• ফুটবল

অপ্রতিম জানেত্তি!

পোস্টটি ৯৮৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আপনার বিয়ের দিন।হবুবউসহ বাকীদের নিয়ে চার্চে আছেন।কী চিন্তা মাথায় আসতে পারে বা কী করতে পারেন।রস গেলার হলে হয়তো বউয়ের নাম এমিলির বদলে র‍্যাচেল বলবেন এই আর কি।আর আপনি যদি হ্যাভিয়ের জানেত্তি হন তাইলে বউয়ের কাছে অনুমতি চাইবেন কিছুক্ষন দৌড়ে আসার।না নিজের বিয়ের দিন এমন কিছু করেনি জানেত্তি।করেছিলেন রিসেপশনের দিন।অতিথিদের আগমনের কিঞ্চিৎ আগে বউকে জিগ্যেস করলেন একটু দৌড়ে আসবো না’কি।নিজের ফিটনেসের প্রতি এতটাই সচেতন ছিলেন এই ডিফেন্ডার-মিডফিল্ডার।নিজের রিসেপশনের দিনও যাকে সেটি থেকে দূরে রাখতে পারেনি।

 

 

এক পত্রিকার সাংবাদিক রবার্তো ব্যাজ্জিওকে একবার বলেছিলো জানেত্তির আইডল আপনি,সে আপনার মতোন হতে চায়।ব্যাজ্জিও বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন সাংবাদিকের দিকে এবং উত্তর দিলেন “he wants to be Baggio?!! I want to be him,he is fantastic, indestructible”.

 

আরেকবার রায়ান গিগসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো তার সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় কে ছিলেন।গিগসের সরল স্বীকারোক্তি ‘হ্যাভিয়ের জানেত্তি’।জানেত্তি গিগসের নাক ফাটিয়ে দিয়েছিলো একম্যাচে,চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ১৯৯৯ সালে।গিগস এবং তার দলের ট্রেবলজয়ী বছরে।জানেত্তি সম্পর্কে গিগস আরো বলেন মিডফিল্ডার হিশেবে জানেত্তি অসাধারণ বলপ্লেয়ার,নিঁখুত পাস দিতে পারে আর ডিফেন্ডার হিশেবে তো দুর্দান্ত।একেবারে ট্রায়ারলেস।মাঠের ডানপাশ তার দখলে তো ছিলই,পুরো মাঠ জুড়েই থাকতো তার পদচিহ্ন।

tumblr_lrvj9xXTXZ1qfxktpo1_500

২২ বছরের ক্যারিয়ারে জানেত্তি প্রশংসা-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পেয়েছেন ভক্ত-প্লেয়ার-কোচ-ম্যানেজমেন্ট সবার।৭৮ সালে নিজের দেশে ক্যাম্পেস-প্যাসারেলাকে বিশ্বকাপ হাতে তুলতে দেখে ফুটবলের প্রেমে পড়েন জানেত্তি,বয়স তখন মাত্র পাঁচ।১৯৯২ সালে আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগ ফুটবল দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু তার।১৯৯৫ সালে যোগ দেন ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানে।২০১৪ পর্যন্ত খেলেছেন নেরাজ্জুরিদের হয়ে।একটানা উনিশ বছর। ২০০০ এর শুরুর দিকে ব্যক্তিগতভাবে দুর্দান্ত খেলা জানেত্তির জন্যে উঠেপড়ে লেগেছিলো রিয়ালমাদ্রিদ।ইন্টারের অবস্থাও বেশ খারাপ।তখন রিয়ালে গেলে বেশ ট্রফি-সাফল্য পেতেন নিঃসন্দেহে কিন্তু ইন্টারের প্রতি লয়াল থেকে গেলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ক্লাবের অধিনায়কত্বও পান।৮৫৮ ম্যাচ খেলেছেন ক্লাবের হয়ে,যেটি আবার ক্লাব রেকর্ড।ইন্টারের হয়ে ১৯ বছরে জানেত্তি খেলেছেন ১৭ জন কোচের অধীনে।রয় হডজনে শুরু।একে একে মার্সেলো লিপ্পি,হেক্টর কুপার,রবার্তো মানচিনি এবং জোসে মরিনহোসহ আরো অনেক নামীদামী কোচ।সবার দলেই ছিলেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিশেবে।আর লিজেন্ডারি ডিফেন্ডার জিউসেপ্পে বারগোমির অবসরের পরে অধিনায়ক ছিলেন প্রায় সবার অধীনেই।

 

217ee595020641f7b3aa7f0d0d925978

ডি-বক্সের কিঞ্চিৎ সামনে ফ্রি-কিক পেল আর্জেন্টিনা।কিক নিতে দাঁড়িয়ে আছেন বাতিগোল আর ভেরন।বাতিগোল শুট না করে চলে গেলেন সামনে ভেরন আস্তে করে বলটি বাড়িয়ে দিলেন জানেত্তির দিকে।জানেত্তি দারুন কন্ট্রোলে বল রিসিভ করলেন, বা-পায়ের শট নিলেন,বল জালে এবং আর্জেন্টিনা ম্যাচে ফিরলো, ২-২ এ সমতা।শেষপর্যন্ত টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আলবিসেলিস্তিরা।আর্জেন্টিনার হয়ে চার গোলের একটি ছিলো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধের এই গোল।সিমিওনে-বেকহাম জুটির এর জন্যে এই ম্যাচ বিশেষভাবে খ্যাত।সেই গল্প আজ নয়।১৪৩ বার আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন জানেত্তি।মাশ্চেরানো ভাঙ্গেন সেই রেকর্ড।এল হেফেসিতো খেলেছেন মোট ১৪৭ ম্যাচ।মেসি ছাড়িয়ে যাবেন হয়তো দুজনকেই।সেইজন্যে তার দরকার আর ১০ ম্যাচ।২০০৬ এবং ২০১০ বিশ্বকাপে তার না থাকাটা ভীষণভাবে পীড়া দিয়েছে আর্জেন্টিনাকে।বিশেষ করে ২০১০ বিশ্বকাপে।পাগলাটে ম্যারাডোনার পাগলাটে সিদ্ধান্ত।হাড়েহাড়ে জার্মানি বুঝিয়েছে ফুটবল কী।ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত সিজন শেষ করা জানেত্তি আর ক্যাম্বিয়াসোকে না রাখাটা ছিলো বোকামি।জানেত্তির জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিলো ২১ বছর বয়সে,প্যাসারেলার অধীনে।প্যাসারেলার অধীনে অভিষেক হওয়া মানে আর যাইহোক প্লেয়ার হিশেবে এই ছেলে দারুণ পরিশ্রমী এবং দৃঢ়প্রত্যায়ী।

 

175px-Metalist-Inter_(2)

জানেত্তির ট্রেডমার্ক ছিলো তার সুন্দর করে আচরানো চুল।অগোছালো চুল তার কনফিডেন্স নষ্ট করে দেয়।প্রিসাইজ মানুষজন বলে কথা। ৪৭ এ পা দেয়া জানেত্তিকে এখনো তরুণ লাগে।সুন্দর করে রাখা চুলও হয়তো এখানে ভূমিকা রাখে।জানেত্তির আরেকটি দিক উল্লেখ করতেই হবে।সেটি হলো দৃঢ় মনোবল।শেষ করেই ছাড়বেন এমন প্রতিজ্ঞা।ছোটোবেলায় কাজিনসহ দুধ ডেলিভারির কাজ করেছেন।বাপের সাথে রাজমিস্ত্রীর কাজও করেছেন সানন্দে।জানেত্তির বিশ্বাস ছিলো ছোটো থেকেই শুরু করা এবং আস্তে আস্তে উপরে যাওয়া।ফুটবলেও একই নিয়ম মেনে এগিয়েছিলেন।আর্জেন্টাইন তৃতীয় বিভাগে শুরু আর শেষ করেছেন একদম কিংবদন্তী হিশেবে।