুনঝরা বোলিংয়ে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে কুপোকাত করতো। তবে শেন বন্ড ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার৷ তার বয়স যখন ২৪, তখন ক্রিকেট ছেড়ে তিনি যুক্ত হলেন চাকরিতে একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে। তবে এর তিন বছর আগে তার ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অভিষেক হয়৷ সেসময় প্রতি চারদিনের ম্যাচের জন্য ৮০০ ডলার করে পেত। যা দিয়ে তার চলতে কষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
--
তারপর তিনি ক্রিকেটকে বিদায় বলে চাকরি শুরু করলেন। কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারলেন তিনি ক্রিকেটকে মিস করছেন খুব ভালোভাবেই, তিনি চাকরি আর ক্রিকেট একসাথ করে ফেললেন তখন। সারা বছরের ছুটির পরিবর্তে, তিনি একটানা ৬-৭ সপ্তাহ ছুটি নিয়ে নিতেন। আর সব ছুটি একসাথ করে গ্রীষ্মে এসে তিনি ক্রিকেট খেলতেন। তিনি তার একটি খেলার আগে সাড়ে তিনটার দিকে একজন আসামীকে হাজতে ঢুকিয়েছিলেন । কাগজপত্র সব কমপ্লিট করতে করতে ৫টা পার হয়ে গিয়েছিল। এরপর বিছানায় আড়াই ঘন্টা ঘুমিয়েই উঠে পড়তে হয়েছিল। তারপর গাড়ি চালিয়ে ক্লাবে গিয়ে খেললেন। এরপর শাওয়ার নিয়ে, পরের শিফটের কাজের জন্য ছুটলেন স্টেশনে। এরকম যেদিন তার কাজে দেরী হতো সেদিন মাথা নিচু করে মাঠে যেতেন। আশা করতেন, দল টস জিতে ব্যাটিং নিবে এবং তিনি কিছুটা বিশ্রামও পাবেন৷ আর এইভাবেই চলেছিলো ক্রিকেট সাথে চাকরির জীবন।
--
রিচার্ড হ্যাডলি পরবর্তী যুগের নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে ভয়ানক বোলার ছিলেন শেন বন্ড। আক্রমণাত্মক শারিরীক ভাষা সাথে হার না মানা মনোবল সবসময় সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতো তাকে৷ গতিময় বোলিংয়ে ছন্দপতন করতে বেশ পটু ছিলেন বন্ড। তার সবচেয়ে গতির বল ছিল ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে, ১৫৬.৪। বন্ডের ইনসুইং ডেলিভারি ছিলো ন্যাচারাল। তবে আউটসুইংও হতো ভয়ংকর। শর্ট রান-আপে ১৫০ কি.মি. এর আশেপাশে বল করতেন তিনি। সাথে পুরোনো বলে ভয়ংকর রিভার্স সুইং। গতি, সুইং, লাইন এন্ড লেংথ মেইড হিম “আনপ্লেয়েবল”!
--
টো ক্রাশিং ইয়র্কার - এইটা হচ্ছে বাইশ গজে বন্ডের সেরা অস্ত্র। কতবার এই ইয়র্কারে যে ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সাথে লেইট ইনসুইং তো থাকতোই বল গুলোতে। ব্যাটসম্যানদের বুঝার সাধ্যছিল না এই বলগুলো। আর তার সাডেন বাউন্সে রীতিমতো ঘাবড়ে যেতো ব্যাটসম্যানরা।
--
অস্ট্রেলিয়া বনাম শেন বন্ড - কিউইদের জাত শত্রু ছিল অস্ট্রেলিয়া। আর এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বন্ড নিজেকে নিয়ে যেতেন অন্য এক পর্যায়ে। ওয়ানডেতে অজিদের বিপক্ষে মাত্র ১৫.৭৯ গড়ে নিয়েছেন ৪৪ উইকেট! সাথে ৩ বার ৫ উইকেট! তবে তার প্রিয় শিকার ছিলেন রিকি পন্টিং। এক ত্রিদেশীয় সিরিজে পন্টিংকে টানা ৬ বার আউট করেছিলেন তিনি। আর সেই ত্রিদেশীয় সিরিজটা ছিল বন্ডের অভিষেক সিরিজ যেখানে তিনি ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ২১ উইকেট। ওয়ানডেতে একবার হ্যাট্রিকও করেছিলেন তিনি আর সেটি ছিল সেই অজিদের বিপক্ষে।
--
২০০৩ ও ২০০৭ সাত বিশ্বকাপ, আর এই বিশ্বকাপে একজন ফাস্ট বোলারের ইকোনমি ৩.৫১! ক্যান ইউ বিলিভ ইট? দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে ১৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৩০ উইকেট। যেখানে ২০০৩ এ রয়েছে ১৭ উইকেট আর ২০০৭ এ ১৩ উইকেট । ২০০৩ এ হয়েছিলেন ৫ম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
--
২০০৫ সাল জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন নিজের সবচেয়ে ভয়ংকর বোলিং। ১৯ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট! এক স্পেলেই রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি, মোহাম্মদ কাইফ, বীরেন্দর শেবাগ, বেণুগোপাল রাও ও ইরফান পাঠানকে প্যাভিলিয়নে ফেরান তিনি। আর সেদিন ভারতের স্কোর দাঁড়িয়েছিল ৪৪/৮!!
---
ছোট ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় ছিলেন ইঞ্জুরিতে। নয় বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ১৮টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। যেটা তারমতো এক বোলারের সাথে কোনোভাবেই যায় না। ১৮ টেস্টে নিয়েছেন ৮৭! টেস্ট ইতিহাসে নূন্যতম ২৫০০ বল করা বোলারের মাঝে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটটাও তার দখলে, ৩৮.৭। আর প্রথমে আছেন কিংবদন্তি জর্জ লোহম্যান, ৩৪.১। তবে ওয়ানডেতে ৮২ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৪৭ উইকেট, স্ট্রাইক রেট ২৯.২, এভারেজ ২০.৮৮, যা নূন্যতম ৩০০০ বল করা বোলারদের মাঝে চতুর্থ সেরা বোলিং এভারেজ আর তৃতীয় সেরা স্ট্রাইক রেট।
---
শেন বন্ড, বিশ্বের সেরা ভয়ংকর ফাস্ট বোলারদের একজন। ছন্দে থাকা বন্ডকে মোকাবেলা রীতিমতো আতঙ্কের নাম। শুনেছিলাম ম্যাথু হেইডেন এর মত ব্যাটসম্যান বন্ডের টো ক্রাশিং ইয়র্কার সামাল দিতে টো-গার্ড পরে নামতেন আর এইখান থেকেই বুঝা যায় হাউ ফিউরিয়াস হি ইজ!
--
“A hero can be anyone, even a man doing something as simple and reassuring as putting a coat on a young boy's shoulder to let him know the world hadn’t ended- Christopher Nolan” -
দুনিয়া বদলাবে, অনেক ভয়ংকর বিধ্বংসী ফাস্ট বোলার আসবে যাবে কিন্তু শেন বন্ডের মতো ভয়ংকর সুন্দর বোলার আসবেনা, যার গতি সুর তুলতো বাইশ গজে আর সেই সুরে কুপোকাত হতো বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা। যার বোলিং হাইলাইটস দেখার সময় একটা কথাই আসে, রিমেম্বার দ্যা নেইম? শেন বন্ড।