বিতর্কের আগে লুইস-ঝড়, পরে পল-পাঁচে সিরিজ উইন্ডিজের
উইন্ডিজ ১৯০ অল-আউট, ১৯.২ ওভার (লুইস ৮৯, পুরান ২৯, মাহমুদউল্লাহ ৩/১৮, মোস্তাফিজ ৩/৩৩, সাকিব ৩/৩৭)
বাংলাদেশ ১৪০ অল-আউট, ১৭ ওভার (লিটন ৪৩, পল ৫/১৫)
উইন্ডিজ ৫০ রানে জয়ী ও সিরিজে ২-১ এ জয়ী
আম্পায়ারিং-বিতর্কের সেই মিনিট আটেকের বিরতিতে মোমেন্টাম ছুটে গেছে, এমন কথা আসতে পারে। তবে তা আদতে যথেষ্ট না ব্যাটসম্যানদের বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার পক্ষের যুক্তি হতে। বরং সেই বিতর্কের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে উইন্ডিজ, কথা হতে পারে সেটা নিয়েই। কিমো পলের ১৫ রানে ৫ উইকেটের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ১৯১ রানের লক্ষ্যে ১৪০ রানে থেমেছে বাংলাদেশ, উইন্ডিজ সিরিজ জিতে গেছে ২-১ ব্যবধানে।
অথচ এভিন লুইসের লুইসের দানবীয় ইনিংসে ১০ ওভারেই উইন্ডিজ ১২৩ রান তোলার পরও তাদেরকে শেষ ৯.২ ওভারে ৬৭ রান তুলতে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহরা। ব্যাটিংয়ে শুরুটাও ছিল আশাজাগানিয়া। উইন্ডিজদের এলোমেলো বোলিং সহায়তা করছিল তাদের, শর্ট বলে অতি-নির্ভরতা কাজে দিচ্ছিল না থমাসদের। ৩য় ওভারে শেলডন কটরেল তো করলেন ৯টি বল! তবে খানিক পরই মিলিয়ে গেছে সেসব, হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ।
লুইস-ঝড়
ভারত সফরের সীমিত ওভারের সিরিজ থেকে নিজেকে ব্যক্তিগত কারণে প্রত্যাহার করে নেওয়া লুইস বাংলাদেশের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ফিরে প্রথম দুই ম্যাচে করলেন ১ ও ১৮। এবার তুললেন ঝড়। ফুললেংথে এদিন যেটাই পেয়েছেন, তুলে মেরেছেন সেটাই। প্রথম ওভারে রনিকে দুই চার মেরে শুরু করলেন, ছয়ের অস্ত্র বের করেছেন ৩য় ওভারে এসে। সে ওভার ছিল এমন- ৬ ৬ ওয়াইড ৬ ২ ডট ৬। মোট ২৭ রান এলো সে ওভারে, বাংলাদেশী বোলারদের মাঝে এর চেয়ে খরুচে ওভার আছে আর তিনটি। পরের ওভারে মিরাজ এলেন, এবার ওয়াইড লং-অনে স্লগে ছয়ের পর কাভারে কাট করে মারলেন চার। সে ওভারে অবশ্য সুযোগ দিয়েছিলেন, শর্ট মিড-উইকেটে রনি ক্যাচটা ছেড়েছেন।
১৯ বলে ফিফটি হয়ে গেল লুইসের, ঝড় থামলো না। সাইফউদ্দিনকে চার মারলেন, এরপর মোটামুটি লেংথ বলে ওয়াইড লং-অনে যে ছয়টা মারলেন, সেটা এক কথায় ‘দানবীয়’। এরপর মোস্তাফিজ এলেন, একই ব্যবস্থাপত্র তার জন্যও। মিরাজ ফিরলেন, তাকেও দিলেন সেটা। ৮ ছয় মারলেন, একটি যেন আরেকটির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল দৈর্ঘ্যে কে কতো লম্বা সেটা নিয়ে! মোস্তাফিজকে হালকা টাচে কাট করে চার মারলেন, তিনি যে আজ অন্য মুডে আছেন সেটাই বুঝাতে যেন!। দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল, তবে থেমেছেন ৩৬ বলে ৮৯ রানেই, ৮ ছয় ও ৬ চারে। লুইসের এ ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ছিল ২৪৭.২২, কমপক্ষে ৮০ রানের ইনিংসে এর চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট আছে আর মাত্র চারটি।
‘ম্যাজিকাল’ মাহমুদউল্লাহ
রনি। সাইফউদ্দিন। মিরাজ। সাকিব নিজে। মোস্তাফিজুর। সাকিব সবাইকেই আনলেন, কিন্তু থামাতে পারছিলেন না লুইসকে। সাকিব ফিরলেন মাহমুদউল্লাহর কাছে। প্রথম বলে ২ রান, পরের বলে মাহমুদউল্লাহ দেখালেন সাধারণ কৌশলের অসাধারণ জাদু! পেস কমিয়ে আনলেন বলে, লুপটা ধোঁকা দিল লুইসকে। আগেভাগেই শট খেলতে গিয়ে হলেন বোল্ড! পরের বলে একই ভুল করলেন শিমরন হেটমায়ার, আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলেন অনেক্ষণ সময় নিয়ে, রিভিউয়েও বাঁচলেন না হেটমায়ার। তৃতীয় ওভারে সাধারণ একটা বলেও পেয়ে গেলেন রভম্যান পাওয়েলের উইকেট। সে ওভারে আরও দুইটি উইকেট পেতে পারতো বাংলাদেশ, রান-আউট থেকে বেঁচে গেলেন পুরান-ব্রাথওয়েট। শেষ ওভারে এলেন মাহমুদউল্লাহ, এবার থমাস হলেন রান-আউট।
মোস্তাফিজ-সাকিবের সময়োপযোগী আঘাত
৭ম ওভারে মোস্তাফিজ এসেই সফল হয়েছিলেন, শর্ট বলে কিমো পলকে নড়বড়ে করে সেরকম বলেই আউট করেছেন তাকে। লুইস-ঝড় মাহমুদউল্লাহ থামানোর পর আরও দুইবার সফল এই বাঁহাতি পেসার। নিকোলাস পুরানও শর্ট বলে স্ল্যাশ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন। এরপরের উইকেট মোস্তাফিজ পেলেন দারুণ পরিকল্পনায়। অফস্টাম্পের বাইরে বল করে রেখেছিলেন গালিতে ফিল্ডার, ব্রাথওয়েট ধরা পড়লেন সেখানেই। মোস্তাফিজের মতো সাকিবও শুরুতে পেয়েছিলেন উইকেট, শেই হোপ হয়েছিলেন বোল্ড। এরপর ফিরে এসে ছেঁটে দিলেন উইন্ডিজ লেজ- দুইটিতেই সহায়তা পেলেন মুশফিকুর রহিমের। ফ্যাবিয়েন অ্যালেন হলেন স্টাম্পড, শেরফ্যানে রাদারফোর্ড কট-বিহাইন্ড, মুশফিক যে ক্যাচ নিলেন বারকয়েকের চেষ্টায়।
বিতর্কে আম্পায়ারিং
দুইটি নো-বল ছিল মিরপুরের আলোচনার কেন্দ্রে। হয়তো শেষ পর্যন্ত মিরপুরের এই ম্যাচ মনে থাকবে তানভীর আহমেদের অদ্ভুত ওই দুইটি সিদ্ধান্তের কারণেই!
সেই পুরোনো ধস
আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্কের আগে উড়ছিলই বাংলাদেশ, তামিম ইকবালের রান-আউটও ঠিক থামাতে পারেনি লিটন-সৌম্যকে। সেই বিতর্কের বিরতির পরই নামলো ধস। ব্যাটসম্যানরা শুরু করলেন একজন আরেকজনকে কপি করা, আউট হতে লাগলেন প্রায় একইভাবে। ফ্যাবিয়েন অ্যালেনকে টার্নের বিরুদ্ধে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দিলেন সৌম্য ও সাকিব, পরপর দুই বলেই। পরের ওভারে কিমো পলের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়লেন মুশফিক, এক ওভার পর মাহমুদউল্লাহ একই বোলারের বলে দিলেন মিড-অফে ক্যাচ। ‘নো-বল’ বিতর্কে বেঁচে যাওয়া লিটন আরেকবার বাঁচলেন রিভিউ নিয়ে, আম্পায়ার মাসুদুর রহমান তাকে দিয়েছিলেন এলবিডব্লিউ। লিটন পরে ধরা পড়েছেন মিড-অফে, সেখানেই বেঁচেছিলেন ওই নো-বলে। এরপর আরিফুল ও সাইফউদ্দিন দুজনই পুল করতে গিয়ে দিয়েছেন ক্যাচ, একজন মিড-অনে, পরেরজন কট-বিহাইন্ড। এর আগে ১২ ম্যাচে ইনিংসে ২ উইকেটের বেশি নেননি পল, আজ ১৫ রানেই নিলেন ৫ উইকেট! মিরাজ পরাস্ত হয়েছেন পরে কটরেলের শর্ট বলে, আর ব্রাথওয়েটের বলে উড়ে গেছে মোস্তাফিজের স্টাম্প, ছয় মারার পর।