• ক্রিকেট

রোমাঞ্চকর ক্রিকেটে অদ্ভুতুরে ৭!

পোস্টটি ১৬৫৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

১. দুই ম্যাচেই তারা সমানে সমান!

তখন চলছে আফগানিস্তান এবং জিম্বাবুয়ের মধ্যে ওয়ানডে সিরিজ।প্রথম দুই ম্যাচে ঘটল অবাক করা এক ঘটনা। দুটি ম্যাচেই দুই দলের স্কোর একই।নিজেদের ইনিংসে একই সংখ্যক উইকেটও হারিয়েছে তারা দু দল। এমনকী জয়-পরাজয়ের ব্যবধান পর্যন্ত এক!
নিঃসন্দেহে কাকতালীয় একটা ব্যাপার। কিন্তু বেশ মজার।
প্রথম ম্যাচে, টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে রহমত শাহের ১১৪ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৩৩ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। জবাবে জিম্বাবুয়ে ১৭৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি।ফলে আফগানিস্তান জিতে যায় ১৫৪ রানের বড় ব্যবধানে।
একদিনের ব্যবধানে যে একই ফল জিম্বাবুয়ে ফিরিয়ে দিবে তা কি জানত আফগানরা?
দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিক একই ঘটনা ঘটল । তবে সেই ম্যাচে জয়ী দলের নাম জিম্বাবুয়ে। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ঠিক ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৩৩ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। ১২১ বলে ১২৫ রানের এক দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকান ব্রেন্ডন টেইলর। জবাবে ঠিক ১৭৯ রানেই অল-আউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। জিম্বাবুয়েও পায় ঠিক ১৫৪ রানের ব্যবধানে জয়!


২.মুদ্রার এপিঠ শচীন ওপিঠ দ্রাবিড়!

শচীন টেন্ডুলকার এবং রাহুল দ্রাবিড়, দুজনের দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্রাবিড়ের ক্যারিয়ার শুরু এবং শচীনের সেঞ্চুরির শুরুটা হয়েছিল একই প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এটি কোন কাকতালীয় বিষয় না, মূল রহস্য রয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুজনের পারফরম্যান্স এবং পরিসংখ্যানে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সমান ৭টি করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন শচীন ও দ্রাবিড়। এই ৭ সেঞ্চুরির ইনিংসে তাদের দুজনেরই মোট রান ছিল ৯৮২, দুজনই অপরাজিত ছিলেন ২টি করে ইনিংসে। ফলে ইংলিশদের বিপক্ষে টেস্টে শচীন-দ্রাবিড়ের গড় ১৯৬.৪! অদ্ভুত কাকতালীয়ই বটে!
১৯৯০ সালের আগস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেন শচীন। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ৬ নম্বরে নেমে সেদিন ১৮৯ বলে করেন অপরাজিত ১১৯ রান। এরপরের ছয় সেঞ্চুরিতে তার ইনিংসগুলো ছিল যথাক্রমে ১৬৫, ১২২, ১৬৭, ১০৩, ১৯৩ ও ১০৩*; অর্থাৎ অন্তত তিনবার খুব কাছে গিয়েও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি শচীন।
তবে দ্রাবিড় এখানে ব্যতিক্রম। ২০০২ সালের আগস্টে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন দ্রাবিড়। সেদিন তার ব্যাট থেকে আসে ১১৫ রানের ইনিংস। পরের ছয় সেঞ্চুরি তিনি করেন যথাক্রমে ১৪৮, ২১৭, ১৩৬, ১০৩*, ১১৭ ও ১৪৬*। শচীন যেখানে তিনবার কাছে গিয়েও ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি, সেখানে দ্রাবিড় তিনবার আটকা পড়েছেন দেড়শর সামনে গিয়ে। দুজনের মধ্যে আরেকটি মিল হলো, শচীন-দ্রাবিড় দুজনই ইংলিশদের বিপক্ষে নিজেদের শেষ শত রানের ইনিংসে শেষপর্যন্তই অপরাজিত ছিলেন!


৩. রান না করে সবাই বোল্ড, একজনের অপরাজিত শূণ্য। চার রান উপহার!

ওপেনিং থেকে শুরু করে শেষের ব্যাটসম্যান। একটা ক্রিকেট ম্যাচে ১১ জন ব্যাটসম্যানের রান সংখ্যা ০।
অবাক হওয়ার মতই একটা বিষয়! আপনি হয়ত ভাবতে পারেন মোবাইলের গেমসে হতে পারে। কিন্তু না, বাস্তবে এমনটাই ঘটেছিল কোচিতে। মাল্লাপুরম জেলায় অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলাদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ঘটে এই ঘটনা।
কাসারাগোড় বনাম ওয়ানাড়ের মধ্যে ম্যাচ। টস জিতে অবশ্য প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কাসারগোড়।ম্যাচের দুই ওভার ভালভাবেই টিকে গিয়েছিলেন কাসারগোড়ের দুই ওপেনার কে ভিকশিথা ও এস চৈত্রা।তখনও কেউ ভাবতে পারেনি শেষ দৃশ্যটা অবিশ্বাস্য হতে চলেছে। দুই ওভারের পরই শুরু হয় শূন্য মিছিল। শুধু তাই নয়, ১০ জন ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকেই শূন্য রানে বোল্ড হয়েছেন। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানও শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন। কাসারগোড়ের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট দিয়ে এক রান না করলেও ওয়ানাড় বোলারদের সৌজন্যে স্কোরবোর্ডে রান ওঠে ৪। অতিরিক্ত ৪ রান দেয় ওয়ানাড়। না হলে শূন্য রানে অলআউট হয়ে যেত কাসারগোড়। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রানটা অবশ্য ওয়ানাড়ের ওপেনাররা এক ওভারেই তুলে ফেলে। এক ইনিংসে দলের সব ব্যাটসম্যানই শূন্য রানে আউট এবং প্রত্যেকেই বোল্ড -এই ঘটনা ক্রিকেটের ইতিহাসে সম্ভবত এর আগে ঘটেনি।


৪.কোন ম্যাচ না খেলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন!

সুনীল ওয়ালসন।একজন ভারতীয় ক্রিকেটার। ভারতীয় ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও তার নামটা ক্রিকেটপ্রেমীদের কাজে বেশ অপরিচিত! কারণ তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনদিন মাঠে নামার সুযোগ পাননি।
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৫.৩৫ গড়ে ২১২ উইকেট নিয়ে বেশ সম্ভাবনা জাগান। ফলস্বরূপ, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের জাতীয় দলের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন এই বাঁ হাতি পেসার। কিন্তু কপিল দেব ও বলবিন্দর সিংদের মতো পেসারের কারণে একাদশে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জন্য। বিশ্বকাপ প্রস্ততি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও যথেষ্ট ভালো বোলিং করে। তারপরও বিশ্বকাপ একাদশে সুযোগ মেলেনি সুনীলের। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয় করে নেয় ভারত। অথচ আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ না খেলেই বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের তালিকায় নাম লেখায় সুনীল!

৫.দুটি ভিন্ন ফাইনালে ধর্মসেনা!

১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৪ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল শ্রীলংকা।ফাইনালে লংকার হয়ে খেলেছিলেন কুমার ধর্মসেনা।ফাইনাল ম্যাচে,ব্যাট হাতে সুযোগ না পেলেও বল হাতে ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৪৭ রান খরচায় নিয়েছিলেন ১ উইকেট।

সে আসরে ক্রিকেটার হিসেবে ফাইনাল খেললেও এরপরের ফাইনালে ধর্মসেনাকে দেখা যায় ভিন্ন চরিত্রে।আম্পায়ার হিসেবে পরিচালনা করেছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনাল। ৯৬ বিশ্বকাপে না জিতলেও ২০১৫ বিশ্বকাপটা জিতে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া!


৬.ইটের জবাব পাটকেল মেরে!

ক্রিকেট ইতিহাসে অনেকগুলো রেকর্ডকেই সঙ্গী করেছেন শচীন টেন্ডুলকার। এমনকি অনেক প্রথম ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে লিটল মাস্টারের নাম
টেস্ট ক্রিকেটে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে রান আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান ছিলেন শচীন।
১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে একটি টেস্ট ম্যাচে তিনি টিভি আম্পায়ার এর সিদ্ধান্তে প্রথম আউট (রান আউট) হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। তাকে রান আউট করেছিলেন আরেক ‘লিজেন্ড’ বিশ্বখ্যাত ফিল্ডার জন্টি রোডস। মজার ব্যপার হল পরবর্তী দিনে এই জন্টি রোডসও রান আউট হয়ে যায় শচীনের হাতে এবং সেটার সিদ্ধান্তও দিয়েছিলেন টিভি আম্পায়ার!


৭. শেষ হইয়াও হইল না শেষ!

১৯৩৯ সাল, একটা ক্রিকেট ম্যাচে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার। প্রায় ১৪ দিন টানা খেলার পর ম্যাচটি টাই হিসেবে শেষ করা হয়।ক্রিকেট ইতিহাসের এটাই ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ ম্যাচ!

২০০৫ সাল, আগের ম্যাচেই কার্ডিফ রূপকথা গড়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তার সেঞ্চুরিতেই প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়া বধ করেছিল বাংলাদেশ। সেই সেঞ্চুরির রেশ না কাটতেই পরের ম্যাচে ইংলিশদের রানের পাহাড়ে চাপা পড়েছিল বাংলাদেশ। তাদের ৩৯১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। আশরাফুল যখন ক্রিজে আসেন তখন ক্রিস ট্রেমলেট দাঁড়িয়ে ছিলেন হ্যাট্রিকের দাঁড়প্রান্তে। তার গুড ল্যান্থের বল পুশ করতে গিয়ে মিস করেন আশরাফুল। বল মিডল স্টাম্পে পড়ে কিন্তু ঐশ্বরিকভাবে স্টাম্প থেকে বেল পড়েনি।স্ট্যাম্পে বল লাগিয়েও উইকেট বঞ্চিত হল বোলার সাথে মিস হয়ে গেল হ্যাট্রিকও!images(2) 


কালে কালে এমন আরো অতশত অদ্ভুত ঘটনার মিশ্রণ ঘটেছে ক্রিকেটে।
অদ্ভুত কিংবা কাকতালীয়ভাবেই অনেকে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য রেকর্ডের, কেউবা আবার সেগুলো ভেঙ্গে গড়ছে নতুন করে!