• ক্রিকেট

বাংলাদেশ কি ৩০০+ রান চেজ করার মতো দল?

পোস্টটি ১৬৫৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আমি যদি আপনাদের  প্রশ্ন করি যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কতো সাল থেকে আমূল পরিবর্তন হয়েছে? হয়তো উত্তর টা হবে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকেই। হ্যাঁ, বিশ্বকাপের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্লাসিক ঘরনার  ক্রিকেট থেকে বের হয়ে আসে। ক্লাসিক ঘরনার বলার কারণ হচ্ছে, ২০১৫ সালের আগে শক্তিশালী দলগুলো মাঝেমাঝে ৩০০+ স্কোর করতে পারতো।কিন্তু ৩৫০+ স্কোর যেনো সকল দলগুলোর জন্য অমাবস্যার চাঁদের মতো ছিল। একটু খেয়াল করেলেই দেখবেন, ২০১৫ সালের পর দলগুলো মধ্যে কি যেনো অদৃশ্য শক্তি ভর করতে লাগলো। এই অদৃশ্য শক্তির ভর করেই শক্তিশালী অথবা মিড রেঞ্জের মতো দলগুলো হরহামেশাই ৩০০+ বা ৩৫০ রান স্কোর করতে পারছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই অদৃশ্য শক্তির উৎস কোথায় থেকে আসলো?? উত্তর হবে আইপিএল।  ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডের মতো দলের প্লেয়াররা আইপিএলে অংশগ্রহণ করে থাকেন। আর আইপিএল এমন একটা টুর্নামেন্ট, যেখানে একটা গড়পড়তা প্লেয়ারও প্রথম বল থেকেই মেরে খেলতে শুরু করে।

এখন যদি প্রশ্ন করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ কেনো হরহামেশাই ৩০০+ রান করতে পারছে না? অথবা কেনোই বা বাংলাদেশ ৩০০+ রান চেজ করে জিততে পারছে না?

 

উত্তর টা আমি দিয়ে দিচ্ছে, একটু ভালভাবেই খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, ওডিআইতে বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য দেশের পার্থক্য কোথায়।  সম্ভবত নিচের কারণ গুলো এসব প্রশ্নের উত্তর হতে পারে।

 

১. ব্যাটিং পাওয়ার প্লে দুর্বলতা

 

অন্যান্য দেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে প্রায় প্রতিটি ম্যাচে ৬+ রান রেটে রান তুলতে পারে । কখনো রান রেটের মাত্রা ৭+ হয়েও যায়।  কিন্তু বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায়,ব্যাটসম্যানদের  ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে তে ৫+ রান করতেই হাপিত্যেশ লেগে যায়। সেখান ৭+ রান রেটে স্কোর করা একটা অমাবস্যার চাঁদের মতো মনে হয়। অর্থাৎ ইনিংস শুরুর আগেই বাংলাদেশ  ১৫-২০ রানে পিছিয়ে পড়ছে।

 

২. নতুন বলে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ  না হওয়া

 

 নতুন বলে গতি, আউট সুইং, ইনসুইং থাকবে এটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু বাংলাদেশের ওপেনাররা কখনোই আউট সুইং, ইনসুইং,  খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। অনেক সময় দেখা যায় প্রতিপক্ষের বোলাররা  অনরবত ঘন্টায় ১৪০ কি.মি + বল করছে, বাউন্স দিচ্ছে। ঘন্টায় ১৪০ কিমির একটা বাউন্স/শর্ট  বল মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজেদের উইকেট প্রতিপক্ষকে বিলিয়ে দিয়ে আসে। 

৩. ডট বল খেলার প্রবণতা 

 

আমাদের ব্যাটসম্যানদের প্রান্ত রোটেড খেলার দক্ষতার অভাব দেখা যায়। প্রায় প্রতিটি ম্যাচের দেখা যায় ব্যাটসম্যানরা গড়ে  ১২০+ ডট বল খেলে। যেটা বর্তমান আধুনিক ক্রিকেটে একটা দলকে অনেকটা পিছিয়ে দেয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে, বাংলাদেশ এতো ডট বল কেনো খেলে??

আপনাদের উত্তর কি হতে পারে? হয়তো বলবেন আমাদের ব্যাটসম্যানরা সিংগেল বের করতে পারে না অথবা সিংগেল নিতে ভয় পায়। অথবা আমাদের ব্যাটসম্যারা মাঠের চারপাশ জুড়ে খেলতে পারে না।

 

৪.ক্যাচ ও ফিল্ডিং দূর্বলতা

 

শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে জেতার জন্য প্রয়োজন ১০০% ফিল্ডিং ও ক্যাচ নেওয়ার দক্ষতা। ভারত,ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের পরাশক্তির দেশ হওয়ার পিছনে তাদের ফিল্ডিং ও ক্যাচ নেওয়ার দক্ষতাই অনেকাংশেই দায়ী। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ভারতের বিপক্ষে মাঝারি মানের স্কোর করেও শুধুমাত্র ভালো ফিল্ডিং করেই ফাইনাল খেলে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড শুধুমাত্র ভালো ফিল্ডিং করে কতো ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা  নেই।

কিন্তু বাংলাদেশের ফিল্ডাররা মনে হয়ে হাতে তেল মাখিয়ে ফিল্ডিং করতে আসেন। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই  সহজ ক্যাচ ফসকে যাওয়া যেনো একটা নিত্যদিনের ঘটনা।আর সেখানে হাফ চান্সের ক্যাচ গুলোর কথা বাদেই দিলাম। অন্যান্য দেশ যেখানে ফিল্ডিং করেই  ১৫/২০ রান সেইভ করে। সেখনো উল্টো  আমাদের দেশের ফিল্ডাররা  মিসফিল্ডিং করেই ১০/১৫ রান অতিরিক্ত দিয়ে ফেলেন।

 

৫.মিডল অর্ডারে ভঙ্গুরতা

 

 আমরা যতই বলি বাংলাদেশের মিডল অর্ডার আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, আসলেই কি বিডি টিমের মিডল অর্ডার আন্তজার্তিক আর্দশ মানের?

মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ প্রায় প্রতিটি ম্যাচের মিডল অর্ডারে ব্যাট হাতে অবদান রাখছে। কিন্তু মিথুন কি আসলেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার মতো প্লেয়ার? উনি মিডল অর্ডারে কতোটুকু দলের জন্য অবদান রাখছেন তা প্রশ্ন থেকেই যায়। সাইফুদ্দিন, মিরাজ রা মিডল অর্ডারে কতটুকু অবদান রাখছে তা প্রশ্ন না করে বলা উচিত তারা কি আদৌ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে?

 

৬. একজন হার্ডহিটারের অভাব

 

 সাব্বির রহমানকে হার্ডহিটারের তকমা দিলেও আসলে যে পারফরম্যান্সে কখনো ধারাবাহিকতা ছিল না। যেটা দলকে সুবিধা দেওয়া থেকে অসুবিধাই সৃষ্টি করতো। কিন্তু কথা আছে না, নাই মামা থেকে কানা মামাই ভালো ঠিক সেরকম হচ্ছে সাব্বির রহমান।  কিন্তু আমাদের বোর্ড কর্তারা সাব্বির রহমানের সহজাত ব্যাটিং স্টাইল একরকম জোর করেই হত্যা করে।

বর্তমানে সাইফুদ্দিন, মিরাজ, এরা হচ্ছে নামমাত্র হার্ডহিটার। 

এখানে একটা কথা থেকে যায় যে, রিয়াদ ভাই কি হার্ডহিটার না?? আমার উত্তর হচ্ছে হার্ডহিটার মানেই হার্ডহিটার।  তার ভূমিকাই হচ্ছে ক্রিজে আসো, আর দলের রান রেট বাড়াও। কিন্তু দলের স্বার্থে রিয়াদ ভাইকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। সুতরাং হালের হার্ডিক পান্ডিয়ার মতো হার্ডহিটারের তকমা দেওয়া যাবে না।

 

বাংলাদেশ  কি কখনো ৩০০+ রান চেজ করে নাই অথবা ৩০০+ রান করে নাই? এই রকম প্রশ্ন আমার দিকে ধেয়ে আসতে পারে। উল্টো আমি যদি আপনাকে  প্রশ্ন করি, বাংলাদেশ কি কখনো ক্রিকেটের পরাশক্তির দেশগুলো কে ৩০০+ রান চেজ করে কখনো  হারাতে পেরেছে? উত্তর হবে না, না, না,। অথবা কতগুলো ম্যাচে ৩০০+ রান করেছে? আপনারা বলবেন বাংলাদেশ তো জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩০০+ রান চেজ করে জিতেছে। কিন্তু জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড কি  আধুনিক ক্রিকেটের মানদণ্ড নির্দেশ করে? প্রশ্নটা আপনাদের কাছেই রেখে দিলাম।