• ফুটবল

নাটকের পর নাটক অতঃপর বার্সার হয়ে মেসির প্রথম গোল

পোস্টটি ১০৭৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

২০০৫-০৬ মৌসুমের লা লিগা শুরু হলো ২৬ আগস্ট।স্প্যানিশ লীগের ৭৫ তম মৌসুমে আলোচনার কেন্দ্রে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের নতুন সাইনিং রবিনহো।লীগের আরো দুই ব্রাজিলিয়ান রোনালদো ও রোনালদিনহোর মত আলো ছড়াবেন রবিনহো,এমন আশায় তাকে দলে ভিড়িয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা।

এদিকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা লীগ অভিযান শুরু করল আলাভেসের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে।মেসি একাদশে ও নেই।বেঞ্চে ও নেই।মাত্র দুইদিন আগেই গাম্পার ট্রফির নায়ক একাদশে নেই।ব্যাপারটা অবাক করল অনেককেই। এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েই বার্সা ব্যাখ্যা করল কেন মেসি দলে নেই।"সতর্কতার অংশ হিসেবেই ও দলে নেই।অ-ইউরোপীয় খেলোয়াড় হওয়ায় ওর ব্যাপারে কিছু আইনি জটিলতা আছে,যা খুব শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি আমরা।"

জটিলতার শুরু হল ৮ জুলাই স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের কোন স্প্যানিশ ক্লাবের যুবদল থেকে মূল লীগে উঠে আসা সতের থেকে উনিশ বছর বয়সী ফুটবলারদের সংক্রান্ত আইন সংশোধনের পর থেকে।সংশোধিত নিয়ম বলছে,নিজেদের যুব দল থেকে উঠে আসা সতের থেকে উনিশ বছর বয়সী কোন ফুটবলার সেই দলে খেলতে পারবে,এমনকি যদি ৩ জনের অ-ইউরোপীয় কোটা পূরণ হয়ে গিয়ে থাকে তাও।যদিও রোনালদিনহো, ইতো ও মার্কেজ এই তিনজন এরই মধ্যে অ-ইউরোপীয় কোটায় খেলছে,তারপরও এই নিয়ম অনুযায়ী মেসির খেলতে কোন বাধা থাকার কথা নয়।কিন্তু এই নিয়ম আগে পিএফএল দ্বারা গৃহীত হতে হবে এবং হাই স্পোর্টস কাউন্সিল দ্বারা সমর্থিত হতে হবে।বেশ কয়েকটি ক্লাব নতুন এই নিয়মের সমালোচনা করতে শুরু করল।তাদের দাবি,মেসি ও বার্সেলোনাকে বাড়তি সুবিধা দিতেই এই সংশোধনী। আর এতসব জটিলতা এড়াতেই প্রথম ম্যাচে মেসিকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বার্সা।বেশ জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হল এই নতুন আইনকে ঘিরে।

২০০৪-০৫ মৌসুমে মূল দলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের পাশাপাশি লীগে ও মেসি খেলেছিলেন সাতটি ম্যাচ। এবং সবকয়টি ম্যাচই মেসি খেলেছিলেন পেশাদার লাইসেন্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাগজপত্র ছাড়াই।।কেবল বার্সা বি দল ও যুবদলের চুক্তিপত্রের কাগজ দেখিয়েই ম্যাচগুলো খেলেন মেসি।

২০০৪ সালের ১৬ অক্টোবর এস্পানিওল এর বিপক্ষে কাতালান ডার্বিতে অভিষেক হয় মেসির।ডেকোর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তিনি এবং দশ মিনিট পর বলে নিজের প্রথম ছোয়া দেন তিনি।গোল এসিস্ট না করতে পারলে ও রাতটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে মেসির কাছে।কারণ মূল দলের হয়ে খেলার তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।যদিও ছোট্ট মেসি নিউওয়েলসের মূল দলে খেলার স্বপ্ন দেখতেন,তার বদলে বরং বার্সার মূল দলের হয়েই সুযোগ পেলেন মেসি।

লীগে মেসি প্রথম গোলের দেখা পেলেন ২০০৫ সালের ১ মে।ম্যাচের বাকি ৩ মিনিট।আলবাসেতের বিপক্ষে বার্সা এগিয়ে ১-০ গোলে।ইতোকে উঠিয়ে মেসিকে নামালেন ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড,সেটিও আবার সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে,যে পজিশনে মেসি সচরাচর খেলেন না।সতের বছর দশ মাস বয়সের ইয়াংস্টার মেসি রোনালদিনহোর থেকে বল পেয়ে মাপা শটে গোলকিপার কে পরাস্ত করলেন।গোল করার পর কি করবেন তা যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না মেসি।শেষ পর্যন্ত রোনালদিনহোর কাধে চড়ে বসলেন,সাথে উল্লাসের চিৎকার আর নিজের আগমনী বার্তা।বার্সার ইতিহাসে কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে লীগে গোল করার কৃতিত্ব হয়ে তার যা পরে বোজান কিরকিচ ও আনসু ফাতি ভেঙে দেন।FB_IMG_1619884972803

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি এই ম্যাচের পর আর কোন আনুষ্ঠানিক ম্যাচে খেলা হয় নি মেসির।এমনকি নিজেদের ১৭ তম লীগ শিরোপা নিশ্চিত করার পরে ও তাকে মাঠে নামাননি রাইকার্ড।বেতিসের বিপক্ষে স্প্যানিশ সুপার কাপের প্রথম লেগে বেঞ্চে থাকলে ও ফিরতি লেগে তার নাম টিমশীটেই রাখলেন না কোচ।সবকিছু যে ঠিকঠাক নাই তা বুঝতে পারছিল বোর্ড।কেন এসব ঝামেলা আগে থেকেই ঠিক করা হয় নি তা নিয়ে বোর্ডের অভ্যন্তরে অসন্তোষ দানা বাঁধতে লাগল।স্পেনে দুই বছর বাস করার পর যেখানে চাইলেই আর্জেন্টাইনরা দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী হতে পারে সেখানে কেন মেসির ব্যাপারে এত জটিলতা?লীগের বাকি ম্যাচগুলো খেলতে পারবেন না এমন আশঙ্কায় ক্লাবের ভেতর থেকে প্রস্তাব এল অ-ইউরোপীয় কোটা ফাঁকা আছে এমন কোন ক্লাবে খেলতে পাঠানো হোক মেসিকে।তবে এই প্রস্তাব সাথে সাথেই নাকোচ করে দেয় বার্সা বোর্ড।

নতুন খেলোয়াড় সই করানোর শেষদিন ৩১ আগস্ট মেসির চুক্তি নবায়ন করল বার্সা।ক্লাবের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয় জুনেই।৩০ জুন বার্সা তাদের ওয়েবসাইটে লিখল, "আঠারোতম জন্মদিনের এক সপ্তাহ পর জন্মদিনের সবচেয়ে বড় উপহারটা পেয়েছে লিও মেসি।দলের সেক্রেটারি মেসির বাবাকে নিয়ে হলান্ডে উড়ে গেছেন চুক্তি সম্পন্ন করতে।এই চুক্তি নিশ্চিত করছে ২০১০ পর্যন্ত বার্সেলোনাতেই থাকছেন মেসি।

নাটকীয়তার আর এক ধাপ মঞ্চস্থ হল ২০ সেপ্টেম্বর।পিএফএল কমিটির বেশিরভাগ সদস্য স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন ও স্প্যানিশ ফুটবলার অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবিত নিয়মের বিপক্ষে ভোট দিলেন।তবে উয়েফা মেসির কাগজপত্র খতিয়ে দেখে তাকে খেলার সম্মতি দিল।ফলে চ্যাম্পিয়নস লীগে খেলতে মেসির আর কোন বাধা রইল না।

২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর একটায় বিচারকের সামনে উপস্থিত হলেন মেসি,এবং ঘোষণা দিলেন,তিনি তার আর্জেন্টাইন নাগরিকত্ব ত্যাগ করছেন না বটে, তবে স্প্যানিশ সংবিধান, আইন ও রাজার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করছেন।স্প্যানিশ রেজিস্টারে নিজের নাম নথিবদ্ধ করার ব্যাপারে ও আবেদন করলেন তিনি।এক কথাত বলতে গেলে মেসির স্প্যানিশ নাগরিকত্ব নিশ্চিত হল সেই সাথে মেসি এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন সদস্য। যাবতীয় অফিসিয়াল কাজকর্ম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার পর ১ অক্টোবর জারাগোজার বিপক্ষে মাঠে নামলেন মেসি।সেদিনের ম্যাচে ন্যু ক্যাম্পের দর্শকেরা তাকে এমনভাবে অভিবাদন জানালো,যেন মেসি স্প্যানিশদের কোন জাতীয় নায়ক।

এই নাটকীয়তার পর পেরিয়ে গেছে সতেরটি বছর।সেই মেসির বার্সার হয়ে গোল সংখ্যা এখন ৬৬৮ যা কিনা এক ক্লাবের হয়ে কোন খেলোয়াড়ের করা সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। মেসি ছুটছে তার আপন মহিমায় আর আমরা প্রতিনিয়ত উপভোগ করছি তার সৃষ্ট শিল্প।