• ক্রিকেট

জিমি ম্যাথুজ ও ওল্ড ট্রাফোর্ডে ধ্বংসযজ্ঞ

পোস্টটি ১৫১৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেটে বোলারদের অন্যতম সেরা অর্জন হলো হ্যাট্রিক করা। এবং এইটা কোনো বোলারের সবচেয়ে কঠিন সাফল্যগুলার একটা৷ এক ইনিংসে টানা তিন বলে তিন উইকেট নেয়া সহজ নয়। তার উপর লংগার ভার্সনে তো আরো কঠিন এটি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫টি হ্যাট্রিক হয়েছে এই লংগার ভার্সন ক্রিকেটে৷ তবে এই পঁয়তাল্লিশটি হ্যাট্রিকের মাঝে চার জন বোলার দুইবার করে হ্যাট্রিক করেছেন। তারা হলেন হিউজ ট্রাম্বল, জিমি ম্যাথুজ, ওয়াসিম আকরাম, স্টুয়ার্ট ব্রড। কিন্তু আজকের গল্পটা একটু ভিন্ন, কারণ আজকের গল্পের নায়ক টেস্টে দুইবার তো হ্যাট্রিক করেছেনই তাও আবার একই দিনে দুইবার৷

অস্ট্রেলিয়া - সাউথ আফ্রিকা মুখোমুখি ওল্ড ট্রাফোর্ড এ। আচ্ছা ওল্ড ট্রাফোর্ড কেন বিখ্যাত? ক্রিকেট নাকি ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের জন্য! আচ্ছা যাই হোক, সেদিন সাত প্লেয়ার ডেব্যু হয়। ৩ জন অস্ট্রেলিয়ান আর বাকী ৪ জন আফ্রিকার হয়ে। অজি ক্যাপ্টেন সিড গ্রেগরী টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ক্লাউড জেনিংস এবং চার্লস কেলেওয়ে ওপেনিংয়ে যান। ৬২ রানের জুটির পর সিড পেগলারের বলে আউট হন জেনিংস। এরপর তিনিই চার্লি ম্যাকার্টনিকে আউট করেন। এরপর মাঠে আসে বার্ডসলি এবং ওপেনিংয়ে নামা কেলেওয়ে দুইজন মিলে রীতিমতো নাচাতে থাকে আফ্রিকান বোলারদের। দুইজনই সেঞ্চুরি করেন, দলের ২৯৪ রানে আউট হন চার্লস কেলেওয়ে তখন তার রান ছিল ১১৪। আর ৩১৪ রানে আউট হন ওয়ারেন বার্ডসলি , তার তখন রান ছিল ১২১। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া সেদিন অল আউট হয় ৪৪৮ রানে। দিনের শেষাংশে ব্যাটিং নামে সাউথ আফ্রিকা। অভিষিক্ত হারবি টেইলর নেমেই ০ রানে আউট হন বার্লো কারকিকের বলে। বিপরীতে থাকা আরেক অভিষিক্ত প্লেয়ার গেরাল্ড হার্টিগান বাকি দিন কাটান ডেভ নোর্সের সাথে এবং আফ্রিকা দিন শেষ করে ১৬ রানে।

দ্বিতীয় দিনে অজি বোলার হুইটি আফ্রিকা টপ অর্ডারকে ধ্বসিয়ে দেয়। দলের রান যখন ৫৪/৪, তখন মাঠে আসে গর্ডন হোয়াইট আর অপরদিকে নিজের ৮৯ রানে আছেন ফকনার। এবার হুইটি আসলো নিজের অন্য স্পেলে এবং এসেই হোয়াইট আর ক্যাপ্টেন মিচেলকে আউট করেন। সোয়ার্জ আউট হন হ্যাজলিটের বলে। আর রোলান্ড বেউমন্টকে নিয়ে ফকনার তার সেঞ্চুরি করেন। বোলার ম্যাথুজের তখন ১১.৩ বল ১৬ রান কোনো উইকেট নেই। নিজের চতুর্থ বল বেউমোন্টকে ক্লিন বোল্ড করলেন, তারপর পেগলারকে আউট করলেন পরের বলেই। বাকী আরো এক বল আর ম্যাথুজ তখন হ্যাট্রিক চান্সে, ব্যাটিংয়ে ওয়ার্ড। এন্ড ইয়েস হি ডিড, লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হয় ওয়ার্ড।

ফলো অনে পড়ে দ্বিতীয় দিন আবার ব্যাটিং নামলো সাউথ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ফকনার নামলো ওপেনিংয়ে সাথে পার্টনার হার্টিগান। অজি ক্যাপ্টেন গ্রেগরি কেলেওয়েকে পাঠান বোলিংয়ে হ্যাজলিটের বদল। হুইটি আর গ্রেগরি মিলেই রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে আফ্রিকান দের। কেলেওয়েই দলীয় ২২ রানে তুলে নেন আফ্রিকার দুই উইকেট। তারপর আবার দুই উইকেট নেন হুইটি, দলের রাব ৪৩/৪। টেইলর আর হোয়াইট মিলে কিছু করার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু না তা হলো না, দলের ৭০ রানে গর্ডন হোয়াইটকে আউট করেন কেলেওয়ে। এরপর বোলিংয়ে আসেন ম্যাথুজ। এসেই আউট করেন টেইলরকে এবং এরপরের বলে শোয়ার্জকে এরপর আসেন ওয়ার্ড আর এবারো ওয়ার্ডকে আউট করে হ্যাট্রিক করেন জিমি ম্যাথুজ।

জিমি ম্যাথুজ ইতিহাসের একমাত্র বোলার যিনি একইদিনে দুইবার হ্যাট্রিক করেন। এবং মজার বিষয় তার এই দুই হ্যাট্রিকে নেই কোনো উইকেট কিপার বা ফিল্ডারের অবদান। লেগ বিফোর আর বোল্ড করেই নিয়েছেন ছয় উইকেট৷ ম্যাথুজ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেন মাত্র ৮টি টেস্ট আর উইকেট নেন ১৬টি। সেদিন ওল্ড ট্রাফোর্ডে আফ্রিকানদের উপর ধ্বংসলীলা চালায় অজি বোলাররা। আর জিমি ম্যাথুজ করেন এই অনন্য রেকর্ড ।