• ট্রিবিউট
  • " />

     

    ইয়র্কশায়ার থেকে ইউনাইটেডে

    ইয়র্কশায়ার থেকে ইউনাইটেডে    

    ১.

    স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের শূন্যস্থান পূরণের ভার প্রথমে পেয়েছিলেন ডেভিড ময়েস। টিকতে পারলেন না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিল লুই ভ্যান গালের শরণ। লুই বললেন, ‘একটা বিধ্বস্ত দল’ পেয়েছেন তিনি, ‘অসামঞ্জস্যে ভরা’। রিও ফার্দিনান্দ, প্যাটরিস এভরা, নেমানজা ভিদিচকে হারিয়ে ইউনাইটেডের রক্ষণ তখন ধুঁকছে আসলেই! ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চূড়ান্ত পর্বে তাই খেলা হলো না রেড ডেভিলদের। একবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো!

    প্রায় চল্লিশ বছর আগে এরকমই এক মর্যাদার ‘প্রশ্নের’ সামনে পড়েছিলেন ইউনাইটেড ম্যানেজার টমি ডচেট্রি। ববি চার্লটন, জর্জ বেস্ট, ডেনিস ল- কিংবদন্তি ত্রয়ীকে হারিয়ে দিশেহারা ইউনাইটেড নেমে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিভাগে। এ শতাব্দীতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা, আর ওই শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যাওয়া, প্রায় সমান্তরালই তো ম্যানচেস্টারের ক্লাবটির জন্য!

    টমি ডচেট্রি ইউনাইটেডকে প্রথম বিভাগে তুলে এনেছিলেন। পরের মৌসুমে প্রথম বিভাগে তাঁর ক্লাব হয়েছিল তৃতীয়। জিম হল্টন নামের সেন্টার ব্যাক ছিলেন একজন, তাঁর চোট সুযোগ করে দিয়েছিল বছর দুয়েক আগে ‘অ্যামেচার’ থেকে ‘পেশাদার’ বনে যাওয়া আর্নল্ড সাইডবটমকে। গল্পটা তাঁকে নিয়েই।

     

    ২.

    ওল্ড ট্রাফোর্ড, ওল্ড ট্রাফোর্ড। মাঝে দূরত্ব আধামাইলের মতো। ক্রিকেট, ফুটবল- দুই খেলাতেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুই ভেন্যু। ইয়র্কশায়ারে জন্ম নেয়া একজনের যাতায়াত ছিল দুইখানেই। নাহ্‌, শুধু দর্শক হিসেবে নয়, রীতিমতো খেলোয়াড় হিসেবে।

    আর্নল্ড সাইডবটমের ইয়র্কশায়ারের হয়ে অভিষেক ১৯৭৩ সালে। এর বছরখানেক আগেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পেশাদার ফুটবলারদের তালিকায় নাম তুলেছিলেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত খেলেছিলেন ইয়র্কশায়ারে, এরপর হয়েছিলেন কোচ।

    তবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছিল ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমের শুরুতেই, সব মিলিয়ে খেলেছিলেন ২০টি ম্যাচ। ইউনাইটেড থেকে এরপর পাড়ি জমান হাডারসফিল্ড টাউনে, সেখান থেকে হ্যালিফ্যাক্স টাউন। সেখানে খেলেছিলেন ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতিও সেখানেই।

     

    যখন ইউনাইটেডে 

    তবে এরই মাঝে চলেছে ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলা। ডানহাতি পেসার হিসেবে নামডাকও হয়েছিল বেশ। ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেকটাও হয়তো আগেই হয়ে যেত, তবে ১৯৮২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বিদ্রোহী’ সফরে গিয়েছিলেন তিনি। শুরুতে ছিলেন না অবশ্য, সিরিজ শুরুর পর যোগ দিয়েছিলেন গ্রাহাম গুচ, অ্যালান নটদের সঙ্গে। দক্ষিণ আফ্রিকার তখনকার ঘরোয়াতে শক্তিশালী দল অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের হয়ে খেলেছিলেন বছর তিনেক। তবে সেই ‘বিদ্রোহী’ সফরের কারণে তিনবছর নিষিদ্ধ থাকতে হয়েছিল ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে।

     

     

    যখন ইয়র্কশায়ারে 

    ফিরেছিলেন পরে। ১৯৮৫ সালের অ্যাশেজে ‘তিন-সিংহ’ ওয়ালা ক্যাপও মাথায় তুলেছিলেন। তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের ৫১২তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন আর্নি সাইডবটম। ৬৫ রান দিয়ে নিলেন ১ উইকেট। তবে প্রথম ইনিংসে নিজের ১৯তম ওভারটা শেষ করতে পারেননি, পিঠের চোটের কারণে ৪ বল করেই উঠে যেতে হয়েছিল। সেই যে উঠে গেলেন, ইংল্যান্ডের হয়ে আর নামা হলো না!

    আর্নল্ড বা আর্নি সাইডবটম নাম লেখালেন ইংল্যান্ডের সেই এক টেস্ট খেলা ‘অভাগা’ ক্রিকেটারদের তালিকায়!

     

    ৩.

    আর্নির সেই একমাত্র টেস্টের প্রায় ১৬ বছর পর। লর্ডসে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হলো আরেক সাইডবটমের। রায়ান সাইডবটম, আর্নল্ড সাইডবটমের ছেলে হলেন ইংল্যান্ডের ৬০৪তম টেস্ট ক্রিকেটার। রায়ান দুই ইনিংস মিলিয়ে করলেন ২০ ওভার, রান দিলেন ৬৪, বাবার চেয়ে এক রান কম। তবে উইকেটের কলামটা থাকলো শুন্য। এক টেস্ট খেলেই তাই বাদ পড়তে হলো রায়ানকেও!

     

    একসঙ্গে পিতা-পুত্র 

    বাবার মতোই এক টেস্টের ‘অভাগা’ হয়ে থাকতে হলো না, ছয় বছর পর ফিরে এলেন ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে। ডানকান ফ্লেচারের খুব একটা ‘সুনজর’ ছিল না রায়ানের ওপর, ফ্লেচার যাওয়া পর্যন্ত তাই অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে! লিডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ‘পুনর্জন্ম’টা হলো স্বপ্নের মতোই, পেলেন আট উইকেট। এরপর খেলেছেন আরও ২০টি টেস্ট, রায়ানের টেস্টে উইকেট ৭৯টি। ২০১০ সালে বিদায় বলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে, তবে চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলা। ক'দিন আগেই পেয়েছেন ৭০০তম প্রথম শ্রেণীর উইকেট।

    ইয়র্কশায়ারে আরও কয়েক মৌসুম হয়তো থাকবে ‘সাইডবটম’ এর প্রতিনিধিত্ব!

     

    ৪.

    ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্ডি গ্যান্টেয়াম নিজের একমাত্র টেস্ট ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের রডনি রেডমন্ড আবার এক ইনিংসে সেঞ্চুরি, আরেক ইনিংসে করেছিলেন ফিফটি। অস্ট্রেলিয়ার স্টুয়ার্ট ল' একমাত্র ইনিংসে করেছিলেন অপরাজিত ৫৪ রান, ল'য়ের তাই টেস্টে কোনো গড়ই নেই! ইংল্যান্ডের চার্লস ম্যারিয়ট একমাত্র ম্যাচে পেয়েছিলেন ১০ উইকেট, গোবো অ্যাশলি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে নিজের একমাত্র ইনিংসে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট।

    ইংল্যান্ডের অ্যালান জোনস আবার টেস্ট খেলেও খেলেননি। ইংল্যান্ড একাদশের হয়ে ‘রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ডের’ সঙ্গে যে ম্যাচে খেলেছিলেন, তার টেস্ট মর্যাদা পরে বাতিল হয়ে গিয়েছিল।

    টেস্ট অভিষেকই যাঁদের শেষ দেখিয়েছে, এমন ‘বিস্ময়’রাও আছেন সেই ‘অভাগা’দের মধ্যে।

    তবে আর্নি সাইডবটম একটু আলাদা। তিনি যে শুধুই এক টেস্টের ‘অভাগা’ নয়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলাও তো তাঁকে অনন্য করেছে। ছেলে রায়ান অবশ্য ছয় বছর ধরে এক অনন্য ‘বাবা-ছেলে’র রেকর্ডের অংশীদার করে রেখেছিলেন তাঁকে!

    শেষ পর্যন্ত সে রেকর্ডটা না হয়ে বোধহয় স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলেন ইংল্যান্ড আর ইয়র্কশায়ারের পেসার, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হাফ-ব্যাক, আর্নল্ড ‘আর্নি’ সাইডবটম!